Skip to main content

Full text of "Dayananda Charit - Vol.1 দয়ানন্দ চরিত - খন্ড ১"

See other formats




ব্বাগবাজান্ত ত্রিং লাইগ্রেনী 
২. কে. সিবোস রোড, কলিকাতা-৭০০০০৪ 
॥ তারিখ লার্দশক পত্র ॥ : 
বইখাশি ১৫ দিনের মধ্যে ফেরৎ দতে ইইবে। র্‌ 





প্রদানের: | ধনের 
পত্রান্ক ১. | পত্রাঙ্ক 1 
ৃ তারিখ | | তারিখ 
ৰ 


























প্রদানের | প্রদানের প্রা 
প্রাস্ক ও | পত্রান্ক পত্রাঙ্ক 
তারিখ ! তারিখ তা 














উনের ২ -িশটী শিক তাপ এত লি 











মি 


দয়ানন্দচরিত। 





! স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর মতামত-সম্মলিত জীবনরুত্ত। ] 


প্রথম খণ্ড । 


ক্রি ০9০৯ পা 


শ্রীদেবেন্্নাথ মুখোপাধ্যায় প্রণীত। 





কলিকাতা । 


শ্রীমন্মথনাথ চট্টোপাধ্যায় এম এ, 
কর্তৃক প্রকাশিত। 


১৩০২। 


411 25701 2১6561922. মূল্য দ* আনা। 








€4৮1০011: 
12 মগাতেট 0 114, 1059 2৭ গত 73২71100415810 10795) 
2705001১175 5151, 


390. 


বিজ্ঞাপন। 


বঙ্গভাষায় দয়ানন্দ-চব্রিতের প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হইল । অথবা! বঙ্গ- 
ভাষাতেই দয়ানন্দচরিত প্রথম প্রকাশিত হইল । কারণ ইতঃপূর্বে কি 
হিন্দি, কি মরাঠি,কি গুজরাটি ভারতবর্ষীয় কোন ভাষাতেই স্বামী দয়ানন্দ 
সরস্বতীর শুঙ্খলাবদ্ধ' জীবনবৃত্ত প্রকাশিত হয় নাই। এই কার্য সম্পা- 
দনের নিমিত্ত আমি ভারতের নান স্থান ভ্মণ করিয়াছি, দয়ানন্দের সহিত 
স্থপরিচিত বা সংস্থষ্ট লোকদিগের নিকট হুইতে প্রয়োজনীয় বৃত্তান্ত সকল 
লিখিয়। লইয়াছি, এবং যে সকল পুস্তক -পুস্তিকার প্রস্তাবিত মহাঁপুরুষের কোন্‌ 
কোন কীর্তিকথা প্রকাশিত হইয়াছে, মেই সকল পুস্তক-পুস্তিকাও যত্বের 
সহিত সংগ্রহ করিয়া আনিয়াছি। কিন্তু এই সকল উপায়ে সঙ্কলিত উপাদান, 
দয়ানন্দ-চরিত মন্পূর্ণ করিবার পক্ষে পর্যাপ্ত নহে। এই কারণ আপাততঃ 
ইহার প্রথম খণ্ড প্রকাশিত করাই যুক্তিযুক্ত বিবেচন। করিলাম । বঙ্গদেশে বা 
বঙ্গসাহিত্যে স্বামী দয়ানন্দ একরূপ অপরিচিত ব্যক্তি বলিলেও অতুযুক্তি 
হইবে না। পক্ষান্তরে দয়াননকে বুঝা বা বুবিবাঁর চেষ্টা করা প্রত্যেক আধ্য- 
সন্তানের পক্ষেই একান্ত কর্তব্য বলিক্। মনে করি। আর এইরূপ যনে করি 
বলিয়াই দয়ানন্দকে বুঝিবার ও বুঝাইবার চেষ্টা করিয়াছি । ফল কথা, 
দয়ানন্দকে বুঝিবার ও বুঝাইবাঁর পক্ষে উপস্থিত গ্রন্থ আঁমার প্রথম 
উদ্যমমাত্র। 

রন্থখানি একবারে ভ্রাস্তিশূন্ত হয় নাই। মুদ্রাকরজনিত ভ্রান্তি গ্রন্থের 
কোন কোন স্থলে ঘটিয়াছে। এই বিষয়ে ভবিষ্যতে অধিকতর সতর্ক হইতে 
হইবে, এবং এই গ্রন্থ ভাষান্তরে অন্ুবাদিত করিবারও চেষ্টা কর! যাইবে। 


কলিকাতা 


খাপাধ্যায় 
৬ই চৈত্র, বঙ্গাব্দ ১৩০২। ] ূ শ্রীদেবেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় । 





দয়ানন্দ-চরিত। 


৯ 





অবতরণিকা। 


হিন্দুর মত ধর্ষ-প্রাচীন জাতি আর নাই। হিন্দ্র মত ধর্ধর্জীবন মনু 
সংসারে দৃষ্ট হয় না। হিন্দুর মত এক স্ত্র-গ্রথিত অথচ পাত্রোচিত বিভক্ত 
সাধন-পদ্ধতিও অন্ত জাতির সাধক-সমাজে লক্ষিত হয় না। সুতরাং স্বীকার 
করিতে হইবে ধর্থোর ইতিহাসে হিন্দুর বিশেষত্ব আছে। অধিক কি, ধর্্ের 
ইতিহাস কেবল হিন্দুরই আছে। কারণ, ধর্ষের যগার্থ মর্ম হিন্দুই অধিগত 
করিয়াছিল, ধর্মে সন্যকদর্শিতা হিন্দুরই ছিল, এবং ধর্মের সব্ধাঙ্সীনতা হিন্দুই 
রক্ষা করিত। বলিতে কি, খুষ্টান-মুসলমানাদি বিশেষণে যে সকল ধর্ম বিশে- 
ধিত, অথবা সাশ্রদায়িক সীমার ভিতর থে সকল ধর্ম অবরুদ্ধ, সে সকল ধর 
শব্ধে অভিহিত হইবার উপযুক্ত নহে। বেহেতু সে গুলি ব্যক্তিবিশেষের 
বিশেষ বিশেষ মত, কিংবা ধর্মরূপ বিরাট পুক্রুষের এক একটি অঙ্গ বই আর 
কিছুই নহৈ। এই নিমিত্ত শত শাস্ত্রে কীর্তিত বা শত প্রবক্তা-মুখে প্রশংসিত 
হইলেও আমি সে গুলিকে ধর্ম শব্দে আখ্যাত কর! উচিত বোধ করি না। 

জ্ঞানের সহিত ধর্মের অতি নিকট ও নিগুঢ় সন্বন্ধ। এমন কি, একটির 
অভাবে অপরটির বিদ্যমানতা একরূপ অসন্তব। জ্ঞানহীন ধর্ম, অথবা ধর্মহীন 
জ্ঞান আকাশ-কুস্ত্মবৎ একটা! অলীক বস্ত বলিয়! মনে হয়। ফলতঃ জ্ঞানের 
উৎকর্ষ অনুসারে ধর্দের "উৎকর্ষ সাধিত হইয়া থাকে । এই কারণ মন্্ধোর 
জ্ঞাননয়ন বখন নিমীলিত ছিলঞ্নুয্য তখন জল, বায, অগ্নি, সুর্য, চন্র, বৃক্ষ, 


২. _ দয়ানন্দ-চরিত। 


লতা, পর্বত, নদী, নির্ঝরিণী প্রভৃতি প্রাক্কতিক পদার্থ সমূহের অর্চনা করিত 
বলিয়া রোধ হয়। ধর্থের ইতিহাস আলোচনা করিলে এই বিষয়ের শত শত 
প্রমাণ প্রাপ্ত হওয়া বায়। পুরাকাঁলীয় মন্ুষ্দিগের ভিতর কেহ জল, কেহ 
পৃথিবী, কেহ বাষু এবং কেহ বাঁ প্রদীপ্ অগ্নিকে ঈশ্বর-পদবীতে প্রতিষ্ঠিত 
করিয়া আপন খ্াপন শ্রদ্ধা ও ভক্তি অর্পন করিত।* পারস্তের প্রাচীন অবি- 
বাসিগণ পর্ধত-পৃষ্ঠোপরি দণ্ডায়মান হইয়া উন্নত নয়নে নভোমওলের প্রতি 
নেত্রপাত পূর্বক অগ্নি, সুর্য, বায়ু এ্রভৃতি পদার্থের উদ্দেশে স্ততি-গান করিত। 1 
গ্রারু্ত বস্তসমূহের মধ্যে যে গুলি অধিকতর শক্তিমান্‌ ব! জ্যোতিশ্মান্‌, সেই 
গুলির দেবত্ব বিশেষ ভাবে স্বীকৃত হইত বলিক্। মনে হয়। এই নিমিত্ত 
সূধ্যচন্ত্রীদি নভোমগুলান্তর্গত পদার্থ সমূহের উপাসনা বহুতর জাতির ভিতর 
0 যায়।$ যাহা হউক, মন্ধষ্যের জ্ঞাননেত্র যখন ঈষৎ উন্মীলিত 

॥ প্রাচীন মিমর-বসিগণ জল, ফ্রিজিয়ার লোকগণ পৃথিবী, আমিরিয়া-বাসিগণ বায় এবং 
পারসীকগণ অগ্সিকে ঈশ্বরবোধে পূজা করিত । 1120:275 7107555011076 1101611605 


০] [. 1১ [[2. পারদীকগণ অগ্নি ভিন্ন অপরাপর প্রাকৃত বস্তকেও উখর চি অচ্চন। 
করিত। 





10190158975 [১1087555 061006 17)6611901) ৬০]. 0১114." 

| ক প্রাচীন শ্রীকগণ হিলিয়স্‌ নামক দেবতার নিকট অখ বলিদান করিত । এ হিলিয়স্‌ 
সৃধ্যদেবতা বলিয়। প্রসিদ্ধ । এমন কি, এরূপ এক সময় ছিল, যখন গ্রীকগণ উদ্দীয়মান 
সুর্যের প্রতি দৃর্টিপাত পূর্ববক তাহার উপাসনার উদ্দেশে আপন আপন হস্ত-চুর্থন করিত। 
শুস10ট5 [71005 081001৩১012. 207-69. একমাত্র ঈখরোপানক বলিয়া 
গ্নিহদি জাতির প্রপিদ্ধি থাকিলেও তাহার! সুয্য-তারকাদির পূজা হইতে বিরত ছিল ন1। 
এমন কি, এক একটি জাতির পরিচালক-স্বরূপ এক একটি নক্ষত্র আছে বলিয় ফিহদিদিশ্সের 
পরম্পরাগত বিশ্বাস ছিল। 11201855 121027655০৫ 0]১০ [71611601 ৮০] ], [১ হাহ, 
যিছুদ্ি জাতির ঈশ্বর যে স্বগধামে সব্বদা শ্ধা-তারকাদি পরিবেষ্টিত হইয়। থাকিতে ভাল 
বাসেন, তাহা তাহাদিগের ধশ্মগ্রন্থের বহুতর অংশে দেখিতে পাওয়া য়ায়। [. 17755 
এ, 19. একদা জেহুইট সম্প্রদায়ের একজন প্রচারক দক্ষিণ আমেরিকার অন্তত স্থান- 
বিশেষে উপস্থিত হইয়া উপদেশ দান করিলে তথাকার লোকের! তীহাকে নির্ভীক চিত্তে 
বলিয়াছিল--“আমরা সুর্য ভিন্ন অন্য কোন মহত্বর দেবত| জানিও না শ্বীকাঁরও করি ন1।” 
1075 13170056081) ৮০1 2, 1১3০6. ইয়োরোপের অন্তর্গত গ্যামেরিণির 
প্রদেশের কোন লোক জরাক্রাপ্ত হইলে প্রাতঃকালে সুষ্দী।ভিমুখে দণ্ডায়মান হইয়া বলিত,_- 


অবতরণিকা। ও 


হইল, মন্ুষ্যের বুদ্ধি যখন মেঘমুক্ত চন্ত্রকলার ন্তায় অন্নে অল্পে বিকাশ পাইতে 
লাগিল, মনুষ্য তখনও গপ্রারৃত বস্তর আরাধনায় বিরত হয় নাই, অথবা হইতে 
পারে নাই। মন্ুযা তখনও জল, বায়, বহ্ছি প্রভৃতি নিসর্গজাত পদার্থ 
সমূহের পুজাতেই রত ছিল) তবে বিশেষত্ব এই যে, তাহারা গেই সকল বস্তুকে 
এক একটি চৈতন্ত-বিশিষ্ট জীব বলিয়া! মনে করিত মাত্র।* কারণ, তাহার! 
জ্ঞানের ঈষদ্বিকশিত আলোকে ইহা বুঝিতে পারিয়াছিল যে, চেতন! বা শক্তির 
অভাবে ক্রিয়াশীলত্বের সম্ভাবনা নাই। এই নিমিত্ত তাহারা যখন দেখিত যে, 
অগ্নির ক্ষণিক স্ফুরণে স্ত,পীকত পদার্থ ভন্মসাৎ হইতেছে, বায়ু মুহূর্তের 
ভিতর মহীরুহ-সমৃহকে ভূপাতিত করিতেছে, পর়ঃ-প্লাবনে শত শত জনপদ 
ছারখার হইতেছে, প্রভাত-সষ্যের অশ্দ্টালোঁকে সমগ্র বিশ্ব সমুস্তাসিত হইয়া! 
উঠিতেছে, এবং চন্দ্রমার স্িগ্ধ কমনীয় কিরণঘালার স্পশ মাত্রে মানব প্রাণ 
প্রফুল্ল ভাব ধারণ করিতেছে, তখন তাহাদিগকে এক একটি শক্তি-সম্পন্ন জীব 
বলিয়া মনে করা, সেই অজ্ঞান কল্প মনুষ্যদিগের পক্ষে যার পর নাই স্বাভাবিক 
ছিল। 

অতঃপর দেখা যায়, অগ্নিজলাদি ভৌতিক পদার্থে চেতন৷ ঝ| শক্তির আরোপ 











“হে গ্ধ্য! তুম আপিয়। আমার ৭৭ সাততরটি জ্বর লইয়। যাও ।” [1১0১ ৬০] 2. 7 
269. জ্যোতিফমণ্ডলের পৃজ। কেবল অসভ্য সমাজেই লক্ষিত হয় না। যাহারা অপেক্ষাকৃত 
উন্নত ধর্খু(ব্লম্বী বলিয়। প্র্িদ্ধ, তাহাদিগের ভিতরেও সুৃয্যোপামন। প্রচলিত দেখা যাঁয়। 
আশ্মেণিয়। দেশে এক ধ্রীষ্টী় মম্প্রদায় ছিল ; তাহার! স্যোর সগ্তান বলিয়া আপনাদিগের 
পরিচয় দিত, এবং হুষ্যের উপ।সন। করিত | 13691000775 017010]। 11191070, ৬০] 1. [৯ 
347. অধিক কি, খ্ব্ীয় পঞ্চম শতাব্দীতে এরূপ একদল খুষ্টান ছিল, যাহার পৰ্বতো পার 
দওায়মান হইয়। অথবা সেপ্ট।পটার্স নামক ধর্মমন্দিরে প্রবেশ করিবার পূর্বে উদীয়মান 
ুযোর প্রতি দৃষ্টিগাত পুরর্বক নতমস্তক হইত। মুসলমানগণ এখনও চত্্রোদয় দর্শনে করতালি 
প্রদান পূর্ববক প্রার্থনাবাকা আবৃত্তি করিয়৷ থাকে। পঞ্চদশ শতাব্দী পথ্যস্ত ইয়োরোপের 
অনেক লোক চন্দ্রের প্রথমোদয় দর্শনান্তর নঙঙ্জানু হইয়া কিংবা মস্তকের টুপি খুলিয়। 
তাহার উপাদনা করিত। [10175 01011756 0810079) ৮০ 2. [১ 269-75. এইরূপ 
কুর্য-ভারকাদি উপাসনার বহুল নিদর্শন বহু জাতির ভিতর দেখিতে পাওয়! যায়। এতদেশেও 
হৃয্যপুজ! ও সুয্যপ্রণামের বহুল প্রচলন আছে। 
+ 05105 007000055 0910815) 5০] [. 258. 


৪ দয়ানন্দ-চরিত । 


করিয়াই মন্তষ্য নিশ্চিন্ত ছিল না। অধিকন্ত পদার্থের পরিবর্তে ভদন্তরালবর্তিনী 
শক্তিই আরাধিত হইত। আরও দেখা যায়, অন্তরালবষ্টিনী শক্তি সেই বস্তর 
অধিনায়ক বা! অধিষ্ঠাত্রী দেবতাব্ূপেও পরিগণিত হইত। এইরূপ জল-দেবতা, 
বাযুদেবতা, অগ্রি-দেব্তা প্রভৃতি বহুবিধ দেবতার প্রসঙ্গ ও স্ত্রতি-বন্দনা 
তাপেক্গারত উন্নত সমাজের ইতিহাসে দেখিতে পাওয়া যায়। কিন্তু ইহাতেও 
মানবীয় কল্পনার পরিতৃপ্তি হয় নাই। মানবচিত্ত এক দিকে বেমন প্রাকৃত বস্তুর 
অন্তরালবর্ভিনী শক্তিতে ঈশ্বরত্ব আরোপ পুর্ধক তাহার আরাধনায় নিযুক্ত 
ছিল, অন্য দিকে সেইরূপ রোগ, শোক, জরা, মৃত্যু, সখ, ছুঃখ, অন্ধকার, 
আলোক প্রভৃতি প্রাকৃতিক ঘটনাবলীর এক একটি অধিষ্ঠাত্রী দেবতা আছে 
বণিয়াও বিশ্বাস করিত। কেবল ইহাই নহে,--সমরস্ুদক্ষ যোদ্ধগণ এবং 
প্রতাপান্বিত নুপতিগণও দ্রেবপদবীতে অধিষ্ঠিত ও দেবোচিত প্রীতি-ভক্তির 
সহিত পুঁজিত হইতেন। % 

যাহা হউক, জ্ঞানের শুভ্র জ্যোতির অভাব হেতু মনুষ্য যে, এইরূপ কখন 
ভৌতিক বস্তর পূজার রত হয়, কখন তাহার অন্তরালবর্তিনী শক্তির আরা- 
ধনায় নিযুক্ত হয়, এবং কখন বা শুন্তমার্গে ও বারুমগ্ডলে কিংবা কোন অদৃষ্ট 
ও অজ্ঞাত লোকে অশেষবিধ দেবতার কল্পনা! পুর্ধক তাহাদিগের উদ্দেশে 
অন্তরের শ্রদ্ধা ও ভক্তি অর্পণ করিয়া থাকে, তদ্দিষয়ে অগুমাত্র সন্দেহ নাই। 
অন্ধকারাবৃত রজনীতে পথিক যেমন আপনার আলয় নিরূপণে অসমর্থ 
হইয়া নানাদিকে বিচরণ করে, অজ্ঞানতার তমিআ মধ্যে মন্য্যও সেইরূপ 











*পৃষ্টের আবিভাব-কালের পৃবের শ্রীস, রোম, সিরিয়া, বাবিলন ও মিসর প্রস্ততি দেশে 
নানারপ দেবোপ।সন। প্রচলিত ছিল। অনেক স্থলে হরকিউলিস প্রভৃতি বীরগণ 
পুজিত হইতেন। কোন কোন জীবিত সঙ্াটের ডদ্দেশেও মন্দিরাদি নিশ্রিত হইত। 
অধিক কি, রোম নগরও দেবতার আসন পরিগ্রহ করিয়াছিল। ুধ্য-চন্দ্রাদির পুজা ত 
প্রচলিত ছিনই। প্রেত-পিশাচ প্রভৃতি বায়ুবিহারী অদৃষ্ঠ পদার্থ সমূহও ইঈশ্বরজ্ঞানে আরা- 
ধিত হইত। তাহার পর ক্ষণ, দয়া, যশ, শিদ্রা, স্মৃতি প্রভৃতির উদ্দেশেও বেদী সকল নিশ্মিত 
হইয়াছিল, এবং সমুদ্র, আকাশ, রাত্রি, অন্ধকার, বিদ্যা, বুদ্ধি, বাগ্সিত। ইতযাদিরও এক একটি 
অধিষ্টাত্রী দেবতা কল্পিত হইয়াছিল। এমন কি, মিসরের দেবমন্দির-সমূহে বিড়াল, কুকুর, 
ছাগল প্রভৃতি ইতর প্রাণীর পূজার নিমিত্তও আনন নির্দিষ্ট ছিল। 000%%0075 [77061100- 
চেয়] 555101৮0100 0701৮2756) ৬০1 [. ৮:361--364 ও 522, 


অবতর ণিক1। ৫ 


প্রক্কত ধর্ম নিকেতনের সন্ধান না পাইয়া নানা বস্ত বা নানা বিষয়কে ধন্মরূপে 
অবলম্বন করিয়া থাকে। কিন্তু উষবালোকের অন্দট সঞ্চারেই দিগ.ত্রান্ত 
পথিকঞ্যেনদদ আপনার আলয় আপনিই চিনিরা লয়, মানব্চিত্তও সেইরূপ 
আত্মজ্ঞানের পবিত্র ও পরিস্ষটালোক প্রতিভাত হইবাণাত্র 'ধন্মের প্র্কত 
শুদ্ধ অবধারণে সমর্থ হয়। 

আত্মজ্ঞানের উন্মেষ হইলে মানবচক্ষুর সমন্সে অভিনব রাজ্য উদঘাটিত 
হয়। মন্ু্য পুর্বে যাহা দেখে নাই, কখন যাহার বিষয় চিন্তা করে নাই, 
সে তখন তাহা দেখিতে পায়, এবং দেখিতে পাইয়া! বিশ্মিত হইয়া রহে। 
যে শক্তিকে কেবল জল, বারু, অগ্নি প্রভৃতি পরিমিত পদাথের অন্তরাল- 
বাইনীই দেখিত, মনুষ্য তখন সেই শক্তিকে সমগ্র বিশ্বের অন্তরালবর্ভিনী 
দেখিয়া অবাক্‌ হইয়া থাকে । অধিকত্ত সেই বিশ্বান্তরালবন্তিনী ও বিশ্ব 
বরহ্মাণ্-ধারিণী শক্তির প্রকৃতি বা প্রক্কত স্বরূপ কি, সে তখন তাহাও 
জানিতে পারে। আত্মজ্ঞান-সম্পন্ন মন্থুয্য বহিজ্জগতে সেই শক্তির অদ্ভুত ও 
অচিন্তনীঘ্ন লীল! দশনে যেমন আশ্মষ্যান্থিত হয, সেইরূপ অন্তঙ্জগতেও 
তাহার অধিকতর অদ্ভুত ও অচিন্তনীয় লীলা অবলোকন পূর্বাক বিশ্ময়সাগরে 
নিমগ্র হইয়া রহে। অধিক কি, আত্মজ্ঞান-সম্পন্ন মনুষ্য দিব্যচক্ষে দেখিয়া! 
থাকে যে, যে শক্তি অন্তরালবন্তিনী হইয়! সু্যকে নিয়মিত করিতেছে, * 
বারুকে প্রবাহিত করিতেছে, আগ্নিকে গ্রজালিত করিতেছে, এবং সাগর- 
তরঙ্গে ও বিহঙ্গকণ্ঠে বিদ্যমান থাকিয়া মানব-প্রাণকে কখন আতঙ্কে কম্পিত 
করিতেছে, কখন বা আনন্দে অবশ করিয়া তুলিতেছে, সেই শক্তিই তাহার 
আত্মার অন্তরালে প্রতিষ্ঠিত থাকিয়া তাহাকে জীবনের অনন্ত পথে পরিচালিত 
করিতেছে। 

ধর্মের বিকাশ বা ক্রমোন্নতি পক্ষে এই, স্থলে খাহা কিছু ' উল্লিখিত হইল, 
তদ্দারা ইহাই বুঝা যায় যে, মানুষ শক্তির সত্বাও ক্রিয়ার বিষয়ে যত চিন্তাঈম 
হয়, মানুষের বিষয়গ্রাহিণা বা বিশ্লেষণকারিণী বুদ্ধির যত বিকাশ পায়, 
চিন্তার স্থক স্ত্র অবলম্বন পূর্বক মানবমন বহিজ্জগৎ হইতে অন্তজ্ঞগতে যত 








* ঘ আদিত্য তিষ্টন্লাদিত্যাদত্তরে! যমাদিত্যে। ন বেদ যস্তাদিতাঃ শরীরং ঘ আদিত্য- 
মন্তরো যময়তোষ ত আত্মান্তধ্যামামৃত:। বৃহদারণ্যকোপনিধদ্‌ ৫ম প্রপাঠক। এম আঙ্গণ। 


৬ দয়ানন্দ-চরিত। 


প্রবিষ্ট ভয়, এক কথায় আত্মজ্ঞানের শুভ্র স্বর্গীয় আলোকে মন্তুষোর মানস- 
নয়ন ঘত উজ্জল ও উন্মীলিত হইতে থাকে, মন্ুয্ের ধর্ম তত মাজ্জিত, তত 
উন্নত ও তত বিশুদ্ধ হইয়। উঠে। ফলতঃ সংসার-পথে এই আলোকই «প্রকৃত 
আলোক,__ধর্মের ছুর্গম ও দু্দর্শনীয় প্রদেশে ইহাই একমাত্র আলোক। 
ধর্ম নিরূপণ পক্ষে আশ্মজ্ঞান ব্যতীত আর দ্বিতীয় আলোক নাই। 

হিন্দু আত্মজ্ঞনের পরিক্ম,টালেকে ধর্ম নিরূপিত করিয়াছিল। এই হেতু 
পুর্কোই বলিয়াছি, ধন্মের সম্যক মর্ম হিন্দুরই অধিগত হইয়াছিল। বলিতে 
কি, মিসর ও বাধিলন, এবং রোম ও জেরুসালেম যখন অজ্ঞানতার গাঢ় তিমির 
নিমজ্জিত ছিল, অথবা ইয়োরোপের উদীয়মান জাতিসমূহের পুর্বপুরুষগণ যখন 
বনমধ্যে বিচরণ পুর্বক বানরবৎ বিকৃত ভাবায় আপনাদিগের মনোভাব ব্যক্ত 
করিত, তাহার বহু পূর্বে হিন্দুর হৃদয়ে ধর্দের প্রকৃত আলোক সঞ্চারিত 
হইয়াছিল। বলিতে কি, লুথর যখন ইয়োরোপের ধর্মসংস্কার ব্যাপারে প্রবৃত্ত 
হয়েন, মহম্মদ যখন মকার কাবা-মন্দিরে অদ্ধিতীয় ঈশ্বরের নাম গৌরবান্বিত 
করেন, ঈশা খন জেরুসালেমের রাজপথে দণ্ডায়মান হইয়া স্বর্গের সুসংবাদ 
প্রচার করিবার নিমিত্ত সহজ্স জিহ্বা নিয়োজিত করেন, এবং প্লেটো ও 
পিথাগোরস্‌ * প্রভৃতি তন্ববিদ্গণ যখন এঁহিক ও পারলৌকিক বিষয়ে অমূল্য 
তত্বসমূহ প্রচারিত করিয়া জ্ঞান-গরিমায় গ্রীসকে গৌরবান্িত করিয়া তুলেন, 
তাহারও পুর্বে সরস্বতী ও দৃশদ্বতীর পুণ্যময় পুলিনে পবিত্রচিন্ত ব্রাহ্মণগণ 
সমাসীন হইয়া পরমাত্ম-ধ্যানে নিরত থাকিতেন। ফল কথা, ব্রহ্মবাদই হিন্দুর 
আদিম ধন্ম। হিন্দু চিরন্তন ত্রহ্মবাদী, অথব| হিন্দুর মত ব্রহ্মবাদী আর 
কেহ নাই। 

কিন্তু ইয়োরোপের ম্যাক্সমূলর প্রভৃতি কতিপয় সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত এই মতের 
প্রতিবাদ করিয়া থাকেন। অগ্নি-জলাদি প্রাক্কৃতিক পদার্থপুজাই হিন্দুর আদিম 
ধর্মী বলিয়৷ তাহারা প্রতিপন্ন করিতে চাহেন।  অধিকস্ত হিন্দুর পরমপুজ্য ও 
প্রাচীনতম শাস্তস্বরূপ খণ্েদ-সংহিতা একখানি অসভ্য জাতির 8 


ক যেবখসর পোরাকুসের মৃতু) ৫ ২য়, সেহ নিত থৃষ্ট- প্র ৪২৯ অবে এখেন্স 
নগরে প্লেটো জন্মগ্রহণ করেন। পিখ।গে।রসের জন্মভূমি স্তামস, নগ্রর, তিনি খষ্টগূরবব ৫৮* 
অন্দে জন্মগ্রহণ করেন। 


অবতরণিক!। ৭ 


্রন্ বই আর কিছুই নহে, তাহারা এরূপও বিশ্বাস করেন । বেদ-সংভিতা যে 
কতকগুলি সরল-স্বভাব কৃষকের সরল ভাবোদ্ধেলিত গীতাবলী ভিন্ন আর কিছুই 
নছে, এই কথা বলিতেও তাহারা কিছুমাত্র কুষ্টিত হয়েন না। আর খ ধাতুর 
অর্থ ভূমি-কর্ষণ, সুতরাং খ ধাতু-নিষ্ন্ন আর্ধা শব্দ কৃষক-বাচক ; * এইরূপ 
অদ্ভূত ব্যাখ্যা পূর্বক পূর্বোল্লিখিত পণ্ডিতগণ পৃথিবীর নিকট ইহাই প্রতিপাদন 
করিতে চাহেন যে, আমািগের একান্ত পুজাপাদ পিতৃ-পুরুষগণ গোপুচ্ছ- 
মন্দনকারী ও হলধারী ক্কষক ভিন্ন অপর কিছুই ছিলেন না । কেবল ইহাই 
নহে, তাহাদিগের মতে খগেদ-সংহিতার ঘে সকল অংশ ব্রহ্গ-গ্রতিপাঁদক, 
অথবা তদন্তর্গত থে সকল শক্ত বিশ্ব-কারণ ঈশ্বরের স্বরূপ-জ্ঞাপক, মেই সকলের 
প্রতি আধুনিকতা রূপ দৌষারোপ করিতেও তাহারা ক্ষান্ত নহেন।1 ফলতঃ 
আমাদিগের পূর্ব-পুরুষগণ যে একান্ত হেয় ও হীনাবস্থ ছিলেন, তাহারা যে 
জ্ঞানালোক হইতে সর্বধতোভাবে বঞ্চিত থাকিয়া যাঁর পর নাই বর্ধার দশায় 
কালক্ষেপ করিতেন, এই মত প্রতিপাদনার্থ মাল্সমূলর প্রভৃতি মহোদিয়গণ 
কৃতসংকল্প বলিয়াই মনে হয়। যাহা হউক তাহাদের এবস্বিব অযথা ও অন্ুদার 
উক্তির সত্যন্তা পক্ষে কোন প্রমাণ আছে কিনা, আর বদি থাকে, তবে তাহা 
গ্রমাণরূপে পরিগৃহীত হইবার উপযুক্ত কিনা, 'আমি তৎসন্বন্ধে এই স্থলে 
কোনরূপ বিচারের অবতারণা করিব না। কারণ, তাহা করিলে কিয়ৎ পরি- 


* ভারতবর্ষীয় উপাসক-সপ্পরদাস প্রথম তাগ, উপক্রমণিকা! ৮ পৃষ্ঠ দেখ। 
* 1 অধ্যাপক ম্যাঝসমূলর ঝণ্েদ-সংহিতার যে সকল শুল্কে ব্র্ণ-প্রতিগাদক বলিয়। বিবে- 
চন। করেন, তাহার সমস্তই যে আধুনিক, এইরূপ মত প্রকাশ করিতে তিনি কিঞ্চিৎ ইতস্তত? 
করিয়াছেন । আবধ্যজাতি যে আদিমকাল হইতে ব্রদ্ধবাদী, এই কথা বলিবাঁর ইচ্ছা থাকিলেও 
এরূপ সঙ্কোচ সহকারে বলিয়।ছেন যে, তদ্দারা ভাহার মনোভাব স্পষ্টরূপ বুঝা যায় না। 
দশম মণ্ডলের অন্তর্গত ১২৯ নুক্তটির ইংরাজি অনুবাদ প্রকশ পূর্বক হিন্দূজাতির শুঙ্্য চিন্তা 
ও গভীর তত্বদর্শিতাঁর ভূয়সী প্রশংসা করিয়াছেন বটে, কিন্তু এ হুক্তটিকে অপেক্ষাক্ত 
আধুনিক বলিয়াই প্রতিপন্ন করিতে সচেষ্ট হইয়াছেন। এইরূপ প্র মণ্ডলের অন্তর্গত পুরষ- 
সুক্ত ও হিরণাগভ-স্ক্ত প্রভৃতির ও আধুনিকতা প্রতিপাদন করিয়াছেন। 712-1/ 01107 
1715005 010101506 827751070165181875) [১ 558--571. ফলতঃ প্রমাণহীন নামা 
সার ন্যায় ম্যাক্সমূলর মহোদয়ের পুবেবান্ত শুক্তগুলির আুনিকত! প্রতিপাদন, যর পর 
নাই অসম্বদ্ধ ও অনঙ্গত বলিয়া মনে হয়। 


৮ দয়ানন্দ-চরিত | 


মাণে অপ্রাসঙ্গিকতা দৌষ উপস্থিত হইবার সম্তাবনা। বিশেষতঃ পুস্তকের 
উপযুক্ত স্থলে এই বিষয়ে যখোচিত আলোচনা করিবারও ইচ্ছা আছে। তবে 
খণ্েদ-সংহিতার একটিমাত্র খক্‌ অবলগ্বন পূর্বক আমি এই স্থলে ইহা - প্রতিপন্ন 
করিতে চেষ্টা করিব যে, আধ্যগণ আদিমকাল হইতেই ত্রহ্মবাদী ছিলেন। 
পূর্বোক্ত খকটি অতি প্রসিদ্ধ গায়ত্রী মন্ত্র, এবং খগেদ-সংহিতার * তৃতীয় 
মগ্লের অন্তর্গত।1 সেই খকটি এই ৪ 
ততসবিতুবরেণ্যং ভর্গো দেবস্ত ধীমহি। 
ধিয়ো যো নঃ প্রচোদয়াৎ ॥ | 
ইহার তাৎপর্য্য এই ;-ধিনি আমাদিগের ধী-শক্তি প্রেরণ করেন, আমরা 
সেই ষবিতু দেবতার বরণীয় তেজ ধ্যান করি। $ 
সবিতু দেবতা অদ্বিতীয় পরমেশ্বর বই অপর কেহ নহেন। $ তিনি এক- 
দিকে বরণীয় তেজো-সম্পন্ন, এবং অন্ঠদিকে জ্ঞানবুদ্ধির প্রেররিতাঁ। অধিক কি, 
তরঙ্গ বিষয়ে ইহা! অপেক্ষা অধিকতর উন্নত ও বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত মন্ুয্য-সমাজে 
আজিও কিছুই প্রচারিত হয় নাই, এবং কখন হইবে বলিয়াও আশা করা 
যায় না। শ | 





ক এই খবকটি যজুর্বেবেদ এবং মামবেদেও সান্নবিষ্ট আছে। উপ ৪১: 

+ খগ্বেদ-মংহিতার এই অংশ আজিও বোধ হয় ইয়োরোপীয় বেদ-ব্যাখ্যাতাদিগের মতে 
আধুনিক বলিয়। প্রতিপন্ন হয় নাই। 

1 খ সং ৩৬২১০ 

$ বিভিন্ন ভাষায় এই খকের বিভিন্ন অনুবাদ হইয়াছে। বাঙ্গীলা ভাষাতেও ইহার 
অন্ুবাদগুলি কিয়দংশে ভিন্ন ভিন্ন দেখা যাঁয়। পুব্বোলিখিত অনুবাদটি সচরাচর প্রচলিত 
বলিয়াই পরিগৃহীত হইল। 

$ সায়ণাচাধ্য সবিতূ শব্দে হুযয ও ব্রহ্ম ছুই অর্থই করিয়াছেন। কাহার মতে হুর্যের 
অন্তরালবস্তিনী শন্তিই সবিভূ শব্ধের বোধক। কিন্তু সমগ্র খকটির তাৎপধ্য আলোচনা করিলে 
সবিভূ শব্দ ব্রহ্ম-বোধক হওয়াই সর্ববাংশে ক্ুসঙ্গত ও যুক্তিযুক্ত বলিয়! মনে হয়। কারণ জড় 
নু্্যকে মন্ুষ্যের জ্ঞানবুদ্ধির প্রেরক-রূপে নির্দেশ করা যার পর নাই অসম্ভব ও অসঙ্গত । 

খা এই স্থলে ইহা বলিয়। রাখা আবগ্ঘক যে, ঈশ্বর, আত্মা, পরকাল প্রভৃতি বিষয়ে ভিন্ন 
ভিন্ন ব্যক্তি কর্তৃক ভিন্ন ভিন্ন সময়ে যে সকল তত্ব পৃথিবীতে প্রচারিত হইয়াছে, ভারতীয় 
খষিদ্দিগের নিকট তাহার কিছুই নৃতন নহে | ফল কথা, পরকার্থ-তত্ব সম্বন্ধে একাল 
পধ্াত্ত মনুষা-সমাজে যাহা কিছু ব্যক্ত বা প্রচারিত হইয়াছে, তাহার অধিকাংশই বৈদিক 
খধিগণের উচ্ছিষ্ট ব। উদগীরিত বস্তু মাত্র। 


ভাবভরণিকা। মী 


সবিন্ব শব কি নোরন। ইহার অর্থ কি গ্রগাট। সমগ্র বৈদিক সাহিত্যে 
ইঙার মৃত আর দ্বিতীয় শব্দ আছে বপিয়া বোধ হয় না। পুজাপাদ আর্াগণ 
অনন্তস্বরূপ ঈশ্বরকে সবিতু শবে সম্বোধিত করিয়! স্থষ্টিতত্ব পর্যালোচনার 
পরাকাষ্ঠা দেখাইয়াছেন, তাহার বিশ্বব্যাপিনী বরণীয় তেজোমহিমার চিন্তন 
করিতে বলিয়া মন্ুযযুসংসারে সাধনার মূল গুত্র নির্দেশ করিয়া দিয়াছেন, এবং 
বিশ্বকারণ ঈশ্বরকে জ্ঞানবুদ্ধির প্রেরক ও পরিচালক-পদে প্রতিষিত করিয়া তাহার 
অন্তর্যামিত্ব ও ধিধাতৃত্ব-ভাবগ্রাহিতারও সুস্পষ্ট প্রমাণ উপস্থিত করিয়াছেন । 
বগিতে কি, পুর্বোিখিত পবিত্র খকটির আগ্গোপান্তে অন্তদূ টির প্রগা সমাবেশ 
আছে। অন্তর্দশিতার অভাবে পরমার্থ-বিষক্ষক কৌন মীমাঃসাই ঘে সমীচীন 
হইতে পারে না, তাহা বল! বাহুল্য । ব্রহ্ম বিরাট বিশ্বের রচয়িতা হইতে পারেন, 
অথবা তিনি মুষ্ণের নিকট বাহা-ঘটনাপুঞ্জের নিয়ন্তা-রূপেও প্রতীয়মান হঈতে 
পারেন; কিন্তু অন্তরষ্টির উজ্জল আলোক ব্যতীত তিণি অগ্তজ্জগতের অধি 
নায়ক বলিম্না পরিগণিত হইতে পারেন না। আর তাহাকে অন্তঙ্জগতের 
'অবিনায়করূপে না বুঝিলে, কিংবা তিনি মানবের অন্তর্বাসী ও অন্তর্যামী হইসা 
অনুক্ষণ বিগ্ভমান আছেন, এই ভাবে উদ্বোধিত-চিন্ত না হইলে, তাহার অথন্ধে 
প্রকৃত পক্ষে কিছুই বুঝ! বা জানা সম্তাবিত নহে । যাহা হউক, অতীব পুরাকালে 
আমাদিগের পূর্ধ-পুরুষগণ যে, মানসিক উন্নতির সমুন্নত শিখরে আনোভণ পূর্বক 
পরমার্থচিন্তনে গাড়নিবিষ্ট ছুইয়াছিলেন, স্থষ্টি ও অধ্যাস্তত্ব বিষয়ে সমীচীন 
মীমাংসা করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন ; অধিক কি, তাহারা যে, জ্ঞানের শিক্ষণ 
ভূমির'উপর দণ্ডায়মান হইয়! বিশুদ্ধ ব্রহ্মবাদকেই মানবের একমাত্র ধন্মরূপে 
অবধারণ পূর্বক অবলগ্বন করিরাছিলেন, তাহা এই পরম পবিত্র গান্মতরী মন্ত্রটির 
পুনঃ পুনঃ আলোচনা করিলেই বুঝা যায়। 

কেবল ইহাই নহে। পঞ্চনদ-প্রক্ষালিত পবিজ্র ভূখণ্ডে রহ্মবিধয়ক বে 
জ্ঞান উদ্ভাসিত ও আলোচিত হয়, প্রকৃত পক্ষে তাহাই ব্রহ্ষজ্ঞান নাথে 
অভিহিত হইবার উপযুক্ত। এই হেতু ইতিহাস-পৃষ্ঠে রিহুদিজাতি ব্রচ্ষো- 
পানক * বলিয়া! প্রসিদ্ধ হইলেও, অথবা অদ্বিতীয় ঈশ্বরের আরাধনা বিষয়ে 





* ব্রন্মোপ।সক বলিয়। পিছদি জাতির প্রসিদ্ধি থাকিলেও তাহার! একবারে মুক্তি-পু্জায় 
বিরত ছিল না। তাহারা যে লুয্য-চশ্রাদির উপানন। করিত, তাহা ইতি-পুধেবেহ উত্ত 


১০ দয়ানন্দ-চরিত। 


মূসলমানদিগের মত নিষ্ঠাবান জাতি প্রায় না থাকিলেও তাহাদিগের ব্রহ্গবাদ 
হিন্দুর সহিত তুল্য হইতে পারে না। কারণ, রন্গের স্বরূপ নিরূপণ পূর্বক 
সরজ্জপরূপে উপলব্ধি করা দুরে থাক, তাহারা তদ্বিষয়ক সাধারণ জ্ঞানেও 
বাঁঞ্চিত বলিয়া মনে হয়। এমন কি, সামান্য হিতাহিত জ্ঞান-সম্পন্ন মন্তুষ্যের 
প্রতি যেসকল দোষারোপ করা কোন মতেই সম্ভব বা সঙ্গত নহে , তাহারা 
পরম পবিত্র পরমেশ্বরের প্রতি সেই সকল দৌষারোপ করিতে অণুমাত্রও 
কুষ্টিত হয় নাই। + যাহা হউক, আর্ধ্য ভিন্ন অপর জাতির ব্রহ্মবিষয়ক জ্ঞান থে 
প্রকৃত বা পরিদ্ষট হয় নাই, তাহা প্রতিপাদন করিবার পক্ষে প্রভূত 
প্রমাণ রহিয়াছে । 


হইয়াছে। তত্ভিন্র তাহার! সময়ে সময়ে স্বর্ণময় গোবৎস ও পিত্তল-নির্মিত সের পৃজাঁতে 
ও প্রবৃত্ত হইত । [৯০৫৮৩ 0১01 275. বি আ0965 ১০01 ০. গিছদিদিগকে মিসরদেশে 
বহুকাল বাস করিতে হ্ইয়াছিল। আর মিসরবাঁসিগণ যে. সর্প, বৃষ ও গোবৎস প্রভৃতি 
ইতর প্রাণীর পুজা করিত, তাহাও ইতিহ।স-প্রসিদ্ধ। এই নিমিত্ত অনেকে অনুমান করেন, 
ঝিহুদিগণ মিসরবাদিদিগের নিকট হইতেই পূর্যোল্লিখিত পার্থিব বস্তু সমূহের পূজা শিক্ষা, 
করিয়াছিল। 05০10796012 01 13171108175010£1081 00185195021, ৮০] |] 
7. 917. এইরূপ অনুমান সত্য বলিয়াই মনে হয়। 

+. প্রকৃত জানের অভাব বশতঃ মনুষ্য যে পরধৎপর পরমেশ্বরের প্রতি নানাধিধ দোষ 
ও দুর্বলতা আরোপিত করিয়৷ থাকে; তাহার তূরি ভূরি প্রমাণ ভিন্ন ভিন্ন সম্প্রদায়ের 
শান্ত হইতে উদ্ধৃত করা যাইতে পারে। বাইবেলের বর্ণিত ঈশ্বর ঘন নিবিড় অন্ধক।র মধ্যে 
বাদ করিতে ভালবাসেন । 71905215 1১1007055 0 06 [01911600 ৬০1 25 
7১ 421-52. পরমেশ্বর ক্রোধান্ধ হয়েন, এবং হইলে তীহার নাসারদ্ধ, হইতে 
ধূম।বলী ও মুখ-বিবর হইতে জ্বলন্ত অগ্রিশিখা সকণ নিত হইতে থাকে । 1] 5212:081 
সুস্যা 9. শয়তান-শীনন কাষ্যেও ভাহাকে যার পর নাই বাস্ত থাকিতে হয়। 
স্বধান-চিন্তার একাম্ত পক্ষপাতী টমাস পেন লিখিয়াছেন,-“ঝইবেল-বর্ণিত ঈশ্বর 
একটি দানব বই আর কিছু নহেন।” এইরূপ তীব্র ভাবা প্রয়োগ যথাযোগ্য ন। 
হইলেও বাইবেল-বর্ণিত ঈশ্বরকে যে একজন কোপনস্বভাব, হিংশ্র-প্রকৃতি, চঞ্চল ও 
পরিমিত শক্তি-সম্পন্ন লোক বলিয়া মনে হয়, তদ্দিষয়ে অণুমাত্র সংশয় নাই । মুসলমন- 
দিগের ঈশ্বর ন্বর্গধামে যিহুদি ও খৃষ্টানদিগের নিমিত্ত কঠোর দণ্ডের ব্যবস্থা! করিয়া দিয়াছেন 
]. ]. ০0155050165 1) 71 01000)00602171525 ৮ 2০3--2০4. কিন্তু মহম্মদানুচরদিগের 
জন্য তথায় ডোগন্ছথের ব্যবস্থ। করিতে কিছুগাত্র ক্রটি করেন নাই । নহম্মদানুচরদিগের 





অপভতরশিকা | ১5 


মানবজাতির ধর্মপাহিতোো ব্রঙ্গের বহুল স্বন্প বণিত আছে। কেহ রাঙা 
বিরাজ, কেহ পরম প্রভু, কেহ পরম পিতা, কেহ পরম গুরু এবং কেহ বা 
তাহাকে পরম প্রশয়াস্পন সখারূপে সম্বোধিত করিয়৷ থাকেন। হিন্দুর বিশাল 
ধর্মসাহিত্যে ব্রন্মের এই সকল স্বরূপ কথিত হয় নাই,_-এরূপ নহে। কিন্তু 
তাহা হইলেও ভারতের প্রবুদ্ধ-ুদ্ধি ধর্ম চার্য্যগণ ব্রঙ্গোপলব্ধির পক্ষে এই সকল 
স্বরূপকেই যথেষ্ট বলিয়া গ্রহণ করেন নাই। কারণ, মানবের সহিত ব্রঙ্গেব 
সম্পর্ক একদিকে যেমন অনস্ত ও অচ্ছেদ্য, অন্ত দিকে সেইরূপ যার পঝ 
নাই শিকট ও নিগুট়। সুতরাং কেবল বাহ বিষয় বা বাহ দৃষ্টান্ত অবলশ্বণ 
পৃর্বক সেই নিকট শিগুঢ সম্পর্কের যথাথ মন প্রকাশিত করা সব্বতোভাবে 
সঙ্গত নহে। পূর্বতন আধ্যগণ এই অত্যাবস্তক বিষয় উত্তমরূপে বুঝিয়া, 
ছিলেন, এবং বুঝিযাছিলেন বলিয়াই তাহারা পরমেশ্বরকে পূর্ববোল্িখিত 
স্বরূপসমূহে অভিহিত করিয়াও তৃপ্ত হইতে পারেন নাই। পিতাকে পুত্রের 
স্গহৃদ্‌, সহায়ক, শাস্তিদাতা বা! শুভানুষ্ঠাতা বলিয়া উল্লেখ করা কোন অংশেই 
অসঙ্গত নহে। কিন্তু পিতৃনিষ্ঠ পুত্র যেমন এই সকল অভিধা দ্বারা অভি- 
হিত না করিয়া তাহাকে কেবল পিতাই বলে, এবং পিতা বলিয়াই তৎ- 
সংক্রান্ত সমস্ত ভাব বাক্ত করিয়া থাকে ; এতদ্দেশের আত্মন্তীন-সম্পন্ন আচীধ্য- 
গণও সেইরূপ বিশ্বারাধা ঈশ্বরকে প্রাণন্ত-প্রাণ” রূপে অভিহিত করিয়। 
তদ্ধিষয়ক সমগ্র ভাব প্রকাশিত করিয়া গিয়াছেন। পিতৃ শব্দের সঙ্গে থেমন 
ুর্বকথিত সমস্ত ভাব অবিচ্ছিন্নর্ূপে জড়িত, প্রাণস্ত-প্রাণের সহিতও দেই. 





নিমিত ম্বধামে উততষট সুরা, চিনি কারিনী এবং শোভ।-নল্পদদ ময় রগ লিনা প্রচুর 
ব্যবস্থ। আছে। অধিকাক, প্রতোক স্বগারূট মুনলমানের জন্য বায়াওর জন করিয়া খন- 
কৃষ্ণনর়না রূপবতী যুবতী সন্ভোগের ব্যবস্থা করিতেও ঈশ্বর ত্রুটি করেন নাই। আর যাহান্ডে 
নানাবিধ খাদ্য সামগ্রী-পাঁরপুরিত তিন শত করিয়৷ পাত্র স্বগারূঢ় প্রতি মুনলমানকে 
আহারার্থ প্রদান করা হয়, তাহার ব্যবস্থ। করিতেও তিনি ভূলিয়। যান নাই । 177৫, 1১ 
795--97. ফলতঃ মহম্মদ-বর্ণিত স্বগধাম যে এবহিধ ইস্ডিয়ন্থখ ও ভোগবিলাদের লীলাঙ্ষেত্র, 
এবং অপাপবিদ্ধ ঈশ্বর যে এবন্থিধ হীন্দ্ররস্থথ ও ভোগবিলাসের ব্যবস্থা-কন্থা, তাহা 
তাহাদিগের ধর্মগ্রন্থ আলোচন। করলেই বেশ বুঝা যায়। যাহা হউক, অপরিপঞ্ধ জ্ঞান 
মনুষোর ব্রহ্মবিষয়ক ধারণ। যে এইরূপ অনুন্নত অমাব্ফিত ও কলুষিত হইয়। থকে, ধশ্মের 
ইতিহাসে তাহার বন্তল নিদর্শন রহিয়াছে । 


১২ দয়ানন্দ-চরিত। 


রূপ পুর্বোপ্লিখিত সমস্ত স্বব্ধপ অখিচ্ছিননকূপে সংস্ষ্ট । সুতরাং বরহ্মকে “প্রাণস্ত- 
প্রাণূপে অভিহিত করিলেই তৎসন্বন্ধীয় সমস্ত স্বরূপ বুঝ| ঝা ব্যক্ত কর! হইল 
বলিয়। মনে করি । বাস্তবিক, পরমেশ্বরকে প্রাণের প্রাণ, মনের মন, বাক্যের 
বাক্য ও চক্ষুর চক্ষু বলির অভিহিত করিলে, তাহার ভাব যেরূপ সর্ধাংশে ও 
স্থচারুরূপে পরিবাক্ত হয়. সেরূপ আর অন্ত শব দ্বারা হয় না। বলিতে কি, 
একমাত্র হিন্দুর সাহিত্য ভিন্ন পৃথিবীস্থ অন্ত কোন জাতির ধর্ত্-সাহিত্যে 
বিশ্বধিধাতা প রমেশ্বর “প্রাণন্ত-প্রাণ” রূপে কথিত বা অভিহিত হয়েন নাই। এ 





কেবল বাইবেলের একমাত্র স্থলে ব্রচ্ম সম্বন্ধে এইরূপ ভাবের অনুরূপ কথ| দেখিতে 
গাওয়া যায়। যথ1--1007 1010] 6 1150১ 2100 10)00১ 200 1025 001 191708,/ 05 
400 ৯৮]] 287 কাডওয়্থ নামক প্রসিদ্ধ ধন্মবিজ্ঞানধিদ্‌ পঞ্ডিত বলেন, এই তাবটি 
াষ্ঠায় শাগ্রের নিজম্ব নহে। গ্রীক কবি অরফিয়স্‌ * অথবা এরেটাসের লিখিত গ্রন্থ 
হছতে সেন্টপল এই ভাবটি গ্রহণ করিয়াছেন বলিয়। তিনি বিশ্বাস করেন। 
089%0:05 10161190102] 55061) 0 090 001150156, ৬০] | 75757 এবং 
7১10) ৬০] 2 1৮794, এইরূপ বিখান অমূলক হইব1র বিষয় নহে) কারণ, মুসা বা 
ীষ্ট-প্রচারিত অনেক কথাই, এমন কি শ্রীষ্টীয় শাস্ত্রের অনেক মতই যে, গ্রীক প্রভৃতি 
প্রচীনতর জাতির ধন্মশান্ত্র হইতে পরিগুহীত হইয়াছে, তদ্দিষয়ে বহুতর প্রমাণ আছে। 
টমাস পেন লিশিত ধন্মবিজ্ঞান বিষয়ক শ্রন্থ পাঠ কালে এই বিষয়ে অনেক বথ। 
জানিতে পারা যায়। 17075 1১81705 777501087৩1 0155, %১ 14-17. 





্ অরফিয়স, হোমর ও হাসরডের । পুব্ববস্তা কৰি। অনেকে বলেন, তান ট্জান যুদ্ধের 
পুবেব বিদ্যমান. ছিলেন। তিনি একজন কবি ও সংগীত-বিশারদ বলিয়া বিখ্যাত ; 
_এমন কি, উহার মঙ্গীতধ্বনিতে পঞুপক্ষী ও জড়পদার্থ পথ্যস্ত বিগলিত হইয়! 
যাইত বলিয়া গ্রবাদ আছে। অনেকের মতে অরফিয়স্ই গ্রীসীয় ধশ্মোপাখ্যানের 
প্রবন্তক। কিন্তু মহাপাও্ত আরিষ্টটল অরফিগ্ধন নামক কোন কপির অস্তিত্ব আদৌ 
অস্বীকার করিয়ছেন। 080011005 1700011001091 50961) 06 018 [07)7561505 
৬০1 7 1১ 493 94. অরফিয়স্‌ ট্রাজান বুদ্ধের পূর্ববন্তী হইলে তাহীকে প্রায় 
তিন হাঞজার বৎসরের পুর লোক বলিয়! গণন। করিতে হয় । এরেটানও একজন 
বিখ্য।ত শ্রীক-কবি। ফলতঃ অরফিয়সু বা এরেট।দের বু শত বৎসর পূর্বের আধ্য খষিগ্রণ 
বলিয়। গ্রিয়াছেন :--“প্রাণস্য প্রাণশ্চক্ষুষচক্ষু” ইত্যাদি-_কেনোপানষদ। যখন ভারতীয় 
দর্শনের কোন কোন মত পিখাগোরস্‌ প্রভৃতি পণ্ডিতগণ কতৃক গৃহীত হইয়াছিল, তথন 
প্র্গবিষয়ক এই সম্মান ভ।বটি ভারত হইতে শ্রীমে, মমানীত হয় নাই? এই কথ' 
কে নলিল 


অবতরণিকা। ১৩ 


অতএব স্বীকার করিতে হইবে ভারতীয় প্রহ্মবাদ অপরাপর জাতির এরঙ্গবাদের 
সহিত সমান নহে। $ | 

দ্বিতীয়তঃ আচারানুবপ্তিতা। সদাচার যে ধন্মের মুল) অধিক কি, 
সদাচার অভাবে ধন্মগাধন ব। ধর্মাচরণ যে নিরর্থক বাপার, তাহ! আর্য ভিন্ন 
পৃথিবীর অন্ত জাতি আজিও বুঝে নাই বা বুঝিতে সমর্থ হয় নাই। জাত্যন্তরের 
কথ! বলিতে পারি না, তবে হিন্দুর নিকট মন্ধুষা-জীবন যে একটা উদ্দেশ্ঠ-পরিশূষ্ঠ 
অমন্বদ্ধ বা অনর্থক ব্যাপার নহে, তাহা বেশ বলিতে পারি। পক্ষান্তরে 
মন্থয্য-জীবন একটি অতি দিদিষ্ট লক্ষ্য-স্থত্রে নিবদ্ধ,_-ম্থৃতরাঁং তাহা সার্থক 
সঙ্গত ও সুন্বদ্ধ বলিয়াই হিন্দু বিশ্বাস করি! থাকে। তন্নিষিভ্ত জীবনানুঠিত 
প্রতি ইসা বা প্রতি কার্য সেই নিদ্দিষ্ট লক্ষ্যের অনুকুল বা উপযোগী হওয়] 


$ | এই সম্বন্ধ শাস্্রশী শক্ত চন্ত্রশেথর বস মহাশয় লিখিয়ছেন,_.” অস্ঠান্ত যত 
দেশে ধর্মতত্ব আলোচিত ও শ্ান্ত্রবদ্ধ হইয়ছে সে সকল পাঠ করিলে তাহা হইতে ভারত- 
একাশিত ব্র্জ্রানের তুলাকিছুই পাওয়া যায় না। ফলতঃ কোরাঁণ ও বাইবেলকে 
ডপনিষদের মহিত কিছুতেই ভুলনা কর! যাইতে পারে না। উপনিষদের শ্রেণীর এক 
খনি শাস্্ও মুদলমন ব খুষ্ট।নাদগের মধ্যে নাই। তাহাদের য|হ!। আছে তাহা কোরাণে 
ও বাইবেলেই আছে; কিন্ত কোরাণ ও বাইবেলের একটি 'অধ্যায়ও ঈশ্বরের স্বরূপ- 
বর্ণনে উপনিষদের নিকটেও আসিতে পারে না।” বক্তুতা-কুস্মাঞ্জলি ২৮--২৭ পৃষ্ঠ। । 
* মহধি মন্তু লিখিয়াছেন 
আচারঃ পরমোধর্মঃ শ্রত্যক্ত; স্মান্ত এব চ। 
তন্মদশ্মিন্‌ নদ। যুকোনিত্যং স্তাদাক্বান্‌ ছিঃ £ 
মনুমংহিতা ১১০৮ । 
গরম্পরাগ'ত অ।চার যে উৎকুষ্ট ধর, ইহ! শ্রুতি ম্মুতি উভয়েই প্রতিপন্ন আছে । অতএব 
আ।আ্মহিত। ভিলাধী ব্রাহ্মণ এতি স্থতিবিহিত আচারের অনুষ্ঠানে সতত যত্বুব!ন্‌ থাকবেন। 
পুনরায় বলিয়াছেন ;-- 
 এবমাচারতো দৃষ্ট। ধর্মন্ত মুনয়োগতিং। 
সব্বস্ত তপমোমুলমাচারং জগৃছঃ পরং। 
মনু দংহিত। ১১১০। 
মুনিগণ আচার দ্বারা ধর্টের প্রাপ্তি অবগত হইর। আচারকেই সকল তগস্তার প্রধান 
কারণ বলিয়। গ্রহণ করিয়াছেন। এইবপ মন্দ হাজনগণ বুত্রর স্থানে আচারগরতার 
উরি ভুরি প্রশংন। করিয়। খিয়াছেন। 


১৪ দয়ানন্দ-চরিত 


একান্ত আবগ্তক। যেমন পথিক ব্যক্তি গন্তব্য প্রদেশের প্রতি দৃষ্টি রাখিয়াই 
পদক্সৈপ করে, যেমন অবিচলিত-চিত্ত সাধক দিদ্ধির প্রতি নিয়ত লক্ষ্য করিয়াই 
এক এক দণ্ড অতিবাহিত করিয়া থাকে, মন্ুষযুও সেইরূপ মোক্ষরূপ মহা- 
লক্ষ্যের দিকে অবিচ্ছিন্ন দৃষ্টিপ'ত করিয়া অনন্তপথে এক এক পদ অগ্রসর হইবে, 
ইহাই আরধ্ধযশাস্ত্রের সার কথা । কিঞ্চিৎ নিঝিষ্ট-চিত্ত হইলেই বুঝা! যায়, স্কুল 
তার সহিত স্থ্মতার--এক কথায় বাহৃজগতের সঙ্গে অন্তর্জগতের কতকগুলি 
অতি নিকট ও নিদিষ্ট সম্বন্ধ আছে। ইহা সকলেই জানেন, অতি ভোজনে 
উদরভঙ্গ হয়, উদর-ভঙ্গ হইলে দেহের শান্তি নষ্ট হয়, দেহ অশান্ত হইলে 
মনও অশান্ত হয়, এবং মন অশান্ত বা অপ্রক্ৃতিস্থ হইয়া উঠিলে ধ্যানধারণাদি 
কাধ্য নির্বাহিত হওয়া দূরে থাকুক, তাহা সামান্ত সাংসারিক কার্য্য সাধনেও 
অপটু হইয়৷ পড়ে। সুতরাং বিহিত ভোজন সর্বথা কর্তব্য। যেমন ভোজন ১ 
সেইরূপ পান, স্নান, নিদ্রা, শয়ন, ভ্রমণ, অঙ্গচালন প্রভৃতি দেহসংক্রান্ত যাবতীয় 
কার্য বৈধতার সহিত সম্পাদিত না হইলে দেহ জুস্থ ঝ! শুদ্ধ হইতে পারে না, 
এবং দেহ স্স্থ বা শুদ্ধ না হইলে চিত্তও স্বস্থ বা শুদ্ধ হইতে পারে না। আর 
অসুস্থ বা অশুদ্ধচিত্ত ব্যক্তি কর্তৃক কি আধ্যাত্মিক শক্তির প্রসারণ, কি 
পরমার্থ-তত্বান্ুশীলন প্রভৃতি কোন মহত্তর কাধ্য সাধিত হওয়া সম্তাবিত নহে। 
ফলতঃ বাহা-পরিচ্ছন্নতা যে মানসিক পরিচ্ছন্নতার কারণ, এবং মানসিক 
পরিচ্ছন্নতা যে আধ্যাত্মিক পরিচ্ছন্নতার কারণ, তাহা আর বিশদ করিয়া 
বুঝাইতে হইবে নাঁ। এই হেতু যাহাদিগের ব্রহ্মপুজা ঝা ব্রহ্ম-প্রীতি কেবল ভাষা- 
শ্রিত, ধাহারা দিনবিশেষে বা তিথিবিশেষে জনকোলাহল-পরিপুরিত প্রদেশে 
কিংবা কোন নির্জন স্থানে কিয়ংকাল উপবিষ্ট হইয়া! অনন্ত-্বরূপ ঈশ্বরের 
উদ্দেশে কেবল কতকগুলি শব্দের আবৃত্তি, উচ্চারণ ব৷ পুনরুক্তিমাত্রকেই ধনের 
পরম সাধন বলিয়! বিবেচনা করেন, অথবা খাহারা নিত্য-নিয়তাচরিত কোন 
কাধ্যের সহিত, এমন কি পারিবারিক বা সামাজিক কোন অনুষ্ঠানের সহিত 
কোনরূপ সম্পক না রাখিয়া ধর্মকে কেবলমাত্র বক্তৃতার বিষয়__সাপ্তাহিক 
আলোচনার বিষয় কিংবা সাময়িক জল্পনার বিষয় মধ্যে পরিগণিত করিয়া 
তুলেন, আমার বিবেচনায় তাহাদিগের ধর্ম পরম্পরা-কথিত একটা প্রবাদ 
কথা বই অপর কিছুই নহে । কারণ, ধর্ম কেবলমাত্র আলোচনার বিষয় নহে, 


আনতরণিকা । ১৫ 


শবা-শাস্তান্তর্গত সংজ্ঞাবিশেষও নহে, অথবা তাহা মন্রযোর জিহ্বায় জিহ্বায় 
নৃত্য করিবারও বস্ত্র নে। তাহা কুম্মনিবদ্ধ সুরভির ন্তাদ, ইন্ধন- 
মধ্যগত পাঁবকশিখার্‌ স্ায়, কিংবা বহুযুগ-সাধিত পিদ্ধির ন্যায় বহুদিনে ও 
বহু পরিশ্রমে স্ফূরিত হয়, এবং স্কুরিত হইয়া আপনার প্রোজ্জল দীপ্তিতে 
আপনাকে ও আপনার সংস্থ্ট যাবতীয় বস্তুকে দীপ্তিমান্‌ করিয়া তুলে। 
সুতরাং তথ্স্ফতরণের নিমিত্ত পদে পদে সদাচারিতার অন্কুদরণ যে একান্ত 
আবশ্ঠক, তাহা আর বলিতে হইবে না। আচারান্্গামিতার গুঢ় তাৎপর্য 
আধ্যের মত অপর কেহ বুঝে নাই বলিয়াই কেবল আর্ধাজাতির শাস্- 
সংহিতায় আচারপরতার ভূরি ভূরি প্রশংসা দৃষ্ট হয়। আর নিয়মান্গব্তিতার 
অভাবে আচারান্গবর্তিতা আদৌ অসম্ভব। ভত্লিমিত্ত হিন্দর মত আচারবাদী 
যেমন কেহ নাই, সেইরূপ নিক্মবাদীও কেহ নাই। ফলতঃ ভারতীয় রঙ্গবাঁদ 
যে সদাচারিতা-মূলক, তাহাই এখন প্রতিপাদিত হইল। 

তৃতীয়তঃ অধিকারিতার কথা। অধিকারিতা-সম্পর্কেও হিন্দুর ত্রহ্মবাদ 
বিশিষ্ট। হিন্দু ভিন্ন অপর জাতির ধর্মশাস্ত্ে্ অধিকার-তন্বের অবতারণা ব! 
আলোচিনা একরূপ নাই বলিলেই হয়। যিনি যে তত্বগ্রহে অসমর্থ, অথবা! 
যিনি যে বিষয় পরিপাকে অপটু, তাহার নিকট সে তত্বের বা সে বিষয়ের 
প্রচার বিড়ম্বনা মাত্র। স্্তরাং ইহা! স্বীকার করা উচিত, ধর্মানুখীলনে 
_ * অন্ত জাতির শাস্-সংহিতায় অধিকার-তত্বের আলে(চনা একবারে নাই বলিলে 
অযথা কথা বল হয়। কারণ পণ্ডিতবর পিখাঁগোরমূ, কোন ব্যক্তি নির্দিষ্ট কাল 
মৌনাবলম্বন করিয়া থাকিতে ন! গারিলে তাহাকে শিষ্যবূপে গ্রহণ করিতেন না। 
খৃষ্ট বলিয়াছেন)--“হে পরিশ্রান্ত ও ভারাক্রান্ত লোক সকল! আমার নিকট 
আগমন কর, আমি তোমাদিগকে শার্তিদান করিল।”? পরিশ্াস্ত ও ভারাক্রান্ত লোকে- 
রাই বোধ হয় শান্তি লাভের অধিকারী। এতত্তিত্ম তিনি আর একস্থলে বলি- 
য়াছেন,--“শুকরের সম্মুখে মুক্তা নিক্ষেপ করিও না”। 5 11910৩স, ৬]1,6. এইরূপে 
খৃষ্ট অধিকারিতা-অনধিকরিতার বিচার করিলেও অধুন। থৃষ্টিষাগণ কিন্তু ইহার 
প্রতি আদে দৃষ্টি করিয়! চলেন ন1। যাহ! হউক, আ্যজ।তি ইহার আবগ্তকতা৷ যেরূপ 
স্বীকার করেন, যেরূপ সুঙ্ষ্ম ভাবে ইহার অনুনরণ করিয়া চলেন। সেরূপ আগ অন্য 
জাতির ভিতর দৃষ্ট হয় না । সুতরাং এই অংশে ভীহাদিগের বিশেষত্ব স্বীকার করিতেই 
হইবে। 


১৬ দয়ানন্দ-চরিত । 


সকণ ব্যক্তির সমান অধিকার থাকিলেও, কিংবা মুক্তিরূপ পরম পুরুষার্থ প্রাপ্তির 
পক্ষে মনুষামাত্রেই সমঅধিকারসম্পন্ন হইলেও যোগ্াতানুরূপ ধর্ধাশিক্ষার 
ব্যবস্থা করা যাঁর পর নাই কর্তব্য। শক্তির বহিভূতি বা যোগ্যতার অতিরিক্ত 
বিষয়ের ভার ব্যক্তিবিশেষের প্রতি সমর্পিত হইলে সে যেমন তাহা সম্পাদিত 
করিতে পারে না) সেইরূপ সমর্পিত বিষয়ের গুরুত্ব বা গৌরবও থাকে না। 
এরপ স্থলে সেই অর্পিত বিষয় সব্ধাংশে পবিত্র বা গৌরবাম্পদ হইলেও তাহার 
প্রতি লোকের অশ্রদ্ধা উদ্দীপিত হইতে থাকে । ধরন্ৃতত্ব অতি উন্নত ও পবির, 
: সংসারে ধন্মপাধন বা ধন্মান্্ণীলনের মত অধিকতর উচ্চ ও সুখ-প্রদ বিষয় অন্য 
কিছুই নাই। তন্নিমিত্ত অযোগ্যতার অন্ুর্বর ক্ষেত্রে ধর্শবীজ বপন করা 
কোনরূপেই সঙ্গত নহে। বলা বাহুল্য,_এই কারণ ভারতের সুক্ম-তন্বদণী 
আচার্ধ্যগণ বনু বিবেচনা! ও বহু পরীক্ষার পর লোককে ধর্ম বিষয়ে উপদেশ 
প্রদান করিতেন। মংসারে একবিধ সামগ্রী যেমন সকল মন্থষোর আহার্যা হইতে 
পারে না পক্ষান্তরে বালক, বুদ্ধ, যুবক, কুগ্র ও অতিরগ্ন প্রভৃতি বিভিন্ন 
অবস্থাপন্ন লোকের নিমিত্ত যেমন বিভিন্নরূ্প আহার্ধ্য সামগ্রীর প্রয়োজন, 
সেইরূপ ধর্মের একই তত্ব বা একই কথা..মন্ুযা-মাত্রেরই উপযোগী হওয়া 
সম্ভাধিত নহে। এই কারণ যাহারা আশা করেন যে, তাহার্দিগের মহাপুরুষ- 
প্রচারিত ধন্ম একদিনে বা এক শত দিনে ধরণীর এক প্রান্ত হইতে 
অপর প্রান্ত পর্য্যন্ত প্রসারিত হইয়া পড়িবে, বাহারা গণনা করিয়া বসিয়া 
আছেন যে, আর অদ্ধ শত বৎসর পরে তাহাদিগের উজ্ভীয়মান ধর্মপতাকার 
নিম্নে পৃথিবীর সকল জাতি ও সকল সম্প্রদায় আসিয়া! আশ্রয় গ্রহণ করিবে, 
অথবা খাহার! ঈষৎ গান্তীষ্য সহকারে বলিয়া থাকেন যে, তাহাদিগের আচার্য্য- 
বিশেষ বা প্রবক্তা-বিশেষের একটি মাত্র বক্তৃতায় বিশ্বসংসার বিমোহিত হইয়া 
গিয়া তৎক্ষণাৎ তদুপদিষ্ট পন্থার অনুসরণ করিয়৷ চলিবে, আমি মানব চরিত্র 
বিষয়ে-তীহাদিণকে একান্ত অনভিজ্ঞ দেখিয়া অনেক সময়ে হাস্ত করিয়৷ থাকি । 
প্রক্কতিপরিবর্তন, চরিত্র-সংশোধন, শুদ্ধতা বা সাত্বিকত! সহকারে চরিত্রের 
ক্রমোন্নতিসাধন, এবং অবশেষে মানবের পরম পুরুতার্থ স্বরূপ অনন্ত-সম্মিলন ; 
একদিন বা এক বৎসরের কর্ম নহে। বাহা হউক, অধিকতর আশ্চর্য্যের 
খিবয় এই যে, সংসারে পদে পদে অরিকারিতার বিচার আছে, সংসারের 


অবতরণিক1। ১৭ 


প্রতিকাধ্যে আধকারান্রূপ ফলাফলেরও বাবস্থা আছে, অথচ ধশ্মের ব্যাপারে 
তাহীর বিচানও নাই-ব্যবস্থাও নাই! 

ব্রক্মতত্ব নিশ্চয়ই অতি সুক্ষ, অতি জটিল ও অতি প্রগাঢ় । আত্মা ঝা 
পরলোক-সংক্রান্ত বিষয়সমূহ সতাসত্যই একান্ত ছুরবগাহ। স্কৃতরাং এই 
অতি জটিল ও ছুরবগাহ বিষয়সমূহ অমাজ্জিত-বুদ্ধি ও অস্থিরচিত্ত মন্তরযোর 
নিকট প্রচারিত করা স্থুনিপুণ আচার্য্যের কার্য নহে। মন্থুধ্যকে অধিকা রান্থরূপ 
শিক্ষা দান করিবে, প্রকৃত আদশের চিত্র মন্গুষ্যের সম্মুখে অবিরত ধরিয়া 
রাখিবে, এবং আদশীভিমুখে উত্তরোত্তর অগ্রসর হইবার নিমিত্ত মন্তুষ্যের 
জ্ঞানোন্নতি-সাধনের যখোচিত ব্যবস্থা করিক্জ। দিবে, প্রকৃত ধন্মাচাষ্যগণ 
এইবপ শিক্ষাই দান করিয়া থাকেন। এতদ্দেশের তত্ববিশারদ আচাধ্যগণ 
মন্কুব্যের প্রকৃত মঙ্গলোদ্দেশেই এইরূপ শিক্ষার বাবস্থা করিয়া গিয়াছেন। 
তাহারা যে ছুরবগাহ ব্রহ্মতত্ব মন্ুষ্যমাত্রেরই নিকট নির্বিচারে প্রচারিত 
করিতেন না, তদ্দিষর়ে ভূরি ভূরি প্রমাণ বিদ্যমান রহিয়াছে। * ফলতঃ আমা- 
দিগের জ্ঞান-ভয়িষ্ঠ ধন্মাচাধ্যগণ যে, এবন্বিধ ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করিয়াই 
ভারতায় ব্রহ্মবাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিপাদন করিয়া গিয়াছেন, তাহার আর সন্দেহ 
নাই। 





* তস্মৈ সবিদ্বানুপসগ্|য় মম্যক 

প্রশানস্তচিভায় শমান্বিতায়। 

যেনাক্ষরং পুরুষং বেদ সঙ্যং 

প্রোবাচ তাং তত্বতো ব্রপ্ধাবিদ্যাম্‌। 

মুওকো।পনিষদ্‌ 
অর্থাৎ সেই বিদ্বান সমাকরূপে প্রশান্তচিত্ত শমগ্ুণান্িত তদীয় সমীপগত ব্যক্তিকে 

যদ্দার। সেই অক্ষয় সত্যপুরুষকে জ্ঞাত হওয়া যায়, সেই ব্রক্ষবিদ্যা যথ।বৎ বলিলেন। 
আধ্য-ধষি এই স্থলে অধিকার-তত্বের বিচাঁর পূর্বক প্রশান্তচিত্ত ও শমাদি-সাধন-সম্পন্ন 


ব্যক্তিকেই ব্রদ্ষবিদ্যায় শিক্ষিত করিবার উপদেশ দিয়াছেন। ফলতঃ অপ্রশাস্তচিত্ত ও 
অশমান্বিত ব্যক্তিকে ব্রহ্মবিদ্যা বিষয়ে শিক্ষাদীন করিলে, তন্ারা ইষ্টের পরিবর্জে 
যে অনিষ্টই সাধিত হয়, তাহা এতদ্দেশে ব্রদ্ধবাদ-বিষয়ক বর্তমান আন্দোলনের ফলে 
ভত্তমরূপ বুঝা যাইতেছে। ৃ 

নাফিকেতা যখন যমের নিকট পরলোক বিষয়ে জিঙ্ঞাহ ইয়েন, তখন যম বলিয়া 
ছিলেন)__ 


১৮ দয়ানন্দ-চরিত । 


এখন প্রতিপন্ন হইল, আ্ধ্যদিগের ব্রহ্গবাঁদই প্রক্কত বন্াবাদ । কারণ, 
আর্ধ্য ভিন্ন অপর কেহ বিশ্বপ্রাণ ঈশ্বরকে *প্রাণন্ত-গ্রাণূপে উপলব্ধ করিতে 
সমর্থ হয়েন নাই। আধ্যদিগের ব্রক্মবাদ কেবল প্রকৃত নহে,-অধিকন্ত তাহা 
বিশিষ্ট। অথবা তাহা বিশিষ্ট বলিঘ়্াই প্ররুত। কারণ আর্য ভিন্ন অন্য 
কোন জাতিই এই বিষয়ে আচা'রান্থবর্ডিতা ও অধিকারিভার বিচার করি! 
চলেন নাই। 
আর্ধ্জাতির আদিম ধর্ম ব্রন্থাবাদ হইলেও তাহারা সকলেই যে তত. 
পথাবলম্বী ছিল, আমি এরূপ বিশ্বাম করি না। পক্ষান্তরে ইহা সত্য বলিয়। 
মনে করি যে, বেদ-বর্ণিত সময়ে কর্দকাওপ্রিয়তাও বড় কম ছিল না। 
জ্ঞানপথ সর্ধতোভাবে অবলম্বনীয় হইলেও অজ্ঞানতাঁর সংব মম্পূর্ণবূপে 
পরিহারি কর! যার পর নাই দুরূহ কার্ধা। এই কারণ দেশবিশে বা 
জাতিবিশেষের ভিতর জ্ঞানালোক উদ্ভাসিত হইয়া! উঠিলেও অজ্ঞান-নিশীর 
সম্যক অবসান কখনই সম্ভব নহে। বলা বাহুল্য, তন্নিমিত্ত সকল 
জাতির ভিতর প্রায় সকল সময়েই এক এক দল জ্ঞানবিদ্বিষ্ট বা জ্ঞানবিরক্ 
লোক দেখিতে পাওয়া যায়। তাহারা জ্ঞান বা জ্ঞানসংস্থষ্ট বিষয়ের সম্পর্ক 
বিষতুল্য বিবেচনা পূর্বক বহুদূরে অবস্থিতি করে, এবং কর্মকাণ্ডের আড়ম্বরময় 
কোলাহলে অহরহ প্রমত্ত হইয়া থাকিতেই ভালবাসে । 
যাহা হউক সিন্ধু সরস্বতীর পবিত্র পুলিনে যখন পরমা শক্তির উদ্বোধন হইত, 
বরহ্ধাবর্ত ও ব্রন্দর্ষির শান্ত-রসাস্পদ আশ্রমসমূহে যখন ব্র্গবিস্তারি অধ্যয়ন ও 
- আলোচন! হইত, এবং ঈশ্বর ও আত্মবিষয়ক অতি দুরূহ তত্বসকল যখন সরল 
ও সুললিত সুক্তমালায় সন্বদ্ধ ও সত্বোধিত হইয়া! ভারতীয় আচাধ্যবৃন্দকে 
ধর্মের ইতিহাসে অমর ও অনুপম করিয়া তুলিত, তখনও আর্ধ্যদিগের ভিতর 
কতকগুলি কর্্কাগুপ্রিয় লোক বিষ্তমান ছিল বলিয়া স্পষ্টরূপে বুঝিতে পার! 








ন সাম্পরায়ঃ প্রতিভাত বালম্‌, 
প্রমাদাত্তং বিস্তমোছেন যুঢ়ম্‌। 
কঠোপনিষদ। 
অর্থাং-বিত্তমোহে য় প্রমাদী ও অবিবেকী ব্যক্তির নিকট পরলোঁক-বিষয়ক 


উপায় প্রতিভাত হইতে পারে ন।। এইরূপ আধ্াক্ধষিগণ বহস্থলে অধিকারিতার কথ! 
আলোচন। করিয়! গিয়াছেন | . 


অবতরণিকা। ১৯ 


যায়। বেদ-সংহিতার বহুতর স্থলে সেই কর্মনকাণ্-পরায়ণ লোকদিগের প্রতি 
তিরস্কার-বিধিশ্রিত উপদেশের সমাবেশ দৃষ্ট হয়। আচাধ্যগণ বিবিধ উপায়ে 
বরন্মবাদের শেষ্টজ প্রতিপন্ন করিলেও তাহারা! তাহা! গ্রহণ করিত না, স্বজন 
ব৷ সামাজিকবর্ণকে ব্রহ্গজ্ঞানের বিশুদ্ধ আনন্দ উপভোগ করিতে দেখিয়াও 
তাহারা বন্ঞাদি কম্মের প্রলোভন পরিহারে সমর্থ হইত না, অথবা জ্ঞানপথ 
সব্বীংশে আশ্রিতবা বলিয়! প্রতিপাদিত হইলেও তাহারা তাহাতে পদার্পণ 
করিতে ইচ্ছা করিত না। পক্ষান্তরে তাহারা বিশ্বকারণ ঈশ্বরের আরাধন! 
বা অনুসন্ধান বিষয়ে উদাসীন হইয়া! থাকিত, কর্ম্মকোলাহলে মত্ত হইয়া কালা- 
তিপাত করিত, এবং অজ্ঞানরূপ না জীহারমালায় সমাবৃত হইয়া! আপাত- 
রমা বিষয় সমূহের আস্বাদন করিয়াই তৃপ্ত হইত । * 

ফলতঃ কেবল বৈপিক সময়েই কর্মকাণ্ডের প্রভাব বা প্রচলন ছিশ,_ 
এরূপ নহে। বেদোল্পিথিত কাল হইতে আজি পর্যন্ত ভারতীয় ধর্দের ইতি- 
বন্তে কম্মকাণ্ডের একটি পরিশ্মট ধারাবাহিকতা দৃষ্ট হইয়া থাকে । অধিক 





*ন তং বিদাথ য ইম। জজানাগ্চছাস্মাক মন্তরং বভূধ। 
নীহারেণ প্র।বৃতা জল্গয। চান্ছতৃপ উকৃথশাসশ্চরন্তি ॥ 
খত সং ১০৮২৭ 
অর্থৎ_-ধিনি ইহা স্থষ্টি করিয়াছেন, তাহাকে তোমরা জান না। তোগাদিগের অন্তঃ- 
করণ তাহ বুঝিবার ক্ষম হা প্রপ্ত হয় নাই। নীহারাবৃত হইয়। লোকে নানাবিধ কল্পন। 
করে, তাহারা আপন প্রাণের তৃপ্তির জন্য আহারাঁদি করে, এবং স্তব-স্ততি উচ্চারণ পুব্বক 
বিচরণ করিয়! থাকে । 
এই স্থলে তৎকালের কর্শকাগুবাদী পোকদিগের একটি যথাযথ চিত্র পাওয়া যাইতেছে ।. 
ফলতঃ কশ্মকাঁও জ্ঞানানুমোদিত বা জাঁনোদিষ্ট না হইলে, তদ্দার। যে প্রকৃত ফল প্রাপ্ত 
হওয়া যায় না, অধিক কি অজ্ঞান কন্মার কর্পুকল যে, কেবল সংসার-বন্ধনেরই হেতু ; 
তাহা তত্ববিশ।রদ শান্তকারগণ সহশ্র বাঁর বলিয়! গিয়াছেন। মহধি মুণ্ডক বলিয়াছেন 8 
পরাক্ষয লোকান্‌ কর্মচিতান্‌ ব্রাক্মণে 
নিব্বেদমা য়ান্নাস্তাকৃতঃ কৃতেন ! 
মুগকোগনিযদ্‌। 
অর্থাৎ-কর্দমা লব্ধ লোক সকল পরীক্ষ। করিয়া ব্রাঙ্গণ বৈরাগ্য অবলম্বন করিবেন, 
কর্ম দ্বার। নিত্য পদার্থ লাভ কর। যায় না। যাহা হউক নিত্য সত্য পরমেশ্বরকে লাভ 
না করিলে জীবের সংসার বন্ধন যে বিষুন্ত হয় না, তাহা স্দশাস্ত্ানুদোদিত কথ|। 


২০ দয়ানন্দ-চরিত। 


কি, এতদ্দেশের ধর্মক্গেত্রে ত্রহ্মবাদ ও কর্মবাদ যেন পরস্পর-পার্খবপ্ডিনী শ্োত- 
স্বিনীর স্তায় চলিয়া আসিতেছে । এই নিমিত্ত বেদের বহু মন্ত্রে যেরূপ কর্ম 
কাণ্ডের নিকৃষ্টতা-প্রতিপাদ্ক বহু কথার সমাবেশ আছে, সেইকূপ বেদো- 
ত্তর-কাল-প্রচারিত গ্রন্থসমূহেও কর্মিগণ কঠোরভাবে তিরস্কৃত হইয়াছে। 
বলিতে কি, অজ্ঞানতার তমিশ্রা যখনই গাঢ়তর মুক্তি ধারণ করিয়াছে কর্ধী- 
দিগের অট্রহান্তময় কোলাহলে বখনই দিগন্ত পধ্যন্ত কম্পিত হইয়াছে, এবং 
হৈমন্তিক উবার নীহারমালাবৃত ষ্য প্রভার মত বহুবিধ কর্মধূমে ভারতীয় ত্রহ্ষগ- 
বাদ যখনই একান্ত শ্লান ও স্রিরমাণ হইয়! পড়িয়াছ্ছে, তখনই এক এক জন 
মহাবল পুরুষ আবিভূতি হইয়া তাহাকে “পীবিত করিবার প্রয়াস পাইয়াছেন। 
বঙ্মবাদ আধ্যজাতির আদিম ধর্ম বলিয়াই একবারে বিলুপ্ত হয় নাই, 
বহ্মনণ আধ্যিগের চিরন্তন ধর্ম বলিয়াই একবারে বিনষ্ট হইয়া! যায় নাই, 
এবং উহা। সত্য ও একমাত্র ধর্ম বলিয়াই কালের অনন্ত গ্রাবাহেও অপসারিত 
হইতে পারে নাই । যদি হিমাচল দিগন্তরিত হয়,যমুনা-শ্রোত যদি সংরুদ্ধ হয়,কিংবা 
জাহুবীর যুগধুগান্তর-বাহিনী তরঙ্গমালা যদি মৃত্তিকার সহিত মিশিয়াও যায়, 
তথাপি আর্্যাবর্তে ত্রচ্মবাদের বিজয় নিশান বিলুপ্ত হইবে বলিয়া মনে করি না। 
যদি কোন ছুণিবার নৈসর্গিক নিমিত্ত সংঘটিত হইয়া ভারতের প্রাকৃতিক 
স্থিতির পরিবর্তন করে, অথবা কোন বৈদেশিক বীরেন্দ্র পুরুষ পুনরায় আবি- 
ভূতি হইয়া আপনার বিপুল বাহুবলে ভারতের শান্তি-সম্পদ ও সুখ-সমৃদ্ধি 
সমস্তই গ্রাস করিয়া বসে, তাহা হইলেও ব্রহ্গজ্ঞানের বিশুদ্ধ বহ্ছি আধ্যের হৃদয় 
হইতে এককালে তিরোহিত হইবে বলিয়াও বিশ্বাস হয় না। শশিরাপথে 
_ শোণিতক্বোত যতক্ষণ সধশরিত থাকে, মন্তুষ্যের প্রাণবাযু যেমন ততক্ষণ বাহির 
হয় না; শাখা-পল্পবাদিতে যতক্ষণ রসধারা প্রবাহিত থাকে, তরুলতা৷ যেমন 
ততক্ষণ শুষ্ক হইয়া যায় না; সেইরূপ আধ্যদিগের হৃদয়ে ত্রহ্ষজ্ঞানের কণা- 
মাত্রও যতক্ষণ বিদ্যমান থাকিবে, ততক্ষণ আর্য্যের বিলয় হইবে বলিয়াও 
বোধ হয না। ব্রহ্মবাদ আর্ধ্জাতির প্রাণ-স্বরূপ, আধ্যহৃদয়ের শোঁণিত- 
স্বরূপ, এবং আধ্যাবর্তের মেরুদণ্ডস্বূপ। স্ৃতরাং ত্রহ্মবাদের অভাঁবে 
আধোর স্থিতি ও বিস্তৃতি সম্পূর্ণ অসন্তব। মনুষ্যজাতির জাতীয় ইতিহাসে 
ভারত যে ধর্ম্মাচার্যের পদ-পরিগ্রহ করিয়াছে, জ্ঞান ও সভাতা-সম্পকে 


লী-১৮া 
_অবভরণিকা। €৮€ বে 


এতদ্দেশ যে, ৃদিবীতে অদ্বিতীয় হইয়া রহিয়াছে, আর পরপদ-প্রান্তে বারস্বার 
বিলু্িত ও বিগত সর্বস্ব হইলেও ভারতীয় কী্ভিপরস্পর! যে আজিও সভ্য- 
সমাজের বিম্ময়োৎপাদনে সমর্থ হইতেছে, সনাতন বরহ্মবাদই তাহার মূল কারণ। 
বস্ততঃ আর্ধাজাতির জ্ঞানগৌরব বা মানমহিমা সমস্তেরই মূলীভূত হেতু 
বরঙ্গবাদ। সুতরাং ইহা স্বীকার করিতে হইবে যে, আর্ধাগণ ব্রক্মজ্ঞান 
আশ্রয্ন করিয়াই উন্নতির অত্যুচ্চ শিখরে অধিরূঢ় হইয়াছিলেন, আর ্ষজ্ঞানের 
প্রতি একরূপ উদাসীন বা শিথিল-প্রঘত্র হইয়াই আর্ধাগণ এখন নিদারুণ বিপদে 
বিপন্ন হইয়া পড়িয়াছেন ' যাহা হউক, 'এই কারণ আমরা ব্রহ্মবাদের প্রচারক 
ঝ৷ সংস্কারকদিগকে ভারতের যথার্থ ভিতাঞ্া জী; বলিয়াই গণন! করিয়া থাকি । 
ভারতীয় ব্রক্মবাদের ইতিবৃত্তে বেদবর্ণিত খধিদিগের পর মহাঁষতি শঙ্করা- 
চার্যোর নামই উল্লিখিতব্য। »* এভদ্দেশে যখন নাস্তিকতার অগ্নি -প্রধূ 
মিত হইতেছিল, সংশয় ও অবিশ্বীসরূপ ঘনান্ধকাঁরে যখন চারিদিক পরিব্যাপ্ত 
হইতেছিল, এবং বেদ-গ্রতিপাঁদিত ত্রহ্মবাদ যখন শীত-নিপীড়িত পাদপের স্যায় 
দিন দিন সম্কুচিত হইয়া যাইতেছিল, শঙ্করাচা্ধ্য সেই সমস্ষে অভ্যুদিত হইয়া 
বরঙ্গজ্ঞানের বিজয়ভেরী নিনাদিত করিলেন। তীহার্‌ অনুপম প্রতিভা, অদ্ুত 
শান্্রদশিতা ও অলোকসাধারণ বিচারপটুতায় নাস্তিকতার তমৌজাল যেব্ূপ 
তিরোহিত হইল, সেইরূপ ব্রক্মবাদদের উজ্জল কির্ণমাল! অল্পে অল্পে বিকশিত 
হতে তে লাগিল ] তিনি কেবল বিচারযুদ্ধে সকল পক্ষ পরাজিত করিয়াই ব্রহ্ষ- 





ক শঙ্করাচাষ্য খৃষ্টান অষ্টম শতাবী শেষভাগে অথব। নবম শতাব্দীর প্রারস্তে আবি তি 
হয়েন। তিনি দাক্ষিণাত্যের অস্তগত মলয়বর প্রর্দেশে নাগুরি নামক ব্রাঙ্গণবংশে জন্মগ্রহণ 
করেন। বাঁল্যকাল হইতেই প্রব্রজ্যার প্রতি তাহার আন্তরিক অনুরাগ ছিল। এই কারণ 
তিনি অল্প বয়সেই মন্ন্যামাশ্রম অবলম্বন পূর্ববক সমগ্র ভারতবর্ষ পরিভ্রমণ ও সকল শ্রেণীর 
গণ্ডিতবর্গের পরাজয় সাধন করিয়া সর্ববোপরি ব্রঙ্গজ্ঞানের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিপাদিত করেন! 
বত্রিশ সর বয়ঃক্লমের সময় তাহার লোকাস্তর ঘটে। অনেকে শঙ্করাচার্যাকে শৈবমতের 
প্রবর্তকরূপে নিদেন করিয়া থাকেন। আখর। এরূপ নির্দেশকে যুক্তিসত বোধ করি না। 
ভাহার প্রভাবে যে জৈন ও বৌখখত বিগ্প্ডিত হয়, এবং জৈন ও বৌদ্ধমন্প্রদায় যে বিশিষ্ট” 
রূপে পরাভূত হইয়া। যায়, তাহাতে কাহারও সংশয় নাই। এই ব্যাপারে মূর্তিপূজার 

- শ্রবর্তকগণ যার পর নাই উল্লসিত হয়েন, এবং. উল্লসিত হইয়া শঙ্করকে স্বয়ং শঙ্করাবতার 
পদে প্রতিষ্ঠাপুবক তাহারই নামে শিবোপানন। প্রচারিচ করিয়। গিয়াছেন বলিয়! বোধ হয় । 


২২. দয়ানন্দ-চরিত । 


জ্ঞানের শেষ্ত্ব প্রতিপন্ন করিলেন না ; অধিকন্ত বন্স্থত্রের ব্যাখ্যান্বরূপ সুগ্রাসিদ্ধ 
শারীরূক ভাষ্যের প্রচার করিয়। বরহ্মবাদ বিস্তারের পক্ষে একটি যুগান্তর ঘটা ইয়া 
দিলেন । + বলিতে কি, ব্রন্ধক্ঞানের শ্রেষ্টতা গ্রতিপাদন-পক্ষে শারীরক ভাষ্যের 
মত ভূমগ্ুলে আজি পর্যন্ত কোন সুযুক্তিপূর্ণ সারবান্‌ পুস্তকের প্রচার হয় নাই। 
বলিতে কি, শঙ্গরের সমাগম না হইলে এতদেশে বরহ্মবাঁদ বা ্রক্মজ্ঞান বিষক্ষে কোন 
পরিষ্ষ,ট নিদর্শন ধিদামান থাকিত কি না, তাহা সন্দেহস্থল। এই কারণ আমর। 
তাহাকে ব্র্গবাদের বিশুদ্ধ ক্ষেত্রে সর্ধোচ্চ সংস্কারক-পদে বরণ পূর্বক যথোচিত 
শ্রদ্ধাভক্তি সমর্পণ করিয়া! থাকি । 

তাহার পর রাজা রামমোহন! % তানি একজন এতদেশীয় ত্রা্মণ-সন্তান। 
বঙ্গদেশান্তগত পঞ্লিগ্রামবিশেষে তাহার জন্ম হয়। * মৌগলদিগের কঙ্কালময় 
সমাপিভূমির উপর বখন বুটনের বিজয়িনী শক্তি লীলা করিতেছিল, অথবা! 
ইতরাজ-রাঁজত্বের উবালোক যখন ভারতের এক প্রান্ত হইতে অপর প্রান্ত 
পধ্যন্ত ধীরে ধীরে সঞ্চারিত হইতেছিল, তৎকাঁলে,_-অর্থাৎ অষ্টাদশ শতপীর 
শেষাংশে রাজা রামমোহন রায় আবিভূতি হয়েন। মহাপুরুষগণ সুর্য্ের ন্যায় 
গ্রভা-সমগ্থিত। স্থ্য্যের উদয়ে যেরূপ অন্ধকাররাশি বিদুরিত হয়, মহাপুরুষ- 
গণের আবিভাবে সেইরূপ সামাজিক তমোজালও তিরোহিত হইয়া যায় । 
স্থৃতরাং রামমোহনের সমাগমে ভারতসমাজের তাতৎকালীন অন্ধকাররাশিও 
অন্তহিত হইয়ছিল। কিন্তু তীহাকে বে অন্ককারজাল ভেদ করিয়া 
ভারতভূমির পৃষ্ঠে পদার্পণ করিতে হইয়াছিল, সে অন্ধকারজাল অতি 


7 শপ্র্গণত অদ্ৈবাদ, শারীরক ভাষ্যের অনুমোদিত হইলেও ব্দ্ধবাদের সহিত বস্তুতঃ 
তাহার কোন বিরোধ নাই। তবে যাহ। কিছু বিরোধ বলিয়া প্রতীয়মান হয়, তাহা! ভাষ্যের 
দে(ষ নহে, ভাষা বুঝিবারই দোষ। 

£শঙ্করাচাধা ও রামনোহন রায়ের সধাবর্তী সময়ে গুরু নানক প্রভৃতি কতিপয় একেশ্ববু- 
বাঁদ-প্রচারক মহাপুরুষের আবিভীব হয়। কিন্তু তাতাঁদিগের প্রচারিত মতের সহি বেদ- 
প্রতিগাদিত রহ্মধাদের সকল অংশে সাদৃণ্ঠ নাই,-এমন কি কোন ন্দেন অংশে বিশেষরূপ 
অদাদৃগ্ভ আছে বপিয়।ই তাহাদিগের প্রসঙ্গ এই শ্রাল উদ্থীশিত হইল ন|। 

* রামমোহন রায় ১৭৭৪ ্রীষ্টান্ধে হুগলি জেলার অন্তত রাধানগর গ্রামে জন্মগ্রহণ 
করেন, এবং ১৮৩৩ খ্রীষ্ঠান্দের ২৭শে সেপ্টেম্বর তারিগে ইংলগডের অস্তগত বুষ্টল নগরে 
লোকান্তরিত হায়ন। 


অবতরণিকা । ২৩ 


প্রগা্ট, অতি বিকট ও অতি বিস্তৃত। দেই দিগন্তবিস্তৃত অন্ধকারে সমগ্র 
ভাবতসমাজ সমাবুত ছিল। তন্বাচার্ধাগণ সেই তমোরাশির ভিতরে ধর্ম ও 
ধার্সিকতাঁর নাম লইয়া বনুবিধ পাপের অনুষ্ঠান করিতেন। নরহতা, স্বরাপান 
ও পরদারাভিগমন প্রভৃতি জুগুগ্িত কারা সকল তন্্াচার্্যদিগের সাধনার 
মহারক ছিল। স্ুরা-সশ্ষিদাদি উন্মাদকর সামগ্রী সকল সেবন করিয়াই তাহারা 
চিন্তের পরম! শান্তি লাভ করিতেন, নরমাংস, নরশোণিত ও নরকপাল প্রভৃতি 
বীভৎস বস্তর সাহচধ্যেই একান্ত তৃপ্ত থাকিতেন, এবং মারণোচ্চাটনাঁদি অভিচাঁর- 
মন্ত্রে িদ্ধিলাভ করিতে পারিলেই অন্তিমে অক্ষর সুখের অধিকারী হইবে বলিয়া 
বিশ্বাস করিতেন। অপরদিকে নামসাধন ও নামসঙ্কীরভনাদি কারা সকল বৈষুব- 
সমাজে বাহিরের বস্ত বণিয়! বিবেচিত হইত, বিনয়-নভ্রতাঁদি-সম্পর্কে তাহার! এক- 
রূপ উদাসীন হইয়া থাকিত, এবং ভগবত্-প্রীতি বা ভগবত প্রসঙ্গকে শব্দশান্ত্রের 
কয়েকটা সংজ্ঞা বলিয়াই ধনে করিয়া লইত। পক্ষান্তরে মস্তকমুণ্ডন, শিখা- 
ধারণ, মালাগ্রহণ, চন্দনলেপন ও আপন আপন নামের পশ্চাতে “দাঁসানুদাসাঁদি” 
শব্দযোজন প্রভৃতি বাহ-ব্যাপার সমুহ ভক্তিপথের একান্ত সাধক বলিয়া! পরি- 
গণিত হইত, আর পরমীক্মবিষয়ক যে নির্মলা রতি, অধ্যাআআযঘোগ ও ইন্জিয়নিগ্রহ 
ব্যতিরেকে মন্পূর্ণ অসম্ভব, তাঁহারা কামিনীসঙ্গ বা কামুকতার প্রভাবেই তাহা 
লাঁভ করিতে চেষ্টা করিত। কেবল ইহাই নহে 7) স্বাধীনচিস্তা ও কর্তব্যনিষ্টা 
বঙ্গতূমি হইতে অন্তহিত হইয়াছিল বলিলেও অতযুক্তি মনে করি না। কুলগুরু 
ও কুলপুরোহিতের ইঙ্গিতে য্জমানগণ উঠিত ও বসিত, আকাজ্মান্ুরূপ 
দক্ষিণাঁদান করিতে পাঁরিলেই তাহারা অতিপাতক মহাঁপাতক হইতেও নিফৃ্ি 
লাভ করিত, এবং অন্ধ কর্তৃক নীয়মান অন্ধের ন্যায় যজমান ও পুরোহিত উভয়েই 
অজ্ঞানতার গর্ভে নিপতিত হইয়া ধর্মের নাঁমে কলঙ্ক রটনা করিত। বেদ 
বেদান্ত্ের পরিবর্তে ভাগবদ্‌ ও ভজনবিলাসের আলোচনা হইত, ব্র্থচর্য্য বা 
বৈরাগ্যের সাধন! না করিয়া লোকে ইন্দ্িয়বিলাসেই মত্ত থাকিত, আর সর্ব 
প্রকারে উৎকট ও বীভতদ হইতে পারিলেই ধার্ট্িকের শিরোমণি বলিয়! সমাদর 
পাইত। এতসিন্ন সেই বিভীষণা নিশাতে-_সেই একান্ত আতন্কোদীপক অযা- 
রজনীতে--অথবা৷ সেই দিগদিগন্ত-প্রসারিত তমোরাশির ভিতরে ভারতের 
শত শত অসহায় শিশু অন্ধ,ট আর্তধ্বনির সহিত ভাগীরথির উদ্দাম তরঙ্গে 


১৪ দয়ানন্দ-চরিত। 


ভাপিয় যাইত, এবং শত সহস্র অবলা_ভর্ভশোক-ঘিরমাণা অবলা আত্ীয়- 
জন কতৃক জলন্ত চিতাকৃণ্ডে নিক্ষিপ্ত ও যার পর নাই যাতনায় ব্যথিতা হইয়া 
ভারতের মনুষ্যত্বকে শত ধিকীর প্রদান করিতে করিতে ইহলোক হইতে অব- 
স্থতা হইত। সেই নিমজ্জমান শিশুদিগের অস্ফ,ট আর্ভধ্বনি, আর সেই 
দহামান অবলাগণের মর্্্ঘাতিলী রোদরনধবনি, সেই তামসী-নিশাকে আরও 
বিভীষণা করিয়া তুলিত। ফলত; তৎকালে দেশের সব্ত্র:সর্ধনাশ বেন মুর্তি 
মান্‌ হইয়াই বিরাজ করিতেছিল। 

রামমোহন রায় উদীয়মান ৃূর্যপ্রভার মত, স্থুনিপুণ চিকিৎসকের মত, 
অথবা! বিচক্ষণ ব্যবস্থাকর্তীর মত উপস্থিত হইয়! সেই বিপন্ন ও বিশৃঙ্খলাম় 
সমাজে শাস্তির সুচনা করিলেন। স্থনিপুণ চিকিৎসক যেমন সর্বাগ্রে রোগের মূল 
নিরূপণ করেন, এবং মূল নিরূপিত হইলে পর চিকিৎসায় প্রবৃত্ত হইয়া 
থাকেন, রামমোহন রায়ও সেইরূপ রোগের মূল নিরূপণ পূর্বক চিকিৎসারস্ত 
করিলেন। তিনি প্রতিভার উদ্ভাসিত আলোকে বুঝিতে পারিলেন যে, হিন্দুর 
জাতীয় জীবন সর্ববতোভাবে ধর্ম্সংস্ষ্ট। সুতরাং শিল্পের উদ্ধারে, রাজনীতির 
সংস্কারে কিংবা কোনরূপ মাঞ্জিত ও উন্নত শিক্ষাপদ্ধতির বিস্তারে হিন্দুর উন্নয়ন 
সম্ভাবিত নহে। হিন্দুর উন্নয়ন করিতে হইলে হিন্দুর ধর্মের উন্নয়ন কর! চাই। 
হিন্দুর ধর্ম সনাতন ব্রহ্মবাদ। অতএব সনাতন ব্রহ্মবাদের উদ্ধার বা! উন্নয়ন 
হইলে হিন্দুরও উদ্ধার বা উন্নয়ন হইতে পারে। ইহা বুঝিতে পারিয়াই তিনি 
শত বাধা ও সহস্র প্রতিকূলতা-সত্বেও অদদীনপরাক্রম বীরপুরুষের মত ব্রন্গ- 
বাদের প্রচার কার্ধ্ে প্রবৃত্ত হইলেন। 

তিনি প্রথমতঃ ব্রহ্ম-প্রতিপাদক গ্রন্থসমূহের প্রচার করিলেন। ব্রহ্গস্ত্র 
বা বেদান্তের মত ব্রন্ম-গ্রাতিপাঁদক গ্রন্থ অবনীমণ্ডলে আর নাই। মহষি বাদরায়ণ, 
্রহ্মজ্ঞানের শ্রেষ্ঠত৷ ও ব্রন্মোপাসনার আবশ্তকতা, এরূপ শৃঙ্খল এরূপ ধারা- 
বাহিকতা ও এরূপ যুক্তিযুক্ততা সহকারে এই গ্রন্থে প্রতিপন্ন করিয়াছেন, 
যাহার বিষয় চিন্ত! করিলে বিশ্ময়ে অভিভূত হইতে হয়। ফলতঃ বেদান্তকে 
একখানি অত্যুৎকষ্ট ্রক্মবিজ্ঞান বলিয়া উল্লেখ করা যাইতে পারে। এই 
কারণ রামমোহন রায় সর্বাগ্রে অনুবাদের সহিত এই অনুপম পুস্তক প্রচারিত 
করিয়া! দিলেন। তিনি বেদাস্তের পর উপনিষদ্‌ প্রচারে কৃতসংকন্প হইলেন। 


অবঙরণিকা। ২৫ 


উপনিষদ্‌-গুলি ত্রক্মজ্ঞানের আকর বণিয়া অভিহিত হইতে পারে।  মণিকার 
এরূপ আকর হইতে রক্নোন্রোলন পুর্ব রন্রমালার রচনা করিয়া থাকে, 
₹ঞ্চন্বৈপায়নও দেইরূপ উপনিবদকে আকর স্বরূপ অবলগন করিয়া বেদাস্ত- 
রূপ রত্রধারের স্থষ্টি করিয়াছেন । যাহা হউক, তিনি কএকখানি উপাশযদ্‌ 
উপধ্যুপরি প্রকাশিত করিলেন। তদীর হৃদয়ে এই বিশ্বাম অভ্রাগ্ররূপেহথ 
প্রতিষ্ঠিত ছিল যে, বেধাস্তাদি ব্রন্ম-প্রতিপাক গ্রন্থরমুহের অধারন বা আলো- 
টনার অভাববশতই বঙ্গভূমির অধিবাঁসিগণ প্রঙ্গোপাসনা-সম্পকে অজ্ঞ ও 
উদাসান হইয়া! বধিয়াছে। ভত্নিমিন্ত তরক্গজ্ঞানের বিমল আলোকশিখ। বিকিরণ 
করিবার পক্ষে তিনি এই ধকল গ্রপ্থের পুনঃ পুনঃ প্রচার বার পর নাহ কততব্য 
বলিয়া বুবিতে পারিলেন। ভিনি তত্প্রণাত বেখাত্ত-ভুমিকার এক স্থলে 
লিখিতেছেন ১--*লোকেতে শান্ত্রের অগ্রাচুষ্য নিমিত্ত শ্বাথপর পণ্ডিত সক্ক- 
লের বাক্য প্রবন্ধে এবং পুর্ব “শিক্ষা ও সংস্কারের বলেতে অনেক অনেক জুবোব 
লোক এই কল্পনাতে নগ্ আছেন এ নিমিত্ত এ অকিঞ্চন বেদান্ত শাগ্রে? অথ 
ভাষাতে এক প্রকার বথাপাধ্য প্রকাশ কগিলেক, ইহার দৃষ্টিতে গানবেন 
যে আমারদের মূল শান্ত্রা্গমারে ও অতি পুর্ব পরম্পরার এবং বুদ্ধির বিবে৬ন1৮5 
জগতের শ্রষ্টা পাতা সংহত্তী ইত্যাদি [বশেবণ গুণে কেবল ঈশ্বর উিপান্ত 
হইয়াছেন ৮” * 

রামমোহন বায় কোন নুতন ধন্মের প্রবর্তক বাঁ নুতন মতের সাস্থাপক 
নহেন। এই কারণ যাহারা তাহাকে নধধন্ম-প্রবর্তক বা কোন অন্ভিনব 
মতের আবিষ্কারক বলিয়া উল্লেখ করেন্‌, তীহারা রামমোহন রায়কে প্ররূত . 
পক্ষে সম্মানিত করেন বলিয়া মনে হয় না। কারণ কোন নৃতন ধন্মের প্রব- 
তক না হইয়া, অথবা অবনীমণ্ডলে কোন অভিনব মতবাদ গ্রতিষ্ঠিত না করিয়া, 
তিনি ঘে খধিগণ'প্রদর্শিত পন্থারই অনুসরণ করিয়াছিলেন, এবং অনুসরণ 
করিবার নিনিত্ত স্বদেশীয় মনুষ্যদিগকে আগ্রহ সহকারে উপদেশ দিয়াছিলেন, 
তাহাতেই তাহার যথার্থ মহত্ব প্রভাসিত হইয়া উঠিরাছে। অসামান্ত প্রতিভা, 
অগাধ পাত্ডিত্য, প্রভূত মানপিক শক্তি এবং ক্ষুরধার-তুল্য বুদ্ধি, এই সমস্তই 
রামঘোহনে বিগ্যমীন ছিল। সুতরাং তিনি যে ইচ্ছা কপ্সিলেই অভিনব মতের 

প কাঙা সানমোহণ খায় অথাত খস্থা বলা ৮ পৃষ্ঠ । 





২৬ দয়ানন্দ চরিত। 


উদ্ভাবক বনিয়া পুজিত হইতে পাঁরিতেন, অথবা অদ্বিতীয় ব্রদ্মের অংশাবতার 
কিংবা পুর্ণাবতার-রূপেও অভিহিত বা অভিবাদিত হইতে সমর্থ হইতেন, 
তাহাতে আর সংশয় কি? বিশেষতঃ যে দেশে ইতর জন্তর অর্চনা হয়, যে দেশে 
নিরক্ষর এমন কি নিক্ষ্ট ইন্জিয়াসক্ত মন্তুযুও পরাৎপর পরমেশ্বর বলিয়! পূজিত 
হয়, অথবা যে দেশে বায়সও বিহ্ঙ্গরাজের আসনে অধিষ্ঠিত হয়, আর যে 
দেশের লোক শিবাকে সিংহপদে ব্রণ করিতেও অথুমাত্র কুষ্টিত বা সন্কুচিত 
না হয়, সে দেশে রামমোহন রায়ের মত লোৌকোন্তর-শক্তিশালী ব্যক্তি যে ঈশ্বর 
.বা ঈশ্বরের অবতার বলিয়! পূজিত হইবেন, তাহাতে আর বিচিত্রতা কি? কিন্তু 
আশ্চর্যোর বিষয় তিনি আপনাকে সাধারণ মন্ত্ুয্ের অতিরিক্ত অপর কিছুই 
বলিয়া যান নাই। এতদ্দেশে ধর্মের নামে কিরূপ অধোগতি ঘটে, এবং ধর্মের 
নাম লইয়া মান্ষ কিরূপে ক্রমে ক্রমে ঈশ্বরপদবী পর্য্যন্ত অধিকার করিয়া বসে, 
তাহা তিনি উত্তমরূপ অবগত ছিলেন। এই হেতু ভবিষ্যত্বংশ সম্ভৃত কোন 
ব্যক্তি তীহাকে অভিনব অবতার-গদে প্রতিষ্ঠিত করিয়া, অথব! স্বর্গাগত কোন 
স্থর্-পুরুষ বিবেচনা করিয় তাহার প্রতি অযথোচিত প্রীতি-ভক্তি অর্পণ না করে, 
তন্নিমিত্ত তিনি অতি বিশদ ভাষায় এই বিষয়ে আপনার মনোভাব ব্যক্ত করিয়া! 
গিয়াছেন। তিনি বলিয়াছেন,-"আমি লিখিত কোন গ্রন্থে বা কথিত কোন 
প্রসঙ্গে আপনাকে একেশ্বরবাদের সংস্কারক বা আবিষ্কারক বলিয়া অভিহিত 
করি নাই। অধিক কি, এইকপ পক্কর্লও আমার অন্তরে কখন উদিত হয় নাই। 
পক্ষান্তরে ব্রহ্মোপাসনাই যে হিন্দুজাতির প্রকৃত ধর্ম এবং আমাদিগের পূর্ব 
. পুরুষগণ যে তাহার অনুষ্ঠান করিতেন, এই বিষয় প্রতি গ্রন্থেই গ্রতিপাদদিত 
করিবার চেষ্টা করিয়াছি ।” * বস্তুতঃ ত্প্রচারিত মত নামান্তরে পরিচিত ঝ! 
ধন্মীন্তরে পরিগণিত হইবার পক্ষে তিনি যার পর নাই বিরুদ্ধ ছিলেন। এই 





ক ঢা) 00156 0005 %11100005)1001 10 চোট 5520]2 01500551005 005৪1 ৪৮৪] 
76561006019 78001 0110 01500587176. 010010165 01 1006 12 0 0০9৫, 
2001: 179৮.] 6৬67 255010104 (12 06016 0 1:00011857 01 015002127; 8০ পি 
টিটো 5001 ঠোট 05901011010) ] 1১26. 01160. 11 6৪ ৮01 01201 11255 
701075700 0010115]160) 0৮ 0165 9০000050501 006 01 0£ 000 26769] 
77109099015075 25 0৮016118100 52501800590 5 0৮0 21065009175) 2100 251 
15 6]] 1000৮178561 80110009856 86 10170)5 10207760 13121017017)5, 1২70৫ 
[যো 81010) 1২095 [7208]15]1 ৮005১ 0] [৮17০6 তিনি এইরূপ কথা তাহা'র 


আত্মজীবনবৃদ্ত নামক প্রস্তাবেও ম্পষ্টাক্ষরে বলিয়া গিয়াছেন। 


অবতরণিকা। ২৭ 


কারণ তাহার জীবদ্দশায় তদীয় মত ধন্মাস্তরে পরিগণিত বা পরিণত হইতে 
পারে নাই। *খাহা হউক যে সকল বাক্তি রামমোহন রায়কে অভিনব 
ধর্মের প্রবর্তক খুলিয়া প্রতিপন্ন করিতে ঢাহেন, কিংবা তত্প্রতিষ্ঠিত সমাজকে 
স্বজাতির সহিত সব্ধ প্রকারে ছিন্নসম্পক করিয়া একটি স্বতন্ত্র অম্্রদায়রূপে 
পরিগণিত করিতে ইচ্ছা! করেন; তাহাদগের অন্তরে অগ্রিময় উৎসাহ থাকিতে 
পারে, স্বদেশের নিমিত্ত যথার্থ মমতাও রহিতে পারে, এবং তাহাদিগের হৃদয় 
অনেক পরিমাণে উন্নত বা উদ্ার-ভাব-সম্পন্ন হইলেও হইতে গানে, কিছ্তু জাঁতি- 
গত উন্নতির সুক্ষতত্ব-সম্পকে আমরা তাহাদগকে অনভিজ্ঞ ব্যক্তি বণিয়াই মনে 
করিয়া থাকি । যদি হিন্দুসমাজ-সস্থ্ট কোন লোক রামমোহন রায়কে অহিন্দু 
ঝা শ্রেচ্ছধন্ত্ী বলিয়া অনাদর প্রদশন করেন, তাহা। হইলে আমর! তাহার অজ্ঞা- 
নতা লইয়৷ আলোচনা করিব। কিন্তু তরদীয় মত-সম্পকিত কোন বাক্তি যদি 
তাহাকে হিন্দুসমাজ ঝ। হিন্দুধর্মের বহিভূ্তি বলিয়। পরিগণিত খরিতে ইচ্ছ! 
করেন, তাহা হইলে আমর! তাহার জাতীয় হিত-কামনা সম্বন্ধে খার গর নাই 
সন্দিহান হইয়া থাকিব। | 

তাহার মত আধ্যধর্ম্বের সহিত এক বা অভিন্ন বটে। কিন্তু তদবলম্বিত 
প্রচারপদ্ধতি আধ্যভাবের সম্যক অন্ুসারিণী নহে। তিনি শ্রন্মবাদ প্রতি- 
স্টার উদ্দেশে বেদাস্তকে বিশিষ্টরূপে অবলম্বন করেন, কঠাদি পঞ্চোপনিষদ্‌ 
অস্থুবাদের সহিত প্রচারিত করেন, এবং শান্ত্রায় বিচারে সর্বোপরি এরতির 
প্রামাণিকতাও প্রতিষ্ঠিত করি৷ চলেন বটে, কিন্ত তথাপি তাহার প্রচার-প্রণালী 
সর্ধাংশে আর্ধ্য-প্রকৃতির অন্থবর্তিনী হইতে গারে নাই। কারণ ভারতীয় 





* রামমোহন রায়-প্রতিষ্ঠি ত সমাগ ব্রদ্ধীনভ। ঝ| ব্রাঙ্গদমাজ নামে আগাযাত হইত,কিন্ত 
তৎ-প্রচারিশ মত ব্রাঙ্গধন্ম নামে আখ্যাত হহত ন1। তাহ! তখন "বেদান্ত প্রতিপাদ্য সতযাধরন্্? 
নামে অভিহিত হইত । তিনি লোকান্তরিত হইবার পর অনেক দিন পয্প্ত তদীয় 
মত এ নামেই পরিচিত ছিল । তাহ!র পর এ নাম পরিবর্তিত করিবার অভিপ্রায়ে ১৭৬৯ 
শকের ১৫ই দোষ্ঠ তারিখে কলিকাত। ব্রাঙ্মদমাজ-গুছে একটি সভা আহুত হয়? এবং মেই 
সভাতেই “বেদান্ত প্রতিপাদা সভাধশ্ম” নামের পরিবন্তে ব্রাঙ্গধন্ম নাঁম পরিগৃহীত হয় । 
তদবধি রামমোহন রায়-প্রচারত মত ব্রাক্মধন্ম নামেই অভিহিত হইয়া আসিতেছে । তত্ব- 
বেোখিনী পাত্রকা ১৭৬৯ শৃক-_অগ্রহায়ণ--১১৪ পৃষ্ঠা । বধুন। যাহ। ত্রান্মধশ্ম নামে আঁখাত» ৯ 
তাহার সহিত রামমোহন রায়-প্রচ।রিত মতের যে.কান কোন অংশে পথক্য আছে, 

তাহ।র আর সংশয় নাই। 


২৮ দয়ানন্দ চরিত । 


বঙ্গবাদ ঘেরূপ বিশিষ্ট, ভারভীর ব্রহ্গবাদের আচাধ্য-পদও সেইরূপ বিশিষ্ট । 
সংসারকে অনিত্য জ্ঞান না করিলে থে দেশে ধর্মবুদ্ধির উন্মেষ হয় না, প্রন্কৃত 
পঙ্গে জিজ্ঞান্থু না হইলে থে দেশে ধর্মে অবিকার জন্মে না, নির্ম্ল-চিন্ততার 
অভাবে বে দেশে ধন্ম তত্ব নিকূপিত হর না; অধিকন্ত বিজিভেন্টরিয় বা! ব্রহ্গচর্যা- 
পরায়ণ হইতে না পাপ্িলে যে দেশে বর্মসাধন সর্বতৌভাবে অসস্তবএমন কি 
থে দেশের সাধনমার্গ শাণিত ক্ষুরধার তুণ্য মাতিশর শঙ্কটাপন্ন, সে দেশে ধন 
চাষোর পদবী বে যার পর নাই ছুরূহ ৪ দায়িত্বসাপেক্ষ, তাভার আর সন্দেহ 
কি? সর্ধলোক-পুজিহ শ্রুতিই বে দেশের বন্ধশান্্র বলিয়। পরিগণিত, অঙ্গিরাঁদি 
মঞাধিগণ থে দেশের ধন্মাচার্য্য বলিয়! প্রপিদ্ধ, ব্যাসাৰি বিশ্ববিশ্রত মহারথগণ থে 
দেশের ধর্মব্যাখাতা বলির! কথিত, কণাঁদাদি কুশাগ্রবৃদ্ধি মনস্িগণ যে দেশের 
তন্বশীমাংসক বলির! সমাদূত, মন্বাদি মহাঁভাগগণ যে দেশের সামাজিক ব্যবস্থা- 
পক-পদদে প্রতিষ্টিত, এবং শঙ্করাঁচার্ধ্য ও রামান্ুজ প্রতিতির মত মহাঁপুরুষগণ যে 
দেশের ধর্ধ- প্রবক্তা বলিগা প্রথিত : সে দেশে ধর্শীগ্রচারকের পদ-পরিগ্রহণ বে 
বিশিঃ শক্তি ও বিশিষ্ট সাহসিকতার পরিচায়ক, তাহাতেই বা সংশয় কি? এখন 
রামমোহন রার ভারতীয় ধন্মাচার্যোর পদাভিযিক্ত হইবার উপযুক্ত কি না, 
তাহাই এই স্থলে বিচাধ্য। কেবল স্বজাতির নিকট নহে,_অধিকম্ম বিদেশে 
বিজাতির নিকটেও রামমোহন রায় যে আপনার বিদা, বুদ্ধি, পাগ্ডিতা, প্রতিভা 
বা মনস্থিতা সম্পর্কে একজন অসাধারণ ব্যক্তি বলিয়া পরিগণিত, তদ্বিষয়ে 
কাহারও ভিন্ন মত নাই। এমন কি তীয় সমাগমমুহূত্ভ যে ভারত-ভূমির পক্ষে 
একান্ত শুভ-মৃহর্ভ, এবং তদীয় শুভ-সমাগম নিমিত্তই যে ভারততভূমি বারম্বার 
লাঞ্ছিত বা অপমানিত হইয়াও জগতের সম্ীবিত জাতিসমূহের নিকট আজি ৪ 
গৌরন-পনবী অধিকার করিয়া রৃহিরাছে, তদধিষয়েও কোন অতান্তর নাই। * 





বরন নগর রামমোহন বায়ের মৃত্যু উপলক্ষে অনেক সভা সমিতির অধিবেশন হয়। 
দেই সকল সভা সমিতিতে ইংলওর অনেক স্থপ্রসিদ্ধ ব্যক্তি রাঁজার গুণশ্রাম সম্বন্ধে নাঁনারূপ 
আলোচনা করেন। মেরি কাপেন্টার তদীয় রামমোহন রায়-বিষয়ক গ্রন্থে সেই সকল 
আলোচন।র অধিকাঁংশই লিপিবদ্ধ করিয়া রাখিয়া-ছন। সেই সকল আলোচনার ভিতর 


. একজন ছপগডিত ও সদাশয় ইংরাঁজ বলিয়ী-ছন- 90280511516 ঠা ও0ট ও ঢালা 
570801010৮6 7366] 81৮60 0৮170012100 006 0110, ৮ ক ৯9020660162 
টন] খিক 00001 00019 50 01৮1 250] ঢা2107 5৩, জিত 110০ 


অবতর।ণকা1। ১৯ 


কিছ্ছ তাহান্র সমুজ্জল প্রতিভা, সুশাণিত মেধা, অব্বশাস্্া্থগামিনী বিদা। এবং 
অদ্ভূত মনশ্থিতার সহিত যদি ত্রঙ্গচষ্য ও বিষয়বিরাগিতার সমাবেশ থাকিন্ত. - 
এক কথায় তনি যদি আঁপনাঁকে বিষয়-সংস্থ্ট বা বিষয়াঁসক্ত বাক্তির মধো 
পরিগণিত করিয়া না তুলিতেন, ভাঁহা হইলে ভারকমগ্ুল পরিবৃন্ত চন্্মীর ন্যায় 
ভিনি যে ভারতীদ্ব ধন্মমগুলে অদ্বিতীয় ধর্ম-গ্রবক্তীবর আসন অধিকার করিয়া 
থাকিভেন, তাহাতে অগুমারও সন্দেহ নাই। কিন্ত বঙ্গভূমির ছরদুষ্ট বশতই 
হউক,অথবা অন্ত বে কোন কারণেই হউক,উাতার পক্ষে তাহা ঘটিনা উঠে নাই। 
আর্ধাজাতির ধর্শ-প্রবক্তা বা ধন্মীচার্ধা-পদে কঠোর তপস্তা চাই, জলন্ত বৈরাগ্য 
চাই, এবং বিষরতৃষণ বা বৈষয়িকতার সভি্ত সব্ধ প্রকার সঙ্বন্ধ ছাড়িয়া দেওয়া 
ই। নচেৎ কোন ব্যক্তি ইচ্ছা করিলে জ্ঞানাপন্ন হইতে পারেন, গ্রথিত-নাঁমা 
পশ্ডিত হইতে পারেন, কিংনা মেধা 'ও মনস্ষিতা সম্পকে লৌকছদয়ে বিস্ময়োৎ 
পাদন'ও করিছহে পারেন, কিন্ত ভিনি এত্রদেশে ধন্মচাধ্য বা ধঙ্-প্রচারক 
বলির। পরিগণিত হইতে পারেন না। এই কারণ হদয়ের উদ্দাম আকাজ্া সত্বেও 
ভারতীয় ব্রহ্গবাদের ইতিবৃত্তে আমরা রামমোহন রায়কে আা্য, সংস্কারক, 
ঝ। প্রচারক-পদে'ও বরণ করিতে পারিলাম না। তিনি হ্ষবাদের একজন 
হাঁয়ক-_বিশিষ্ট সহারক ভিন্ন অপর কিছুই নহেন । * যাহা হউক তদবলস্থিত 
প্রচারপদ্ধতি যে হিন্দু ভাবের সম্যক অনুসার্রিণী নয় কেন, ভ্তাহা এখন বুঝা 
গেল। আর সেই সঙ্গে তত্-প্রবর্তিত ব্রহ্ষবাদ-বিষয়ক ব্যাপার যে সর্দাতোভাবে 
জাতীয়তার সহিত সন্গদ্ধ নহে, তাহাঁও একরপ গ্রতিপাদিত হইল। 
এত্ত্তিন্ন এই ব্ষয়ে আর একটি কথ! আলোচিত হওয়া আনশ্তাক। সে 
কথাটি এই,__এতদ্দেশে অক্মাবাদ ধিিরিগিত করিবার উদ্দেশে বামমোহন বায় 


ন্ধ এই বিষয় তিনি নিজেই উত্তমরূপ বুঝিতেন, এনং এরিভি আংপন।কে ব্রঙ্গবাদের 
সংক্ষীরক-ব। প্রচারক বলিয়া কখন স্বীকার করিতেন না। তভ্তিন্ন ব্রলজ্ঞানীর করব্য কাদ্য 
সকল পালন করিতে ন। পারিয়া তিনি ষে আক্ষেপ প্রকাশ করিতেন, তাঁহারও পরিচয় 
পাওয়াযায়। তিনি ঈষেপনিষদের ভূমিকায় বলিয়াছেন_-“এ যথার্থ বটে যে যেরূপ 
কর্তব্য এ ধর্থের তাহ! আমাদের হইতে হয় নাই তাহাতে আমরা সর্বদা সাপরাধ আছি।” 
এমন কি “সম্যগনুষ্ঠানাক্ষম তজন্য মনস্ত!প-বিশিষ্ট” ইত্যাদি শব্ধ দ্বারা তিনি আপনাকে 
অভিহিত কার'তও অপুমানত্র কুষ্ঠিত. ভইতেন না! এই সকল সেই মহাপুরুষ 
পক্ষে সত্য মহাই সরলতার পরিচায়ক বলিতে হইবে | রামন্মাহন রায়ের গন্থাধ্লী 
১৫১ পৃষ্ঠা । 





৩০ দয়ানন্দ চরিত। 


কিকি করিয়া গিরাছেন। ইহার মীমাংসার্থ তদকুষ্ঠিত কার্যের বিচার ঝা 


বিশ্লেষণ পূর্বাক আমরা এই স্থলে ইহা উল্লেখ করিতে পারি যে, এক দিকে . 


ত্রন্মোপাসনার আবশ্তকত] প্রতিপাদন,এবং অপরদিকে নির্দিষ্ট দিবসে ও নিয়মিত 
সময়ে সর্বসাধারণ লোকের সহিত সম্মিলিত হইয়। পরক্রহ্মের উপাসনার্থ 
্রহ্মসভা সংস্থাপন ভিন্ন তিনি অন্ত কিছুই করেন নাই। কিন্ত ব্রহ্মবাদ প্রতিষ্ঠিত 
হইবার পক্ষে ইহা বখোচিত বলিয়: মনে করি না। কারণ মন্গুয্যের সমাজ 
বা চরিত্ররূপ ভিত্তির উপর ধর্মকে প্রতিষ্ঠিত করিতে না পারিলে, অথবা মনু 
ধ্যের নিত্য-নিয়তানুষ্ঠিত কার্ধ্য সকল ধর্মস্থত্রে অনুস্থযত করিয়া ন! দিলে, ধর্ম 
মন্থধ্যমগ্ুলে পরিঘোষিত হয় বটে, কিন্তু পাষাণভূমি-প্রক্গিপ্ত বীজের স্াক় 
তাহা! অতি অল্পকাল মধ্যেই শুফ ও বিলুপ্ত হইয়। যার। পরিতাপের বিষয় যে, 
রামমোহন রায় ততপ্রচারিত ব্রহ্মবাদকে এইরূপ স্থদৃট ও সুনিশ্চিত ভিত্তির 
উপর সংস্থাপিত করিবার উদ্দেশে কিছুই করিয়! যাইতে পারেন নাই। * বস্ততঃ 
রামমোহন রায় যাহা করেন নাই বা কৰিতে পারেন নাই, তাহা করিবার 
নিমিত্তই দয়ানন্দের আবির্ভাব। 

দয়ানন্ন বলিয়াছেন,__-“আমি ব্রাক্মণ কি না, এই কথা অনেক লৌক জিজ্ঞাসা, 
করেন,এবং তাহার প্রমাণন্বরূপ কোন আত্মীয়-কুটুম্বের নামোল্লেখ করিতে অথবা, 
তাহাদিগের কাহারও লিখিত কোন পত্র প্রদর্শন করিতে অন্থরোধ করিয়া, 
থাকেন। বলা বাহুল্য যে, গুজরাটবাসী লোকদিগের সঙ্গেই আমি অধিকতর 








* তক্তিভাজন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয় এই বিষয়ে কতকটা প্রয়াম পাইয়াছেন। 
কিন্তু তাহার প্রয়াস কত দূর সার্থক হইয়ছে জানি না। তৎ্সঙ্কলিত অনুষ্ঠান-পদ্ধতি 
ব্রাঙ্মদাধারণের ভিতর পরিগৃহীত হইয়াছে কি ন। বলিতে পারি না। অধিক কি. তৎ- 
সংস্থষ্ট সম্প্রদায়ের সকলেও তাহ! গ্রহণ করিয়াছেন কিনা সন্দেহ-স্থল। এইরূপে অনুষ্ঠ।ন- 
পদ্ধতির সন্কলন ও অন্ান্ত উপায়ে তিনি রামমোহন রায়ের রোপিত বৃক্ষকে পল্পবিভ 
করিবার নিমিত্তও চেষ্টা করিয়াছেন। কিন্তু তাহার সে চেষ্টাও কিরূপ সফল হইয়াছে 
বলিতে পারি না। যাহ! হউক তিনি যে একদিকে ব্রদ্ধ ও ব্রন্মোপাননার নামে সহস্র সহস্র 
মুদ্রা অকাতরে ব্যয় করিতেছেন, এবং আপনার জীবনকে ব্রহ্গনিষ্ঠঠ ও সতাপরায়ণতার 
একট জীবন্ত উদ্রাহরণ করিয়। রাখিয়াছেন, তদ্বিষয়ে সন্দেহ নাই । ফলতঃ ভাহার মত 
্র্মনিষ্ঠ ব্যাক্ত ভারতবর্ষীয় তৃম্বামীদ্িগের ভিতর নাই বলিলেই হয়। কেবল ভূম্বামী- 
সম্প্রদায়ের কথাই বলি কেন ? তাহার মত ধর্ম-পরায়ণ ব্যক্তি সাধারণ মনুষ্যশ্রেণীর মধ্যেই 
ব। কয় জন আছেন » 


4 


অবতরণিকা। ৩১ 


অন্থরাগ-সছত্রে নিবদ্ধ আক্মীর-কুটুম্বগণের সঙ্গে ঘণি কোন প্রকারে আমার 
সাক্ষাৎ ঘটে, তাহা হইলে ঘে সাংসারিক অশান্তি হইতে আমি আপনাকে 
সর্বতোভাবে স্বতন্ত্র করিয়াছি, আমাকে পুনরায় নিশ্চই নেই অশীন্তিজালে 
জড়িত হইতে হইবে। এই কারণ আত্মীয়-স্বজনদিগের নামোল্পেখ কিংবা 
তাহাদিগের কাহারও কোন পত্র প্রদশন বিধেয় বণিয়! বিবেচনা করি না। 
“আমি মর্ভিতে জন্ম গ্রহণ করি, মর্ডি একটি নগর,উহা! গুজরাটের 
অন্তর্গত দ্রুগান্ধ। রাজের সীমান্তবর্তী। আমি উদীচ্য শ্রেণীস্থ ব্রাঙ্মণ॥ উদীচ্য 
ত্রাঙ্মণগণ সামবেদাস্তগ্গত হইলেও আমি যজুব্ধেদে শিক্ষিত হই। আমি 
যে পরিবারে জন্ম গ্রহণ করি, তাহা! একটি বিস্তৃত সম্প্ভি-সম্পন্ন পরিবার । 
আমার এখন বয়ঃক্রম উনপঞ্চাশ কিংবা পরশ বৎসর। আমাদিগের সংসার 
এখন পনরটি পুথক পৃথক পরিবারে বিভক্ত । আমি বাঁলাকালে রুদ্রাধ্যায় শিক্ষা 
পূর্বক যজুর্ধেদের পাঠারস্ত রুরি। পিতা শৈবমতাঁবল্বী ছিলেন বলিয়৷ আমি দশম 
বৎসর বরঃক্রম হইতে শিবৌপাঁসনা করিতে অভ্যন্ত হই। আমি শিব-রাত্রির 
ব্রতাবলম্বন করি, পিতা এইরূপ ইচ্ছা করিতেন। আমি পিতৃ-ইচ্ছা পাঁলনে 
অসম্মতি প্রকাশ করিলেও আমাকে বাধ্য হইয়া শিবরাত্রির ব্রত-কথ! শুনিতে 
ত। শুনিতে শুনিতে সেই ব্রত-প্রসঙ্গ আমার নিকট এতদূর গ্রীতিকর বোধ 
হইতে লাগিল যে, মাতার অসন্মতি সন্বেও আমি সেই ব্রতাবলপ্ধন করিতে কৃত- 
সঙ্কল্প হইয়া! উঠিলাম। কৃতসংস্কল্ন হইলেও আমি কিন্তু সেই ব্রত উদ্বাপন 
করিতে সমর্থ হই নাই। নগরের বহির্দেশে একটি বিশাল শিবমন্দির ছিল। 
তথায় শিবচতুর্দশীর দ্রিন বহু লোক সমাগত হইতেন। একদা শিবরাত্রি 
উপলক্ষে আমি, আমার পিতা ও অন্তান্ত বহুতর লোক সেই মন্দিরে সমাগত 
হইলাম। তথায় মহাদেবের প্রথম পূজা হইয়৷ গেলে পর যখন দ্বিতীয় পুজাও 
সমাপ্ত হইল, তখন রাত্রি প্রায় দ্বিতীক্ গ্রহর। মন্দিরাগত উপাসকগণ ক্রান্তি- 
হরণের নিমিত্ত কিছুক্ষণ করিয়া নিপ্রাগত হইবাঁর উদ্দেশে এক জনের পর আর 
এক জন করিয়া শয়ন করিতে লাগিলেন। বলা বাহুল্য, আমার পিতাও 
কিছুক্ষণের জন্য নিদ্রাগত হইলেন। ইতোমধ্যে পুরোহিতগণও মন্দির হইতে 
চলিয়া গেলেন। পাছে ব্রতভঙ্গ-নিবন্ধন নির্দিষ্ট বা অভিলধিত ফললাভে 
বঞ্চিত হই, আমি এই আশঙ্কায় নিদ্রিত হইতে পারি নাই। যাহা হক 


৩১ দয়ানন্দ চরিত । 


শিদ্রাবশতঃ মন্দির নিশ্তপ্ধ হইলে পর কতকগুলি মৃধিক গর্ভ হইতে বর্িত 
হইর। মহাদেবের গান্রোপরি স্বেচ্ছামত বিচরণ ও তাহার মন্তকন্থিত চাউলাদি 
শঞ্ষণ করিতে লাগিল । আমি জাগ্রত থাকায় এই ব্যাপার দেখিতে লাগিলাম 
খটে, কিন্তু গত পিবম শিবরাত্রির বে ব্রতোপাথ্যান শ্রবণ করিয়াছিলাম, তাহাতে 
মহাবেবকে একজন মহাপ্রতাপাদ্বিত পুরুষ বলিগাহ ধারণা হইয়াছিল। এই 
কারণ এই ব্যাপার দেখিয়। অবধি আমার সরল অন্তঃকরণে এই প্রশ্ন উত্থাপিত 
হইল যে, কত শত দুদ্দমনীয় দানব সংহারেও ধিনি সমথ্‌, ভিনি আপনার দেই 
হইতে কএকট। সুধিক বিদুরিত করিতেও সমর্থ নহেন কেন? এই প্রশ্ন বহুক্ষণ 
ধরিয়। আমার মস্তিষ্ককে আলোড়িত করিতে লাগিল, এবং পরিশেষে প্রগাঢ্ 
সংশরে পরিণত হ্ইয়। আমাকে এতদূর অশান্ত করিয়া তুলিল যে আমি পিতার 
নিদ্রাভঙ্গ না করির থাকিতে পারিলাম না। পিতা জাগ্রত হইলে এই প্রশ্ন 
সিজ্ঞাপা করিলান, এবং মহাদেবের দেহ হইতে মুষিকগুলিও তাড়াইয়া দিতে 
বলিলাম। গ্রিজ্ঞ।সিত প্রশ্নের উত্তরে পিতা বলিলেন,--“তুমি অগ্পবুদ্ধি বালক! 
ইহা যে কেবল মহাদেবের মৃত্তিমাত্র।” পিতার এবদ্বিধ উত্তরে আমি পরিতুষ্ট 
হইতে পারিলাম না। এই নিমিত্ত আমি সেই স্থানে ও সেই ক্ষণে প্রতিজ্ঞা 
করিলাম বে, যদি আমি ত্রিশুলধারী মহাদেবকে দেখিতে না পাই, তাহা হইলে 
আমি কোন মতেই তাহার আরাধনা! করিব না। 

“এইবপে ক্কৃত-প্রতিজ্ঞ হইয়া গৃহে ফিরিয়া আসিলাম, এবং যার পর নাই 
ক্ষুধাত্ত ছিলাম বলি! মাতার নিকটে আহারীয় দ্রব্য চাহিলাম। তছ্ত্তরে নাত 
বলিলেন_-“আমি ত তোমাকে ব্রত-গ্রহণ করিতে নিষেধ করিয়াছিলাম। 
কারণ আমি জানিতাম যে তুমি উপবাস করিয়া থাকিতে পারিবে না। তুমি ত 
নিজেই জেদ্‌ করিয়া ব্রতগ্রহণ করিয়াছিলে।” তাহার পর আমার আহারার্থ 
যে সকল সামগ্রী প্রস্তুত ছিল, তাহা উপস্থিত পূর্বক, যাহাতে আমি আপাততঃ 
ছুই দিখস কাল পিতার স্মক্ষে উপস্থিত না হই, অথবা! তাহার নিকট কথা- 
মাত্রও উচ্চারণ না করি, তদ্বিষয়ে মাতা আমাকে পরামশ প্রদান করিলেন। 
কেননা পিতার নিকট উপস্থিত হইলে বা কোন কথা বলিলে এই অপরাধের 
নিমিত্ত আমাকে শাস্তি প্রাপ্ত হইতে হইবে বলিয়াই তাহার বিশ্বাস ছিল। 
এদিকে আমি আহার কাধ্য সম্পাদন পুর্ধক এব্প প্রগাট়ভাবে নিদ্রিত হইয়া! 


অবতরণিকা। ৩৩ 


পড়িলাম যে, পরদিন প্রাতঃকালে আট ঘটিকার পূর্বে কোন মতেই শব্যাত্যাগ 
করিতে পারিলাম নাঁ। পরিগৃহীতি ও গ্রভ্ৃত পাঠ অভ্যাস করিবার পক্ষে বিশ 
ঘটিবে বলিরা আমি ত্রতভঙ্গরূপ অপরাধ করিয়াছি, এই কথা পিতামহ-মহাশরকে 
বুঝাইয়া বণিলাম, এবং তিনিও সেই কথাই বুঝাইয়া। বণিয়া পিতার কোপ-শাস্তি 
করিলেন। আমি দে সময়ে যঙুব্রেদ পাঠ কখিতেছিলাম, এবং পণ্ডিত 
বিশেষের নিকট সংস্কৃত ব্যাকরণ শিক্ষা করিতাম। আমার বয়ংক্রম যখন 
নবম কি দশম বতমর্, তখন যন্জুব্রেদ সাঙ্গ করিয়া আমার পাঠক্রিরা সমাপ্তির 
নিমিত্ত আমাদিগের জনাদারির অন্তত গ্রামবিশেষে গমন করিলাম । 
“আমাধিগের গৃহে একবার ঘটনাবিশেষ উপলক্ষে নুতাগীত হইতেছিল। 
কিন্তু সেই স্মরে আমার একজন সহোদরা সাংঘাতিক রূপে পীড়িতা হ্য়। 
আমি পীড়ার সংবাদ শনির! তাহার শয্যাপাস্থে উপস্থিত হইলাম। ইতঃপুর্ে আমি 
কখন কোন লোককে মৃত্য্ু-বন্্ধার নিগীড়িত হইতে দেখি নাই । ফলতঃ আমি 
সেই সহোদরার আসন্ন দশা! দশনে একান্ত বাথিত হইলাম, এবং মন্য্য-মাত্রকেই 
যে এইবপ ভাবে মৃত্যুুখে পতিত হইতে হইবে, তাহাও বুঝিতে পারিলাম। 
তাহাকে মুমূযূ দেখিরা আমি ভিন্ন, পরিবারস্থ মকলেই বিলাপ ও রোদন করিতে 
লাঁগিলেন। তজ্জন্ত পিতা, এমন কি মাতাও আমাকে পাধাণ-হৃদূয় বলিয়! 
অভিহিত করিলেন। আমি যে সেই অদৃষ্ট-পর্বব ঘটন। দর্শনে যাঁর পর নাই 
আতঙ্কিত হইরাছিলাম, এবং তগ্নিমিত্তই থে ভীহাদিগের মত বিলাপ বা 
অশ্রপাত করিতে পারি নাই, তাহা বল। বাহুল্য মাত্র। তাহার পর তীহা 
দিগের আন্ঞান্থুদারে আমি শবার বাইয়া নিদ্রিত হইবার চেষ্টা করিলাম বটে, 
কিন্তু কিছুতেই নিদ্রিত হইতে পারিলাম না। যাহ! হউক, এরূপ শোকাবহ 
ঘটনা আমার সমক্ষে কএকবার সংঘটিত হইলেও আমি তনিমিন্ত আমাদিগের 
দেশের অদ্ভুত রীতি অন্ুসান্রে একবারও শোক প্রকাশ করিতে পারি নাই। এই 
কারণ আত্মীয়-পরিজনদিগের নিকট আমি নিন্দার পাত্রও হইয়াছিলাঁম। আমার 
নবম বত্দর বয়তক্রমের সময় পিতামহ বিশ্চিকা ব্যাধিগ্রস্ত হইয়া প্রাণত্যাগ 
করেন। পিতামহ যখন মুমূরু-দশাপন্ন, তখন আমাকে আহ্বান পূর্বক আপ- 
নাঁর শব্যাপার্থে উপবিষ্ট হইবার নিমিত্ত আদেশ করিলেন, এবং আমার মুখের 
প্রতি স্থির দৃষ্টিপাত পুর্বক অবিরল ধারায় অশ্রপাত করিতে লাগিলেন । আমিও 


৩৪ দয়ানন্দ-চরিত। 


তাহাকে তদবস্থ দেখিয়া এতর্দুর ব্যথিত হইয়া! পড়িলাম যে, অতিমাত্র ক্রন্দনে 
ক্ষয় স্ফীত করিয়া ফেলিলাম। বস্তুতঃ এই ঘটনার পূর্বে আমি কখন এরূপ 
রোদন করি নাই। এতত্িন্ন, আমাকেও যে এইরূপ ভাবে কালগ্রাসে পতিত 
হইতে হইবে, তাহাও সেই ঘটনার পর হইতে চিন্তা করিতে লাগিলাম। মৃত্যু- 
চিন্তা! যখন ক্রমশঃ প্রবলতর হইর! উঠিল, তখন কি উপাঁর অবলম্বন করিলে 
অমরত্ব লাভ কর! যাইতে পারে, তদ্বিষয় আত্মীয়-বান্ধবদিগকে জিজ্ঞাসা করিতে 
লাগিলাম। স্বদেশস্থ পণ্ডিতগণ আমাকে যোগাভ্যাস করিতে পরামর্শ দিলেন । 
.স্বৃতরাং আমি গৃহ-পরিত্যাগে কৃতসংকল্প হইলাম । তৎকালে আমার বয়ঃক্রম 
বিংশতি বত্সর। আমাকে শান্ত ও স্বচ্ছন্দচিত্ত করিবার উদ্দেশে পিত। 
জমাদারি কার্য্যের ভাঁরার্পণ করিতে ইচ্ছা করিলেন বটে, কিন্তু আমি তাহাতে 
সম্মত হইলাম না। পিতা তখন আমাকে বিবাহ-শৃঙ্খলে নিবদ্ধ করিবার নিগিত্ত 
কৃত-সংকল্প হইয়া উঠিলেন। বিবাহের কথা উখ্যাপিত হইলে আমি আত্মীয়- 
বন্ধুদিগকে বলিতাম যে কখন বিবাহ করিব না। কিন্তু তাঁহারা তাহার 
প্রতিবাদ করিতেন। বিবাহের নিমিত্ত বান্ধবগণ কর্তৃক যখনই অনুরুদ্ধ 
হইতাম, তখনই তহাদিগের নিকট বিবাহের পরিবর্তে গৃহত্যাগের অন্ুমতি 
প্রার্থনা করিতাম। দেখিতে দেখিতে এক মাসের ভিতরেই বিবাঁহোপযোগী সমস্ত 
বিষয় প্রস্থত হইয়া উঠিল। আমি তত্র্শনে একদিন সায়ংকালে বন্ধুবিশেষের 
সহিত সাক্ষাৎ করিতে যাইবার উপলক্ষ করিয়া গৃহ হইতে নিষ্ছ্ান্ত হইলাম। 
নিকটস্থ একটি পল্লিতে রাত্রি যাপন পূর্বক অতি গ্রত্যষে গাত্রোথান করিয়া 
পুনরায় চলিতে লাগিলাম। 

“কিছুক্ষণ পরে মরোটির মন্দিরে উপনীত হইলাম । বলা বাহুল্য, সহজ 
পথ অবলম্বন করিয়া চলায় আমাকে দশ ক্রোশ কম হাঁটিতে হইল। সেই 
মন্দিরে কিছুকাল অবস্থান পূর্বক জলযোগ করিলাম, এবং তথা হহতে শৈল! 
যোগীর উদ্দেশে প্রস্থান করিলাম। কিন্তু আশানুরূপ ফল লাভ করিতে না 
পারায়, তাহার নিকট গমন করা আমার পক্ষে বৃথা হইল। লাল! ভকত, 
একজন যোগী বলিয়া পরিচিত। এই কারণ আমি অতঃপর তাহার অনুসন্ধানে 
চলিলাম। পথিমধ্যে একজন বৈরাগীর সঙ্গে সাক্ষাৎ ঘটিল। বৈরাগীর নিকট 
কতকগুলি বিগ্রহ ছিলেন। বৈরাগী আমীকে শ্বর্ণালঙ্কার-ভূষিত দেখিয়া বলি- 


আঅবতরণিকা। ৩৫ 


লেন,-তোমার মত ব্যক্তির পক্ষে ধোগাভাম সম্ভব নহে। আমার অঙ্গুলি, 
নিবন্ধ স্বণন্থ্রীয়ক-গুলি যাহাতে সেই বিগ্রহাদিগকে অপণ করি, হগ্নিশিস্ত তিনি 
আমার নিকট গ্রস্তাবও করিলেন । যাহা হউক আনি লাল! ভকতে নিকট 
োগাভ্যাসে প্রবৃত্ত হইলাম। একদিন রাত্রিকালে বৃক্ষতলে উপবিই হইয়া 
ঘোগাভাস করিতেছি, এমন সময় বুক্ষোপরিস্থ বিহঙ্গবিশেষের বিকট ধ্বনি 
শ্রতিগোচর হইতে লাগিল। আমি তাহা শুনিঝ্। অতান্ত ভীত হইলাম, এবং 
বাধ্য হইয়। মঠে প্রত্যাগমন করিলাম। আহাম্মাদাবাদ নগরের নিকটস্ত 
স্থানবিশেষে কতকগুলি বৈরাগী আছেন শুনিয়া, আমি লালা ভকতের 
নিকট হইতে সেই স্থানাভিযুখে যাত্রা করিণাম। তথাকার বৈরাগীদিগেকর 
ভতর একজন রাজমহিষী দেখিলাম । সেই রাজমহিষী কোথাকার তাভা 
বলিতে পারি না । কিন্ত তিনি আমার সহিত পরিহাসাদি করিতে গ্রবৃত্ত 5ওয়ায়, 
তাহার সান্নিধ্য হইতে আমি দুরে থাকিতে লাগিলাম । আমার পরিধানে রেশম- 
নির্মিত বন্ধ ছিল, তাহ! দেখিয়! বৈরাগিগণ অনেক সময় হান্ত করিতেন। এই 
কারণ আমি তাহ! ফেলিয়! দিলাম, এবং সামান্ত বস্ত্র কিনিয়! আনিয়। পরিধান 
করিতে লাগিলাম। তখন আমার নিকট তিনটি মাত্র টাকা অবশিষ্ট রহিল। 
যাহা হউক,আমি সেই স্থানে ব্রহ্মচারী আখ্যা আখ্যাত হইলাম । তথায় তিন মাস 
কাল অবস্থান পুর্ধক আমি কান্তিক মাসের একদিন সিদ্ধপুরে আগমন করিলাম । 
কারণ এ সময়ে সিদ্ধপুরে একটি মেলা বিবার কথা৷ ছিল। অধিকস্ সেই 
মেলা উপলক্ষে অনেক যোগবিদ্যা-বিশারদ যোগীর সমাগম হইতে পারে, এবং 
অমরত্ব লাভ করিবার পঙ্গে আমি তাঁহাদিগের কাহারও নিকট কোনরূপ 
উপদেশ প্রাপ্ত হইতে পারিব, এইরূপ. আশা! করিয়াই সিদ্দপুরে উপস্থিত 
হইলাম। দিদ্ধপুরের পথে কোন পূর্বব-পরিচিত ব্যক্তির সহিত আমার সাক্ষাৎ 
ঘটিল। ছুঃখের রিষয় যে, মেই পরিচিত ব্যক্তি পিতার নিকট যাইয়া আমার 
পলায়ন সংবাদ প্রদান করিলেন। ইতোমধ্যে জ্ঞাতি ও. বন্ধুবর্গ চতুদ্দিকে 
আমার অনুসন্ধান করিতেছিলেন। সুতরাং তীহার মুখে সিদ্ধপুর-যাত্রার 
ংবাদ শুনিবামাত্র পিতা, চারি জন সিপাহী সমভিব্যাহারে একদিন 
আমার নিকট আসিয়া উপস্থিত হইলেন। পিতার এইরূপ আকস্মিক 
উপস্থিতিতে আমি একাস্ত ভীত হইয়! মনে করিতে লাগিলাম ত্য, তিনি হয়ত: 


৩৬ দয়াননা'চরিত। 


আমার গ্রতি যার পর ন।ই নির্দয় ব্যবহার করিবেন । ভঙ্সিমিত্ত আমি পিড়- 
সনক্ষে প্রণত হইয়। বণিলাম যে, একজন গৌসাই কত্তৃকি প্রলুব্ধ ও পরিচালিত 
হইয়। এই স্থানে উপস্থিত হইয়াছি। কিন্তু তাহা হইলেও আমি গৃহে যাই 
সম্মত আছি। তাহা শুনিয়া পিতার কোপ-শান্তি হইল বটে, কিন্ত তিনি 
আমার কাষ্ঠনিশ্িত পাত্র ভাঙ্গিয়া ও পরিধেঘ় বস্থ ছিঁড়িয়া দিলেন, এবং 
সচরাচর-পরিহিত বন্্ পরিধান কদিবার নিমিত্ত অন্থমতি করিলেন। আর 
আমি পুনরায় পলায়ন করিতে না পারি, তন্লিমিত্ত ছুইজন সিপাহী সব্বদ। 
আমার নিকট নিয়োজিত রাখিয়া! দ্িলেন। অধিক কি, তাহাঁদিগের এক জন 
না এক জন সমস্ত রাত্রি আমার পার্থে বণিয়। থাকিতে লাগিল। কিন্তু আমিও 
এদিকে প্রস্থানের স্থবৌগ প্রতীক্ষা করিরা রহিলাম। সিপাহী নিদ্রিত ভম়্ 
কি না দেখিবার জন্য সমস্ত রাত্রি জাগ্রত থাকিতে লাগিলাম্‌। অথচ 
আমার কৃত্রিম নাসাধ্বনি শ্রঝণে সিপাহী মনে করিয়া লইত যে, আমি প্রতি 
রজনীতেই গ্রগাঢ়ক্সপে নিদ্রিত হইয়া, থাঁকি। এইরূপ জাগরণে উপব্ণপরি 
তিন রাত অতিবাহিত হইল। চতুর্থ রাত্রিতে সিপাহী যখন আর জাগ্রত 
থাকিতে না পারিয়৷ নিদ্রিত হইয়া পড়িল, আমি তথন প্রকৃত স্যোগ 
সমাগত দেখিয়া শধ্যাত্যাগ করিলাম, এবং প্রাতঃকৃত্য সমাপনের উদ্দেশে 
একটি ঘটা হস্তে বৃহির্নিত হইলাম । তৎপরে নগর অতিক্রম করিয়া আপনাকে 
লুক্কায়িত করিবার অভিগ্রায়ে একটি নিবিড় উদ্যান-মধ্যস্থিত বৃক্ষোপরি 
আরোহণ করিলাম। বুক্ষারূঢ হইয়া সমস্ত দিবস অনশনে অতিবাহিত ' 
করিলে পর, যখন সন্ধ্যার অন্মকার সমাগত হইল, আমি তখন তাহা হইতে 
অবতরণ করিলাম, এবং স্বদেশ ও স্বজনদিগের নিকট জন্মের মত বিদায় 
লইয়া দ্রতপদে গমন করিতে লাগিলাম। অতঃপর স্বদেশস্থ লোকদিগের 
সহিত প্রশ্নাগে একবাঁর মাত্র আমার সাক্ষাৎ হইয়াছিল। কিন্ত আমি তখন 
তাহাদিগকে আমার বিষয়ে কোনরূপ পরিচয় প্রদান করি নাই। 

“আমি দিদ্ধপুর হইতে নর্খর্দা নদীর তীরবর্তী প্রদেশে গমন করি। তথায় 
যোগান স্বামীর সহিত আমার সাক্ষাৎ ঘটে। যোগানন্দের সঙ্গে কৃষ্ণ শাস্ত্রী 
নামক জনৈক মহারাষ্্ীর ব্রাহ্মণ ছিলেন। তিনি আমাকে কোন কোন বিষয়ে 
শিক্ষা প্রদান করেন, এবং তাহাব পর সেই রাজগুরুয় সহিত বেদাভ্যাস করি 


আবহরাণিকা। ৩৭ 


ভেইশ কিংবা চব্বিশ বৎসর বয়$ক্রমের সমর ঢুনোদে একজন সন্গাসীর সহিত 
আমার দেখা হইল । শাস্তরান্বনীলনের প্রতি আনার প্রগাট আকাজ্মা থাকায়, 
এবং সন্্যাস।এম শাস্ত্র শিক্ষার পক্ষে সন্ব।পেক্ষা জ্রবিধাজনক খিবেচনা করায়, 
আনি দেই দন্ব্যাদী-সগাপে দীক্ষ। গ্রহণ করিলাম। দাক্ষার পর আমি দরানন্দ 
সরস্বতী নামে পরিচিত হইলাম । তথায় ছুইজন রাজযোগ-পরায়ণ গোস্বামীর 
সঙ্গেও আমার সাক্ষাৎ ঘটিল। তাহাদিগের সহিত আমি আহাম্মাদাবাদে গয়ন 
করিলাম । সেখানে একজন ব্রক্মচারীর স্হিত সাক্ষাৎ হইল বটে, কিন্তু 
আমি তাঁহার সংসগ্গ পরিত্যাগ পূর্বক হরিদ্বারাভিমুখে খারা করিলাম। 
হরিদ্বারে তখন কুন্তমেল! উপস্থিত। হিমাচলের থে স্থল হইতে অলকনন্দা 
প্রবাহিত, আমি হ্রিদ্বার হইতে সেই স্থলে উপস্থিত হইলাম। অলকনন্দার 
জলে বস্তুবিশেষের আঘাত লাগায় আমার পাদদেশ এরূপ আহত হইল 
যে, তাহা! হইতে রক্তধারা বাহির হইতে লগিল। এমন কি, আনি শাঙান্তে 
এতদূর ব্যথিত হইয়। উঠি যে, বরদরাশির মধ্যে পতিত হইয়া গ্রাণত্যাগ 
করাই আমার পক্ষে বাঞ্ছনীয় বোধ করিলাম। কিন্তু আমার জ্ঞানস্পৃহা 
যার পর নাই প্রবল! হেতু আমি তংকার্ষো প্রতিনিবৃত্ত হইলাম, এবং মথুরায় 
বিরজানন্দ নামক সুপণ্ডিত সাধুর নিকট আগমন করিলাম। বির্জানন্দ 
পূর্বে আলোয়ারে থাঁকিতেন। তাহার বয়ঃক্রদ তখন একাশীতি বৎসর । 
একদিকে বেদাদি আর্য গ্রন্থের প্রতি বিরজানন্দের ধেবূপ গ্রগাচ আস্থা 
ছিল, সেইরূপ শেখর, কৌমুদী প্রভৃতি আধুনিক পুস্তক সমুহের প্রতিও 
তাহার বিশিষ্ট অশ্রদ্ধা ছিল। অধিক কি, তিনি পুরাণ-ভাগবভাদির 
একান্ত বিরুদ্ধ ছিলেন। বিরজানন্দ অন্ধ ছিলেন, এবং তীহার পাকাশয়ে 
একটি বেদনা ছিল। আমি তৎসমীপে বেদাদি গ্রন্থের অধ্যয়ন আস্ত করিলাম । 
তথাকার অমরলাঁল নামক একজন সহ্ৃদর ব্যক্তি অধ্যরন বিষয়ে আমাকে 
বিশিষ্টরূপ সাহাধ্য করিতে লাগিলেন। আহার ও গ্রস্থাদি সম্পর্কে মুক্তহস্তে 
সহায়তার নিমিত্ত আমি অমরলালের নিকট বার পর নাই বাধিত আছি। 
তিনি আহার বিষয়ে এতদূর যত্রপর হইতেন যে, অগ্রে আমার আহারের ব্যাবস্থা 
করিয়া না দিয়া নিজে আহার .করিতেন না। বস্ততঃ তিনি যে একজন 
মহদস্তঃকরণ বাক্তি স্তাহাতে আর সংশয় নাই। বিরজানন্দের নিকট পাঠ 


৩৮ দয়ানন্দ-চরিত। 


পর্গিসমাপ্ত করিয়া আমি আগ্রা নগরে দুই বৎসর কাল অবস্থান করিলাম । 
আগ্রার় অবস্থিতির সময় সন্দেহ ভগ্রনের নিমিত্ত আমি কথন স্বয়ং উপস্থিত হইয়া, 
কথন ব৷ পত্র দ্বারা গুরুর নিকট নান! বিষয় জিজ্ঞাস করিতাম। 

“আগ্রা হইতে গোয়ালিয়রে গমন পূর্বক বৈষ্ণব মত খণ্ডে প্রবৃত্ত হই- 
লাম। তথায় অনুভ্তমাচার্্য নামক এক ব্যক্তি আমার শাস্ত্রালোচন! শুনিবার 
নিমিত্ত সর্বদাই উপস্থিত হইতেন, এখ* আপনাকে একজন কেরাণি বলিয়াই 
পরিচিত করিতেন। বিচার-প্রসঙ্গে আমার সুখ হইতে কখন কোন অশুদ্ধ শব্দ 
উচ্চারিত হইবামাত্র তিনি তাহা সংশোধন করিরা দ্িতেন। আশ্চর্য্যের বিষয়, 
বহুবার জিজ্ঞাসিত হইলেও তিনি আপনাকে একজন কেরাণি ভিন্ন অন্ত 
কিছুই বলিতেন না। তন্ডিন্ন তাহার জ্ঞান-সষ্পকে কোন কথা জিজ্ঞাসা 
করিলে অতি বিনয়ের সহিত বলিতেন যে, আমি যাহা কিছু লোকমুখে 
শুনিয়াই শিক্ষা করিয়াছি। একদিন বক্তৃতাকালে আমি বলিলাম যে». 
বৈষ্ণবগণ যদি ললাটে কষ্ধবর্ণ রেখা-ধারণ করিলে মোক্ষ লাভ করেন, তাহ। 
হইলে সমগ্র মুখমণ্ডল কৃষ্ণবর্ণ রেখাস্কিত করিলে তীহারা ত মোক্ষ অপেক্ষা 
অধিকতর পদ প্রাপ্ত হইতে পারেন। অন্ুত্মমাচাধ্য সেই কথা শুনিয়া! জুদ্ধ 
হইয়া চলিয়া গেলেন। তদনন্তর আমি গোয়ালিয়র হইতে কেরোলিতে 
গমন করিলাম। কেরোলিতে জনৈক কবীরপন্থীর সহিত আমার সাক্ষাৎ 
ঘটিল। তাহার নিকট শুনিলাম যে কবীরোপনিষদ্‌ নামে একখানি উপনিষদ 
আছে। তাহার পর কেরোলি হইতে জর়পুরে যাত্রা করি। জরপুরে হরিশ্তন্ত্ 
নামক এক মহা প্ডিতের সহিত বৈষণৰ মত লইয়া বিচার-যুদ্ধে প্রবৃত্ত হইলাম, 
এবং তাহাকে পরাজিত করিয়া শৈবমতের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিপাদিত করিলাম। এই 
ব্যাপার উপলক্ষে জয়পুরে মহা আন্দোলন উপস্থিত হইল। মহারাজ শৈবমত 
অবলম্বন করিলেন, সুতরাং প্রজাবর্গ ও তাহার পক্ষপাতী হইয়। উঠিল। অধিক 
কি, তাহা লইয়া লোক সকল এতদূর উত্তেজিত হইয়া পড়িল যে, সহত্র সহস্র 
রুদ্রাক্ষমাল! বিতারিত হইতে লাগিল, এবং অশ্বগজ সকল গলদেশে রুদ্রাক্ষমালা 
ধারণ পূর্বক অপুর্ব শোভায় শোভিত হইয়া উঠিল। যাহ! হউক আমি জয়পুর 
হইতে পুঙ্করে উপনীত হইলাম। তথা হইতে আজমীরে আসিয়া শৈব-মতের 
বিরুদ্ধেও বিচার উপস্থিত করিলাম । সেই সময় রাজা রামরাজ গবর্ণর-জেনারল 


অবতরণিক]। ৩৯ 


কর্তৃক আঙ্ুত হইয়া তাহার সহিত সাক্ষাতাথ আগ্রায় যাইতেছিলেন | শৈব- 
মতের সমর্থক বিবেচনা করিয়া তিনি আমাকে সমভিব্যাহারে লইয়া যাইবার 
অভিপ্রায় প্রাকাশ করিলেন। কারণ বুন্দাধনের রঙ্গাচারী নামক প্রসিদ্ধ 
বৈষ্ণমতাবলম্বী পণ্ডিতকে আমি বিচার যুদ্ধে পরাজিত করিয়া শৈবমাঙের শ্রেষ্ঠত্ব 
প্রতিপন্ন করিব, ইহাই তাঁহার উল্লিখিতরূপ অভিগ্রায়ের কারণ ডিল। কিন্ত 
যখন তিনি বুঝিতে পারিলেন যে, আমি শৈবমতেরও বিরুদ্ধবাদী, তখন সেই 
সঙ্কপ্প পরিতাগ করিলেন। অতঃপর আমি পুনব্বার মথুরায় আসিলাম, এবং 
আচার্ধ্য সন্গিধানে আমার যাবতীয় সংশয় শিরাকৃত করিয়া লইলাম। 

“মথুর! হইতে হরিদ্বারে উপনীত হইলাম, এবং তথায় আমার কুটারোপরি 
“পাষগু-মন্দন” নামাঙ্কিত পতাকা উদ্ভোলিত করিলাম । তন্নিমিস্ত আমার সহিত 
অনেকের বিচার বিতর্ক হইতে লাগিল। তখন আমি চিন্তা করিলাম যে, সাংসারিক 
লোকের নিদর্শন স্বরূপ এই সকল গ্রন্থাদি সামগ্রী কি আনার সমভিব্যাহারে 
রাখিয়া দিব? এবং সমস্ত সংসারের বিরুদ্ধে দণ্ডায়মান হইয়া কি শক্রদল 
বৃদ্ধি কৰিতে থাকিব? এইরূপ চিন্তাতরঙ্গে আন্দোলিত হইয়া অবশেষে সমস্ত 
পরিহার করাই বিধেষ় বলিয়া বিবেচনা করিলাম । তদন্ুদারে সমস্ত সামগ্রী 
বিতরণ করিয়া দিলাম, এবং কৌগীান ধারণ ও সর্ধাঙ্ে তস্মলেপন পুর্ক মৌনী 
হইয়া ধ্যান-ধারণাস় প্রবুত্ত রহিলাম। ভন্মলেপনের অভ্যাস গত বৎসর পর্য্যস্তও 
আমার ছিল। কিন্তু রেলপথে পরিভ্রমণ নিমিত্ত আমাকে বাধ্য হইয়া তাহা! 
ত্যাগ করিতে হইয়াছে । আমি মৌনব্রত হইয়াও অধিক দিন থাকিতে পাৰি 
নাই। কারণ একদা কোন ব্যক্তি আমার কুটারে আগমন পূর্বক পনিগম- 
কল্পতরোর্দলিতং কলম্ণ, ইত্যাদি বাক্য আবৃত্তি করিয়া যথন ভাগবতের শ্রেষ্ঠত্ব 
প্রতিপন্ন কৰিতে চাঁহিলেন, তখন আমি তাহার প্রতিবাদ ন| করিয়! নিরস্ত 
থ|কিতে পারিলাম না । এই ঘটনার পর আমি স্থিরচিত্ে সিদ্ধান্ত করিলাম যে, 
যে জ্ঞান উপার্জন করিয়াছি, তাহা পৃথিবীর নিকট গ্রচারিত করা আমার পক্ষে 
একান্ত কর্তব্য। এইকপ সিদ্ধান্তের পর আমি হরিদ্বার পরিহার পূর্বক ফরাককা- 
বাদে চলিয়৷ আসিলাম। তথা হইতে পুনরায় রামগড়ে আসিলে সেখানকার 
লোঁক সকল আমাকে “কোলাহল-স্বামী” বলিয়া অভিহিত করিতে লাগিলেন । 
কারণ সেখানে কতিপয় শাস্ত্রী বিচারার্থী হইয়া আমার নিকট আগমন করেন, 


৪০ দয়ানন্দ-চরিত । 


এবং সকলেই এক সমন্ধে বিচার করিতে উদ্যত হয়েন। তাহা দেখিরা আমি 
ভাহার্দিগের ঝিচার-ব্যাপারকে কোলাহল বলিরা অভিহিত করি। বোধ হয়, 
তন্রিমিত্তই তাহার। আমাকে উল্লিথিতরূপ আখ্যা! প্রদান করিলেন। রামগড়ে 
চিত্রণগড়-নিবাসা দশজন লোক আমাকে হত্যা করিবার উদ্যোগ করায়, 
আমি বিশেষরূপ সাবধানতার সহিত তাহাদিগের হস্ত হইতে নিষ্কৃতি লাভ 
করিলাম। তৎপরে আমি কানপুর হর! প্রয়্াগে উপস্থিত হইলাম । প্ররাগেও 
আমাকে হত্য। করিবার উদ্দেশে কএক জন ছুবৃত্ত লোক প্রেরিত হইয়াছিল। 
কিন্তু সে বারে মহাদেব প্রসাদ নামক জনৈক বাক্তি কর্তৃক আমি হত্যাকারী- 
ধিগের হস্ত হইতে অব্যাহতি পাইলাম। মহাদেব প্রসাদ অত্যন্ত সজ্জন লোক। 
আর্ধাধম্মের উৎকর্ষ তিন মাসের ভিতর প্রতিপন্ন করিতে না পারিলে,তিনি খৃষ্টধন্ম 
পরিগ্রহ করিবেন, এই মন্ম্ে মহাদেব গ্রসাদ প্রয়াগবাসী পণ্ডিতদিগের নিকট 
বিজ্ঞাপন পত্র প্রচারিত করিয়াছিলেন। বলা বাহুল্য, আধ্যধর্মের উৎকর্ষ 
গ্রতিপাদিত করিয়া আমি তাহাকে খুষ্টধর্্মাবলম্বন বিষয়ে নিরস্ত করিলাম। 
প্রয়াগ হইতে বামনগরে আগমন করি। কাশীধাম-নিবাসী পণ্ডিতদিগের 
সহিত শান্ত্রবিচারে প্রবৃত্ত হইব, এইরূপ সংকল্প করিক্বাই রামনগরের মহারীজ 
আমাকে আহ্বান করিলেন। যাহা হউক আমি তদনুসারে বারাণসীতে 
বিচারার্থ উপস্থিত হইলাম। বারাণসীর বিচার-প্রসঙ্গে তথাকার পণ্ডিতগণু 
আমাকে জিজ্ঞামা করিলেন যে, বেদে প্রতিমা শব্ধ আছে কি না? ততুত্তরে 
আমি প্রমাণের সহিত বলিলাম যে বেদে প্রতিমা শব্ধ আছে, কিন্ত তাহার 
অর্থ পরিমীপন। বারাণসীর বিচার পুস্তকাকারে বাহির হইর়াছে। স্বৃতরাং 
ইচ্ছ৷ করিলে সকলেই তাহা! দেখিতে পারেন। বেদের ব্রাক্মণভাগকে 
ইতিহাস বলিয়া পরিগণিত করা উচিত, আমি এই বিষয়ও কাশীর পণ্ডিতদিগের 
নিকট প্রমাণিত করিবার চেষ্টা করিলাম। বিগত ভাদ্রপদে আমি কাশীধামে 
চতুর্থবার গমন করিয়াছিলাম। আমি তথায় যতবার গমন করিয়াছি, ততবারই 
মুত্তিপূজ! বেদ-প্রতিপাদিত কি না, তাহা প্রমাণার্থ তথাকার পণ্ডিতবর্গকে 
আহ্বান করিয়াছি। কিন্তু বলিতে কি, তাহ! প্রমাণিত করিবার নিমিত্ত 
তীহাদিগের কেহই আমার নিকট উপস্থিত হয়েন নাই। এইরূপ উদ্দেস্তে 
পরিচালিত হইয়া! আমি প্রায় সমগ্র ভারত পরিভ্রমণ করিয়াছি। বিগত ছুই 


জবতরণিকা। ৪১ 


বৎসরের ভিতর আমি কলিকাতা, লক্ষৌ, এলাহাবাদ, কানপুর ও জববলপুর 
প্রস্ৃতি স্থানে সহস্র সহজ লোকের সমক্ষে আধাধন্ম প্রচারিত করিয়াছি, 
এবং সংস্কৃত-ভাবাঞ্রশীলনের নিমিত্ত কাশী ও ফরক্কাবাদ প্রভৃতি স্থানে কএকটি 
সস্্ত পাঠশালাও প্রতিষ্ঠিত. করিয়াছি। কিন্তু অধ্যাপকদিগের অনুদারত। 
বশতঃ দেই সকল পাঠশালায় কোন আশাঙ্্রূপ ফল উৎপন্ন হয় নাই। 
আমি গত বতদর বোষাই আপিয়াছিলাম। বোম্বাই নগরে মহারাজ মতের 
প্রতিবাদার্থ প্রবৃত হই, এবং তথায় একটি আর্ধাসমাজও সংস্থাপিত করি। 
বোম্বাই হইতে আহম্মদাবাদ, এবং তথা হইতে রাজকোট যাইয়া! বৈদিক ধর্খের 
জয় ঘোষণা করি। আপাততঃ ছুই মাস কাল আপনাদিগের নিকট অবস্থান 
. করিতেছি । ফল্তঃ এতক্ষণ যাহ। বণিলাম, তাহাই আমার জীবনের সংক্ষিপ্ত 
ইতিহাস। আধ্যধর্মের প্রতিষ্ঠা পক্ষে প্রকৃত গ্রচারকের বথাথই অভাব 
রহিয়াছে। এক বাক্তি কর্তৃক এই বিরাট কাধ্য কখনই সম্পাদিত হইতে 
পারে না। কিন্ত এতদর্থ আমি আমার যথাশক্তি সমর্পণ করিতে কৃত-প্রতিজ্ঞ 
হইয়াছি। ভারতের আদ্যোপান্তে আর্্যসমাজ প্রতিষ্ঠিত হর, এবং দেশ- 
পরিব্যাপ্ত কুরীতি সকল উন্মুলিত হইয়া যায়, ইহাই আমি সর্ধাস্তঃকরণের 
সহিত কামনা করি। সর্বত্র বেদাদি শাস্ত্র ব্যাখ্যাত ও আলোচিত হউক, 
এবং আমাদিগের নিদ্রিত দেশ জাগ্রত হইয়৷ উঠুক, তন্লিমিত্ত আমি ঈশ্বরের 
নিকট একান্ত হৃদয়ে প্রার্থনা করিতেছি।” * 
দর়ানন্দ পুনরায় বলিয়াছেন,--“১৮৮১ সন্ত কাবার প্রদেশে মর্ভি 
রাজার অন্তর্ণত কোন নগরে ও উদদীচ্য ব্রাহ্মণ বংশে আমি জন্মগ্রহণ করি- 
য়াছি। আমার জন্মস্থান ও পিতার নাম কর্তব্যান্তরোধে অপ্রকাশিত পাখিলাম। 
আত্মীয়গণ যদি জানিতে পারেন, তাহী হইলে তাহারা আমাকে অনুসন্ধান 





ক ১৮৭৫ থুষ্টান্ধের জুলাই ও আগষ্ট মাসে পুনা নগরে দয়ানন্দ সরশ্বতাঁ উপধু'যপরি 
কতকগুলি বক্তৃতা করেন। শেষ দিন,_অর্থাৎ ১৫ই আগষ্ট তারিখে বক্তত। সমাপ্তির গর, 
সমাগত লোক সকল ভাহাকে তাহার জীবনী বিষয়ে কিছু বলিবার নিমিত আগ্রহ সহকারে 
অনুরোধ করায়, তিনি তদ্দিষয়ে যাহ। বলেন, উপরি-উক্ত অংশটি ত্রাহারই অনুবাদ মান্্র। 
অবশ্য ইহাও বুঝিতে হইবে থে, এ অনুবাঁদটি ভাষা! অপেক্ষা! ভাবেন প্রতি অধিকতর 
ি রাখিয়াই সম্পন্ন কর] হইয়াছে। 1100 45৫ 281158 ০1 1, ০. 46, 47) 48. 

ঙ 


৪২ দয়ানন্দ-চরিত। 


করিবেন, গৃহে লইয়া! যাইবেন এবং তন্িমিত্ত হয়ত আমাকে অর্থপর্শ-দ্ধপ 
পাপে পুনরায় লিপ্ত হইতে হইবে। এমন কি সাংসারিক ব্যক্তির মত সংসারে 
থাকিয়া তীহাদিগের সেবা-শুশ্বযাদিও করিতে হইবে। এরূপ হইলে ধর্ম 
সংস্কাররূপ যে পবিত্র ব্রতে আমার সমগ্র জীবন সমর্পিত করিয়াছি, তাহা 
অস্িদ্ধ ঝা অসমাপিত হইয়! থাকিবে । 

“কিঞ্চিদুন পাচ বৎসর বয়ঃক্রমের সময় আমি দেবনাগর অক্ষর শিক্ষা করি, 
এবং আমাদিগের জাতীয় ও কুলপরম্পরাগত প্রথান্ুসারে বহুসংখ্যক বেদমন্ত 
ও বেদভাষ্য কস্থ করিয়া ফেলি। অষ্টম বসরের সময় আমার উপনয়ন 
হইলে পর আধি প্রতিদিন সন্ধ্যা-ায্নত্রী অভ্যাস করিতে থাকি, পরে রুদ্রাধ্যা় 
হইতে আস্ত করিয়া যুর্কবদ-সংহিতা। অধ্যয়নে প্রবৃত্ত হই। আমাদিগের 
পরিবার শৈবমতাবলম্বী বলিয়া আমি অল্প বয়স হইতে পার্থিব লিঙ্গের পূজ! 
করিতে অভ্যাস করি। আমি অপেক্ষাকৃত সকালে আহার করিতাম, এবং 
শিবপৃজায় বহু উপবাস ও কঠোরতা সহ করিতে হইত 7 এই জন্ত স্বাস্থ্যহানির 
আশঙ্কায় মাতা আমাকে প্রতিদিন শিবোপাসনা করিতে নিষেধ করিতেন। 
কিন্তু পিতা তাহার প্রতিবাদ করিতেন। এই কারণ এই বিষয় লইয়া মাতার 
সহিত পিতার প্রায়ই বিবাদ উপস্থিত হইত। আমি সেই সময় মংস্কৃত ব্যাকরণ 
অধ্যয়ন করিতাম, বৈদিক শ্লোক সকল কথস্থ করিয়া রাখিতাম, এবং পিতার 
সহিত কখন শিবালয়ে, কখন বা অন্ত দেবালয়ে গমন করিতাম। শিবোপাসন! 
যে সর্ষোচ্চ ধর্মন,স্তরাং শিবের প্রতি প্রগাঢ় ভক্তি স্থাপন যে অবশ্ত 
কর্তব্য, এই বিষয়ে পিত1 আমাকে সর্বদাই উপদেশ প্রদান করিতেন। আমি 
চতুদ্দশ বত্মরে পদার্পণ করিবার পূর্বেই ব্যাকরণ, শব্দরূপাঁবলী, সমগ্র যুর্ব্েদ- 
সংহিতা ও অপরাপর বেদের কোন কোন অংশ কণ্স্থ করিয়! আমার পাঠকার্ধ্য 
একরূপ সমাপ্ত করিলাম। আমার পিতার তেজারতি কারবার ছিল, অধিকস্ত 
তিনি জমাদাঁর অর্থাৎ নগরের কর-সংগ্রাহক ও মাজিষ্টেট ছিলেন। এই কারণ 
আমাদিগের সংসারে কোনরূপ ক্লেশ ছিল না। বলা বাহুল্য, জমাদারি কার্য্য 
আমাদিগের বংশ-পরম্পরাস্থুদারে চলিয়া আসিতেছিল। যাহা হউক যে স্থানে শিব- 
পুরাণ পঠিত ঝা ব্যাখ্যাত হইত, পিতা আমাকে সঙ্গে করিয়! সেই স্থানে লইয়! 
যাইতেন। প্রতিদিন শিবপুজা। করিতে জননী বাঁরঘ্ার নিষেধ করিলেও, তাহা 


অবতরণিক!। ৪৩ 


করিবার নিমিত্ত পিতা আমার প্রতি কঠোর আদেশ প্রদান করিতেন । শিবরাত্রি 
সমাগত হইলে পিতা বলিলেন, তোমার আজ দীক্ষা হইবে, এবং মন্দিরে যাইয়া! 
সমস্ত রজনী জাগ্রত হইয়া রহিবে। এইরূপ করিলে আমি অসুস্থ হইয়া 
পড়িব; এইরূপ আশঙ্কা করিয়া জননী ঘোরতর প্রতিবাদ করিতে লাগিলেন। 
কিন্ত পিতা তাহার আপত্তি ব' প্রতিবাদের প্রতি দৃক্পাতও করিলেন না। 
পিতার অনুমতি অনুসারে আমি সেই দিবস রাত্রিকালে অপরাপর লোকের 
সহিত সম্মিলিত হইয়া শিবমন্দিরে সমাগত হইলাম। শিবরাত্রির জাগরণ 
চারি প্রহরে বিভক্ত । ছুই প্রহরের পর যখন নিশীথকাল উপস্থিত হইল, তখন 
পুরোহিত ও অন্তান্ত কতকগুলি লোক মন্দিরের বহির্দেশে আসিয়! নিদ্রাতি- 
ভূত হইয়া পড়িলেন। আমি বহুদিন হইতে শুনিয়াছিলাম যে, গৃহীত-ত্রত 
ব্যক্তি শিবরাত্রিতে নিদ্রাগত হইয়৷ পড়িলে অভিলধিত ফল লাভে বঞ্চিত হইয়া 
থাকে। তঙ্গিমিত্ত নিদ্রাবেগে- মধ্যে মধ্যে অভিভূত হইবার উপক্রম হইলেও, 
চক্ষুতে পুনঃ পুনঃ জলসেচন করিয়া আমি জাগ্রত রহিলাম। এদিকে পিতাও 
আমাকে জাগ্রত থাকিবার আদেশ করিয়া নিদ্রীবিষ্ট হইয়া পড়িলেন। তখন 
চিগ্ার পর চিন্তা আসিয়া! আমার হ্বদয়কে অধিকার করিতে লাগিল। আমার 
মনে নানা! প্রশ্ন উপস্থিত হইল। ফলতঃ আমি চিন্তাআোতে বিচলিত হইয়! 
পড়িলাম। আপনাকে আপনি জিজ্ঞাসা করিলাম যে, আমার পুরোবর্তী বৃষ- 
বাহন পুরুষ ;_যিনি বিচরণ করেন, ভোজন করেন, নিদ্রিত হয়েন, পাঁন 
করেন, হস্তে ত্রিশুল ধারণ করিতে পারেন, ভম্বরু বাদন করেন, এবং মন্থুযযুকে 
অভিমম্পাত প্রদান করিয়া থাকেন বলিয়! শাস্ত্রে কথিত আছে, তিনিই কি এই 
মহাদেব? ইনিই কি সেই পুরাণ-কথিত 'কৈলাঁসপতি পরমেশ্বর? এই চিন্তায় 
একান্ত অস্থিরচিত্ত হইয়া পিতার নিদ্রাভঙ্গ পূর্বক ণিজ্ঞীমা করিলাম যে, এই 
বিকট শিবমৃত্তিই কি সেই শাস্তো্লিথিত মহাদেব? তহ্ত্বরে পিতা! বলিলেন-_- 
"তুমি এ কথা জিজ্ঞাসা করিতেছ কেন?” আমি বলিলাঁম্‌,_-“এই মৃষ্তিই ঘি 
সর্বশক্তিমান জীবন্ত পরমেশ্বর হয়েন, তাহা! হইলে ইনি আপনার গাত্রোপরি 
মৃষিক সকল সঞ্চরণ করিতে দেখিয়াও, এবং মৃষিক-্পর্শ নিমিত্ত অপবিভ্র-দেহ 
হইয়াও কোনরূপ প্রতিবাদ করিতেছেন না! কেন?” তখন পিতা আমাকে 
বুঝাইবার চেষ্টা করিলেন যে, কৈলাদপতি' মহাদেবের এই প্রস্তরময়মৃষ্তি পবিস্র- 


88 দয়ানন্দ-চরিত। 


চিত্ত ব্রাঙ্মণগণ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হওয়াতে দেবত্ব লাভ করিয়াছেন । বিশেষতঃ এই 
পাপময় কলিযুগে মহাদেবের সাক্ষাৎকার অসম্ভব বলিয়া পাষাণাদি মৃক্তিতেই 
তাহার সন্ত! কঙ্সিত হই! থাকে । পিতার এই সকল কথায় আমি তৃপ্তিলাভ 
করিতে পারিলাম নাঁ। যাহা হউক শ্রান্ত ও ক্ষুধিত হওয়ায় পিতার নিকট 
গৃহে-প্রত্যাগত হইবার অন্ুমতি প্রার্থনা করিলাম। পিতা! অনুমতি দান 
পূর্বক সমভিব্যাহারে একজন সিপাহী দিলেন, এবং যাহাতে আমি আহার 
করিয়া ব্রতভঙ্গ না করি, তদ্ধিষয় পুনঃ পুনঃ বলিতে লাগিলেন। কিন্তু গৃহে 
ফিরিয়া আসিয়া নাতার নিকট যখন ক্ষুধার কথ প্রকাশ করিলাম, তখন তিনি 
আহারের নিমিত্ত যাহা প্রদান করিলেন, তাহা না খাঁইয়া থাকিতে পারিলাম 
না। আহারের পর আমি প্রগাঢ় নিদ্রায় অভিভূত হইয়া পড়িলাম। পর দিন 
প্রাতঃকালে পিত| গৃহে আসিয়া শুনিলেন যে, আমি ব্রতভঙ্গ করিয়াছি । তাহা! 
শুনিয়া তিনি আমার প্রতি যার পর নাই কুপিত হইয়া উঠিলেন। ব্রতভঙ্গ 
করিয়া আমি যে কি মহাপাঁপের অনুষ্ঠান করিয়াছি, তিনি আমাকে তাহা 
বুঝাইবার চেষ্টা করিতে লাগিলেন। কিন্তু সেই প্রস্তরময় মৃর্তিকেই পরমেশ্বর 
বলিয়! বিশ্বাস করিতে না পারায় আমি মনে মনে করিলাম যে, তবে কেন আমি 
তাহার উপাসনা করিব এবং তছুদ্দেশে উপবাস করিয়া থাকিব । কিন্তু এই 
আস্তরিক ভাব গোপন পূর্বক পিতাকে বলিলাম যে, পাঠাভ্যাস করিতেই যখন 
আমার সমস্ত সময় অতিবাহিত হইয়া যায়, তখন নিয়মিতরূপে শিবারাধনা আমার 
পক্ষে কি প্রকারে সম্ভব হইতে পারে ? জননী এবং খুল্পতাঁত উভয়েই যুক্তি-সঙ্গত 
বলিয়৷ আমার এই কথা সমধ্ধিত করিলেন। অবশেষে তিনি পাঠাদি কার্য্যেই 
অধিকাংশ সময় যাপিত করিবার নিমিত্ত আমাকে অনুমতি প্রদীন করিলেন। 
তদনুসারে আমার পাঠ্য বিষয় কিয়দংশে বিস্তৃত করিয়া আমি নিঘণ্ট,ং নিরুক্ত 
ও পূর্বমীমাংসা গ্রভৃতিরও অধ্যয়ন আরম্ভ করিলাম! 

“আমরা ভ্বাই-ভগিনীতে পাঁচ জন ছিলাম। তাহার ভিতর ছুইটি ভাই ও 
ছুই জন ভগিনী ছিলেন। আমার বয়ঃক্রম যখন ষোড়শ বর, তখন আমার 
সর্বকনিষ্ঠ ভাইটির জন্ম হয়। একদা রাত্রিকালে কোন বান্ধবের আলয়ে 
আমি নৃত্যোৎসব দেখিতেছিলাম, এমত সময় গৃহ হইতে জনৈক ভূত্য আদিয়া 

সংবাদ প্রদান করিল যে, আমার চতুর্দশ বতমর বয়স্কা ভগিনীটি এই মাত্র 


অবতরণিক1। ৪৫ 


পীড়িত হইয়া পড়িয়াছে। আশ্চর্যের বিষয়, যথোচিতরূপে চিকিৎসার ব্যবস্থা 
হইলেও আমরা গৃহ-প্রত্যাগত হইবার দুই ঘণ্টা পরেই তাহার মৃত্যু হইল। 
সেই ভগিনী-বিয়োগ-জনিত শোকই আমার জীবনের প্রথম শোক । সেই 
শৌকে আমার হৃদয় বিলক্ষণ ব্যথিত হইল। আমার চারিদিকে যখন আত্মীয় 
* স্বজনগণ ভগিনীর নিমিত্ত বিলাপ ও রোদন করিতেছিলেন, আমি তখন পাধাণ- 
নির্মিত মৃতির স্তায় অবিচলিত ভাবে দণ্ডায়মান থাকিয়া চিন্তা করিতে লাগিলাম 
যে, “ইহ-সংসারে সকল মন্ুযাকেই মৃত্যামুখে নিক্ষিপ্ হইতে হইবে”। সুতরাং 
আমিও একদিন মৃত্যুগ্রাসে গ্রাসিত হইব। ফলতঃ আমি তখন ভাবিলাম যে, 
কোথায় গমন করিলে মৃত্যু-ন্্রণা হইতে নিস্তার পাইব, এবং কোথায় যাইলে 
মুক্তির পথ দর্শন করিব? আমি সেই স্থানে দণ্ডায়মান হইয়া সঞ্কল্ল করিলাম 
যে, যে কোন প্রকারেই হউক, আমি মুক্তির পথ আবিষ্কার পূর্বক 
অবর্ণনীয় মৃত্যুক্রেশ হইন্তে আপনাকে রক্ষা করিব। এইরূপ চিন্তার পর 
উপবাদাঁদি বাহ-সাধনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হইয়া আমি আধ্যাত্মিক শক্তির 
বিষয় আলোচনা করিতে লাগিলাম। কিন্তু আমার অন্তরের এই সকল 
কথা কাহাকেও জানিতে দিলাম না। কিয়দদিন পরে আমার খুল্লতাতেরও 
মৃত্যু হইল। খুল্পতাত একজন সদ্গুণ-সম্পন্ন সুশিক্ষিত ব্যক্তি ছিলেন, এবং তিনি 
আমাকে অত্যন্ত ভাল বাসিতেন। স্ৃতরাং তীহার বিয়োগে আমি যার পর নাই 
ব্যথিত হইলাম। অধিকস্ত সেই ঘটনায় আমার হৃদয়ে এই ভাব আরও বদ্ধমূল 
হইয়! উঠিল যে, সংসারের ভিতর স্থায়ী অথবা এরপ মৃল্যবান্‌ বস্তু কিছুই নাই, 
যাহার নিমিত্ত জীবনধারণ করা যাইতে পারে। এবস্বিধ মানসিক অবস্থার 
বিষয় পিতামাতাকে ঘুণাক্ষরে না জানাইলেও বিবাহিত হওয়! যে আমার পক্ষে 
বাঞ্ছনীয় নহে, এই কথা কোন কোন বন্ধুর নিকট প্রকাশ করিতাম। ঘটনা" 
ক্রমে এই কথা, পিতামাতার কর্ণগৌচর হইলে, তাহারা আমার বিবাহকা্ধ্য 
সত্বর সমাঁধ! করিবার নিমিত্ত ক্লৃতঙ্কল্প হইয়! উঠিলেন। আমি যখন জানিতে 
গারিলাম যে, পিতামাতা আমার বিবাহার্থ যার পর নাই ব্যস্ত হইয়া উঠিয়াছেন, 
তখন আমি তাহাতে বাধা দিবার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করিতে লাগিলাম। 
পিতামাতাকে বুঝাইয়৷ নিরম্ত- করিবার নিমিত্ত বনধুদিগকেও অনুরোধ 

করিলাম। অবশেষে পিতার নিকট এরূপ ভাবে আত্মপক্ষ সমর্থন করিলাম 


৪৬ ঘয়ানন্দ-চরিত। 


যে, তিনি কিছুদিনের নিমিত্ত বিবাহব্যাপার স্থগিত রাখাই যুক্তিসঙ্গত 
বিবেচনা করিলেন । এই সুযোগে কাশী যাইয়া ব্যাকরণপাঠি পরিসমাপ্ত, 
এবং উত্তমরূপে জ্যোতিষশান্ত্র শিক্ষা করিবার ইচ্ছা হইল। কিন্তু সেই ইচ্ছা 
কার্যে পরিণত হইল না । কারণ মাত! কাশীষাত্রার পক্ষে একান্ত আপত্তি 
পূর্বক বলিলেন যে, তোমার যাহা! অধ্যরন করিতে অভিলাষ হয়, তাহা গৃহে 
বসিয়াই অধ্যয়ন করিতে পার। আর যুবাপুরুষগণ অধিক পরিমাণে লেখাপড়া 
শিক্ষা করিলে অনেক সময় স্বেচ্ছাপরারণ হইয়া উঠে। সুতরাং আগামী বর্ষের 
পূর্বেই আমরা তোমার বিবাহকার্ধ্য সমাধা করিব। অবশেষে কাশীযাত্রার 
প্রস্তাব পরিত্যাগ পূর্বক পিতাকে বলিলাম যে, আমাদের জমাদারির অন্তর্গত 
গ্রামবিশেষে যে পরিচিত অধ্যাপক আছেন, যদি আমাকে তাহার নিকট 
অধ্যয়নার্থ অনুমতি প্রদান করেন, তাহা হইলে আমি এই স্থানে থাকিয়াই 
পাঠকার্ধ্য সমীধা করিতে পারি। সেই প্রবীণ অধ্যাপক আমাদিগের গৃহ হইতে 
তিন ক্রোশ দুরে বাস করিতেন। যাহা হউক পিতা অন্ুমতি প্রদান করিলে 
পর, আমি তাহার নিকট যাইয়া কিছুকাল নিশ্চিন্তচিত্তে অধ্যয়ন করিতে লাগি- 
লাম। কিন্তু তথায় একদিন ঘটনাক্রমে বিবাহ বিষয়ে আমার বিরুদ্ধ অভিপ্রাক়্ 
প্রকাশিত করিয়! ফেলিলাম। পিতা কোন্‌ স্ত্রে তাহা জানিতে পাঁরিলেন, 
এবং জানিতে পারিয়া আমাকে গৃহে ফিরিয়া আসিবার নিমিত্ত আদেশ 
করিয়া পাঠাইলেন। তদন্ুসারে গৃহে উপস্থিত হইলাম, এবং দেখিলাম যে, 
আমার বিবাহার্থ সমস্ত বস্তই প্রস্তুত হইয়াছে । তখন আমি স্পষ্টরূপে বুঝিতে 
পারিলাম যে, পিতামাতা আমাকে আর পাঠান্ুশীলনে রত থাকিতে দিবেন না, 
এবং আমার বিবাহ না৷ দিয়াও ক্ষান্ত হইবেন না। তাহার পর স্থির করিলাম 
যে, যাঁহী করিলে আমাকে বিবাহ-শৃঙ্খলে নিবদ্ধ হইতে না! হয়, এবস্বিধ কোন 
কার্য্ের অনুষ্ঠান করাই আমার পক্ষে কর্তব্য হইতেছে। 

“এইরূপ স্থির করিয়া ১৯০৩ সম্ঘতের একদিন সন্ধ্যাকালে সকলের অজ্ঞাত- 
সারে সংসার পরিত্যাগ করিলাম। চারি ক্রোশ দূরস্থিত একটি পল্লিতে রাত্রি- 
যাপন পূর্বক প্রাতঃকাল হইবার পূর্বেই পুনরায় চলিতে লাগিলাম। সমস্ত 
দিন চলিয়া পনর ক্রোশেরও অধিক পথ অতিক্রম করিলাম। যে সকল পথে 
সচরাচর লোক যাতায়াত করিয়া থাকে, আমি ইচ্ছাপূর্বকই সেই সকল পথে 


অবতরণিক1। ৪৭ 


গমন করি নাই। এইরূপ সতর্কতা সহকারে পথ-পর্যটন যে আমার পক্ষে 
মঙ্গলকর হইয়াছিল, তাহ! আর বলিতে হইবে না। কারণ তৃতীম্ম দিবসে 
জনৈক গবর্ণমেন্ট কর্মচারীর সহিত সাক্ষাৎ হওয়াতে তাহার নিকট অবগত 
হইলাম যে, কোন পলায়িত যুব৷ পুরুষের উদ্দেশে কতকগুলি লোক অশ্বারো হী- 
সমভিব্যাহারে ইতস্ততঃ ঘুরিতেছে। যাহা হউক কিছু কাল পরে একদল 
ভিক্ষুক ব্রাহ্মণের সহিত আমার সাক্ষাৎ ঘটিল। যতই বিতরণ করিব, পর- 
কালে ততই ন্খভোগ করিতে পাইব, এই কথা বলিয়। সেই ত্রাঙ্ষণগণ আমার 
অলঙ্কারাদি প্রার্থনা করিলেন। সুতরাং আমার নিকট যে টাকা ও স্বর্ণরৌপ্য- 
নির্িত অলঙ্কার সকল ছিল, আমি তৎসমস্তই তাহাদিগের হস্তে অর্পণ 
করিলাম। এইক্সপে ষথাসর্ধন্ব বিতরণ করিয়া দিয়া আমি শৈলানগরে লালা- 
ভকতের নিকট গমন করিলাম। লালা! ভকত্‌ একজন সাধু ও সুশিক্ষিত 
ব্যক্তি বলিয়া প্রসিদ্ধ। তথার্র একজন ব্রহ্মচারীর সঙ্গেও আমার আলাপ হইল। 
আমি তাহার নিকট দীক্ষাগ্রহণ পূর্বক ব্রহ্মচারীর আশ্রমে প্রবিষ্ট হই- 
লাম) এবং গৈরিকবন্ত্র পরিধান পূর্বক শুদ্ধটৈতন্ত নাম পরিগ্রহ করিলাম। 
শৈল! হইতে আহান্মদাবাদের নিকটস্থিত কোন স্থানে গমন করিতেছি, 
এমত সময়ে আমার ছুরদৃষ্টবশতঃ একজন পরিচিত বৈরাগীর সহিত সাক্ষাৎ 
ঘটিল। বৈরাগী আমাদিগের বাসভূমির অদুরস্থিত গ্রামবিশেষের অধিবাসী, 
এবং আমাদের পরিবারের সহিত স্ুপরিচিত। তিনি আমাকে দেখিয়া যতই 
বিশ্বয়াপন্ন হইতে লাগিলেন, আমিও তাহাকে দেখিয়া ততই বিপদাপন্ন বোধ 
করিতে লাগিলাম। তাহার পর এইরূপ ভাবে ও এই স্থানে আগমনের কারণ 
কি, তাহা জিজ্ঞাসা করায় আমি বলিলাম যে পৃথিবীর নানাস্থান পরিভ্রমণ ও দর্শন 
করিবার অভি প্রায়েই আমি গৃহ হইতে বহিষ্কত হইয়াছি। তখন তিনি আমার 
এইরূপ অভিপ্রায়ের নিন্দা করিলেন, এবং আমাকে গৈরিক বসন পরিহিত 
দেঁথিয়৷ উপহাস করিতে লাগিলেন। আমাকে কতকটা হতবুদ্ধির মত দেখিয়া 
বৈরাগী আমার ভবিষ্যৎ সংকল্পের বিষয় বুঝিতে পারিলেও আমি তাহাকে 
বলিলাম যে, কার্তিক মাসে সিদ্ধপুরে যে মেল! বদিবে, আমি তাহা দেখিবার 
নিমিত্তই তথায় গমন করিতেছি । ফলতঃ বৈরাগী আমার নিকট হইতে 
চলিয়া যাইলে পর আমি অবিলম্বে সিদ্ধপুরে উপস্থিত হইলাম, এবং সাধুন্ন্যাসী- 


৪৮ দয়ানন্দ-চরিত। 


দিগের সহিত নীলকণ্ঠ মহাদেবের মন্দিরে অবস্থান করিতে লাগিলাম। তথায় 
বিস্তৃত মেলাভূমির মধ্যে আমি নানাশ্রেণীস্থ সাধু, জ্ঞানী ও পরমার্থগরায়ণ 
তপস্বীদিগের সংসর্গে কতকদিন নিরাপদে অতিবাহিত করিলাম। কিন্ত 
এক দিবদ প্রাতঃকালে আমি সাধু-সজ্জনদিগের সহিত নীলকণ্ঠের মন্দিরে 
বসিয়া আছি, এমন সময় আমার পিতা কতিপয় সিপাহী সমভিব্যাহারে সহ্স! 
আমার সমক্ষে উপস্থিত হইলেন । পূর্োল্লিখিত বৈরাগী যে গৃহ-প্রত্যাগত হইয়! 
পিতার নিকট আমার পলায়ন সংবাদ প্রদান করিয়াছিলেন, তাহা তখন 
সহজেই বুঝিতে পারিলাম। পিতা ক্রোধে অগ্রিমূত্তি ধারণ করিয়' আমাকে 
যাঁর পর নাই তিরস্কার করিলেন, এবং এইরূপ কাঁধ্য করিয়া আমি যে 
আমাদিগের কুলকে চিরকলফ্কিত করিয়াছি )তাহাই বারন্বার বলিতে লাগিলেন । 
তাহার কথার কোনরূপ প্রতিবাদ করা অনুচিত বিবেচনা করিয়া আমি কর- 
ঘোড় পূর্বক পদতলে প্রণত হইলাম, এবং যথোচিত বিনয়-নত্রতা প্রকাশ করিয়া 
তাহাকে তুষ্ট করিবার চেষ্টা করিতে লাগিলাম। আর আমি যে কোন অসৎ 
ব্যক্তির অমৎ পরামর্শে পরিচালিত হইয়া! এইরূপ করিয়াছি, তাহার পর তন্নি- 
মিত্ত অন্ৃতপ্ত হইয়াছি, তাহাও তীহার নিকটে উল্লেখ করিলাম । অধিকন্তু 
পিতাকে বলিলাম যে, আপনার আগমন আমার পক্ষে স্ুবিধারই কারণ 
হইয়াছে। €কননা আমি গৃহ-প্রত্যাগত হইবার উদ্যোগ করিতেছিলাম, 
এমত সময়েই আপনি আসিয়া! উপস্থিত হইলেন। এখন চলুন, আমি আপ- 
নার সঙ্গে গৃহে ফিরিয়া যাইতেছি। এই প্রকারে অনুনয় বিনয় পুর্ববক অপরাধ- 
নিষ্কৃতির চেষ্টা করিলেও পিতা প্রশমিত হইলেন না। তিনি ক্রোধাবিষ্ট চিত্তে 
আমার গৈরিক বস্ত্র ছিন্ন ভিন্ন করিলেন, কমণ্ডলু ফেলিয়া দিলেন, এবং আমাকে 
মাতৃহন্তা বলিয়৷ ভত্খপনা করিতে লাগিলেন। ফল কথা, আমার রক্ষণাবেক্ষণ 
করিবার নিমিত্ত তিনি কএকজন সিপাহী নিয়োজিত করিলেন। সিপাহীগণ 
আমাকে বন্দীর মত দিবারাত্রি রক্ষা করিতে লাগিল। এদিকে পিতৃ-সক্কল্পের 
স্তায় আমার সঙ্কল্পও অবিচলিত ছিল। সুতরাং দিপাহীদিগের: হস্ত হইতে 
নিষ্কৃতি লাভের নিমিত্ত আমি সর্বদাই স্থুযোগ প্রতীক্ষা করিতে লাগিলাম। 
এক দিন রাত্রি যখন তৃতীয় প্রহর, তখন আমাকে নিদ্রীবিষ্ট বিবেচনা করিয়া 
আমার . পরিরক্ষক সিপাহীও নিদ্রিত হইয়া! পড়িল। আমি তখন উত্তম 


আবভরণিক। ৪৯ 


স্থযোগ সমাগত দেখিরা ধীরে বীরে উখিত হইলাম, এবং জলগরিপূর্ণ একটি 
পাত্র হস্তে লই দ্রতপন-বিক্ষেপে প্রস্থান করিলাম। অদ্ধ ক্রোশেরও অধিক 
দুর অগ্রদর হইন্জা একটি বহুশাখা-সমদ্বিত বৃক্ষ দেখিলাম; এবং আপনাকে 
প্রচ্ছন্ন করিবার উদ্দেশে সেই বৃক্ষোপরি আরোহণ পূর্বক একটি ঘন-গল্পবাবৃত 
স্থানে বদিষ্।। রহিলান। উষাকাল হইলে দেখিতে পাইলাম যে, সিপাহীগণ 
চত্নর্দিকে আমার অন্থুমন্ধান করিতেছে । আমি সেই বৃক্ষোগরি নীরধে ও 
শিশ্তব্ধ ভাবে সায়ংকাল পর্ষান্ত বমিয়া রহিলাম। তাহার পর যখন অন্ধকারে 
চারিদিক আবৃত হইন্না আসিল, আমি তখন বৃক্ষ হইতে অবতরণ পূর্বক বিপ- 
বীত দিকে চলিতে লাগিলাম। চলিতে চলিতে আহাম্মদাবাদ, এবং পরে 
বরদার় পৌছিলাম। বরদার চেতনমঠ নামক মন্দিরে ব্রঙ্গানন্দ ও অপরাপর 
্রক্মচারী সন্ন্যাসী সহিত বেদান্ত বিষিয়ে আলোচন! হইল। আমিই থে শ্ধা, 
এই বিষর তাহারা আমাকে উত্তমরূপ বুঝা ইয়া দিলেন । পূর্বের বেদান্ত অধ্যরনের 
সময় আমি এই বিষয় কিয়দংশে বুঝিয়াছিলাম বটে, কিন্তু এখন তীহাদিগের 
নিকট সম্পূর্নরূপ বুৰিতে পারিয়া জীব-্রদ্ষের একত্বে বিশ্বাস করিতে লাগিলাম। 
এই সময় একজন কাশীবাসিনী স্ত্রীলোকের নিকট সংবাদ পাইলাম যে, তথার 
পণ্ডিতদিগের এক মহাঁসভা হইবে । এই সংবাদ পাইবামাত্র আমি কাথাধামের 
অভিমুখে যাত্রা করিলাম, এবং তথায় উপস্থিত হইয়া! সচ্চিদানন্দ পরম্হৎসের 
সহিত মনস্তত্ব বিষগ্মে আলাঁপ করিতে লাঁগিলাম। সচ্চিদীনন্দের নিকট শুনিলাম্‌ 
যে, নর্্দার তীরস্থিত চানোদ-কল্যাণী নামক স্থানে অনেক উন্নত-চরিত্র 
সন্যাসী ও ব্রহ্মচারী অবস্থিতি করিয়া থাকেন। আমি তদন্ুসারে তথীয় উপ- 
স্থিত হইয়া অনেক যোগন-দীক্ষিত সাধু দেখিতে পাইলাম। ইতঃপূর্বে আমি 
কখন যোগ-দীক্ষিত সাধু দেখি নাই । চানোদে কিয়দ্দিন অবস্থানের পর আমি 
পরমানন্দ পরমহংসের নিকট বেদান্তসার ও বেদাস্ত-পরিভাষ! প্রত্ৃতি গ্রন্থ 
অধ্যয়ন করিতে লাগিলাম। এই সময়ে আমাকে রন্ধন করিয়! আহার করিতে 
হইত। তন্নিমিত্ত আমার পাঠের পক্ষে বড়ই বিপ্ন ঘটিত। এই কারণ সন্ন্যাসা- 
শ্রমে প্রবিষ্ট হইবার নিমিত্ত সংকল্প করিলাম । বিশেষতঃ সন্ন্যাসাশ্রম অবলম্বন 
পূর্বক নামান্তর গ্রহণ করিলে আমি আমার পরিচয়-সম্পর্কেও নিরাপদ হইতে 
পারিব। এই সকল বিবেচনা পুর্ব সম্যাসী-সম্প্রদায়ে নিবিষ্ট হওয়াই আমার 
৭ 


৫০ দয়ানন্দ-চরিত। 


পক্ষে যুক্তিসঙ্গ ত বলিয়া স্থির করিলাম । ভৎকালে চানোদের অদুরস্থিত একটি 
জঙ্গল মধ্যে দাক্ষিণাত্য হইতে ছুই জন সাধু সমাগত হইলেন। সাধুদ্ধয়ের 
এক জন স্বামী, এবং অন্ত জন ত্রহ্মচারী। তীহারা শৃঙ্গগারির মঠ হইতে 
দ্বারকাভিমুখে যাত্রা করিতেছিলেন। সাধুদ্বয়ের অন্তর পুর্ণানন্দ সরস্বতী নামে 
গপরিচিত। এক জন পরিচিত মহারাস্থ্ীয় পণ্ডিত সমভিব্যাহারে আমি তীহাঁ- 
দিগের নিকট গমন করিলাম। মহারাষ্্রীয পণ্ডিত তাহাদিগের নিকট আমার 
সন্ন্যাস-নংকল্প জ্ঞ।পন পূর্বক আমাকে দীক্ষিত করিতে অনুরোধ করিলেন । 
পুর্ণানন্দ সমভিব্যাহারী পণ্ডিতের কথায় আপত্তি উত্থাপন পুর্বক বলিলেন যে, 
দীক্ষাথীর বয়ম অনধিক,__বিশেষতঃ আমি মহারাষট্ীয,_কোন গুজরাটা 
সন্ন্যাসীর নিকটেই দাক্ষ। গ্রহণ তীহার পক্ষে বিধের। তদ্ুত্তরে আমার সঙ্গী 
বলিলেন থে, মহারাষ্্রদেশীয় সন্নযাসিগণ গৌড়দিগকেও দীক্ষিত করিতে 
পাঁরেন।, যাহা হউক এইরূপ আপন্তি বা অপম্মতির পর পরিশেষে পূর্ণানন্দ 
সরস্বতীর সমীগেই আমি সন্যাসাশ্রম গ্রহণ করিধা দয়ানন্দ সরস্বতী নামে 
প্রখ্যাত হইলাম। দীক্ষা-কাঁ্য সমাপ্তির পর সাধু ছুই জন দ্বারকার চলিয়া 
গেলেন। আমিও চানোদে কিছুদিন অবস্থান করিয়া! ব্যাসাশ্রমে আগমন 
করিলাম। ব্যাঁসাশ্রমে যোগানন্দ নামে একজন ঘযোগবিদ্যাবিশারদ সাধু 
থাঁকিতেন। আমি তাহার নিকট শিক্ষার্থীরূপে কিছুদিন থাকিয়া তৎপরে কৃষ্ণ 
শাস্্রীর নিকট উপস্থিত হইলাম। কৃষ্ণ শান্ত্রীর সমীপে ব্যাকরণ বিষয়ে বিশিষ্ট 
রূপ জ্ঞান লাভ পূর্ধবক পুনরায় চাঁনোদে আসিলাম। চানোদে জোয়ালানন্দ পুরী 
ও শিবানন্দ গিরি নামে ছুই জন সাধু ছিলেন। আমি সেই পুরী ও গিরির 
সহিত যোগালাপ ও যোগাভ্যাস করিতে লাগিলাম। কিছুদিন পরে সাধু ছুই 
জন চলিয়া গেলেন। চলিয়। যাওয়ার এক মাস পরে আমিও তাহাদিগের 
নির্দেশান্ুূপ আহাম্মদাবাদের নিকটস্থ দুগ্েশ্বরের মন্দিরে গমন করিলাম। 
তথায় পুনরায় তাহাদিগের সহিত সাক্ষাৎ ঘটিল। আঁমি তথায় তাহাদিগের 
নিকট যোগবিদ্যার নিগুঢ় তত্ব সকল শিক্ষা করিলাম। বলিতে কি, যোগশিক্ষা- 
বিষয়ে আমি সেই সাধুদ্বয়ের নিকট বিশিষ্টরূপ খণী আছি। তাহার পর 
রাজপুতনার অন্তর্গত আবু পর্বতে গমন করিলাম। কারণ শুনিয়াছিলাম যে, 
সেই স্থানে সিদ্ব-মহাপুরুষগণ অবস্থিতি করিয়া থাকেন। আবু হইতে ১৯১১ 


হাবতরণিকা। ৫১ 


সম্বতে হরিদ্বারের কুস্তে উপস্থিত হইলাম। কুন্তে শত শত সাধুতপস্বীর সমাগম 
দেখিনা বিম্মঘািত হইলাম। কুস্তের মেলা যত দিন ছিল, আমি তত দিন 
সমীপৰভ্ীঁ কোন জঙ্গলাবৃত নিভৃত স্থানে অবস্থিতি করিয়া যোগাভ্যাস করিতাম। 
মেলা ভঙ্গ হইলে পর হ্ববীকেশে গমন পূর্বক সাধুদিগের সহিত কখন যোগা- 
লাপে, কথন বা যোগাভ্যাসে কিয়্দ্দিন অতিবাহিত করিতে লাঁগিলাম। তথায় 
জনৈক ব্রহ্মচারী ও পার্ধত্য প্রদেশীয় দুই জন উদাসীনের সহিত পরিচর হইলে 
পর আমরা চারি, জনে টেহিরিতে আদিলাম। টেহিরিতে কতকগুলি সাধু 
ও বাজ-পণ্ডিতের সঙ্গে আলাপ হইল। তীাহাদিগের ভিতর এক জন আমা 
দিগকে আহারার্থ নিমন্ত্রণ করিলেন। নিদিষ্ট সময়ে আমি ও ত্রক্ষচারী প্রেরিত 
লোকের সমভিব্যাহারে নিমন্ত্ণ-কর্তীর আলয়ে পৌছিলাম। কিন্ত গৃহে প্রবিষ্ট 
হইয়াই দেখিলাম বে, জনৈক ত্রাঙ্গণ মাংস-কর্তন করিতেছেন। গ্ৃহাভান্তরে 
কির্দুর যাইয়া দেখিলাম “যে, এক স্থানে কতকগুলি পণ্ডিত স্তপীককৃত পশু- 
মাংস ও পণুমুওড লইয়া বসিয়া রহিয়াছেন। এই সকল দেখিয়া আমার অন্তরে 
অত্যন্ত গ্বণার উদ্দীপন হইল। সুতরাং গৃহস্বামী করুক সাদরে আশ্ুত হইলেও 
আমি তীহাকে ছুই একটি কথা বলিয়াই সত্বর চলিয়া আমিলাম। কিছুক্ষণ 
পরে মেই মাংসভুক্‌ পণ্ডিত আমার নিকট উপস্থিত হইলেন, এবং আপনার 
আহারার্থই মাংসাদির আয়োজন হইয়াছে, ইত্যাদি বলিয়! আমাকে লইয়া যাই- 
বার নিমিত্ত অনুরোধ করিতে লাগিলেন । তখন আমি বলিলাম যে, মাংস- 
ভোজন দূরে থাকুক, মাংস দেখিলেও আমার মনে অত্যন্ত দ্বণার উদয় হয়। 
অতএব আপনি যদি আহারের নিমিত্ত একান্ত অন্ধরোধ করেন, তাহা হইলে 
আমাকে কিছু ফলমূল পাঁঠাইর। দিতে পারেন। বলা বাহুল্য যে, নিমন্ত্রণ-কর্তা 
তাহাই করিলেন। 

“তথায় কোনুরপ গ্রন্থের অনুসন্ধান করিলে পূর্বোক্ত রাঁজ-পপ্ডিত বলিলেন 
বে, এখানে ব্যাকরণ, জ্যোতিষ ও তত্ত্ব প্রভৃতি গ্রন্থ পাওয়া যাইতে পারে। 
আমি ইহার পুর্বে কখন তন্ত্র দেখি নাই। এই কারণ কতকগুলি 
তন্বের গ্রন্থ আনাইয়া পাঠ করিতে লাগিলাম। কিন্তু তন্ত্রের মধ্যে পরদারাভি- 
গনন্, এমন কি মাতৃ-গমন, ছুহিতূ-গমন ও নগ্নিকা-সাঁধন প্রভৃতি নিতান্ত 
ঘ্বণিতাচারের অনুমোদন, এবং মদ্য-মাংসাদি ভোজনের বৈধতা গ্রতিপাদন 


৫2. দয়ানন্দ-চরিত | 


দেখিয়৷ যার পর নাই বিরক্ত হইলাম। এতভিন্ন সেই সকল গ্রন্থে অন্ু- 
বাণ ও ব্যাখ্যা সম্বন্ধে রাশি রাশি ভ্রান্তিও দেখিতে পাইলাম । অধিকন্ত সেই 
সকল জুগুগ্সিত কার্ধ্য ধন্ধম মধ্যে পরিগণিত দেখিয়া আমি অতিশয় আশ্চথ্যান্থিত 
হইলাম। তাহার পর টেহিরি পরিত্যাগ করিরা শ্রীনগরে আসিলাম। 
শ্রীনগরে কেদারঘাটের একটি মন্দিরে কিছুদিন অবস্থান করিলাম। তথা- 
কার পণ্ডিতদ্িগের সহিত বি তর্ক উপস্থিত হইলেই আমি তন্ত্রের কথা তুলিয়া 
তাহাদিগকে পরাভূত করিতাম। তথা গঙ্গাগিরি নামক জনৈক সাধুর সহিত 
. আমার আলাপ ও বন্ধৃতা ঘটিল। তীহার সহিত আমার সম্মিলন উভয়ের 
পক্ষেই হিতকর হইয়া উঠিল। বস্ততঃ আমি এতদুর আকৃষ্ট হইলাম যে, 
তীহার সঙ্গে দুই মাসেরও অধিক অতিবাহিত কক্সিলাম। কেদারথাট হইতে 
কুদ্রপ্রপ্নাগ প্রভৃতি স্থান পর্যটন করিয়। অগস্ত্যমুনির আমে আসিলাম। তদ- 
নন্তর শিবপুরী নামক পর্বত-শৃঙ্গে শীত চারি মাস বাপন করিলাম। শিবপুরী 
হইতে কেদারঘাট হইয়া! গুপ্তকাঁধীতে আদিলাম। তথায় কএক দিন অবস্থীন 
করিয়! ত্রিঝুগিনারায়ণ, গৌরীকুণ্ড ও ভীমগোপা প্রভৃতি দশন পুর্ধক আবার 
কেদারথাটে উপস্থিত হইলাম। রেদার্ঘাট একটি অতি রমণীয় স্থান । পুবে- 
প্লিখিত ত্রহ্মচারী ও উদাসীন্দয় প্রত্যাগত না হওয়া পধ্যন্ত আমি তথায় 
কতকগুলি জঙ্গম সম্প্রদায়-নিবিষ্ট সাধুর সহিত অবস্থিতি করিতে লাগিলাম। 
যাহা হউক সিদ্ধ-মহা পুরুষদিগের অন্থসন্ধানাথ আমি চতুদ্দিকের তুষারাবৃত 
শৈলমালা পরিভ্রমণ করিতে কৃতসংকল্প হইলাম। কিন্তু ছুরস্ত হিম ও সক্কটমর 
পার্ধতীয় পথের বিষয় চিত্ত! করিয়া মহাপুরুষদিগের সন্ধান সম্বন্ধে প্রথমতঃ তৎ- 
প্রদেশবাী লোকদিগকে জিজ্ঞাপা করিতে লাগিলাম। কিন্তু আমার কথা 
শুনিয়া তাহার! সকলেই আমাকে অজ্ঞ ও প্রান্ত-বিশ্বাসী বলিয়া বিবেচনা 
করিতে লাগিল। ফলতঃ এই প্রকারে প্রায় বিংশতি দিবস কাল বুথ! 
পর্ধ্যটন করিয়া! শিরুৎসাহ হইয়া পড়িলাম, এবং প্রত্যাবর্তন-কালে তুঙ্গনাথ 
শৃর্দে আরোহণ কর্িলাম। তথায় একটি মন্দিরের ভিতর বহুসংখ্যক 
দেবমুত্তি ও পুরোহিত দেখিয়া! সেই দিনেই শৃঙ্গ হইতে অবতরণ করিলাম । 
অবতরণ-কাঁলে আমার সন্মুখে ছুইটি পথ দেখিতে পাইলাম। তাহার একটি 
পশ্চিম দিকে, এবং অপরটি দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে প্রসারিত হইয়াছে। আমি 


অবতরণিকা ৷ ৫৩ 


কোনরূপ বিবেচনা ন! করিয়া জঙ্গলাভিমুখীন পথট অবলম্বন করিলাম। সেই 
পথে চলিতে চলিতে ক্রমশঃ একটি নিবিড় জঙ্গলের ভিতর আসিয়া পড়িলাম। 
জঙ্গলের স্থানে স্থানে বারি-বিহীন ক্ষুদ্র ক্ষুত্র তটিনী, এবং ক্ষুদ্র বৃহৎ প্রস্তর- 
খণ্ড সকল বিদ্যমান রহিয়াছে । এইরূপে নিবিড় বনমব্যে পতিত হ্ইয়! 
উচ্চতর পর্বতোপরি আরোহণ করিব, কি নিয়ে অবতরণ করিব, তদ্দিধর়ে 
চিন্তা করিতে লাঁগিলাম। পরিশেষে পর্ধতোপরি আরোহণ, বিশেষ বিদ্ব-সন্কুল 
বিব্চেন। করিয়া ভৃণলতা ও গুল্ম নকল দৃট়রূপে আক্ষণ পৃক্বক আমি 
একটি বাঁরি-বিহীন তটিনীর অপেক্ষাক্কত উচ্চ তটে আসিয়। উপনীত হইলাম । 
তাহার পর এক শিলাখণ্ডের উপরিভাগে দণ্ডায়মান হইলাম, এবং চতুদ্দিকে 
কেবল উচ্চ উচ্চ প্রস্তরথগ্ড ও অবিশ্রীস্ত অরণ্য দেখিতে পাইলাম । যাহ! 
হউক, কণ্টকাথতে আমার সনস্ত শরীর ক্ষত-বিক্ষত এবং পদদ্য় একরপ 
চলচ্ছক্তি-বিপহিত হইলেও আমি সেই বনভূমি অতিক্রম করিবার শিশিত্ত 
পুনরায় অগ্রসর হইল'ম। কিয়তক্ষণ পরে এক পর্বাতের পাদদেশে উপস্থিত 
হইয়া পথের সন্ধান প্রাপ্ত হইলাম। নিকটে কতকগুলি শ্রেণীবদ্ধ পর্ণকুটার 
ছিল। আমি সেই পর্ণকুটীরের অবিবাসীদিগকে জিজ্ঞাসা করায়, তাহারা 
বলিল বে, সেই পথ অখিমঠ পধ্যন্ত প্রসারিত হইয়াছে । তখন অন্ধকারে 
চতুদ্দিক সমাচ্ছন্ন হইলেও আমি কোনরূপেই সেই পথ পরিত্যাগ না করিয়া 
ক্রমশঃ চলিতে লাগিলাম; এবং অবশেষে অখিনঠে উপনীত হইয়া তথায় 
রাত্রি বাপন করিল।ম। প্রাতঃকালে গুপ্তকাশীতে পুনরায় আসিলাম, এবং তথ! 
হইতে আবার অথিমঠে আগমন পূর্বক তথাকার মোহস্তের সহিত আলাপ 
করিলাম। শিষ্যত্থ গ্রহণ করিবার নিমিত্ত মোহস্ত আমাকে অন্থরোধ করিতে 
লাঁগিলেন। এমন কি, তীহার অবিষ্ভমানে মোহন্ত-পদে অধিষ্ঠিত হইয়া লক্ষ 
লক্ষ মুদ্রার অধিপৃতি হইতে পারিব, এইবপ প্রলোভন-স্থচক প্রস্তাবও উপস্থিত 
করিলেন। তদুত্তরে আমি সরূল ভাবেই বলিলাম যে, সম্পদ ব! সাংসারিকতার 
প্রতি আমার অনুরাগ নাই। তাহা থাকিলে আমি কখনই গৃহ-পরিত্যাগ 
করিয়া আসিতাম না। কারণ আমার পিতৃ-সম্পর্ভি আপনার যাবতীয়. মঠ- 
সম্পত্তি অপেক্ষা কোন অংশেই হীন নহে। আমি সম্পত্তি-স্থথ উপভোগের 
নিমিত্ত সংসার ত্যাগ করি নাই। কিন্তু যে নিগুঢ় জ্ঞান উপার্ভিত হইলে 


৫৬ দয়ানন্দ-চরিত। 


ন! পাইয়া সেই শবের সঙ্গেই সেই গ্রন্থখানিও খণ্ড খণ্ড করিয়া নদীবক্ষে 
নিক্ষেপ করিলাম । গেই অবধি বেদ, উপনিষদ্‌, পাতর্জল ও সাংখ্য ভিন্ন 
অপরাপর যে সকল গ্রন্থে বোগের কথা উল্লিখিত আছে, তৎসমুদায়কেই মিথ্যা 
বণিয়। মনে করিতে লাগিলাম। এই ঘটনার পর গঙ্গাতটে কিছুকাল ক্ষেপণ 
করিয়া ফরক্কাবাদে আসিলাম, এবং তথা হইতে ১৯১২ সম্ধতে কানপুরে 
উপস্থিভ হইলাম। তদনন্তর এলাহাবাদ ও মৃজাপুর প্রভৃতি স্থান পরিভ্রমণ 
করিয়া কাণীধামে পৌছিলাম। তথায় গঙ্গা-বরুণাঁর সঙ্গম স্থলে একটি গুহার 
ভিতর অব্থিতি পুর্ববক তথাকার রাজারাম শাস্ত্রী ও কাকারাম শাস্ত্রী প্রত্ৃতি 
পণ্তিতধিগের মৃহিত পরিচিত হইলাম। কাশী হইতে চণ্ডালগড়ে আসিলাম। 
আমি তখন ধোগান্গশীলনে অধিকাংশ কাল অতিবাহিত করিতাম বলিয়! 
অন্নাহার পরিত্যাগ করিয়াছিলাম, এবং কেবল দুগ্ধপান করিয়াই দেহ-ধারণ 
করিতাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় যে, আমি তখন সিদ্ধিানে অভ্যস্ত হইগ়্াছিলাম। 
যাহা হউক চগ্ডালগড়ের নিকটস্থ কোন পল্লির এক শিবালয়ে এক দিন রাত্রি 
যাপনার্থ উপস্থিত হইলাম । দিদ্ধিপান-জনিত মাদকতা বশতঃ তথায় প্রগাঢ় 
রূপে নিত্রিত হইয়া পড়িলাম। আমার বিবাহ সম্পর্কে পার্ধতীর সহিত মহা 
দেবের কথোপকথন হইতেছে, এইরূপ একটি স্বপ্ন সন্দর্শন করিয়া জাগ্রত 
হইলাম। তখন বৃষ্টিপাত হইতেছিল। সুতরাং মন্দিরের বারান্দায় প্রবিষ্ট 
হুইলাম। তথায় বুষদেবত। নন্দীর একটি প্রকাও প্রতিমুন্তি ছিল। আমার 
পুস্তকাদি নন্দী-মৃত্তির পৃষ্ঠে রাখিয়া তাহার পশ্চাতে উপবিষ্ট হইলাম। সহসা 
নন্দী-মৃত্তির অভ্যন্তরে দৃষ্টিপাত করায় বোধ হুইল যে, তাহার মধ্যে একজন 
মন্্য বসিয়া রহিয়াছে । আমি তাহার দিকে হস্ত-গ্রসারণ করিবামাত্র সেই 
ব্যক্তি লক্ প্রদান পূর্বক পলায়ন করিল। আমি তখন সেই শৃষ্তগর্ভ মুভির 
ভিতরে প্রবিষ্ট হইয়। অবশিষ্ট রাত্রি নিদ্রিত রহিলাম। প্রাতঃকালে একজন 
বৃদ্ধ বৃষদেবতার পৃজার্থ উপস্থিত হইল। আমি তখন বৃষত্বতার অভ্যত্তরেই 
বসিয়া আছি। কিছুক্ষণ পরে বৃদ্ধা রম্ণী দধি ও গুড় লইয়া উপস্থিত হইল, 
এবং আমাকেই বৃষদেব্ত। বিবেচনা পুর্ববক আনীত গুড় ও দধি আমার সম্মুখে 
রাখিল। আমিও তখন ক্ষুধার্ত হইয়াছিলাম, স্থতরাং তাহাঁর সমস্তই আহার 
করিয়া ফেলিলাম। বিশেষতঃ অগ্ররস-বিশিষ্ট দধিপানে সিদ্ধির মাদকতাও 


মধতরণিকী। ৫৭ 


তিরোহিত হইল। আমি ভাহার পর, যে স্থল হইতে নম্ম্দা-জআোত প্রবাহিত 
হইয়াছে, সেই স্থল দেখিবার অভিপ্রাঁরে বারা করিলাম । পথে অনেক বন- 
জঙ্গল ভেদ করিতে হইল, এক স্থানে বন্ত-বরাহ আসিয়া আক্রমণ করিবার 
চেষ্টা করিল। তাহার গঙ্জনে সমীপবন্তী লৌকেরা আমার রক্ষার্থ উপস্থিত 
হইল। কিন্তু তাহার! পৌছিবার পৃর্রেই আমি বরাহ-আক্রমণ হইতে আপনাকে 
রক্ষা করিয়াছিলাম। গাছে আমি অরণ্যের মধ্যে ব্যান্রাদি হিং জন্ত কর্তৃক 
কবলিত হই, তত্িমিভ্ তাহারা প্রত্যাগত হইবার নিমিত্ত আমাকে অন্গুরোধ 
করিল। কিন্তু তাহা না শুনিয়া আমি ক্রমশঃ অগ্রসর, হইলাম। শ্নে স্থানে 
হস্তী-উৎপাটিত বুক্ষ সকল দেখিলাম, একক স্থানে কণ্টকাথাতে দেহের নানা স্থান 
বিচ্ছিন্ন হইয়া গেল। ক্রমে সন্ধ্যার অন্ধকারে চারিদিক আবৃত হইতে লাগিল । 
আমি তখন অদূরে আলোক প্রজ্জলিত দেখিয়া মন্গয্য-নিবাসের নিধশন 
পাইলাম, এবং আলোকাভিমুডখ গমন করিতে করিতে কতকগুলি পরণ-কুটারের 
নিকট উপস্থিত হইলাম। তথার একটি ক্ষুদ্র আোতশ্বিনী ছিল। আমি 
তাহার জলে ক্ষত স্থানাি প্রক্ষাণিত করিয়া একটি বিশাল বৃক্ষের তলদেশে 
উপরিষ্ট হইলাম । তথাকার লৌক সকল আমার নিকট উপস্থিত হইল, এবং 
তাহার পর আমার আহারার্থ ছুদ্ধ আনয়ন ও সমস্ত রাত্রি রক্ষণাবেক্ষণ পূর্ববক 
যার পর নাই আতিথেরতার পরিচয় প্রদান করিল। আমি তাহাধিগের আতি- 
থেরতায় পরিভুষ্ট হইয়! প্রগাঢ় রূপে নিঙ্িত হইলাম । প্রাতঃকালে উ্থিত 
হইক়! সন্ধ্যা-বন্দনা করিলাম, এবং তদনস্তর ভবিষ্যতের নিথিত্ত প্রস্তত হইতে 
লাগিলাম।” 1 | 





+ উপরি-উল্লিখিত অংশটি ১৮৭৯ এবং ১৮৮০ সালের “থিওসফিষ্ট” পত্রিকায় গ্রকাশিত 
হুয়। এখন কি "থিওসফি্” পত্রিকার প্রকাশিত হইব।র জন্যই উঠা স্বয়ং দয়ানন্দ 
কর্তৃক লিখিত, এবং পরে ইংরাঁজিতে অনুবাদিত হইয়। প্রকাশিত হয়। তাহার আত্ম-চারত 
যে “ফিওসফিস্ট” পত্রিকায় সম্পূর্ণরূপে প্রকাশিত করিবার ইচ্ছ। ছিল, তাহা তাহার লিখিত 
একখানি পত্রেই বুঝিতে পার! যায়। 115 17505071015. 388০0; 21901) 0190. 
যাহা হউক আমরা এই হ্থলে “থিওসফি৯, হইতে অনুবাদ্দিত করিয়াই প্রকাশিত 
করিলাম! এই স্থলেও ভায়া অপেক্ষা ভাবের প্রতি অধিকতর লক্ষ্য বাখিয়াই 
দহ্বাদ কর! হ্ইয়াছে। ফরাক্ধাবার্দ হইতে প্রকাশিত ভারত-মুদশা-প্রবর্তক ন|মক 

৮ 


৫৮ দয়ানন্দ-চরিত। 


হিন্দ পত্রিকান্ দয়ানন্দের নিজ-কথিত আস্মচরিতের কিযদংশ সুজিত হয়। সেই 
মুদ্দ্রিতাংশ “আ্ীযৃত স্বামী দয়াণন্দ সরস্থতী জী মহারাজ কী কুছদিনচর্যয” নামক 
পুন্তিকাকারে পুনমূর্দ্রিত হইয়াছে । আমরা অনুধাদ্দ করিবার সময় কোন কোন বিষয়ে 
মেই পুস্তিকার সহিত তুলনায় আলোচনাও করিয়াছি। দয়ানন্দের প্রথমবার-কথিত 
আ্মচরিতের মঙ্গে দ্বিতীয়বার-কখিত আত্মচরিতের কোন কোন অংশে কিছু কিছু 
প্রতেদ আছে। বিশেষতঃ কোন কোন ঘটনার পূর্র্বাপরতা৷ সম্বদ্ধেও কিছু কিছু পার্থক্য 
রহিয়। গিয়াছে । তাহা হইলেও এইবপ পার্থক্য মুল বিষয়ের কিছুই হানি হয় না। 


পাশপাশি (৫0১ 


দয়ানন্দ-চরিত। 


সপপাপপসপাসি স্থিতি পলা ইশ 


প্রথম পরিচ্ছেদ! 


ও শ্্ ৪ 








জন্স__ছন্মকাঁ,পিত।নাভা,-বাল্যশিক্ষ।_মুষ্টিপূজার প্রতি অবিশ্বান;- 
মৃড়াচিস্তা,-_বিষ্য়-বিভূষণ,-গৃহ-নিক্কংমণ। 


দয়ানন্দ সরস্বতী এক জন সন্ন্যাসী । সন্ন্যাসী, কখন আপনার আশ্রমনীতি 
অতিক্রম করিয়া চলেন না। তন্নিমিত্ব দয়ানন্দ আত্ম-পরিচয়-সম্পর্কে নিজের 
নামাদি না বলিয়! নির্বাক হইয়। থাকিতেন। সুতরাং তাহার,-_কিংবা তাহার 
পিতামাতার নামাদি বিষয়ে কিছুমাত্র জানিবার সম্ভাবনা নাই। অনেকে বনিয়। 
থাকেন, দয়ানন্দের আদি নাম মুলশঙ্কর। এইরূপ উক্তি অমূলক হইবার 
কোন কারণ নাই। অধিকন্ত দয়ানন্দের পিতা যেরূপ শিবপরায়ণ ছিলেন, 
এবং তাহার শঙ্করনিষ্ঠা ও শঙ্করপ্রিরতা যেরূপ প্রবল! ছিল ; তাহাতে আপনার 
পুত্রকে শঙ্কর বা শঙ্বর-সংস্থষ্ট কোন নামে অভিহিত করা কিছুমাত্র অসস্ভাবিত 
নহে। তবে এই বিষয়ে যখন কোন স্পষ্টতর প্রমাণ নাই, তখন আমরা! 
তাহাকে দয়ানন্দ সরস্বতী নামেই পরিচিত ব! প্রখ্যাত করিলাম । 

দয়ানন্দের জন্মভূমি মতি নগর। উহা! মর্ভি রাজ্যের প্রধান নগর বলিয়া 
পরিগণিত। মভি রাজ্য গুজরাটের অন্তগ্নত কাটিবার প্রদেশে অবস্থিত। 
দয়ানন্দ বলিয়াছেন,_“আমি মর্ভিতে জন্মগ্রহণ করি, মর্ডি একটি নগর,-উহা! 
দ্রগান্ধু!। রাজ্যের সীমান্তবর্তী ।” স্থলাস্তরে বলিয়াছেন,__“কাটিবার প্রদেশে 
মর্ভি রাজার অন্তর্গত কোন নগরে * * * আমি জন্মগ্রহণ করিয়াছি।”» এই 
ছুই প্রকার উক্তির মধ্যে অংশত; কিছু পার্থক্য খাকিলেও মূলভঃ কোন বিরোধ 


৬ দধানন্দ-চরিত 1 


শা । যাহা হউক মর্ডি নগর ক্রগান্ধ। রাজ্যের সীমান্তবর্তী কি না বগিতে পাৰি 
এ।। তবে দয়ানন্দ যে পল্লিবিশেবে * জন্ম-পরিগ্রহ করেন নাই,__ পক্ষান্তরে 
নগরবিশেষেই যে তাহার জন্ম হ্য়+_এবং সেই নগর যে মভি নগর, 1 তদ্বিষয়ে। 
জনুমাত্রও সুংশর নাই । 

দয়ানন্দ যে সময়ে জন্ম-পরিগ্র্চ করেন, সে সময় ভারতভূমি খিশৃঙ্খলাপুণ্॥ 
তখন ভারতভূমির অভযন্তর নানাগুকার বৃদ্ধবিগ্রহথে বিপ্লবিত। তখন ইংরাজের 
বিজয়িনী শক্তিত্র সখ মহারাষ্ট্রের মহাশক্তি সকল সংঘর্ষিত হইতেছিল। 
দিন্ধিয়া ও পেখবার অপরিমিত পরাক্রম পথ্ুদস্ত হইরাছিল,_এবং তাহার কিছু 
পুর্কেই রাজপুত জাতির বিশ্ববিক্রুত বীরগরিমা অতীতের অবসাদময় অঙ্কে 
আশ্রয় লইয়াছিল। কি বাঁজস্থানে, কি মহারাষ্ট্রে, অথবা কি পঞ্চনদে প্রায় 
সর্ধত্রই তখন ইংরাঁজ-মহিমা প্রসারিত ও প্রতিষ্ঠিত হইয়া উঠিতেছিল। তথ 
কালে নঙ আমহার্ট ভারতভূমির গিংহানানঢ় হইয়া ভাগ্যচক্র বিঘুণিত 
করিতছিলেন। তাহার অমোঘ আদেশে বিজয়িনী ভ্রিটিস সেনাগণ ব্রন্ষ- 
দেশ বিধ্বস্ত করিতেছিল, এবং ভরতপুরের ইতিহাস-কীঠিত হুর্গ অধিকার 
পূর্বক আপনাদের বীরমদে আপনারাই উন্মত্ত হইতেছিল। তখন দেশ- 
মধ্যে শাগ্ডি চিত হইরাছিল বটে,_কিন্তু সংস্থাপিত হয় নাই। এই 
কারণ অধিবাসিবর্থ অনেক সময় আতঙ্কিত চিন্তে কাঁলাতিপাভ করিতেছিল। 
বিশেষতঃ ঠগী নামক নরথাতকদধিগের অত্যাচারে দেশেন সব্ধাত্র কীপিয়া 





* আঁয্সিদ্ধান্ত-নম্পাদক পাওত ভীমসেন শর্মা, গুজরাটদেশীয় কোন ত্রাঙ্গণের নিক্ট 
শুনিযাছেন যে, মি রাজের অন্তগত টক্কর নামক গ্রামে দয়ানন্দ জন্মগ্রহণ করেন। এই 
কথা বিশ্বান-যোগ্য বলিয়। মনে হয় না। যেহেতু দয়াননের জন্মস্থান যে নগরবিশেষ১ তাহা 
তৎকথিত আত্মচরিত-প্রসঙ্গে একাধিক বার উল্লিখিত হইয়াছে। - 

+ মি নগর মাছু নামী নদীর তীরে অবস্থিত। মাছু নদী মর্ভি হইতে উত্তরবাহিনী 
হইয়। এগার ক্রোশ দুরে কচ্ছ উপসাগরের মহিত মিলিত হইয়াছে। এই নগর রাজকোট 
হইতে ৩৫ মাইল দু'রবন্তী। মাভরাজা কাটিবারের হালার নামক বিদ্ঞাগের অস্তগত।) এই 
রাজোর পরিমাণ ফল ৮২১ বগ মাইল। মাতর রাজা কচ্ছপতি বাও-এর বংশধর বলিয়। 
বিখ্যাত। ইংরাজ গভর্ণমেন্ট ভিন্ন বরদার গাইকোফ়ার ও জুনাগড়ের নবাবকেও মভিরাজ 
কর প্রদান কারয়া থাকেল 107016719] 028069617 ৮০] 157১ 518-19 


জন্মকাঁল। ৬১ 
উঠ্রিতেছিল। সে সময়ের সামাজিক অবস্থাও শে(চনীয়। স্যাজভুমি বিবিধ 
প্রকার আবজ্জনায় সমাবৃত ছিল ১-অধিক কি ভারতের চিতাসমূহে শত শত 
অবলান জীবন্ত দেহ পুড়িগ্া পুড়িরা ভস্মরাশিতে পরিণত হইতেছিল। গ্রকৃত 
প্রস্তাবে লোকশিক্ষা তখনও প্রতিষ্ঠিত হয় নাহ । ভবে রাজা এ্রজা-শিক্ষার 
আবশ্তকতা৷ বিশিষ্টরূপে অনুভব পূর্বক তাহার প্রকার ও গ্রণীলীর বিষয়ে 
স্থধী-সমাজের সহিত পরামর্শ করিতেছিলেন। তৎকালে পৃষ্ট-ধর্শর ছুই 
একটি আলোক-রেখা ভারতভূমির উপর অনে অল্পে পাতিত হহতেছিল। এক 
দল প্রখ্যাত-নামা প্রচারক আধ্যাব্ত অধিকার করিবার উদ্দেশে বদ্ধপরিকর 
হইয়। আসিরাছিলেন। তাহারা ভাগীরণীর পবিত্র তটে আপনাদিগের প্রচারা- 
লর প্রতিষ্ঠিত করিয়া হিন্দুর সমাজ ও ধন্মের এতি অবিরত অন্ত্রক্ষেগ করিতে- 
ছিলেন। অধিকন্থ তখন অপধন্ম ও অজ্ঞানতার গাঁড় অন্ধকারে ভারতের 
চতুদ্দিক পরিব্যাপ্ত হইরাছিল। অবিবাপিগণ সেই গাঢ় অন্ধকারের ভিতর 
আত্মবিস্থৃত হইয়! গাঢ় নিদ্রায় অভিভূত ছিল! কেঁল এক জন মাত্র খাঙ্গণ- 
সন্তান বঙ্গভূমির এক গ্রান্তে জাগ্রত হইয়া ব্রঙ্গবাদের বিজয়ভেরী বাবার 
নিনাদিত করিতেছিলেন। তাহার ভেরী-নিনাদ্দে ভারত জাগিতেছিল বটে, 
কিন্তু ুপ্তোখিত বাক্তি সহসা যেমন আত্ম-্অবন্থা অবধারণ করিতে পারে না, 
সেইরূপ ভার্তভূমিও আত্মঅবস্থা অবধারণ করিতে পারিতেছিল না। এমত 
সময়ে মহাত্ম। দরানন্দ সরন্বতী সম্বতের ১৮৮১ অন্দে,_-অথবা ১৮২৪ খুষ্টানে 
এক উদীচ্য ব্রাহ্মণকুলে আবিভূতি হইলেন।* অন্দ ভিন্ন তাহার জন্মকাল 
বিষয়ে আমরা মাস তারিখ বা তিথি সম্পর্কে কোনরূপ নিদর্শন পাই নাই। 





* অধ্যাপক ন্যাক্সমূলর তগ্প্রণীত জীবনীযাল। বিষয়ক গ্রন্থে দয়ানন্দের জন্মকাল ১৮২৭ 
ৃষ্টাব্দ বায় নিরূপিত করিয়াছেন। অথচ তিনি ১৮৮৩ খৃষ্টাব্দে উনষাট বৎসরবয়:ক্রমে 
লোকান্তরিত হয়েন, এই কথাও লিখিয়াছেন। উনযাট বৎনরের সময় মৃত্যুকাল ধরিলে, 
জন্মকাল ১৮২৭ ন হইল] ১৮২৪ খৃষ্টাবই হইয়া থাকে । সুতরাং ম্যান্সমূলর মহোদয় 
পরোক্ষভাবে নিজেই নিজের কথার প্রতিবাদ করিতেছেন। আশ্চধ্যের বিষয়, তান 
স্বীয় প্রস্তাবে দয়ানন্বের নিজ লিখিত আত্মচরিত ইইতে অনেক অংশই উদ্ধত করিয়াছেন, 
কিন্তু যে অংশে তাহার জন্মকাল উল্লিখিত আছে, সেই অংশটিই অনুদ্ধত রাখিয়াছেন। 
[12৮81017905 001০070307091 10555855১0১ 707 878০. ম্যাক্সমূলর দয়।পন্দ 


৬২ দয়ানন্দ-চরিত। 


দয়ানন্দের পিতা একজন বিশিষ্ট শিবোপাসক ছিলেন। এমন কি তিনি 
শিবোপাসনাকেই সার ও সর্কোচ্চ ধর্ম বলিয়া মনে করিতেন। ফলতঃ বিপুল 
সম্পত্তি ও বিস্তৃত পরিবারের অবিস্বাী হইরা। তিনি ধর্ম্ীবিষয়ে যেরূপ নিষ্ঠা- 
সম্পন্ন ছিলেন, সেরূপ নিষ্ঠাসম্পন্ন লোক সংসারে অতি অন্পই দেখিতে পাওয়া 
যায়। এই হেতু শঙ্করের উদ্দেশে বার-ব্রত অচ্ঠনা-উপবাস যাহা কিছু অনুষ্ঠিতব্য? 
তিনি তত্দমস্তই তন্ন তন্ন রূপে অনুষ্ঠিত করিয়া চলিতেন। কেবল নিজে চলি- 
তেন না,_তদর্থ অপরকেও অনুরোধ করিতেন। যেস্থলে শিবপুরাঁণ পঠিত 
হইত, যথায় খিবোপাখ্যান আলোচিত হইত, কিংবা যে স্থানে শিবসংক্রান্ত 
কোন্‌ সদনুষ্ঠানের সুচনা! হইত, তিনি সেই স্থানেই শ্রদ্ধান্ধিত চিত্তে গমন পূর্বক: 
তাহা শবণ বা দশন করিয়া যার পর নাই পুলকিত হইতেন। পিতৃ-প্রক্কতির 
এইরূপ প্রগাঢ় ও অকৃত্রিম ধর্মনিষ্ঠা যে, পুত্র দয়ানন্দে বিনিবেশিত হইবে, 
তাহাতে আর সংশয় কি? কেবল অক্কত্রিম ধর্ম্মনিষ্ঠার নিমিত্তই তিনি প্রসিদ্ধ 
ছিলেন না । তিনি একজন অবিচলিত-চিত্ত ব্যক্তিও ছিলেন। দয়ানন্দের 
জননী যখনই পুত্রের স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা করিয়া প্রতিদিন শিব-পূজার বিরুদ্ধে 
আপত্তি করিতেন, পিতা তৎক্ষণাৎ তাহার প্রতিবাদার্থ অগ্রসর হইতেন। এই 
সম্বন্ধে সহধর্শিণী পুনঃ পুনঃ আপত্তি উত্থাপিত করিলেও-তিনি তাহার প্রতি 
কর্ণপাত করিতেন না। তিনি যাহা! কর্তব্য বলিয়! বিবেচনা করিতেন,-_বিশে- 
যতঃ ধর্ম্মবিষয়ে যে সকল অনুষ্ঠান অনুষ্ঠেয় বলিয়া অবধারিত করিয়া বাঁখিতেন, 
তাহা পুজ্জানুপুজ্রূপে প্রতিপালন করিবার নিমিত্ত প্রিয়তম পুত্রের প্রতি 
কঠোরতম আদেশ প্রদান করিতেও কিছুমাত্র কুষ্টিত হইতেন না। ইহ! 
পিতৃ-চরিত্রের পক্ষে সামান্য দৃঢ়-চিত্ততার পরিচয় নহে। যাহা হউক পিতৃ- 
প্রক্কতির এইরূপ দৃঢ়-চিত্ততা পুক্র-্রক্কৃতিতে সংক্রামিত হইয়াছিল বগিয়! 
আমাদিগের মনে হয়। 

মাতৃ-প্রক্কতি সম্বন্ধে দয়ানন্দ কোন কথাই বলিয়! যান নাই। তবে 
কার্ধযকারণ-স্থত্রে যতটুকু অনুমিত হয়, তাহাতে তাহার জননী একজন 





সরম্বতীর মৃত্যার পর ১৮৮৪ খৃষ্টাব্দের সম্ভবতঃ জানুয়ারি কিংব। ফেব্রুয়ারি মাসে, বিলাভের 
“গালম্যাল গেজেট” নামক প্রসিদ্ধ সংবাদ পত্রে তাহ।র বিষয়ে এক প্রবন্ধ প্রকাশিত করেন। 
বোধ হয় উগরি-উদ্নিখিত এস্থে সেই প্রবন্ধই পুনমু্রিড করিয়। প্রকাশিত করিয়ান্েন। 


ঘাল্য-শিক্ষা | ৬৩ 


যার পর নাই কোমল-হদয়া কামিনী ছিলেন বলিয়াই বিশ্বাস করিতে 
হইবে। শিবরাত্রির ব্রতভঙ্গ করিয়া দয়ানন্দ যখন গৃহে প্রত্যাগত হইলেন, 
তখন তিরঙ্কার দূরে থাকুক, জননী একান্ত গ্রীতির সহিত তাহাকে আহার 
করাইলেন। অধিক কি, ব্রততঙ্গর্ূপ অপরাধের নিমিত্ত পাছে প্রাণপ্রিয় পুত্র 
পিতার নিকট তিরস্কৃত বা দণ্ডিত হয়, তন্নিষিত্ত তিনি পূর্বব হইতেই তাহাকে 
কেমন সতর্ক করিয়! দিলেন! বলিতে কি, তিনি দগ়্ানন্দের দেহাস্থখ আশঙ্কা! 
করিয়াই শিবারাধনা সম্বন্ধে স্বীয় ভর্ভীর সহিত বিরোধ করিতেও সঙ্কুচিত 
হইতেন না। এই সকল করুণ-হ্ৃদয়তার অনুপম নিদশন বলিতে হইবে। 
সিদ্ধপুরের মেলাভূমি মধ্যে দয়ানন্দ যখন পিতৃ-হাস্তে ধৃত হইলেন, তখন তিরস্কার- 
সুচক অপরাপর কথার ভিতরে তিনি তাহাকে “মাতৃহস্তা” বলিয়াও অভিহিত 
করিলেন। এতদ্বারা বুঝা যায় যে, তীহার বিরহে জঙ্ননী যার পর নাই ব্যথিতা,__ 
এমন কি মৃতপ্রায়! হইয়াছিলেন। সুতরাং তাহার মাতৃ-প্রক্কতি যে কিরূপ 
করুণ-রসাভিষিক্ত ছিল, তাহা আর অধিক করিয়া বুঝাইতে হইবে না। দয়ানন্দের 
চরিত্রেও তীহার মাতৃ-প্রক্ৃতির অনুরূৃতি ছিল। দিগ্বিজয়ী পণ্ডিত অথবা 
তর্কশান্ত্রবিশারদ তাঁকিক হইলেও দয়ানন্দ কর্কশ প্রকৃতির লোক ছিলেন ন|। 
পক্ষান্তরে তাহার প্রকৃতি এরূপ সুঘধূর ও আচরণ এন্সপ সরস ছিল থে, 
খিনি তীঁহার সহিত পরিচয়-স্ত্রে একবার নিবদ্ধ হইতেন, তিনি কখনও 
ত্রাহাকে ভূলিয়! থাকিতে পারিতেন ন1। 

দয়ানন্দের শিক্ষীকার্ধ্য কৌলিক পদ্ধতি অনুসারে সম্পাদিত হইল। তিনি 
কিঞ্চিদুন পাঁচ বৎসর বয়ঃক্রমের সময় বর্ণশিক্ষ। পূর্বক বেদের বহুসংখ্যক 
মন্ত্র ও বেদভাষ্যের বহুতর অংশ অভ্যন্ত করিলেন। অষ্টম বৎসরে 
তীহার উপনম্বন কার্য সম্পন্ন হইল। তদনন্তর রুদ্রাধ্যায় হইতে আরম্ভ 
কাঁরয়া যজুব্রেদ অধ্যয়ন করিতে লাগিলেন। উদীচ্য ত্রাঙ্মণগণ সামবেদাস্তর্গত 
হইলেও দয়ানন্দকে হভুর্ধেদ পাঠ করিতে হইল। কেন হইল তাহা 
বলিতে পারি না। দয়ানন্দ চতুর্দশ বৎসর বয়স্ক না হইতেই ব্যাকরণ, 
শবরূপাঁবলী, সমগ্র যুর্বেদ এবং অপরাপর বেদের বহুতর অংশ শিক্ষা! পূর্বক 
গাঠকার্ধ্য একরূপ সমাপ্ত করিলেন। এবপ হইতে পারে যে, তাঁহাদিগের 
বংশীয় বাঁলকগণ সচরাঁচর এ পর্যস্ত পড়িয়াই পাঠ-কার্ধ্য পরিসমাপ্ত করিত। - 


৬৪ দধানন্দ-চরিভ | 


সাহা হউক দয়ানন্দের অধ্যয়ন তখনও শেষ হইল না। পক্ষান্তরে তিনি 
আপনার পাঠ্য বিষয় অধিকতর গ্রযারিত করিয়া লইলেন, এবং নিকুত্ত, নিথণ্ট, 
ও পুর্বমীগাষ। প্রভৃতি অধায়ন করিতে লাগিলেন। কিছুদিন পরে কাশীধামে 
বাইয়া! অধায়ন করিবার ইচ্ছাও তীহার মনে উদিত হইল! কাণীধাম 
সংস্কৃতশিক্ষার কেন্দরস্থান বলিন্। পরদিদ্ধ। তন্নিমিন্ত বঙ্গ, বিহার, দ্রাবিড়, 
গঞ্জাব ও গুররাট গ্রভৃতি নান! গ্রদ্শবাসী বিদ্যার্থিঘণ তথায় সমাগত হইয়! 
নানা শান অধাযূন করিয়া! থাকেন। ইয়োঝোগীর বিদ্যাভিলাধীর কর্ণে 
কেক্ি'জ থা অল্সফোর্ডের নান যেরূপ চিত্তাকর্ষক, সংস্কৃত বিদ্যাভিলাষীর কর্ণে 
কাণীপাম্র নামও সেইরূপ চিত্তহারক। ক্ষাীতে যাইয়! ব্যাকরণ পাঠ পরি- 
সমাপ্ত ও উত্তমন্ধপে জ্যোতির্বিদ্যা শিক্ষা করাই দয়ানন্দের অভিপ্রায় ছিল। 
'কিন্তু মাতার একান্ত আপত্তি বধতই তীহার সেই অভিপ্রায় পূর্ণ হইল না। 
পাঠ-ব্যবদ্থা অভিনাবান্থুরূপ না হইলে অনেক বিদ্যার্থীই বিদ্যোপাঞ্জনে বীতম্পৃহ 
হইয়া থাকেন। কিন্তু দয়ানন্দ তাহ! হইলেন ন1। শ্রত্যুত পিতামাতার সম্মতি 
বাইয়া নিকটস্থ পল্লিধাধী কোন পূর্ব-পরিচিত প্রবীণ অধ্যাপকের নিরুট গমন 
করিয়া নিবিষ্ট চিন্তে অধ্যয়ন করিতে লাগিলেন । কিন্তু ঘটনাক্রমে তথায় ভিশি 
অধিক দিন অধ্যন করিতে পাইলেন না । কারণ কিছু দিন পরে পিতৃ-আদেশে 
তাহাকে গৃহে ফিবিয়! আদিতে হইল। তাহার পর তিনি ধত দিন গৃহে 
ছিলেন, তত দিন কোন অধ্যাপক বা শাস্তী-সমীপে তীহার অধ্যয়ন আর ঘটিরা 
উঠে নাই। ফলতঃ আমর পাঠ-সম্পর্কে দয়ানন্দের প্রথরা বুদ্ধি ও প্রোজ্জল। 
স্থৃতিশক্তির পরিচয় পাইতেছি। বিশেবতঃ এই বিষয়ে তিনি যে একান্ত নিষ্ঠা- 
পরায়ণ ছিলেন, তাহাও বেশ বুঝ। যাইতেছে। পাঠাদি বিয়য়ে নিষ্ঠ! বা! প্রগাট 
অনুরাগ না থাকিলে, কি প্রথরা বুদ্ধি কি প্রোজ্জলা স্থৃতি কিছুই কোন কার্ধ্যকর 
হয় না। আবার প্রকৃত পক্ষে জ্ঞানপিপাস্থ না হইলে অধ্যপ্নাদি বিষয়ে কি নিষ্ঠা 
কি অন্থুরাগ কিছুই জন্মাইতে পারে ন|। স্ৃতরাং স্বীকার করিতে হইবে দয়ানন্দ 
একজন জ্ঞান-পিপান্থ বালক ছিলেন,__এবং ছিলেন বলিয়াই তিনি এক-বিংশতি 
বৎসর বয়ংক্রমের ভিতর ব্যাকরণ নিরুক্ত, নিঘণ্ট, পূর্বমীমাংলা ও যভূর্বেদাদি 
গ্রন্থে অধিকারী হইয়া উঠিলেন। 
একটি ঘটনায় দয়াননের স্বাভাবিক ভ্রানপিপাস। আরও প্রবলা হইয়। উঠিল। 


মুক্তিপূজার প্রতি অবিশ্বাস । ৬৫ 


দেই ঘটনাটি দয়ানন্দ-চরিজ্রের অন্যতম বিশিষ্ট ঘটনা । সেই ঘটনাটি দয়াননদের 
জীবন, দয়াননের কীন্তি এবং দয়ানন্দের নামের মহিত কালের অনস্ত তে 
নম্বদ্ধ হইয়া গাকিবে। সেই ঘটনাটি বুদ্ধের শব-দর্শনের ন্যায়, লুখরের বাইবেল- 
পাঠের ন্যায় এবং চৈতন্যের সহিত ঈশ্বরপুরীর সাক্ষাতের ন্যায় দয়ানন্দের 
নমঙ্ষে অভিনব প্রদেশ উদঘাটিত করিয়া দিল। রজনী যখন ঘোরা দিপ্রহরা! 
হইয়া উঠিল, যখন শিব-সাঁধকগণ মন্দিরের চতুর্দিকে নি্রিত হইয়া পড়িল, 
তখন শিবরাত্রির ব্রতধারী দয়ানন্দ একাকী বসিয়! চিন্তা! করিলেন,-“আমার 
পুরোবর্তী বৃষ-বাঁহন পুরুষ ;--যিনি বিচরণ করেন, ভোজন করেন,নিদ্রিত হয়েন, 
পান করেন, হস্তে ত্রিশূল ধারণ করিতে পারেন, ডগ্বরু বাদন করেন এবং 
মনুয্যুকে অভিসম্পাত প্রদান করিয়া থাকেন বলিয়া শাস্ত্রে কথিত আছে; 
তিনিই কি এই মহাঁদেব? ইনিই কি সেই পুরাণ-কথিত কৈলাঁসপতি 
পরমেশ্বর ?” তিনি এই চিন্তাফর যাঁর পর নাই বিচলিত হইয়া পরিশেষে গিতাঁর 
নিদ্রাভঙ্গ পূর্ক তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন। পিতা বলিলেন,--“তুমি এ 
কথা জিজ্ঞাসা করিতেছ কেন?” দয়ানন্দ বলিলেন,_-“এই মুন্তিই যদি সর্বা- 
শক্তিমান্‌ জীবন্ত পরমেশ্বর হয়েন, তাহ! হইলে ইনি আপনার গাত্রোপরি 
মুষিক সকল মঞ্চরণ করিতে দেখিয়াও, এবং মৃষিক-স্পর্শ নিমিত্ত অপবিত্র-দেহ 
হইয়াও কোনরূপ প্রতিবাদ করিতেছেন না কেন?” তত্ত্তরে পিত৷ যাহা 
বলিলেন, তাহাতে তাহার সংশয় বিদুরিত না হইয়! বদ্ধিতই হইল। ফলতঃ 
তিনি সংশয়-তিমিরাকৃত চিত্তে শিবমন্দির হইতে গৃহে ফিরিয়া আসিলেন। 
সেই ঘটনা প্রন্তরাঞ্কিত রেখার স্তায়, দরিদ্র জনের ধন প্রাপ্তির স্তার, অথবা 
্রিক্র-বিচ্ছেদ জনিত মনস্তাপের স্ঠাঁয় তাহার অন্তরে চিরদিন সম্বদ্ধ হইয়া 
রহিল। অধিকন্ত তাহ! তাহার হৃদয়ে দিন দিন নৃতনতর আলোক বিকিরণ 
করিতে লাঁগিল। 'প্রতিহত না হইলে যেমন প্রবাহিনীর গতি প্রবল! হয় না, 
বাধিত না হইলে যেমন মন্থয্যের অন্তনিহিত শক্তি সম্প্রসারিত হইতে পারে না, 
সেইরূপ মানবচিত্তে সন্দেহের রেখাপাত না হইলে মন্তষ্যের জ্ঞান-পিপাঁসা বা 
অনুসন্ধিৎসা সন্বদ্ধিত হইয়া উঠে না। বলিতে কি, মূর্তিপূজার প্রতি সংশয়রূপ 
লাক! দয়াননদের চিত্তে সন্ধিদ্ধ থাকিয়া তাহার জ্ঞানচক্ষুকে অধিকতর উন্মীলিত 
করিয়া! তুলিতে লাগিল। এই সুত্রে আমর! তাহার আর একটি মহত্বের 


নী 


৬৬ দয়ানন্দ-চরিত | 


গরিচয় পাইতেছি। সেটি তাহার অন্থপম কর্তব্য-নিষ্ঠতা। যে অন্থপম 
কর্তব্য-নিষ্ঠতা উত্তরকালে দয়ানন্দকে একজন অসাধারণ ধর্ম্বীর বলিয়া গ্রথিত 
করিয়াছিল, আগর! বাঁলাচরিত্রেই তাহার নিদশন দর্শন করিতেছি । যতক্ষণ 
সেই পাধাণ-নির্মিত মু্তিকেই মহাদেব বলিয়া দয়ানন্দের ধারণা ছিল, তিনি 
ততক্ষণ তদ্রদ্দেশে ব্রত-উপবাসাদি গাহা কিছু অনুষ্ঠেয়, ততৎসমস্তই একান্ত 
নিষ্ঠার সহিত অন্ষ্ঠিত করিলেন । এনন কি পাছে শিবরাত্রি ব্রতভঙ্গ-নিবন্ধন 
ঘোর অপরাধে সাপরাধ হইতে হয়, তন্নিমিত্ত বতধারী দয়ানন্দ চক্ষতে বারশ্বার 
জলসেচন করিয়াও জাগিয়! রহিলেন। কিন্তু সেই মুদ্তির গ্রতি যখন তীহার 
অবিশ্বাম জন্মিল, তিনি যখন তীহাকে সর্বশক্তিমান পরমেশ্বর বলিয়া বিশ্বাস 
করিতে পারিলেন না; তখন তীহার উপাসনা বা উপাসনাঁর উদ্দেশে উপবাস 
কর কোন অংশেই আবশ্যক বলিয়া বিবেচনা করিলেন নী । এই বিষয়ে 
তিনি বলিয়াছেন,__“ব্রতভর্গ করিয়া আমি যে কি মহাপাপের অনুষ্ঠান করি- 
য্াছি, তিনি আমাঁকে তাঁহা বুঝাইবার চেষ্টা করিতে লাগিলেন । কিন্তু সেই প্রাস্তর- 
ময় মূর্ভিকেই পরমেশ্বর বলিয়৷ বিশ্বাম করিতে না পারায় আমি মনে মনে 
করিলাম যে, তবে কেন আমি তীহাঁর উপাসনা করিব এবং তছুদ্দেশে উপবাঁস 
করিয়া থাকিব।” দয়ানন্দ এই স্থলে অনুপম কর্তব্য-নি্তার পরিচয় দিলেন 
বটে, কিন্তু আমরা তাহার অকুতোভয়তার পরিচয় পাইলাম না। কারণ 
তিনি পিতৃসমক্ষে এই বিষয়ে আপনার মনোভাব গোপন রাখিয়াই চলিতে 
লাগিলেন । 

দয়নন্দের বাল্যজীবন যেরূপ জ্ঞ(নপিপাসা ও কর্তব্যনিষ্ঠায় অলঙ্কৃত, সেইরূপ 
তাহা বৈরাগোর অকৃত্রিমভাঁবে পরিপুরিত। তাহার বয়ঃক্রম যখন নবম বৎসর, 
সেই সময়ে তীহার প্রেমাম্পদ পিতামহ পরলোক গমন করিলেন । দয়ানন্দ 
পিতামহের যার পর নাই স্ত্েহ-পাত্র ছিলেন। এই কারণ পিতামহ বিয়োগে 
তিনি একান্ত শোকার্ত হইয়! উঠিলেন। তীহাঁকেও যে একদিন সর্ধসংহারক 
ৃত্যুগ্রাসে গ্রাসিত হইতে হইবে, এই চিন্তাও পিতামহ বিয়োগের পর হইতে 
তাহার হৃদয়ে প্রবলতর হইতে লাগিল। অধিক কি,কি উপায়ে সর্ধাধিগত 
নির়তি হইতে নিক্কিত লাভ করিতে পাঁরা৷ যায়, তন্নিমিত্তও বালক দয়ানন্দ 
চিন্তান্বিত হইলেন। ফলতঃ মৃত্যুচিস্তা এবং মৃত্যুনিষ্কাতি-চিন্তা তাহাকে এতদুর 


মৃত্যু-চিন্তা । ৬৭ 


অস্থির করিয়। তুলিল বে, তিনি ব্যাকুলিত হৃদয়ে আত্মীক়-বান্ধবধিগের নিকট 
উপস্থিত হই অমরত্ব-প্রাপ্তির উপার জানিবার নিগিত্ত পরামশ জিজ্ঞাসা 
করিতে লাগিলেন । যাহা হউক এবদ্িধ আর একটি ঘটনার দয়ানন্দের হদয়- 
নিহিত বৈরাগাভাবৰ জাগ্রত-তর হইয়া উঠিল। যেই ঘটনাটিও একান্ত শোকাবহ। 
তাতার এক চতুদ্দশ-বর্মীয়া ভগিনী সাংঘাতিক পীড়াক্» আক্রণিত হইয়া ছুই 
. ঘণ্টার ভিতরেই লোকান্তরিত হইলেন। তদ্দরশনে দয়ানন্দের কোমল হৃধর 
বড়ই কাতর হইয়। উঠিল। বিশেষতঃ তিনি ইভঃপৃর্কো কথন কোন মন্ুব্যকে 
যৃত্যু-মন্ত্রণায় নিপীড়িত হইতে দেখেন নাই। সহোদরার বিয়োগ-জনিত ব্যগ! 
তাহার মশ্মে মন্দ এতদূর প্রবিষ্ট হইল যে, তিনি অশ্রবিন্দু বিসজ্জনেও সমথ 
হইলেন না। "তাহার চতুদ্দিকে ঘখন আত্মাস্মস্বগনগণ দুর্বিষহ খোবাভিঘাতে 
অভিভূত হইয়া বিলাপ ও বক্ষস্তাড়ন পূর্বক রোদন করিভেছিলেন; তিনি 
তখন অবিচলিত চিত্তে দণ্ডায়মান হইয়া! চিন্তা করিতে লাগিলেন থে, ইহলোকে 
মন্ুষ্যদাত্রকেই মৃত্যুমুখে নিক্ষিপ্ত হইতে হইবে। যুদ্ধাবসান সময়ে নিপুণ 
মেনাপতি সমরভূমির উপর দণ্ডায়মান পূর্বক টতুর্দিকের হাহাকার বা আর্ত 
ধ্বনির প্রতি দৃক্পাত না করিরা যেমন স্বদেশ বা স্বজাতির ভবিষা-চিন্তাতেই 
প্রবৃভ হইয়৷ থাকেন, দয়ানন্দও ঘেইরূপ চারিদিকের বিলাপ বা ক্রন্দন-ধ্বনির 
প্রতি কর্ণপাত না করিয়া মুত্যু-নিদ্কতির উপায়চিন্তাতেই নিমগ্র হইয়া! রহি- 
লেন। এইরূপ ঘটনা মহাপুরুষদিগের পর্দে অস্বাভাবিক নহে। কারণ 
সংসারের সাধারণ শ্রেণীস্থ মনুষ্যগণ উপস্থিত ব্যাপার লইয়াই বিচলিত হয়। " 
কিন্তু ধাহার! মনুষ্যজাতির না্ক বা পরিচালক-পদে প্রতিষ্ঠিত, তাহারা উপ- 
স্থিত ব্যাপারের এ্রতি তাদুশ দৃষ্টিপাত করেন না। পক্ষান্তরে কার্যকারণ-্থত্র 
অবলম্বন পূর্বক তাহারা সেই ঘটনার আদি বাঁ পরিণতি-চিস্তাতেই প্রবৃত্ত হইয়া 
থাকেন। যাহা হউক দয়ানন্দ সেই শোকার্্র ভূমির উপর দণ্ডায়মান হইয়া 
প্রতিজ্ঞা করিলেন ধে, যে কোন প্রকারেই হউক মুক্তির উপার উদ্ভাবন পূর্বক 
অবর্ণনীকস মৃত্যু-ন্ত্রণা হইতে আপনাকে রক্ষা করিব। মৃত্যুর করালতম মুগ্ত 
দর্শন করিয়া তাহার মনে মুক্তিপিপাস! প্রবলা হইয়া উঠিল। বণিতে কি, যে 
পরম পবিত্র আকাজ্জ! উদ্দীপনার নিমিত্ত চিত্ত নিন্মুল করিতে হয়, ইন্দ্রিয়গ্রাম 
শাদিত রাখিতে হয়,'তপশ্চধ্যার প্রবৃত্ত হইতে হয়, এবং যে আকাজ্ঞ| উদ্দীপিত 


৬৮ দয়ানন্দ-চরিত। 


ভইলে মানিব মনের যাবতীয় আকাজন উন্মুলিত হইয়া যাঁর, দয়ানন্দের তরুণ 
চিন্ডেই মেই আকাজ্জ। উদ্দীপিত হইয়া! উঠিল। ফলত? যৌবন-প্রারস্তেই তিনি 
ুমক্ষু বা মুক্তি-পিপান্তু হইয়া! উঠিলেন। কিন্ত হৃদয়ের এই নিগুঢ় বাসন! তিনি 
প্রাণ খুলিয়া কাহাকেও বলিতে পারিলেন না। তবে কখন কোন স্থলে 
বিবাহ-প্রসঙ্গ উথাপিত হইলে, তিনি যে কোন দিনই বিবাহ করিবেন না, তাহা 
বলিয়া নিরস্ত হইয়া রহিতেন। ঘাহা হউক কিছুদিন পরে পিতা-মাতা 
পুত্র-হৃদয়ের মমস্ত বাসনাই বুঝিতে পারিলেন। 

মনুষ্য জাতির আধ্যাত্মিক ইতিহাসে দৃষ্ট হয় যে, বৈরাগা-ব্যাধি প্রতিকারের 
নিমিত্ত প্রায় সব্ধত্রই বিবাহরূপ বিষি-ব্যবস্থ। ব্যবস্থিত হইয়া থাকে। কিন্তু 
সান্নিপাতিক বিকাৰে বিকব্যবস্থা বিহিত বলিয়৷ বৈরাগ্য-বিকারে তাহা বিহিত 
হইতে পারে না। কারণ বুদ্ধ বা চৈতন্য যখন ঘোর বৈরাগ্য-বিকারে বিকৃত 
হইয়া পড়েন, তখন তাহাদিগের পক্ষে বিবাহরূপ কালকুট সর্ধতোভাবেই 
নিরর্থক হইরাছিল। বস্ততঃ প্রকৃত বৈরাগ্যের নিকট বিবাহ-বিষ কোন কার্ধ্য- 
কর হয় না। কিন্তু তাহা না হইলেও বিভ্রান্তচিত্ত মন্থ্যগণ বৈরাগ্য-ব্যাধিতে 
পৃর্বোল্লিখিত ওুধধই ব্যবস্থিত করিয়া থাকেন। দয়ানন্দের বৈরাগ্য-বন্ছি 
নির্বাপিত করিবার অভিপ্রায় প্রথমতঃ তাহার পিতা জমাদারি কার্য্যের 
ভারা্পণ করিতে চাহিলেন। কিন্ত তিনি তদ্দিষয়ে সম্মত হইলেন না । তখন 
তাহাকে বিবাহ-শৃঙ্খলে শৃঙ্খলিত করাই যুক্তিযুক্ত বিবেচনা করিলেন। তশ্নি- 
মিত্ত পিতা অতি সত্বর বিবাহ কার্ধ্য সমাধার্থ উদ্যোগ করিতে লাগিলেন । 
দয়ানন্দ তাহাতে বাধা দিবার জন্য যথাশক্তি চেষ্টা করিলেন বটে; কিন্ত 
তাহার চেষ্টা সার্থক হইল না। কারণ তাহার পিতা মাত কোনরূপেই নিরস্ত 
হইলেন না। সুতরাং তিনি তখন অনন্তোপায় হইরা ১৮৪৬ খুষ্টাবের একদিন 
সায়ংকালে এক-বিংশতি বৎসর বয়ঃক্রমের সময়ে গৃহ-নিক্রান্ত হইলেন । 


দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ । 


কাশি 





যোগানুরাগ.-_সাঁধুদঙ্গ।-পিতার সহিত সাক্ষ।ৎ-পুনংপ্রস্থ(ন,নানাস্থান 
পরিজমণ১অন্য।স গ্রহণ»_যেগ শিক্ষা শান ্লোচন। 
নাড়ীচন্র পরীক্ষা মখুরাগমন । 


গুহ-নিজ্ঞান্ত দয়ানন্দ চতুদ্দিকে যোগার অনুসন্ধান করিতে লাগিলেন ! 
যোগের প্রতি প্রগাঁট অন্গুরাগ তাহার পুর্ব হইতেই ছিল। বিশেষতঃ গৃহে 
থাকিবার সময়,__বখন তীহার দরে বৈরাগ্য-বহ্ছি প্রদীপ্ত হইয়া উঠে, যখন 
তিনি মৃত্যু-নত্রণা হইতে নিষ্কৃতি পাইবার উদ্দেশে বান্ধবদিগের নিকট পরামশ- 
প্রার্থ হয়েন, তখন কোন কেন ব্যক্তি. তাহাকে বোগান্ধশীলন করিবার পরামশ 
প্রদান করিয়াছিলেন। এই কারণ কাহারও নিকট কোন ধোগীর অন্সন্ধান 
পাইবামাত্র তিনি তৎসমীপে গমন করিতে লাগিলেন।. লাল! ভকত. এক জন 
প্রসিদ্ধ যোগী। তিনি শৈলা নগরে অবস্থিতি করিতেন। দয়ানন্দ লাল! 
ভকতের নিকট গমন করিলেন, এবং তাহার সহিত কিছুদিন যোগচর্য্যায় 
প্রবৃত্ত বহিলেন। কিন্তু অনাশ্রম ব্যক্তিদিগের ধর্মসাধন বা ঘোগান্গশীলন 
শৃঙ্খলাবদ্ধ নহে। অধিক কি, শৃঙ্খলাবদ্ধ না হইলে সংসারের কোন কাঁ্ধ্যই 
সুচারুরূপ সম্পন্ন হইতে পারে না। এই কারণ আশ্রম-নিবিষ্ট হওয়া দয়াননেকর 
পক্ষে আবশ্তক হইয়! উঠিল। তিনি তখাকার কোন ব্র্ষচারীর নিকট দীক্ষা 
গ্রহণ করিলেন। ব্রহ্মচারী দয়ানন্দ শুদ্বচৈতন্ * নামে অভিহিত হইলেন । নাঁম 
পরিবর্তনের সঙ্গে তাহার বেশাদিও পরিবন্তিত হইল। তিনি ইতঃপূর্কেই আপ- 
নার দ্েহ-ভূষণাদদি পথিমধ্যে এক দল বৈরাগীকে দান করিয়া আসিয়াছিলেন। 
স্রতরাং সমভিব্যাহারে গৃহ-পরিহিত বস্ত্র ভিন্ন অপর কিছুই ছিল নাঁ। এখন তাহা ও 

* শঙ্করচাধ্য-প্রতিষ্ঠিত চারি মঠে চার প্রকার ব্রঙ্গচারী আছেন । মঠানুসারে ব্রহ্মচারীন 
দিগের ভিন্ন ভিন্ন উপাধি হইয়া থাকে । উত্তর সঠের আনন্দ, দক্ষিণ মঠের চৈতগ, পুবব 
মঠের প্রকাশ এবং পশ্চিম মঠের উপাধি স্বরূপ । এতদ্দারা বে]ধ হর, দয়ানন্ন দক্ষিণ 
মঠাস্থগত ব্রহ্ঈচারী হইলেন। 





৭০ দয়ানন্দ-চরিত । 


পরিভ্যাগ পুর্ধক গৈরিক বসন পরিধান করিলেন । নেই সময় সম্ভবঃ 
কারিক হাস। কাঁঠিক মাসে দিদ্পুর নামক স্থানে একটি বিস্তৃত মেলা হইয়া 
খাকে। মেলাঙ্ষেত্রে সচরাচর সাধুসন্যামীদিগের সমাগম হয়। সাধু ঝা 
দিদ্বমহাপুরুষদিগের সংমর্গে চিত্তের পবিত্রতা সম্পাণিত হর৮বিশেখতঃ 
ভীহাদিগের উপদেশে ধশ্মপিগান্ত্র ব্যক্তিধিগের বিশিষ্টন্ধপ কল্যাণ সাধিত হইয়া 
থাকে। তত্নিমিন্ত দয়ানন্দ আগ্রহানিত জদয়ে সিদ্ধপুরের সেই খেলা-ভূমিতে 
উপনীত হইলেন। মেলা-ভূমি সহজ সহজ লোকে পরিপুরিত। ভাহাদিগের 
সকলেই আপন আঁপন প্রাথিত বস্তর অন্থসন্ধানে খ্যাপৃত। কেহ নির্বাক 
হইয়া লোকারণ্য দশখন করিতেছে, কেহ লোক-প্রবাহের মধ্যে পড়িয়া নিম্পেবিত 
হইর! বাইতেছে, কোন স্থানে প্রণয়াস্পদ ব্যক্তির সহিত কেহ প্রাণ খুলিয়া 
কথ বলিতেছে, এবং কেহ ঝ বিচিত্র সামগ্রী-সঙ্জিত পণ্যশালার ভিতরে প্রবিষ্ট 
হইয়া আপনার অভিলধিত বস্তৃশমূহ ক্র করিতেছে । কিন্তু দেই মেলা-ভূমির 
কোন্‌ স্থানে কোন্‌ সাধু আছেন, কোথায় কোন্‌ মহাপুরুষ অবস্থিতি করিতে- 
ঃ ছেন, অথবা কোথায় কোন্‌ যোগীৰর যোগাসিনে উপবিষ্ট রহিয়াছেন, তাহার 
অশ্ুসন্ধানাথ দর়ানন্দ সেই লোক-সমুদ্র ভেদ করিয়। ইতস্ততঃ বিচরণ করিতে 
লাগিলেন। তাহার পর কোথাও কোন সাধু মাহাস্মার দশন লাভ করিবামাত্র 
তৎক্ষণাৎ তাহার নিকট শ্রদ্ান্থিত হ্ৃদরে উপবিষ্ট হইয়া পরমাথ-বিষয়ক 
আলোচনার অভিনিবিষ্ট হইতে লাগিলেন। এইন্প সাধুসঙ্গে ও পরমাথ-গ্রসঙ্গে 
দ্রয়ানন্দের কএক দিন উপধু্পরি অতিবাহিত হইল। কিন্তু তিনি এই 
পবিত্র সুখ অধিক দিন উপভোগ করিতে পাইলেন না। কারণ একদিন 
গ্রাতঃকালে সাধুসজ্জন-পরিবৃত হইয়। তিনি নীলকণ্ঠের মন্দিরে উপবিষ্ট 
আছেন, এমত সময়ে তাহার পিতা আসিয়া সহসা উপস্থিত হইলেন। 
তাহার পিতার সহিত কএক জন সিপাহীও ছিল। তাহাকে ধৃত করিবার 
মানসেই যে পিতা সিপাহী সমভিব্যাহারে সমাগত হইয়াছেন, তাহা তিনি 
সহজেই বুঝিতে পারিলেন। আর সিদ্ধপুর আগমন করিবার সময়ে যে পৃর্ব- 
পরিচিত বৈরাগীর সহিত তাহার সাক্ষাৎ ঘটিরাছিল, সেই বৈরাগীই যে পিতার 
নিকট পলায়ন-সংখাদ গ্রদান করিয়াছেন, তাহা বুঝিতেও দয়াননকে চিন্তা 
করিতে হইল না। 


পিতাঁর সহিত সাক্ষাৎ । ৭১ 


নিরুদ্দিষ্ট সন্তান উদ্দিষ্ট হইলে পিতামাতার হৃদয় আনন্দরূসে 
অভিষিক্ত হইয়া উঠে। কিন্ত সে আনন্দ নিরবচ্ছিন্ন বা নির্মল নহে। কারণ 
তাহাতে ক্রোধেরও কথঞ্চিৎ আবিলতা থাকে । কিন্তু সে ক্রোধাবিলতা 
অতি মাত্র আননেরই রূপান্তরিত আবেগ মাত্র। দয়ানন্দকে দেগিয়া! তাহার 
গিতা আনন্দিত হইলেন না। প্রত্যুত বার পর নাই ক্রোধাবিষ্ট হইয়া 
উঠিলেন। কিন্তু তাহার সে ক্রোধ অতি মাত্র আনন্দের রূপান্তরিত আবেগ 
নহে। তাহা অতি প্রচণ্ড»শাহার কোন কোন্‌ স্থল অভিমান-চিত ১ 
কিন্তু তাহার সর্বত্রই কর্তব্যচ্যুতিনিবন্ধন উগ্রভায় প্রতপ্ত। দয়ানন্দ পিড- 
আজ্ঞার অনুগত হইয। চলেন নাই, দয়ানন্দ পুত্রোচিত কর্তব্য সম্পাদন করেন 
নাই, দয়ানন্দ তাহার বিবাহার্থ পিতামাতাক কৃত-কন্বপ্প, এমন কি কতা 
যোজন দেখিয়াও গৃহ-নিক্ষান্ত। বিশেষতঃ এক জন পদৈশ্ব্যশালী লোকের পুত্র 
হইয়া দয়ানন্দ আজ ভিথারীর বেশে ইতস্ততঃ প্রধাবিত। সুতরাং তীহার 
কঠোর কর্তব্যপরায়ণ পিতা যার পর নাই রোষাবিষ্ট হইবেন না কেন? 
প্রজ্জলিত বন্ছি হবিঃম্পৃষ্ট হইলে যেমন আরও জলিয়া৷ উঠে, সেইরূপ দয়াননের 
গৈরিক বন্ত্র ও কমগুলু দর্শন করিয়া তাহার পিতৃ-কোপানল আরও জলিয়! 
উঠিল। এই কারণ তিনি তৎক্ষণাৎ তাহা ছিডিয়! ও ভাঙ্গিয়া ফেলিলেন। 
পিতার অজজ্ম তিরস্কারে দয়ানন্দ কোন কথা না বলিয়া নীরব হ্ইয়া 
থাকিলেন। অবশেষে তাহার পরপ্রান্তে গ্রণত হইয়া স্বীয় অপরাধ স্বীকার 
পূর্বক ক্ষমা ভিক্ষা করিলেন। অধিকস্ত তিনি যে, ব্যক্তিবিশেষের কুপরামর্শ- 
পরিচালিত হইয়াই এই কার্য করিয়াছেন,এবং গৃহ-প্রত্যাগত হইতে এই ক্ষণেই 
সম্মত আছেন; পিতার নিকট এই কথ! বলিতেও সঙ্কুচিত হইলেন না। 
আমর! তীহার এই কথাগুলিকে অকুতোভয়ন্তার পরিচায়ক বলিয়া মনে 
করিতে পারি না। বলিতে কি, এই কথাগুলি তীহার পক্ষে সরলতারও 
পরিচায়ক নহে । কারণ তিনি যে কোন ব্যক্তির কুপরামর্শ-পরিচালিত হ্ইয়! 
গৃহত্যাগ করেন নাই, আর গৃহ-প্রত্যাবর্তন করিবার বাঁসন! থে তাহার মনে 
বিন্ুমাত্রও বিদ্যমান নাই, তাহা আমর! সহশ্রবার শপথ করিরাই বলিতে পারি। 
যাহা হউক মনুষ্য যে ভীতির একাস্ত আবেগে, কিংবা কোন অচিস্তিত-পূর্ব 
আকস্মিক ঘটনার সমাবেশে, অনেক সময় কর্তব্য-বোধ-বিমূঢ় হইয়। মনের এক 





ই দয়ানন্দ-চরিত। 


প্রকার ভাব অন্য প্রকারে গ্রকাশিত করিয়া থাকে ;) অথবা কোন চিরাঁভি- 
লধিত ঝা] গ্রাণাধিক প্রিরতর সঙ্কল্প সিদ্ধির পক্ষে বিদ্লবিশেষ সংঘটিভ হইলে, 
তাহা বিদূরিত করিবার মানসেই ঘে সয়ে সময়ে সরলতার সীমাও অতিক্রম 
করিয়! বসে, তাহা বোধ হর আর বুঝাইয়া ঝলিতে হইবে না । জুতরাং দরানন্বের 
এবদিধ ক্রটি একরূপ স্বাভাবিক বা সঙ্গত বলিয়াই মানিয়া লইতে হইবে । 
ফলতঃ তাহার পিত। তীহাকে গৃহে লই যাইবার নিমিত্ত যেরূপ উৎক্থৃক হইলেন, 
তিনিও সেইরূপ স্বীয় সংকল্পে পূর্বের মতই অবিচলিত হুইরা রহিলেন। 
পিতার অশেষ তিরঙ্কারে দরানন্দের কর্তব্য-নিষ্টা অগুমাত্রও বিচলিত হইল না। 
পিতার একান্ত ইচ্ছা থে, পুজরকে গৃহে লইয়া গিয়া সর্বপ্রকারে সাংসারিক সখ 
উপভোগ করেন । পুত্রের একীন্ত ইচ্ছা যে, যোগাবলম্বন পূর্বক যোগিগণ-বাঞ্চিত 
শাশ্বত জুখের অধিকারী হয়েন। পিতা পুত্র ছুই জনেই স্থুখান্বেধী, কিন্ত 
দুই জনের সুখ প্রকার বা! প্ররুতিভেদে সম্পূর্ণ পৃথক পৃথক । যাহা হউক 
দ্র়ানন্দ গৃহে ফিব্রির। যাইবার অভিপ্রায় প্রকাশিত করিলেন বটে, কিন্ত 
তাঁহার পিত। দে কথার নিশ্চিন্ত বাঁ নিরুদ্বেগ হইতে পাঁরিলেন না। তন্নিমিত্ত 
তাহাকে অহোরাত্র প্রহরি-পরিবেষ্টিত করিরা রাখিলেন। কিন্ত দর়ানন্দ এক 
ক্ষণের নিমিত্তও আপনার উদ্দেশ্ঠ পিদ্ধির প্রতি উদাসীন হইয়া রহিলেন না। 
পিতৃ-হস্ত হইতে নিন্নতি পাইবার নিমিত্ত তিনি সর্বদাই স্থযোগ প্রতীক্ষা 
করিতে লাঁগিলেন। ঘটনাক্রমে একদিন রাত্রিকালে যখন সকলেই নিদ্রিত 
হইরা পড়িল, এমন কি তাহার পরিরক্ষক সিপাহী পর্যন্তও নিজাভিভূত হইল, 
দয়ানন্দ তখন শয্যাত্যাগ পুর্বক নিঃশব্দে প্রস্থান করিলেন। প্রস্থান করিবার 
সময় দরানন্দের হস্তে একটি জলপূর্ণ ঘাট ছিল। যেহেতু সহসা কাহার সহিত 
সাক্ষাৎ হইলে, কিংবা কেহ জিজ্ঞানা করিলে, তিনি বে প্রাতঃকৃত্য সমাধার 
উদ্দেশেই যাইতেছেন, তাহ! বলিয়া! অব্যাহতি পাইতে পারিবেন। 

দ্রয়ানন্দ ঘখন পিতার সহিত চিরদিনের নিমিত্ত বিচ্ছিন্ন হইলেন, তখন রাত্রি 
অবসাঁন হইতে প্রহরৈক মাত্র অবশিষ্ট ছিল। তিনি মেলাভূমি হইতে 
কিঞ্চিদধিক অদ্ধক্রোশ পথ বার পর নাই দ্রতগতি সহকারে চলিয়া আদিলেন। 
কিন্তু তাহার পর আর পথপর্ধ্যটন নিরাপদ বিবেচনা করিলেন না। 
এই কারণ একটি ঘনপল্লধ-সমাচ্ছাদিত বৃক্ষোপরি আরোহণ করিয়। লুক্কা়িত 


পুনঃ-প্রস্থান। ৭৩ 


রহিলেন। বৃক্ষের যে শাখাটি শিবমন্দিরের উপরিভাগে পড়িয়াছিল, 
সেই শাখাটি লুক্কার়িত থাকিবাঁর পক্ষে অধিকতর স্থবিধাজনক মনে করিয়৷ 
তছুপরি উপবিষ্ থাকিলেন। শেষ রাত্রি হইতে সমস্ত দ্বিবাভাগ নীরবে ও 
নিস্তব্ধ ভাবে বুক্ষোপরি অতিবাহিত হইল। উধালোক প্রতিভাত হইলে তিনি 
তথা হইতে দেখিতে পাইলেন ষে, মিপাহীগণ তাহার অনুসন্ধানার্থ চতুদ্দিকে 
ছুটাছুটি করিতেছে। তদর্শনে দয়ানন্দ আপনাকে অধিকতর লুক্কার্িত করিবার 
চেষ্টা করিলেন। ফলতঃ বৃক্ষোপরি সমস্ত দিবস তাহাকে অনাহারেই কাটাইতে 
হইল। অবশেষে যখন সান্ধ্য-অন্ধকারে চতুদ্দিক সমাবৃত হইতে লাগিল, তখন 
তিনি বৃক্ষ হইতে অবতরণ পূর্বক চলিতে আরম্ত করিলেন। অপর দিকে 
তাহার পিতা মেলাভূমি-ও তৎপার্খ স্থিত স্থান সকল তন্ন তন্ন করিয়া পর্যবেক্ষণ 
করিতে লাগিলেন। কিন্তু কোন স্থানেই পুত্রের উদ্দেশ পাইলেন না। 

নিদিষ্ট রত্ব উদদষ্ট হইয়া যদি পুনর্কার হারাইয়া যায়, তাহা হইলে রতস্বামী 
যেরূপ ছূর্কিষহ দুঃখ-দংশনে কাতর হ্ইয়! থাকেন, দয়ানন্দের কোন সন্ধান 
না পাইয়া সম্ভবতঃ তাহার পিতাও সেইরূপ শোক-সন্তাপিত হইয়া পড়িলেন। 
যাঁহ! হউক দয়ানন্দ নির্ভয়ে সমস্ত নিশা পর্য্যটন করিয়া অবশেবে আহাম্মদা বাদে 
উপনীত হইলেন।. আহাম্মদাবাদ হইতে বরদায় আগমন পূর্বক তথাকার 
চেতন মঠে কিছু দিন অবস্থিতি করিতে লাগিলেন। চেতন মঠে কতিপয় 
্হ্গচারীর সহিত জীবব্রন্মের একত্ব বিষয়ে দয়ানন্দের আলোচনা হইল। 
আলোচনার ফলম্বরূপ জীব-ত্রন্মের অভিন্নত৷ সম্বন্ধে তাহার বিশ্বাস দৃঢ়তর হইয়া 
উঠিল। ইতঃপর তিনি বরদা হইতে বারাণসী, চানোদ-কল্যানী, ব্যাসাশ্রম 
ও আবুপর্বত প্রভৃতি পরিভ্রমণ পূর্বক ১৮৫৪ খৃষ্টাব্দে হরিদ্বারে সমাগত হই- 
লেন। হ্রিদ্বারে তখন কুস্তমেলা উপস্থিত। মেলা উপলক্ষে নানা দিগ্‌- 
দেশাগত সাধুর সমাবেশ দেখিয়া দক়ানন্দ কিয়ৎ পরিমাণে বিশ্বয়ান্থিত হইলেন। 
যাহা হউক হরিদ্বার হইতে হ্ববীকেশ, টেহিরি, রুত্রপ্রয়াগ, গুপ্তকাশী, গৌরী- 
কু, শিবপুরী, তুঙ্গনাথ, অথিমঠ, জোশিমঠ, বদরিনারায়ণ ; এবং পশ্চিম 
প্রদেশান্তর্গত রামপুর, মোরাদাঁবাদ, ফরাকাবাদ প্রসৃতি বহুতর স্থান অতিক্রম 
করিরা ১৮৫৫ খুষ্টাব্ধে কানপুরে উপস্থিত হইলেন। কানপুর হইতে কাশী, 
এলাহাঁবাদ, চণ্ডালগড় প্রভৃতি পরিদর্শন পূর্বক নর্ম্দী নদীর উৎপত্তি-স্থল 


৯৩ 


৭৪ দয়ানন্দ-চরিত। 


দেখিবার নিমিত্ত যাত্রা করিলেন । তদনস্তর অনেক অভিনব স্থান পরিভ্রমণ 
করিয়! মথুরাধামে উপনীত হইলেন । | 

দয়ানন্দের এই সুবিস্তুত ভ্রমণ-কাহিনী বহু ঘটনায় পরিপূরিত। তিনি 
যখন নর্মদা-প্রদেশবন্তী চানোদ-কল্যানী নামক স্থানে অবস্থান পূর্বক পরমা- 
নন্দ পরমহংসের নিকট বেদান্তসার প্রক্ততি পাঠ করিতেছিলেন, সেই সময়ে 
তিনি সন্যাসাশ্রমে প্রবিষ্ট হইবার আবশ্যকতা অনুভব করিলেন। কার্ণ 
দেই সময়ে তাহাকে অন্নাদি পাক করিয়া আহার করিতে হইত। তন্নিমিত্ত 
তাহার অনেক সময় বৃথা ব্যয়িত হইতে লাগিল। অধিকস্ত সন্ন্যাসাশ্রম 
জ্ঞানোপাঙ্জনের পক্ষে অধিকতর সুবিধাজনক । এই সকল কারণে সন্নযাসাশ্রম 
পরিগ্রৎ করাই হিনি ধুক্তিসঙ্গত বিবেচনা করিলেন। ঘটনাক্রমে পূর্ণানন্দ 
সরস্বতী নামক জনৈক সম্মানী সেই সময়ে শৃঙ্গগিরির মঠ হইতে আগমন পূর্বক 
চানোদের অদুরপ্তিত একটি শিতৃত স্থানে অবস্থিতি করিতেছিলেন। পূর্ণানন্ৰ 
দ্বারকা-যাত্রী। দয়ানন্দ সন্নযাসাশ্রমে দীক্ষিত হইবার অভিপ্রায়ে পূর্ণাননের 
নিকট গমন করিলেন। অন্গরোধ করিবার নিমিত্ত একজন মহারাস্্ীয় 
পণ্ডিতকেও সমভিব্যাহারে লইলেন। তীহাদিগের অন্ুরোধ-সহকুত প্রার্থনা 
অবগত হইয়! পুর্ণানন্দ প্রথমতঃ অনেক আপত্তি উত্থাপিত করিলেন। আপ- 
তির কারণ এই বে, দাক্ষার্থ নিতান্ত অন্প-বয়স্ক ৷ বিশেষতঃ গুজরাট প্রদেশবাসী 
ব্যক্তির গুজরাট এ্রাদেশবাসী সন্যাসীর নিকট দীক্ষাগ্রহণই বিধেয়। কিন্ত 
পু্ানন্দের এই প্রকার আপন্তি বা অসম্মতি কোন কাধ্যকর হইল না। 
যেহেতু এঁকান্তিকতার নিকট সংসারের কোন আপত্তিই আপতি বলিয়া পরি- 
গণিত হইতে পারে না। স্ৃতরাং পরিশেষে পূর্ণানন্দ তাহাকে নন্ন্যাসাশ্রমে 
দীক্ষিত করিলেন। দীক্ষার পর তাহার নাম দয়ানন্দ সরস্বতী হইল। সেই 
অময়ে তাহার বয়ঃক্রম তেইশ কিংবা চব্বিশ বৎসরের অধিক নয়। এতদ্বারা 
বুঝা যাইতেছে যে, গ্ৃহ-নিক্রমণের ছুই বা তিন বৎসর পরে দয়ানন্দ সন্ন্যাসী- 
সম্প্রদায়ে সন্নিবিষ্ট হইলেন । 

দয়ানন্দ নানা স্থান পরিভ্রমণ করিয়া নান! সাধু-সন্ন্যাসীর সহিত পরিচিত 
হইলেন। তাহাদিগের ভিতর পূর্বো্লিখিত পরমানন্দ পরমহংদ ভিন্ন 
ব্যাসাশ্রমের যোগানন্দ, বারাণসীর সচ্চিদানন্দ, কেদার-ঘাটের গঙ্গাগিরি এবং 


শান্জালোচনা। ৭৫ 


জোয়ালানন্দ পুরী ও শিবানন্দ গিরি প্রভৃতির নাম উল্লিখিতব্য। শেষোক্ত 
সন্ন্যাসীদধয়ের নিকট দয়ানন্দ ঘোগবিদ্যার নিগৃঢ় ততসমূহ শিক্ষা করিলেন । 
এমন কি ফে।সশিক্ষা সম্বন্ধে তিনি এ পুরী ও গিরির নিকট খণ-স্থত্রে নিবদ্ধ। 
এতট্ি রুষ্ণ শান্্ী এবং কাশীস্থ কাকারাম ও রাজারাম শান্্ী গ্রড়তি স্প্ডিত 
ব্ক্তিদিগের সহিত তাহার আলাপ ও পরিচয় ঘটিয়াঁছিল। অধিক কি, তিনি 
কুষ্চ শান্জীর নিকট কিছু দিন বিদ্ার্থীরপে ব্যাকরণ শিক্ষা করিয়াছিলেন ।* 

ব্যাকরণ শিক্ষ। ভিন্ন তিনি সেই সময়ে অপরাপর গ্রন্থালোচনাতেও রত 
থাকিতেন। পরমানন্দ পরমহংসের নিকট বেদীন্ত পাঠের বিষয় পূর্বেই 
কথিত হ্ইয়াছে। এতগিন্ন তিনি.ষখন টেহিরিতে অবস্থিতি করিতেছিলেন, 
তখন তথখাকার রাজপণ্ডিত-বিশেষের নিকট হইতে তত্র গ্রন্থ আনাইয়। পাঠ 
করিতে লাগিলেন ৷ কিন্তু উহা পাঠে তন্ত্রের প্রতি তাহার বিজাতীয় অশ্রদ্ধার 
উদয় হইল। কারণ কিয়দংশ পাঠ করিবাঁমাত্র তিনি উহার ভিতর ভাষাগত 
ভাষ্যগত ও অর্থগত ভুরি ভুরি অশুদ্ধি দেখিতে পাইলেন। বিশেষতঃ উহার 
অধিকাংশ স্থল অসঙ্গতি দোষে দূষিত, এবং উহার মধ্যে একান্ত নিন্দনীয় 
পাপাচার সকল পরম পবিত্র ধর্মরূপে পরিগণিত দেখিয়া তিনি অপরিসীম দ্বণার 
সহিত তন্ত্রপাঠ পরিত্যাগ করিলেন। যাহা হউক দর্খশনশান্্, যোগশান্্র ও 
অপরাপর বিষয়ক গ্রন্থ সকল যে সর্বদাই তাহার সমভিব্যাহারে থাঁকিত, 
আর তাহার অবকাশকাল যে গ্রন্থপাঁঠে এবং যোগাভ্যাসেই অতিবাহিত হইত, 





* পঙ্িতবর জোয়ালা দত্ত শর্মা বলেন, দয়ানন্দ কাশীর রামনিরঞন শান্তীর নিকট কিছু 
কাঁল কৌমুদরী ও ন্তায়-শান্ত্র শিক্ষা করিয়াছিলেন । কিন্তু কোন্‌ সময়ে শিক্ষ! করিয়াছিলেন, 
তাহা নিরূপণ করা কঠিন। উপরি-উক্ত সময়ে,অর্থাৎ যে সময়ে তিনি নান। স্থান ভ্রমণ 
করিতেছিলেন, দেই সময়ে কাঁশীধামে দ্বাশশ দ্বিনের অধিক ছিলেন না। বিশেষতঃ 
তৎকালে কাশীতে অপ্নায়ঙ্গেরও কোন উল্লেখ নাই | তাহার পূর্ধে,-অর্থাৎ বরদার চেতন- 
মঠে তিনি যখন অবস্থিতি করিতেছিলেন, সেই সময়েও তথ! হইতে একবার কাণী যাত্রার 
কথ। উল্লিখিত আছে । যাহ! হউক সেই সময়ে, অথবা চণ্ডালগড় হইতে নন্দ প্রদেশ 
পরিভ্রমণের পরবর্তী ও মথুরাগমনের পূর্ববর্তী কোন ন। কোন সময়ে কাশীতে যাইয়া 
রামনিরগ্রনের নিকট অধায়ন করা সম্তাবিত হইতে পারে। রামনিরঞ্রন গৌড় স্বামীক্ 
গদদিতে অধিষ্ঠিত ছিলেন । এখন দেই গদিতেই নাকি বিশুদ্ধানন্দ আছেন ( 


৭৬ দয়ানন্দ-চরিত। 


তাহা বিলক্ষণরূপ বুঝা যাইতেছে। দয়ানন্দ কিরূপ জ্ঞানম্পৃহ ও সত্যান্থুরাগী 
ছিলেন, তাহা সেই সময়কার একটি ঘটনায় বিশিষ্টরূপ জানা যাইতেছে । তিনি 
যখন মোরাদাবাদ অঞ্চলে গড়মুক্তেশ্বর অতিক্রম করিয়। গঙ্গাতটবর্তা প্রদেশে 
পরিভ্রমণ করিতেছিলেন, তৎকালে তাহার নিকট হঠ-প্রদীপিকা, যোগবীজ ও 
শিবসন্ধ্যা প্রভৃতি কতকগুলি গ্রন্ত ছিল। তিনি তাহার ভিতর একখানি 
ঘোগবিষয়ক পুস্তকে নাড়ীচক্কের বৃত্তান্ত পাঠ করিলেন। মন্ুষ্যের দেহুমধ্যে 
প্রকুত পক্ষে নাঁড়ীচক্র আছে কিনা, তাহা জানিবার নিমিত্ত দয়ানন্দ উৎকচিত 
: হুইয়া উঠিলেন। ফলতঃ এই বিষয় তাহার মনে ঘোরতর মংশয় উৎপাদন: 
করিল। এমত সময়ে মন্্ুয্যের একটি মৃত দেহ ভাসমান দেখিয়। তিনি 
গঙ্গাবক্ষে বম্প প্রদান পূর্বক তাহা তটভূমিতে টানিয়! আনিলেন। তাহার 
পর ছুরিকা দ্বারা সেই শবদেহ দ্ুচারুদূপে করিত করিলেন। যে গ্রন্থে 
নাড়ীচক্রের বিষয় বর্ণিত ছিল, সেই গ্রন্থখানি সম্মুথে উদঘাটিত করিলেন, 
এবং বর্ণনান্থুরূপ বিথপ্ডিত শবের অর্গ-অবয়বাদি তন্ন তন্ন করিয়া মিলাইতে 
লাগিলেন। কিন্তু তাহার কোন অংশেই গ্রন্থোল্লিথিত নাড়ীচক্রের কিছুমাত্র 
নিদশন না পাইয়া শব-নিক্ষেপের সঙ্গেই সেই গ্রন্থথানিও থওবিথও করিয়া! 
গঙ্গাবক্ষে বিসঙ্জিত করিলেন। ও 
বহু স্থান পর্য্যটন এবং বছ সাধুসন্ন্যাসীর ংঅ্ব নিবন্ধন তিনি যেমন 
যোগবিষয়ক নৃতনতর তত্ব সকল জানিতে লাগিলেন, সেইরূপ সেই গুলিকে 
কার্যে পরিণত করিবার অভিপ্রায়ে যৌগাভ্যাসে অধিকাঁংশ সময় যাপন করা! 
আবশ্তক বলিয়া বুঝিতে পারিলেন। কারণ, কি শ্রত কি পঠিত কোন 
জ্ঞানই অভ্যাস বা অনুশীলনের অভাবে করাধ্যকর হইতে পারে ন|। সুতরাং 
দয়ানন্দের যোগচর্ধ্যার কাল দিন দিন দীর্ঘতর হইয়। উঠিল। এই হেতু 
তাহার আহারাদি কার্য যথা সময়ে ঘটিয়! উঠিত না। বিশেষতঃ যোগচর্য্যার 
পক্ষে অপেক্ষারুত লঘু আহারীয় সামগ্রীই সুবিধাজনক । তন্নিমিত্ব দয়ানন্দ কেবল 
ছুগ্ধ পান করিয়াই দেহ রক্ষা করিতে লাগিলেন । সেই সময় সিদ্ধি বা গঞ্জিকা 
মেবনেও তাহার অভ্যাস জন্গিয়াছিল। এ অভ্যাস সন্ন্যাসী সম্প্রদায়ের ভিতর 
বিশিষ্টরূপ প্রচলিত। তাহাকে সাধু-সন্াসীদিগের সংসর্গে প্রায় সর্বদাই 
থাকিতে হইত। স্ৃতরাং তাহার পর অভ্যাস যে দ্ংসর্ম-'জনিত, তাহা সহজেই 


মথুরাগমন। ৭৭ 


বুঝ! যাইতেছে । ফলতঃ তিনি  দোষাবহ অভ্যাসের নিমিত্ত দুঃখিত ছিলেন, 
এবং সম্ভবতঃ শীঘ্রই উহ পরিত্যাগ করিয়াছিলেন। যেহেতু তীহার ভবিষ্যৎ 
জীবনের কেশ বলেই এন্নপ অভ্যাসের কিছুমাত্র নিদ শন দৃষ্ট হয় ন|। সিদ্ধি 
বা গঞ্জিকা যে কিয়ৎপরিমাণে মাদকতা-বিশিষ্ট, তাহা আর বলিতে হইবে না। 
দয়ানন্দ একদা ধিদ্ধসেবন-জনিত মাদকতা এক অভ্ভুত উপায়ে বিদুরিত 
করিয়াছিলেন। সেই উপায়টি সর্ব প্রকারেই কৌতুকাবহ। এই কারণ 
আমরা তৎসম্পর্কে তাহার কথাই উদ্ধৃত করিলাম। তিনি বলিতেছেন-_“চগাঁল- 
গড়ের নিকটস্থ কোন পল্লির এক শিবালয়ে একদিন রাত্রি ঘাপনার্থ উপস্থিত 
হইলাম। সিদ্ধিপান-জনিত মাদকতা বশতঃ তথায় প্রগাঢ়রূপে নিদ্রিত হুইয়। 
পড়িলাম। আমার বিবাহ সম্পর্কে পাক্ৰতীর সহিত মহাদেবের কথোপকথন 
হইতেছে, এইরূপ একটি স্বপ্ন সন্দর্শন করিয়া জাগ্রত হইলাম। তখন 
বৃষ্টিপাত হইতেছিল। সৃতরাং মন্দিরের বারেন্দায় প্রবিষ্ট হইলাম। তথায় 
বুষদেবত নন্দীর একটি প্রকাণ্ড প্রতিমূর্তি ছিল। আমার পুক্তকাদি নন্দী- 
মুদ্তির পৃষ্ঠে রাখিয়া তাহার পশ্চাতে উপবিষ্ট হইলাম। সহস| নন্দী-ুন্তির 
অভ্যন্তরে দৃষ্টিপাত করায় বোধ হইল যে, তাহার মধ্যে একজন মনুষ্য বসিয়া! 
রহিয়াছে । আমি তাহার দিকে হস্ত প্রসারণ করিবামাত্র সেই ব্যক্তি লক্ষ 
প্রদান পূর্বক পলায়ন করিল। আমি তখন সেই শুন্ত-গর্ভ মুস্তির ভিতরে 
প্রবিষ্ট হইয়া! অবশিষ্ট রাত্রি নিদ্রিত রহিলাম। প্রাতঃকালে একজন বৃদ্ধা বুষ- 
দেবতার পুজার্থ উপস্থিত হইল। আমি তখন বৃযদেবতার অভ্যন্তরেই বসিয়া 
আছি। কিছুক্ষণ পরে বৃদ্ধা রমণী দধি ও গুড় লইয়া উপস্থিত হইল, এবং 
আমাকেই বৃষদেবতা বিবেচনা পূর্বক আনীত গুড় ও দধি আমার সন্ুথে 
রাখিল। আমিও তখন ক্ষুধার্ত হইয়াছিলাম। সুতরাং তাহার সমস্তই 
আহার করিয়! ফেলিলাম। বিশেষতঃ অশ্নরস-বিশিষ্ট দধিপানে সিদ্ধির মাদকতাও 
তিরোহিত হইল।” ৃ্‌ 

দয়ানন্দ এই প্রকারে প্রায় সমগ্র ভারতভূমি পরিভ্রমণ করিলেন। তিনি 
কোন্‌ কোন স্থলে একাধিক বার উপস্থিত হইলেন। কোন স্থলে বা কিছুদিন 
: ধরিয়া অবস্থিতি করিলেন । বলিতে কি, তিনি স্বীয় প্রার্থিত বস্তর উদ্দেশে শত 
বাধা এবং সহ প্রতিকূলতাতেও অণুমাত্র বিচলিত হইলেন না। বলিতে কি, 


৭৮ দয়ানন্দ-চরিত। 


তিনি তন্নিমিত্তই হিমাচলের বরফাবৃত ছুূর্গম পথসমূহে পর্য্যটন করিতেও 
কুষ্ঠিত হইলেন না,-_নর্খদা-প্রদেশের নিবিড় বনভূমি অতিক্রমণেও সন্কুচিত 
হইলেন না,__আরণ্য-বরাহ আক্রমণোদ্যত হইলেও ভগ্োগ্তম হইলেন না,__ 
অলকনন্দার তুষারাকীর্ণ তীরভূমিতে মুতকল্প হইয়। পড়িলেও প্রাণত্যাগ করি- 
লেন না৮_এবং অবশেষে অখি-মঠের মোহন্ত-পদবীরূপ প্রবল প্রলোভন প্রদ- 
শিতি হইলেও মুহূর্তের নিমিত পথ পরিচ্যুত হইলেন না। বলিতে কি, দয়ানন্দ 
স্বীয় অনুসন্দিৎসায় অটল এবং জ্ঞন-পিপাসায় অবিচলিত থাকিয়া! এইরূপে 
প্রায় দ্বাদশ বৎসর কাল ক্ষেপণ পূর্বক ১৮৫৮ কিংবা ১৮৫৯ খুষ্টানে মথুরায় 
আসিয়া উপস্থিত হইলেন। এই নিমিত্ত এই অংশকে আমরা দয়ানন্দ-জীবনের 
অনুসন্ধিৎসা-যুগ বলিয়! নির্দেশ করিলাম্‌। 





তৃতীয় পরিচ্ছেদ । 








বিরজানন্দের পূর্বব পরিচয়,_খ্ধি-প্রণীত ও মনুষ্য-প্রণীত গ্রন্থ, _.দার্বভৌমিক সভ| 
স্থাপনের প্রস্তাব.--দয়ানন্দের অধায়ন,--অমরল।ল,--আগ্রায় অবস্থান,” 
গেয়ালিয়র প্রভৃতি ভ্রমণ ও মতামত খগুন,_সংশয় নিরাকরণ,_ 
হরিদ্বার গমন,_পতাঁকা উত্তোলন,.__মৌনব্রত 
ধারণ।-_নংকল স্থির ব| শেষ দিদ্ধান্ত। 


পর-পৃষ্ঠায় যে মহাপুরুষের বিবরণ। প্রকাশিত হইল, তাহার নাঁম স্বামী 
বিরজানন্দ। বিরজানন্দ পঞ্জাবের অন্তর্গত কর্তারপুরের সন্নিকট কোন 
পল্লিতে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁহার জন্মপল্লি বই নদীর তীরবর্তী বলিয়া 
প্রসিদ্ধ। তিনি সারস্বত ব্রাহ্মণ,__বিশেষতঃ সারম্বত ব্রাহ্মণদিগের শারদ-শাখার 
অন্তর্গত ছিলেন। বিরজানন্দ ভরদ্বাজ-গোত্রীয়। তাহার পিতা নারায়ণ দত্ত 
নামে পরিচিত। বিরজানন্দ চক্ষুহীন,_এমন কি একরূপ জন্মান্ই ছিলেন। 
তাহার বয়ঃক্রম যখন পঞ্চম বৎসর, তখন সাংঘাতিক বসস্তরোগে তাহার চক্ষুদ় 


বিরজানন্দের পারচয়। প৯ 


বিনষ্ট হইয়াছিল। চক্ষুহীন হইয়া দশ এগার বতসর কাণ গৃহে ছিলেন। 
তাহার পর তাহার পক্ষে আর গৃহ-বাস সম্ভব হয় নাই। কারণ পিতৃ-মাতৃ- 
বিয়োগের পর তিনি আত্মীয়-জ্ঞাতিবর্গ কর্তৃক এবপ নিপীড়িত হয়েন যে, 
তাহাকে অবিলম্বেই গৃহত্যাগ করিয়া আসিতে হয়। বির্জানন্দ গৃহ-পরি- 
ত্যাগের পর হিমাচলের অন্তর্গত হৃষীকেশে গমন করেন। সম্ভবতঃ তিনি সেই 
সময়েই পরমহংস-ব্রতাবলম্বী হর়েন। তথায় অধিকাংশ কাল গঙ্গাসলিলে 
নিমজ্জিত হইয়! গায়ত্রী মন্্রজপে নিয়োজিত থাকিতেন। এবঘিধ অবস্থায় 
তাহার বমরৈক কাল অতিবাহিত হইয়া যার। ইতোমধ্যে স্বপ্াবস্থায় কে 
তাহাকে বলিল যে,_“তোমার যাহা হইবার তাহ! হইয়াছে, তুমি এখান 
হইতে চলিয়! যাঁও।” বিরজানন্দ তাহ! দৈববাণী বিবেচনা পৃর্বক হৃধীকেশ 
হইতে কনখলে চলিয়৷ আসেন। কনখলে পূর্ণাশ্রম স্বামী নামক এক জন 
জানাপন্ন মন্্যাসী অবস্থিতি, করিতেন। বিরজানন্দ পূর্ণাশরমের নিকট বট 
লিঙ্গাদি অধ্যয়ন করেন। বলা বাহুল্য যে, গৃহে থাকিবার সময় তিনি লঘু- 
কৌমুদী প্রভৃতিও পাঠ করিয়াছিলেন । যাহা হউক পুর্ণাশ্রমের নিকট পাঠ 
সমাপ্ত করিয়া তিনি গয়া, কাণী, প্রয়াগ প্রভৃতি তীর্থভূমি পরিভ্রমণে বহির্গীত 
হয়েন। তদনন্তর ইটা জেলার অন্তর্গত শোরো বা শৃকরক্ষেত্র * নামক স্থানে 
আগমন করেন । 

বিরজানন্দ শোরোতে একদিন গঙ্গান্নান করিয়া বিষ্ুস্তোত্র আবৃত্তি 
করিতেছেন, এমত সময়ে তথায় আলোয়ার-পতি মহারাজ বিনয় সিংহ 
উপস্থিত ছিলেন। তদারৃত্ব বিষুস্তোত্র শুনিয়৷ হউক, অথবা তাহার 
তেজঃপ্রতিভা-প্রকাশক মূর্তি দেখিয়াই হউক, বিনয় সিংহ বিরজানন্দের প্রতি 
আক্ষষ্ট হয়েন, এবং তাহাকে আলোয়ারে লইয়া যাইবার নিমিত্ত অনুরোধ 
করেন। বিরজানন্দ আলোয়ার-পতির অন্থরোধে বলেন যে, তাহার নিকট 
অধ্যয়নেচ্ছ হইলে তিনি তাহার সহিত যাইতে পারেন। বিনয় সিংহ 
তাহাতে সম্মত বা সন্তষ্ট হইয়। বিরজানন্দকে আলোয়ারে লইয়া গেলেন। 





« এই স্থান শুকরক্ষেত্র নামে গ্রসিদ্ধ। কারণ এহ্‌ স্থানে পরমেশ্বর বরহবঙ।র রূপে 
অবতীর্ণ হইয়াছিলেন, এইরূপ বাদ মাছে। তন্রিমিত্ত এখানে বরাহমন্দির প্রতিষ্ঠিত 
রহিয়াছে। শোরে। যে শৃকরক্ষেত্রেরই অপত্রংখ, তাহ সহজেই বুঝা যাইতেছে) 


৮০ দয়ানন্দ-চরিত। 


আলোয়ারে তাহার আহার-ব্যবস্থ। ও বাস-ব্যবস্থা নির্দিষ্ট হইল। আহারীম় 
সামগ্রী ভিন্ন তাহার অপরাপর ব্যয়-নির্বাহার্থ রাজ-ভাগার হইতে প্রতিদিন 
ছুই টাকা করিয়া আমিতে লাঁগিল। মহারাজ বিনয় সিংহ স্বামিজীর নিকট 
প্রত্যহ তিন ঘণ্টা করিয়া! অধায়ন কৰিতেন। এতদ্যতীত রাজ্যসম্পর্কীয় কোন 
গুরুতর বিষয় উপস্থিত হইলে মহারাজ বির্জানন্দের নিকট মন্ত্রণাও লইতেন। 
আলোয়ার-পতির অধ্যয়ন কার্য প্রাসাদেই সম্পন্ন হইত। এই কারণ 
বিরজানন্দ প্রতিদিন নিয়মিত সময়ে রাজপ্রাসাদে গমন করিতেন । যথা! সময়ে 
_ একদিন যাইয়া দেখিলেন যে, মহারাঁজ অন্ধুপস্থিত। সম্ভবতঃ তিনি সে সমস 
কোন রাজকীয় কার্ধ্যে ব্যাপৃত ছিলেন । কিন্তু বিরজানন্দ তাহাতে একান্ত 
বিরক্ত হয়েন, এবং বিরক্ত হইয়া আপনার গ্রস্থাদি সম্পত্তি পরিত্যাগ পুর্র্বক 
অবশেষে আলোয়ার হইতে পুনর্বার শোরোতে চলিয়া আসেন। তথার কিছু- 
দিন অবস্থানের পর মথুরার সন্গিকট মুর্সানার রাজার নিকট আগমন করেন, 
এবং তথা হইতে মহারাজ বলবস্ত সিংহের অন্থরোধে ভরতপুরে উপস্থিত হয়েন। 
বিরজানন্দ তথায় ছয় সাত মাস কাল বাস করিয়া আবার শোরোতে চলিয৷ 
আসেন। তাহার পর শোরো হইতে মথুরাধামে আগমন করেন। মথুরাতে 
তাহার অবস্থিতি কাল প্রায় বত্রিশ বৎসর হইবে। . তিনি ইহলোকে প্রায় 
একানব্বই বৎসর বিদ্যমান ছিলেন। তাহার মৃত্যু-দিবস ১৮৬৮ খুষ্টান্ের 
আশ্বিন মীসান্তর্থত কৃষ্ণপক্ষীয় তিথি ভ্রয়োদশীর সোমবার। এরূপ কথিত 
আছে যে, বিরজানন্দ স্বীয় মৃত্যুদিবসের সংবাদ পক্ষৈক পূর্বেই শিষ্যদিগের 
নিকট প্রচারিত করিয়াছিলেন। 

বিরজানন্দের প্রতিভা ও উদ্ভাবনী শক্তি অনন্যসাধারণ ছিল। স্থৃতিশক্তি 
বিষয়ে তিনি ক্রতিধর ছিলেন বলিলেই হয়। কোন অপরিজ্ঞাত শ্লোক বা 
সুত্র একবার কিংবা অনধিক দুইবার বলিবামাত্র বিরজানন্দ তাহা অভ্যাস 
করিয়া ফেলিতেন। এই নিমিত্ত হীনচক্ষু হইলেও, অথবা অধ্যাপক-সমীপে 
অধ্যয়ন করিবার তাদৃশ সুবিধা না ঘটিলেও তিনি সর্ধশান্ত্র বিষয়ে একজন 
অসাধারণ পণ্ডিত বলিয়া পরিগণিত হইতেন। তাহার স্শাণিত বুদ্ধি শাস্ত্রের 

+ কেহ কেহ বলেন যে, মহারাজ সেই সময়ে বার-বনিতার সঙ্গে কালাতিপাত করিতে- 
ছিলেন। এই কারণ বিরজানন্দ অত) কুপিত হইয়া আলোয়ার ছাঁড়গ আসেন। 


বিরজানন্দের পরিচয়। ৮১ 


ভিতর এন্সপ প্রবিষ্ট হইত, তাহার সমুজ্জলা স্তুতি শান্রার্থসমৃহকে এপ আয়ও 
করিরা বাখিত, এবং তাহার অঙ্থপম উদ্ভাবনী শক্তি শাস্ত্রের অভান্তর হইতে 
এপ নিগুড় অথ আবিষ্কার করিতে পারিত যে, কেহ কোন শাস্ত্রীয় প্রসঙ্গ 
উত্থাপিত করিবামাত্র বিরজানন্দ তৎক্ষণাৎ তাহ।র স্ুচাকু ও সমীচান মীমাংসা 
কনিয়া দিতেন । ফল কথা, বিরজানন্ম একজন অনন্যসাধারণ জ্ঞানী ও 
অকপট সাধু ব্যক্তি বলিয়া! পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় সর্বাত্রই প্রথিত ছিলেন। 
রেলওয়ে-ষ্টেসন হইতে যমুনার বিশ্রাম ঘাট পর্যাস্ত যে রাজপথ প্রসারিত 
রহিয়াছে, বিরজানন্দ সেই প্রশস্ত রাজপথের এক পার্খে একটি অনার্ত অর্টা- 
লিকাতে অবস্থিতি করিতেন। তাহার আহারাদি ধ্ায়-নিব্বাহার্থ আলোয়ার- 
পতি বিনয় সিংহ এবং জরপুরাধিপতি রাম সি:হ মধ্যে মধ্যে সাহাব্য পাঠাইয়। 
দিতেন। এতছিন্ন তাহার পাগ্ডিত্য ও পরমাথ-পরায়ণতার নিমিত্ত অপরাপর 
ব্যক্তিবাও স্বেচ্ছাপ্রবৃত্ত হইয়া কখন কিছু প্রদান করিতেন । বিরুজানন্দ অধি- 
কাংখ দিন ফলাহার বা ছুপ্ধগান করিয়া দেহ রক্ষা করিতেন। কোন কোন 
দিন বা অন্নাহারেও ইচ্ছুক হইতেন। বোগিগণ প্রায়ই অল্পনিদ্র। এই কারণ 
বিরজানন্দ কোন দিন ছুই ঘণ্টার অধিক নিদ্রিত থাকিতেন না। রাত্রি এক 
ঘটিক। বা ছুই ঘটিকাঁর সময় শরন করিয়া ত্রহ্ম-মুহূর্তে শধ্যা-ত্যাগ পূর্বক প্রাতঃ- 
কতা কার্যা সমাধা করিতেন। তাহার পর স্নান করিয়া সূর্যোদয় পর্য্যন্ত 
প্রণায়াম ও ধ্যানে নিষ্বোজিত থাকিতেন। প্রাতঃকাল হইতে দ্বিগ্রহর পথ্যস্ত 
অধ্যাপনা কার্ষে প্রবৃত্ত রহিতেন। তদনম্তর আহার ও বিশ্রাম কার্যে কিছু 
কাল ক্ষেপণ করিয়া ছুই ঘটিকার পর অপরাস্ন পর্যন্ত পুনর্ধার বিদ্যাথীদিগকে 
শিক্ষা প্রদান করিতেন। কোন কোন দিন সন্ধার পরেও কিছুকাল সমান 
উত্দাহ ও সান অন্থুরাগের সহিত অব্যাপনায় নিযুক্ত হইতেন। কিন্ত প্রতি- 
দিনই সায়।হ্িক স্নানের পর পুনর্বার ধ্যান-বার্ণায় নিমপ্র রহিতেন। এই 
প্রকারে মথুরায় বিরজানন্দের দিন অতিবাহিত হইত। ভিনি একান্ত উৎসাহ 
ও অকৃত্রিম অনুরাগের সহিত অধ্যাপনা কাধ্য সম্পাদিত করিতেন। 
ফলতঃ জ্ঞানের প্রতি যে তাহার প্রগাঢ় মমতা ছিল, এবং জ্ঞানালোচনা 
ৰা জ্ঞান-প্রসঙ্গতে যে. তাহার যথার্থ প্রীতির উদয় হইত, তাহা অধ্যা- 
পন ভিন্ন তাহার অপরাপর কাধ্যতেও জানিতে পারা যায়। একদা সিদ্ধান্ত 


এ 


৮২ দয়ানন্দ-চরিত। 


কৌমুদীর স্ত্রবিশেষ লইয়া রঙ্গাচারীর * সহিত তাহার বিলক্ষণ বিচার 
উপস্থিত হয়। রঙ্গাচারী সপ্তমী তৎপুরুষের পক্ষে নেই স্ুত্রের ব্যাখ্যা করেন, 
কিন্তু বিরজানন্দ পাণিনির “কর্তৃকর্ম্মণোঃকাতি” সুত্র অবলম্বন পূর্বক ঝষ্ঠা- 
তৎপুরুষ মা বণিয়! তাহার ব্যাখ্য। করিতে প্রবৃত্ত হয়েন। এই বিচার-ব্যাপার 
নইয়া মথুরা ও বুন্াবনে আংঙালন উপস্থিত হয়। ইহার মীমাংসার্থ রঙ্গা- 





* রঙ্গাচারী শ্রীমম্তরদায়তুক্ত বৈধব। শ্রী-নম্গরদায় রামানুজ কৃতি প্রতিঠিত। 
বৃন্নাবনের সপ্রিকট গোবদ্নে শ্রী-বৈষৰিগের একটি মন্দির ছিল । সেই মন্দিরে শ্রীনিবাসা- 
চরী নামক একজন বৈজ্ঞব সাধু অধ্যন্ষ ছিলেন। শ্রীনিবাসাঁচান্ী কর্তৃক বৃন্দাবন অঞ্চলে 
রামাগ্রজ মত কিয়ংপরিমাণে প্রচারিত হয়। এজজাচারী ভ্রীনিবাসাচাঁরীর পাচক ছিলেন এবং 
ততৎ্সমীপে অধায়নও করিতেন। রঙ্গাচারী ক্রমশঃ শ্রীনিবাসের প্রিয় পাত্র হইয়৷ উঠেন। 
সুভু-ময়ে শ্রীনিবাসাচারী গোবদ্ধন মন্দিরের অধ্যক্ষতা রজ্জাচারীর প্রতি অপিত 
করিয়। যান। মথুরার প্রসিদ্ধ শেঠবংশ যে পূর্বে জৈনমতাবলখী। ছিলেন, তাহা 
বোধ হয় অনেকেই জানেন। আনারেবল লছমন দাস শেঠের গিতা রাখাকিশন দাস 
ধন্মান্ুরাগী ব্যক্তি ছিলেন। তিনি জৈন মতে তুষ্ট থাকিতে না পারিয়া৷ নানা মত 
আলোচনা করেন, এবং অবশেষে রঙ্গাচারীর নিকট দীক্ষা গ্রহণ করেন। রাধা- 
কিশনের কনিষ্ঠ নহোদরও রঙ্গচারীর শিষ্য হইলেন। কিন্তু তাহাদিগের জেঃ সহোদর 
পূর্বের মত জেনমতাবলম্বীই থাকিলেন। রাধাকিশন ও তাহার কনিষ্ঠ, প্রথমতঃ ১৮৪৩ 
খৃষ্ঠান্ধে তিন লক্ষ টাক! ব্যয় পূর্ববক বৃদ্াঝনে একটি মন্দির নিশ্মিত করিয়! তাহার গদিতে 
গর রঙ্গাচারীকে প্রতিষ্ঠিত করেন। কিন্তু সে মন্দিরটি ছোট ও মনোমত ন1 হওয়ায় 
পয়তালিশ্‌ লক্ষ টাক! ব্যয় পূর্বক অপর একটি সন্দির নাম্ঘত করিলেন। সেই মন্দিরই 
এখন বুন্মাবনে শেঠের মন্দির বলিয়! স্থপ্রপিদ্ধ। এই মন্দির প্রস্তত হইতে দশ ব্মর 
লাগে। মাশ্রাজের শিল্পিগণ কর্তৃক এই মন্দির নিম্মিত হয়। মন্দির-নিষ্মাণ ও বিগ্রহের 
অলঙ্কারাদ |হ্সাবে প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়িত হন্ধ। মন্দির নিশ্মিত হইলে পর 
দেবসেবাদি ব্যয় নব্বাহথ বাৎসরিক ষাড হাজার টাক। আয়ের সম্পত্তি দন পত্রে লিখিয়। 
দেন। এই মন্দির ও মন্দি:রর যাবতীয় সম্পত্তি এবং উপসত্ব আর একখানি দানপত্রে লিখিয়া 
১৮৫৯ খৃষ্টান রঙ্গাচারীকে নমগিত করেন। রঙ্গাচারীর পুত্র শ্রীনিবাসাচারীর চরিত্র 
দুষিত হওয়াতে এহ মন্দির ও হহার সংসষ্ট সমস্ত সম্পৃত্তি ট,ষ্টিদিগের হস্তে নান্ড কর! 
হইয়াছে । নারায়ণ দ।স এই মন্দিরের একজন কাথ্যনির্ববাহক ট,ষ্টি ছিলেন। ইই(র কথ! 
গরে লিখিত হইবে । পূর্ধোত্ত গেএবদ্ধনের সন্ধির এখন বৃন্দাবনস্থিত শেঠ-মন্দিয়ের শাখ। 
রূপেই পরিগণিত হইয়। খাকে। 


রব-প্রণীত ও মনুষ্য প্রণীত গ্রন্থ। ৮৩ 


চারীর অধশপক পর্যান্ত আহত হয়েন। কিন্ত তাহার অনুপস্থিতি হেতু 
অবশেষে নীদাংসা-ভার কাণীস্থ পণ্ডিতমগুলীর প্রতি সমপিত হয়। রঙ্গাচারীর 
অর্থাভাব ছিল না। কারণ মথুরার অতুল এশব্ধাপতি শেঠগণ তাহার শিষা ও 
সেবক । সুতরাং কাশীস্থ পণ্ডিতবর্গের মত'ক্রয় করিবার নিমিত্ত যথোচিত 
চেষ্টা হইতে লাগিল,_-চেষ্টা সার্থক হইল। কাণীর পণ্ডিতগণ রঙ্গাচারীর 
অন্গকুলেই অভিমতি প্রকাশ করিলেন। কিন্তু বিরজানন্দের প্রগাঢ় বিদ্যাবস্কা, 
এমন কি তাহার অপূর্ব তেজস্থিতার কথাও কাশীস্থ প্ডিতগণ অবগত ছিলেন । 
সুতরাং কোন প্রতিকূল মত প্রকাশ নিরাপদ নয় বিবেচন! পুর্ধক তাঁহারা 
বিরজানন্দকে লিখিয়! পাঠাইলেন যে, উপস্থিত বিষয়ে আপনার মীমাংসাই 
যথার্থ,__কিন্ত আমরা. অনন্তোপায়। যেহেতু ইতঃপুর্েই আমর রঙ্গাচারীর 
পক্ষ সমথন করিয়াছি। 

এই ঘটনার পর হইতে, বিরজানন্দ শেখর, কৌমুদী ও মনোরমা প্রভৃতি 
আধুনিক ব্যাকরণের প্রতি অধিকতর বীতশ্রদ্ধ হইয়া, উঠেন।, পক্ষান্তরে 
পাণিনির প্রামাণিকতাই সর্বোপরি স্বীকার করিতে থারেন।. ফল. কথা, 
অষ্টাধযায়া পাণিনিই য়ে ব্যাকরণ-বিষয়ক সর্পোচ্চ. গ্রন্থ, এই বিশ্বাস বিরজা- 
নন্দের হৃদয়ে প্রথম অবধিই বদ্ধমূল ছিল।. তবে উপস্থিত ঘটনায় সেই বিশ্বাস 
গাঢ়তর হইয়া উঠিলমাত্র। তিনি যেমন, শেখরাদি আধুনিক ব্যাকরণের 
গ্রতি আস্থাবান্‌ ছিলেন না, সেইরূপ পুরনাণ-ভাগরতাদি আধুনিক শাস্ত্রের 
প্রামাশিকতও স্বাকার করিতেন না। তিনি ভাগবংকে একখানি, 
সব্বাংশে করনা-কর্পিত পুস্তক বলিয়াই অকুতোভরে প্রচারিত করিতেন । 
বলিতে কি, বেদ ও বেদানগুকুল গ্রন্থ ব্যতীত বির্জানন্দ অপর কোন গ্রন্থের 
প্রতি আদৌ আস্থাপরা়ণ ছিলেন না। মনুষ্য-প্রণীত কোন গ্রন্থই তীহার 
নিকট প্রামাণিক বণিয়৷ পরিগৃহীত হইত না। তীহার প্রতিভ| এপ মর্ম 
স্পর্শিনী ছিল যে, কোন পুস্তকের দুই একটি কথ! থা শ্লোক উচ্চারণ করিবামাত্র 
নেই পুস্তকথানি মন্থুযা-প্রণীত কি খধি-প্রণীত, তাহ! তদ্দণ্ডেই বলিয়া দিতে 
পারিতেন। এমন কি, কোন ব্যক্তি বিদ্যার্থীরূপে তাহার নিকট উপস্থিত 
হুইলে, সর্ধাগ্রে মনুষ্য-প্রণীত গ্রন্থের কথা বিশ্বৃত হইবার নিমিত্ত তাহাকে 
অন্থরোধ করিতেন। তন্নিমিন্ত তিনি নুতন শাস্ত্র প্রবর্তনের ঘোর প্রতিপক্ষ 


৮ দয়ানন্দ-চরিত। 


দলেন। তাহার বিশ্বাস ছিল যে, ইহলোকে নার্ষ গ্রন্থ সকল অদ্দীভ বা আলোচিত 
হইলেই মন্তষ্যের ষথার্থ মঙ্গল সাধিত হইবে। বিশেষতঃ তিনি মনে করিতেন যে, 
মনুষ্য-প্রণাত গ্রন্থের প্রচার বা আলোচনা হইলে অন্নবুদ্ধি লৌক সকল আধ গ্রন্থ 
অধ্যয়নে প্রবৃত্ত ভ্ইীবে না। এই কারণ এক দিকে আর্ধ-গ্রন্থের প্রতিষ্ঠা, এবং 
অপর দিকে অনার্য গ্রন্থের অগ্রতিষ্ঠাসাধন, বিরজানন্দ-জীবনের একটি বিশেষ 
ব্রত ছিল। বিরজানন্দ স্বস্বং শেখরাদি খণ্ডন পুর্বক বাক্যমীমাংস্! নামক এক- 
খানি পুস্তক রচনা করিয়াছিলেন । তত্িন্ন.প্রার অদ্ধভাগ পাণিনিরও একখানি 
ভাষ্য প্রস্তুত করেন। কিন্তু লেকসমাজে পাছে তাহার গ্রন্থ প্রচারিত হয়, 
এবং তদ্বিরচিত ভাষ্য বিদ্যমান থাকিতে পাছে মুল গ্রন্পাঁঠে মন্নষোর প্রব্তির 
উদ্দেক ন! হয়, তন্নিমিত্ত তিনি স্বরচিত পাঁণিনি-ভাষ্যখানি যমুনা'জলে বিসজ্জন 
করিয়। দিখার নিমিত্ত বিদ্যার্থীবিশেষকে আদেশ প্রদান করিয়াছিলেন 
কিন্তু সেই বিদ্যার্থী বু মূল্যবান্‌ বিবেচনা পুর্বক উহা বিসজ্ভিত না করিয়া 
আপনার নিকট রাখিয়া দেন, এবং বিসজ্জিত করিয়। আসিয়াছি বলিয়! 
আচার্য্র তুষ্টিমাধন করেন। পুর্বোলিখিত বাক্যমীমাংসার অবস্থাও এইরূপ 
ঘটিয়াছিল। উহাও পাণিনি-ভাষ্যের গ্তাঁয় শিষ্বিশেষের গৃহে রক্ষিত 
হইতেছে । এতত্বারা সহজেই বুঝ! যায় যে, অনার্ষ গ্রন্থ গরচারিত করিবার 
পক্ষে বিরজানন্দ যার পর নাই বিরুদ্ধ ছিলেন। 
বিরজানন্দ শ্রতি-প্রতিপাঁদিত ধর্মের পক্ষপাতী ছিলেন। যে ধর্ম শ্রতি- 
প্রতিপাদিত নহে, প্রত্যুত শ্রতি-গ্রাতিকূলঃ বিরজানন্দ তাহাকে সনাতন 
ধন্ম বলিয়া স্বীকার করিতেন না। শ্রতি-প্রতিপার্দিত ধর্ম গ্রতিষ্ঠিত হইলে 
একতা সঞ্চারিত হইবে, সাম্প্রদায়িক কোলাহল নিবারিত হইবে, এবং মানবীয় 
শাস্ত্রের প্রচার নিমিত্ত সর্ব গ্রকার ভ্রান্ত বিশ্বাস অপসারিত হইয়া যাইবে, 
এইরূপ বিবেচনা! পুর্ধক বিরজানন্দ উহার প্রতিষ্ার্থ উত্স্বক হইয়! 
উঠেন। কিন্ত তিনি হীনচক্ষু_বিশেষতঃ বার্ধক্য নিমিত্ত কোন প্রকার 
শ্রমসাপেক্ষ কার্য সম্পাদনে একরূপ অসমর্থ ছিলেন। এই হেতু একদা জয়- 
পুরাধিপতি মহারাজ রামসিংহ আগ্রায় উপস্থিত হইলে, বিরজানন্দ তৎসমীপে 
সমাগত হইয়৷ একটি সার্বভৌমিক সভা সংস্থাপনার্থ প্রস্তাব উত্থাপিত করেন। 
বল! বাহুল্য ষে, রামসিংহের প্রকৃতি অনেক পরিমাণে রাজন্টোচিত ছিল । 


সার্ববভোমিক সভা । ৮৫ 


তাহার চত্িত্র ও আচরণে পুর্ধতন হিন্দু রাজদিগের কথঞ্চিৎ আভাস পরিলক্ষিত 
হইত। সুতরাং তাহার নিকট পুক্মোল্লিখিত প্রস্তাব উত্থাপিত করা কোন 
অংশেই অসগ৩ও বা অবিঙিত হয় নাই। সাব্পভৌমিক- সভার উদ্দেত্য অতি 
মহৎ ও সর্ধতোভাবে দেশ-হিতকর। অধিকন্ত উহা! সব্ব প্রকারেই জাতীয় 
প্রকৃতির অনুমোদিত। বিরজানন্দ তেজস্থিতা সহকারে মহারাজ রামসিংহকে 
বণিলেন৮আপনি সার্ধভৌমিক সতাক্ষেত্রে ভারতবর্ধীর পণ্ডিতমগুলীকে 
আহুত করুন, এতদ্দেশীয় নান। সম্প্রদায়স্থ ধম্মাচাধ্যদিগকে একত্র করুন, এবং 
তৎ্সঙ্গে পরিদশবকরূপে সভাস্থল অনস্কৃত করিবার নিমিত্ত ভারতবষীয় ভূগতি- 
বুন্দকেও আমন্ত্রণ করুন। আমি সেই মহতী সভামধ্যে সব্বজনসমক্ষে 
শেখর-কৌমুদী প্রভৃতির থণ্ডন করিব,__পুরাণ ভাগবতাদির অসারতা ঝ। 
অশাস্ত্ীয়ত। প্রতিপাদন করিব-_বৈদিক ধশ্মকেই সত্য বা সনাতন ধন্ম বলিয়! 
সমর্থন করিব, এবং পরিশেষে ধর্মের পরিরক্ষকরূপে বিজন্পত্র প্রদান পুর্ব 
আপনার রাজনাম ও রাজমানকে সার্থক করিয়া তুলিব।” ফলতঃ ভারতক্ষেত্রে 
বৈদিক ধন্ম প্রতিষ্ঠাই সাব্বভৌমিক সভা স্থাপনের উদ্দেশ্ত ছিল। রামসিংহ 
সাব্বভৌমিক সভার আবগ্তকতা বিলক্ষণরূপে বুঝিতে পারিলেন, এবং সেই বধীয়ান্‌ 
পুরুষের পরামর্শ অন্গসারে উপস্থিত প্রস্তাবকে কার্যে পরিণত করিবার নিমিত্তও 
কৃতসংকন্প হইয়। উঠিলেন। সেই মহতী সভার যাবতায় ব্যয় নির্ধাহার্থ আন্মানিক 
তিন লক্ষ টাকার প্রয়োজন ছিল। মহামতি রামসিংহ সেই মহছুদ্দেশে তিন 
লক্ষ মুদ্রা ব্যয় করিতে কিছুমাত্রও কুষ্ঠিত ছিলেন না। কিন্তু যখন তিনি জয়পুরে 
প্রত্যাবৃত্ত হইয়। পারিধদ্বর্গের নিকট সেই সভা-মংকল্প প্রকাশিত করিলেন, 
তখন তৎকাধ্য হইতে প্রতিনিবৃত্ত হইবার নিমিত্ত তাহারা তাহাকে অনুরোধ 
করিতে লাগিলেন । বিশেষতঃ তথাকার পণ্ডিতবর্গ সেই সভা-সম্পকীয় বিষয়ের 
অবৈধতা তাহাকে এরূপ করিয়া বুঝাইয়! দিলেন বে, অবশেষে তিনি সেই সংকল্প 
পরিত্যাগ করাই যুক্তিযুক্ত বিবেচনা করিলেন। এইরূপ অক্ষত্রোচিত আচরণে 
বিরজীনন্দ রামসিংহের প্রতি বিরক্ত হয়েন, এবং তাহার পর অপরাপর কতিপয় 
রাজন্ত-সমীপেও পুর্বোন্লিখিত প্রস্তাব উত্থাপিত করেন। এরূপ কথিত আছে 
যে, তিনি মহারাণী ভিক্টোরিয়ার নিকটেও নাকি এই সার্ভৌমিক সভার প্রস্তাব 
প্রেরণ করিয়াছিলেন । ফল কথা, বিরজানন্দ স্বামীর এই.পরম হিতকর প্রস্তাব 


৮৬ দয়ানন্দ-চরিত। 


স্তাব-মাত্রেই পর্ধ্যবসিত ছিল, কার্্যতঃ তাহার কিছুই হর নাই বা 
পারে নাই। 

দরানন্দের সহিত স্বামী বিরআানন্দের অতি নিকট সন্বন্ধ। ইহা শোণিভ- 
সধ্ন্ধ না হইলেও শোণিত-সন্বন্ধ অপেক্ষা অধিক নিকটতর । অধিক কি, পুল্র- 
প্রকৃতির ভিতরে পিত। যেরূপ প্রচ্ছন্নভাবে বিদ্যমান রহেন, শিষ্য-প্রকৃতির 
ভিতরে আচার্ধ্যও মেইরূপ নিগুঢ় ভাবে অধিষ্ঠিত হইরা থাকেন। সুতরাং 
আচাধ্য-শিষ্য সম্পর্ক পিতা'পুন্তর-গত সম্পর্কের গ্থায় সর্কা প্রকারেই অবিচ্ছিন্ন । 
উপস্থিত ক্ষেত্রে আচার্ধ্যশক্তি শিষ্যচরিত্রে এতদূর সংক্রামিত হইয়াছিল যে, 
আচাধ্য-চিত্র সম্যকর্ূপে চিত্রিত না করিলে শিষ্যচরিত্র চিনিয়া বা বুঝিরা 
উঠা একরূপ অসন্তব। এই নিমিত্ত আমরা পাঠকদিগের নিকট স্বামী 
বিরজানন্দের বিশিষ্ট পরিচয় প্রদান করিলাম ।* .ফলতঃ দয়ানন্ব-রূপ বে 
প্রদদীপ্ত বহ্ছি এতদেশীয় কুসংস্কাররাশিকে ভক্মীভূত করিয়াছিল, দয়ানন্দ- 
রূপ যে মহাপ্রবাহ ভারতের যাবতীয় অপবর্্মকে অপসারিত করিবার 
উদ্দেশে গ্রধাবিত হইয়াছিল, অথবা দয়ানন্দরূপ ঘে মহীয়সী প্রতিভা সায়ণ- 
মহীধরাদি ভার্তীয় বেদব্যাখ্যাতাদিগকে বিখপ্ডিত করিয়া বৈদিক খধিবুন্দের 
মাহাত্ম্ই সর্বোপরি সংস্থাপিত করিয়াছিল, বিরজানন্দের শিক্ষা ও সংসর্গই যে 
সেই প্রদীপ্ত বধির ক্ষ,লিঙ্গস্বরূপ__সেই মহাগ্রবাহের নির্বর-বারি স্বক্ধপ,_ 
এবং সেই মহীয়সী প্রতিভার প্রাণস্বরূপ, তাহ! আর বিশেষ করিয়া বলিতে হইবে 
না। ফল কথা বিরজানন্দের মত শ্রতিধর,_বিরজানন্দের মত ক্রতিধর 
পণ্ডিত, বিরজানন্দের মত ত্রাহ্ষণ,_বিরআনন্দের মৃত বেদপ্রাণ ব্রাহ্মণ, 
বিরজানন্দের মত সন্ন্যাসী,__বিরজানন্দের মত সত্য-সঙ্কল্প সন্ন্যাসী যে ভারত- 
ভূমিতে অতি অন্নই অভ্যুদদিত হইয়াছেন, তাহা! বলিতে আমাদিগের অণুমাত্রও 
সঙ্কোচ হইতেছে না। ধাহার৷ মনে করেন ফে, আরধাজাতির গরীয়দী প্রতিভা 





ন্‌ হিরনিস স্বামীর জীবন বিষয়ে এই স্থলে যাহা ছু লিখিত হইল, তাহায় প্রায় 
সমস্তই মথুরাবাঁসী পণ্ডিত যুগল কিশোর শাস্ত্রীর নিকট হইতে সংগৃহীত। গ্ডিত যুগ্লল 
চিশোর বিরজানন্দের নিকট অনেক দিন অধ্যয়ন করিয়াছিলেন। এতত্তিন্ন তিনি দর়া- 
নন্দেরও একজন সহাধ্যায়ী ছিলেন। আমা দগের বিবেচনায় বিরজানন্ শ্বামীর একখানি 
প্রণালীবদ্ধ জীবন-চরিত প্রকা শার্থ চেষ্টা কর! নিতান্ত আবস্কক। এই বিষয়ে আধ্য-সম!জের 
মচেষ্ট হওয়া উচিত । কারণ দয়!নন্নকে বুঝিতে হইলে বিরজানন্দকেও বুঝা আবস্থক । 


দয়ানন্দের অধ্যয়ন। ৮৭ 


নির্বাপিত হইর| গিরাছে, অথবা! ধাহারা বিবেচন| করিঘ্লা থাকেন ধে, ব্যাস- 
বশিষ্টের বংশধরগণ বিদ্যা বা বুদ্ধিশালিতা বিষয়ে একবারে অধঃপতিত হইয়। 
পড়িয়াছে, আমধ। তাহাদিগকে স্বামী বিরজানন্দের বিষয় আলোচনা করিবার 
নিমিত্ত আগ্রহের সহিত অনুরোধ করি। 

মথুরাতে যখন দয়ানন্দ আগমন করিলেন, তখন তীহার বয়ঃক্রম চৌভ্রিশ 
কিংব। পয়ত্রিশ বৎসর । স্বামিজীর বরংক্রমও্ড তখন একাশীতি বৎসর হইবে। 
দয়ানন্দ সম্ভবতঃ বৈশাখ অথবা জোন মাসে মধুর উপস্থিত হইলেন। তৎ- 
কালে পশ্চিমাঞ্চলের সর্ধত্রই দারুণ নিদাঘ-তাপে তাপিত হইতেছিল। বিশেষতঃ 
ফিপাহী-বিদ্রোহ জনিত অশান্তি বা অরাজকতা ও স্থানে স্থানে বিরাজ করিতে, 
ছিল। আর সেই সময় দারুণ ছুডিক্ষবশ্তঃ ততপ্রদেশের অনেক লোক অন্নকষ্টেও 
ক্রিষ্ট হইতেছিল। যাহা হউক মথুরাগত দয়ানন্দ কএক দিন রঙ্ষেশ্বরের মন্দিরে 
অবস্থান করিয়। একদিন বিরজানন্দের নিকট উপস্থিত হইলেন। দয়ানন্দ তখন 
সন্ন্যাসী-বেশে সজ্জিত ছিলেন । তাহার ললাটে ভন্মরেখা,কণ্ঠে কুদ্রাক্ষমালা,পরি- 
ধানে গৈরিক বন্ত্র এবং হস্তে এক লোটা ছিল। বিরজানন্দ অন্ঠান্ত বিদ্যার্থীদিগকে 
যেরূপ বলিতেন,সমাগত দয়ানন্দকেও সেইরূপ বলিলেন। তিনি বলিলেন»_“তুমি 
এতকাল যাহ! পড়িয়া, তাহার ভিতর অধিকাংশই মনুষ্য-রচিত গ্রন্থ। মন্ুষ্য- 
রচিত গ্রন্থের প্রভাব বিদ্যমান থাকিতে তোমার হৃদয়ে আর্য-গ্রগ্থের মহিমা বা 
মর প্রবিষ্ট ও প্রতিষ্ঠিত হইতে পারিবে না। এই নিমিত্ত তুমি অধীত বিষয় 
সকল বিস্বৃত হইয়া এবং মন্ুষ্য-রচিত গ্রস্থ সকল ফেলিরা দির়। আমার নিকট 
পুনর্বার প'ঠারস্ত কর। আর এক কথা, তুমি আহার ও অবস্থান করিবার 
বন্দোবস্ত করিয়। আইন । কারণ তাহা! না করিলে নিশ্চিন্ত-চিত্তে পাঠালোচনায় 
প্রবৃত্ত হইতে পারিবে না” 

দয়ানন্দ তদন্নুসারে আহার ও অবস্থান করিবার বাবস্থা করিলেন। লক্ষমী- 
নারায়ণ-মন্দিরের নিম্ন-তলস্থিত একটি প্রকোষ্ঠ তাহার বাসস্থানরূপে নির্দিষ্ট 
হইল। এ মন্দির যমুনার বিশ্রাম ঘাটের* উপরিভাগে প্রদ্িঠিত। সেই প্রকোষ্ঠাটি 


* এইবপ প্রবাঁদ যে, কৃষ্ণ কংদাস্থরের প্রাণবধ করিয়! অত্যন্ত পরিশ্রান্ত হইয়া পড়েন। 
এই নিমিত্ত কিছুক্ষণ বিশ্রাম লাভ ভাহ।র পক্ষে আবশ্যক হইয়। উঠে। তান বিশ্রাম লাভার্থ 
যমুনাতটের ষে স্থানে উপবিষ্ট হইয়[ছিলেন, সেই স্থান বিশ্রাম ঘাট নামে অভিহিত হহ্য়। 
আমিভেছে। 


৮৮ দয়ানন্দ-চরিত । 


মন্দিরের দার্পার্থে ই অবস্থিত। গৃছটি অনায়ত হইলেও এক ব্যক্তির বাসের পক্ষে 
খিলগ্ষণ উপযোগী । গৃহটির সন্ুথে প্রাকৃতিক সৌনর্ধ্যরাশি প্রসারিত রহিয়াছে । 
কারণ উহার পুর্ধধিকস্থিত গবাক্ষ পার্থে দণ্ডারমান হইবাধাত্র বমুনার 
তরঙ্গ ভঙ্গিময় শ্যামল সণিলরাশি দৃষ্ট হয়। বিশেষতঃ অপর পারে কোথাও 
শুভ্রেচ্জন সৈকত-ভূমি,__কোথাও .বা লতাপাদপ-পরিবৃত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কুঞ্জবন 
দর্শন করির! পুলকিত-চিন্ত হইতে হ্য়। এইরুপে বাসস্থান নিরূপিত 
হইলে গর অমর্লালের গৃহে তাহার আহারের ব্যবস্থা হইল। অমরলাল 
মথুরাধামে “জ্যোতসি-বাঝা ৮* বলিয়া প্রসিদ্ধ। তিনি একজন দয়াপ্র-চিত্ত 
ব্যক্তি। অমরলাল গুজরাট প্র্দেশবাসী হইলেও মথুরাতে অনেক দিন 
অথগ্থিতি করিতেছিলেন । তিনিও উদাচ্য শ্রেণীস্থ ব্রাহ্গণ। স্বদেশস্থ ও স্বশ্রেণাস্থ 
দেখিয়া, অধিকন্ত ধিরজানন্দের নিকট পাঠি-বাসূনা একান্ত বলবতী বুঝিতে 
পারিয়া, অমরলাল স্বীয় আলয়ে দয়ানন্দের আহারের ব্যবস্থা করিয়া দিলেন। 
কেবণ আহার-ব্যবন্থী করিয়া দিয়াই নিশ্চিন্ত রহিলেন না» তাহাকে সময়ে সময়ে 
প্রয়োজনান্ুুরূপ পুস্তকাদিও সাহায্য করিতে লগিলেন। এই বিষয়ে দয়ানন্দ 
বলিক়াছেন,--“আহার ও গ্রন্থাি সম্পকে মুক্ত হস্তে সহায়তার নিমিও আমি 
অমরলালের নিকট যার পর নাই বাধিত আছি। তিনি আহার বিষয়ে এতদূর 
যত্রপর হইতেন যে, অগ্রে আমার আহারের ব্যবস্থা করিয়া না দিয় নিজে 
আহার করিতেন না। বন্ততঃ তিনি যে একজন মইদস্তঃকরণ ব্যক্তি তাহাতে 
আর সংশর নাই।” যাহা হউক এই প্রকারে অবস্থান ও ভোজন করিবার 
ব্যবস্থা করিয়! দয়ানন্দ বিরজনন্দের সমীপে আগমন পুক্বক অধ্যক্ষন কাধ্যে 
ব্যাপৃত হইলেন । 

*ঞ্যোতাববদ্া বিষয়ে শ্রাসাদ্ধির [নমিত্ত অমরলাল “জ্যোরাস-বাবা” ডপাধি প্রাপ্ত 
হইয়ছিলেন। মহারাজ সিদ্ধয়। তাহাকে এই উপাধি প্রদান করিয়ছিলেন। এমন কি, 
মহারাজ দিদ্ধিয়া, খ্যোতিঃশান্ত্র বিষয়ে গারদূশিতার নিমিত্ত অমরণালের প্রতি এতদূর তুষ্ট 
হয়েন যে, তাহাকে দশ বারখানি গ্রা প্রদান করিয়াছিলেন। অমরল।ল সেই গ্রামগুলির 
উপমত্ব হইতে প্রাতিদিন ব্রাহ্মণ ভোঞনাদি সৎকাধ্যের অনুষ্ঠান করিতেন। তাহার গৃহে 
প্রতাহ প্রায় একশত ব্রাঙ্গণসজ্জন আহার করিতেদ। এইন্থলে আর একটি কথা বল। 
উচিত যে, অমরলালের গৃহে আহার-্যবস্থা! হইবার পূর্বের দয়ানন্দ দুর্গাপ্রসাদ নামক জনৈক 
মদশয় মাত্রয়ের গৃহে কিছু দিন আহার করিয়া ছিলেন। 





দয়ানন্দের অধ্যয়ন। ৮৯ 


উচ্চারণ-বিশুদ্ধির প্রতি বিরজানন্দের তীব্র দৃষ্টি ছিল। তাহার নিকট 
কোন বিদ্যার্থী অবিশ্তদ্ধবূপে কোন শব্দ ঝা শ্লোক উচ্চারিত করিয়া কখন 
নিষ্ভতি গাইতেন না। বস্ততঃ বিরজানন্দের মত শুদ্ধও যথাযথ আবৃত্তি 
অধ্যাপক সম্প্রদায়ের ভিতর প্রায়ই পরিদৃষ্ট হইত ন1। যদিও দয়ানন্দ ইতঃপৃর্বে 
অনেক উপাধ্যায়ের নিকট অধ্যয়ন করিয়াছিলেন, কিন্তু তথাঁপি তাহার 
আবৃত্তিগত দোষ একবারে বিদুরিত হয় নাই। সেই হেতু বিরজা- 
ননদের নিকট তীহার আবৃত্তি বিষয়ে মধ্যে মধ্যে অগুদ্ধি ঘটিতে লাগিল। 
বিরজানন্দ তত্প্রতিকা রার্থ তাঁহাকে শিক্ষা দিতে লাগিলেন। দয়ানন্দ তাহার 
নিকট পাণিনি ও পাঁণিনির অনুপম ব্যাখ্যাস্বরূপ মহাঁভাব্য পাঠে শ্রীনৃত্ত 
হুইলেন। তাহার পর উপনিষদ, মনু্থৃতি, ব্রন্গস্থত্র ও পতঞ্জলির যোগনুত্র 
প্রভৃতি দর্শন শাস্ত্র সকল অধ্যয়ন করিতে লাগিলেন। ক্রমশঃ বেদ ও 
বেদাঙ্গাদি পাঠে প্রবৃত্ত হইলেন। 

দয়ানন্দ স্বীয় আচার্য্যের অদৃষ্টপূর্বব প্রভাব দর্শনে বিমোহিত হইতে লাগি- 
লেন। তীহাঁর অপরিমিত পাত্ডিত্য ও অত্যাশ্চর্ধ্য ধী-শক্তির পরিচয় পাইয়া 
তিনি বিশ্মিত হইয়া উঠিলেন। তিনি অনেকানেক আচার্যের নিকট অধ্যয়ন 
করিয়াছিলেন বটে, কিন্তু ইতঃপূর্ববে বিরজানন্দের মত আচার্ধ্য আর কোথাও 
দেখেন নাই। কৃর্য্যমগ্ডল হইতে যেমন অবিশ্রান্ত তেজোরাশি নিঃস্ঘত হয়, 
অথব1 নির্ঝর হইতে যেমন অনবরত বারিধার! ক্ষরিত হয়, সেইরূপ দয়ানন্দ 
দেখিলেন যে, বিরজানন্দের বাঁগিন্িয় হইতে নানা শান্ত্রের নানা প্রসঙ্গ অবিরত 
বিনির্গত হইয়া! শিষ্যমগ্লীকে বিমোহিত করিয়া তুলিতেছে। আরও দেখি- 
লেন যে, তিনি হীনচক্ষু হইয়াও আপনার প্রজ্ঞাচক্ষু * দ্বারা সর্ব শীস্্ের সর্ব 
স্থান সন্দর্শন করিয়া জিজ্ঞাসিত বিষয়ের সুচারুরূপ সিদ্ধান্ত করিতেছেন। 
বিশেষতঃ দেখিলেন যে, তাহার দেহ-যষ্টি পঞ্তরাস্থিমাত্রে পর্য্যবসিত হইলেও 
তিনি যুবজনোচিত উৎসাহ ও তেজস্থিতা সহকারে শাস্্-ব্যাখ্যায় ব্যাপৃত 
রহিয়াছেন। অধিকস্ত আশ্চর্যের বিষয় যে, আজন্মকাল কোন গ্রন্থ বা কোন 
্রন্থপত্রও পরিদর্শন না করিয়া আপনার সর্ব-বিষয়-ব্যাপিনী স্মৃতিশক্তি প্রভাবে 

* দয়ানন্দ বিরজানন্দকে প্রজ্ঞাচক্ষু নামে অভিহিত করিতেন। তিনি স্বীয় গ্রন্থের অনেক 
স্থলেই তাহাকে প্রজ্ঞাচক্ষু বলিয়া বর্ন করিয়াছেন। 

১২ 


৯০ দয়ানন্ন-চরিত। 


কি ব্যাকরণদশন, কি সাহিতা-সংহিতা, কি বেদ-বেদাত্ত সর্ব বিদ্যার সর্ব 
প্রকার তত্ব কথার কথায় বুঝাইয়৷ দিতেছেন। বিরজানন্দের মত আচার্ধা 
যেমন দয়ানন্দ কথন দেখেন নাই, সেইরূপ দয়নন্দের মত শিষ্যও 
বিরজানন্দের নিকট কেহ কখন আগমন করেন নাই। স্তৃতরাং দয়ানন্দ যেরূপ 
বিরজানন্দকে একজন অনন্তসাঁধারণ আচার্ধ্য বলিয়া মনে করিতে লাগিলেন, 
সেইরূপ বিরজানন্দও দয়ানন্দকে একজন অনন্যসাধারণ শিষ্য বলিয়া বুঝিতে 
পারিলেন। ফলতঃ এই আচার্য-শিষ্য সম্মিলন, উভয়ের পক্ষেই উৎসাহ ও 
আনন্দের কারণ হুইয়! উঠিল। বিরজানন্দ দয়ানন্দকে “কাল-জিহ্ব” বলিতেন। 
«“কাল-ভিহ্ব” কি না যাহার জিহ্বা কালম্বরূপ,__অর্থাৎ অসত্য বা! ভ্রান্তিজাল- 
খগুনে দয়াননদের জিহ্বা যে কালম্বরূপ হইবে, তাহা তিনি বুঝিতে পারিয়া- 
ছিলেন। এততিন্ন তিনি তাহাকে “কুলক্কর” নামেও অভিহিত করিতেন। দয়ানন্দ 
বে, বিচারক্ষেত্রে “কুলকর” বা খোটার মত অবিচলিত থাকিয়া! বিরুদ্ধ পক্ষ পরাভূত 
করিবেন, তাহাঁও তিনি জানিতে পারিয়াছিলেন। পুর্বোল্লিখিত বেদাদি গ্রসথান্- 
শীলন ভিন্ন দয়ানন্দ বিরজানন্দের নিকট পুরাণ-ভাগবতাদি-খণ্ডন বিষয়ক শিক্ষা 
লাভ কবিলেন। আর্ধ গ্রন্থের নিদশন কি, এবং অনার্য বা মন্ুষ্য-বিরচিত গ্রস্থেরই 
বা লক্ষণ কি, তিনি তদ্বিষয়ও তাঁহাকে বিশেষ করিয়া বুঝাইয়া দিলেন। মনুষ্য- 
বিরচিত গ্রন্থের প্রভাব বা প্রতিষ্ঠা বিদ্যমান থাকিতে আর্ গ্রন্থ সকল যে 
অধীত বা আশানুরূপ সমাদুত হইবে না, সেই বিষয়েও তিনি যথোচিত শিক্ষা 
প্রদান করিলেন । আর আর্ষ গ্রন্থসমুহের অনধ্যয়ন বা অনাদর হেতুই যে, ভারত- 
ভূমি শত প্রকার সাম্প্রদায়িক ধর্মে বিচ্ছিন্ন হইতেছে, এবং ভারত-দমাঁজ অশেষ- 
বিধ আবর্জনার অধিকরণ হইয়া উঠিয়াছে, তাহাও তিনি প্রিয় শিষ্যের প্রসারিত 
হৃদয়ে বিলক্ষণরূপে অন্কিত করিয়া দিলেন। এতঘ্যতীত বিরজানন্দের চারিত্র- 
শক্তি দয়ানন্দের ভিতর সংক্রামিত হইল। মহাঁপুরুষদিগের ইচ্ছা-শক্তি যে 
অতিশয় প্রবলা, এবং তাহারা যে সেই প্রবল! ইচ্ছা-শক্তি দ্বারা আপনাঁদিগের 
প্রভাৰ অপরের ভিতর বিনিবিষ্ট করিয়া দিতে পারেন, তাহা বোধ হয় সকলেই 
অবগত আছেন। তবে সকল আধারেই যে তাহাদিগের শক্তি সংক্রামিত 
হয়, তাহা নহে। যাহা হউক মহাদীপ যেরূপ সমীপস্থ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র 
দরীপাবলীকে অধিকতর উদ্ভাসিত করিয়া তুলে, সেইরূপ বিরজানন্দও আপনার 


দয়ানন্দের অধ্যয়ন ৭১ 


' শক্তি ও দীপ্তি দারা দয়ানন্দের শক্তি ও দীপ্তিকে দ্বিগুদিত করিয়া তুলিতে 
লাগিলেন। 
বিরজানপ! শিব্যদিগকে প্রায় সর্ববদাই বলিতেন যে, আমি এখন যে অগ্নি 

ধূমাকারে তোমাদিগের ভিতর বিনিবিষ্ট করিয়া দিতেছি, কালে তাহা মহা-অগ্িতে 

পরিণত হইয়া ভারতভূমির ভ্রান্ত মত ও ত্রান্ত বিশ্বীসরূপ জঞ্জালরাশিকে তম্দ্ীভূত 
করিয়া ফেলিবে। অধিক কি তদ্বারা ভারতক্ষেত্রে বৈদিক ধর্মের বিলুপ্ত-প্রাস় 
দীপশিখা পুনরায় প্রদীপিত হইয়া উঠিবে। বিরজানন্দ-বিনিঃস্থত ধূমজাল 

আর কোন শিষ্যরিত্রে অগ্নি উৎপাদন করিতে পারিয়াছিল বলিয়া! দেখা ঘাঁয় 

না। তবে তদ্থারা যে দয়ানন্দের অন্তর্ণিহিত অগ্থি অধিকতর প্রধূমিত ও 

ঘনীভূত হইয়া উঠিয়াছিল,_এমন কি তাহা প্রলয়াগ্ির পুক্ঝ-সুত্তি পরিগ্রহ 

করিয়াছিল, তদ্বিষয়ে আমাধিগের অণুমাত্রও সন্দেহ নাই। ফলতঃ দয়ানন্দ, 

স্বামী বিরজানন্দের নিকট এই প্রকারে অধ্যয়ন কাধ্য পরিসমাপ্ত করিলেন। 

তাহার অধ্যয়ন সমাপ্ত হইতে অন্ন ছয় কিংবা অনধিক সাত বৎসর কাল 
অতিবাহিত হইল। খিরজানদ্দের নিকট অধ্যয়ন আরম্ত করিবার পূর্বে দয়া- 

নন্দ যাহা ছিলেন, অধ্যয়নান্তে দয়ানন্দ তাহা! রহিলেন না। যাহা হউক এতদ্দেশে 
গুরুদক্ষিণার একটি পদ্ধতি আছে। অধ্যয়ন শেষ হইলে বিদ্যা্থিগণ আপন আপন 
সাধ্যান্গরূপ গুরুকে দক্ষিণা প্রদান করিয়া থাকেন। সন্্যাসী দয়ানন্দের পক্ষে 

গুক্কদক্ষিণা-ূপ অর্থ সংগ্রহ সম্ভাবিত নহে | বিশেষতঃ বিরজানন্দও সে 

শ্রেণীস্থ গুরু নহেন। অধ্যাপনার বিনিময়ে দক্ষিণা-গ্রহণ বা অন্ত কোঁন 

উপায়ে অর্থ-সংগ্রহ সর্ধতোভাবে তাহার সংকল্পের বিরুদ্ধ ছিল। ফলতঃ বিদায় 

গ্রহণ করিবার সময় সেই প্রশান্ত-প্রক্কৃতি বর্ষীয়ান্‌ পুরুষ দয়ানন্দকে প্রাণ 
ভরিয়া! আশীর্বাদ করিলেন, এবং ঈষৎ তেজস্থিতা সহকারে বলিয়! দিলেন যে, 

_পভুমি আর্ধ্যাবর্তে আর্য গ্রন্থের মহিম! গ্রতি্টিত করিবে, অনার্য গ্রন্থ সমূ- 

হের খণ্ডন করিবে, এবং ভারতে বৈদিক ধর্ম সংস্থাপনার্থ প্রাণ পত্যস্তও পণ 

করিবে।” 

বিরজানন্দের নিকট অধ্যয়ন সমাপন পূর্বক সম্ভবতঃ ১৮৬৫ খৃষ্টান দয়া” 
নন্দ মথুরা হইতে আগ্রায় গমন করিলেন। তথায় যমুনাতটের সঙ্গিকট একটি 
উদ্যানে অবস্থিতি করিতে লাগিলেন । তিনি আগ্রা! নগরে প্রায় ছুই ব্ৎসব্র কাধ 


৯২ দয়ানন্দ-চরিত। 


ছিলেন। সেই সমযে পণ্ডিত স্ুন্দরলাল প্রত্থতি কএক ব্যক্তি তাহার সহিত 
আলাপ ও আত্মীয়তা-স্ত্রে সন্বদ্ধ হয়েন। এমন কি সুন্দরলালের সহিত 
স্বমমিজীর গ্রীতি-সন্বন্ধ সংস্থাপিত হয়। সেই গ্রীতি-সন্বন্ধ উভয়ের ভিতর 
আজীবন কাঁল অবিচ্ছিন্ন ছিল। আগ্রাবাস সময়ে দয়ানন্দ প্রকাণ্তভাবে 
শান্ত্রালোচনা বা বক্তৃতা কিছুই করিতেন না। সমাগত লোকদিগের সহিত 
আলাপ-আলোচন] ব্যতীত তিনি '5থায় অধিকাংশ কাল ধ্যান-ধারণায় নিমগ্র 
হুইয়! রহিতেন। এরূপ শুনিতে পাওয়া যায় যে, তিনি তখন সময়ে সময়ে অবি- 
. শ্রাস্ত অষ্টাদশ ঘণ্টা কাল পথ্যন্ত যোগারূঢ হইয়া থাকিতেন। তবে শাস্ত্রালোচন! 
সন্বন্ধে পুরাণ-ভাগবতাদি আধুনিক গ্রন্থের অসারতা গ্রতিপাদন করিতেন, 
এবং কখন ব! বেদাঁদি আর্ধ গ্রন্থের অনির্বচনীয় মহিমা বর্ণনেও ব্যাঁপৃত হইতেন। 
তৎকালে স্বীয় মতামত বিষরে তিনি কোন কথ পরিস্ব,ট ভাবে বলিতেন না। 
তবে দে সমন্ধে বৈষ্ণৰ মতের প্রতি আদৌ আস্থাবান্‌ ছিলেন না বলিয়াই বুঝিতে 
পারা যাঁয়। শৈব মত সম্বন্ধে আস্থাপরায়ণ ছিলেন কি ন! বলিতে পারি না, 
কিন্ত শৈব মত যে সমথিত করিতেন, তদ্িষয়ে কিছু মাত্র সংশয় নাই। 
এরূপ কথিত আছে যে, দয়ানন্দ সেই সময়ে পূর্কোল্লিখিত পণ্ডিত জুন্দরলালকে 
শিবোপাঁসনা! করিবার অনুমতি দিয়াছিলেন। অধিক কি, তিনি আপনার 
ক-বিলখ্ষিত রুদ্রাক্ষমালাঁটি, অকৃত্রিম প্রীতির নিদর্শন স্বরূপ সুন্দরলালকে অর্পণ 
করিয়াছিলেন।* ফলতঃ দয়ানন্দ তখন মতবিশেষের উপর আপনাকে অবি- 
চলিত ভাবে প্রতিষ্ঠিত করিতে পারেন নাই। অধিকন্ত তাহার চিত্ত তখন 

শয়ান্দোলিত। এই কারণ তিনি কখন পত্রযোৌগে,_-কথন বা স্বয়ং উপস্থিত 
হইয়া! আচার্যের নিকট সংশয় নিবারণের চেষ্টা করিতেন। দয়ানন্দ এইরূপে প্রীয় 
ছুই বৎসর কাল আগ্রা নগরে অতিবাহিত করিয়। গৌয়ালিয়রে আগমন করিলেন। 








* এইরূপ শুনা যায় যে, পণ্ডিত হুন্দরলাল উত্তরকালে আর্ধ্যদমাজের সহিত অধি- 
কাংশ বিষয়ে একনত হইলেও, এবং দয়াননের সকল কার্য্যের সহিত আন্তরিক অনুরাগ 
প্রকাশিত করিলেও তিনি শিবোঁপাসন। একবারে পরিত্যাগ করিতে পারেন নাই। 
তিনি শ্বামিজীর প্রদত্ত রুদ্রাক্ষমালাঁটি অতি যত্বের সহিত গৃহে রাঁখিয়াঁছিলেন, এবং প্রতিদিন 
পুজার সময় সেই ম।লাগাছটি শ্রদ্ধ। সহকারে লইয়। জপ করিতেন। সুন্ারলাঁল উত্তরপশ্চিম- 
দে শীয় গবর্ণমেন্টের অধীনে ডাকবিতাগের উচ্চতর পদে নিয়োজিত ছিলেন । 


মতামত খঞ্ন। ৯৩ 


গোয়ালিয়রে কোথায় বা কতদিন ছিলেন, তাহার কিছুই জান! যায় 
না। তত্কথিত আত্মচরিত আলেচিনা করিয়া বুঝ| যায় যে, তিনি 
তথায় বৈষ্ণব মত খগনে প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন। তথায় সর্ধ সমক্ষে বৈষ্ণব 
মতের গ্রাতিকুলে বক্ততা করিতে লাগিলেন, এবং উপস্থিত ব্যক্তিদিগের 
সহিত উহার অসারতা লইয়া আলোচনায় প্রবৃত্ত হইলেন। দয়ানন্দ একদিন 
বক্ততা-কালে বৈষ্ণবদিগের তিলক-রেখা সম্বন্ধে বলিলেন যে,_-“্যদি ললাটে 
কৃষ্ণবর্ণ রেখা ধারণ করিলে মোক্ষলাঁভ করেন, তাহা হইলে সমগ্র মুখমণ্ডল 
ক্ৃষ্বর্ণ রেখার্কত করিলে তাহারা ত মোক্ষ অপেক্ষা অধিকতর পদ প্রাপ্ত 
হইতে পারেন।” ধর্ম-বিষয়ক বাহ নিদর্শনের প্রতি দয়ানন্দ বালক-কাঁল 
হইতেই বীতশ্রদ্ধ ছিলেন। উপরোক্ত উক্তিতে তাহার সেই বীতশ্রদ্ধতার 
স্পষ্টতর নিদর্শন দৃষ্ট হইতেছে । ফল কথা, ধর্ম বিষয়ক বাহা অনুষ্ঠান বা বাহ্‌ 
নিদর্শন সকল তিনি যে এইরূপ স্ৃতীত্র ভাষায় সমালোচিত করিতেন, তাঁহার 
গ্রভৃত পরিচয় আমরা তাহার ভবিষা জীবনে দেখিতে পাইব। যাহা হউক 
দয়ানন্দ তখনও শান্ত্রাধিকারে সুপ্রতিষ্ঠিত অথব! অধীত বিদ্যায় পরিপককত৷ 
লাভ করিতে পারেন নাই বলিয়া মনে হয়। কারণ তথায় শান্ত্রালোচনা 
করিবার সময় তাহার মুখ হইতে যে মধ্যে মধ্যে অশুদ্ধ শব্দ বহির্গত হইত, 
তাহা তিনি নিজেই স্বীকাঁর করিয়া! গিয়াছেন। এই বিষয়ে দয়ানন্দ বলিয়া 
ছেন,--"তথায় অন্গমতাচাধ্য * নামক এক ব্যক্তি আমার শান্্রালোচন। 
শুনিবার নিমিত্ত সর্বদাই উপস্থিত হইতেন, এবং আপনাকে একজন কেরাণি 
বলিয়াই পরিচিত করিতেন। বিচার প্রসঙ্গে আমার মুখ হইতে কখন কোন 
অশুদ্ধ শব্ধ উচ্চারিত হইবামাত্র তিনি তাহ! সংশোধিত করিয়া দিতেন 1” 

দয়ানন্দ গৌয়ালিয়র হইতে কেরোলিতে আনিলেন। কেরোলিতে কোঁন- 
রূপ উল্লিখিতব্য শীস্ত্র-বিচার ঘটিয়াছিল বলিয়া বোঁধ হয় না। তবে তথায় 
জনৈক কবীরপন্থীর সহিত যে শাস্ত্র সম্পর্কে কিছু কিছু আলাপ করিয়াছিলেন, 
তাহা বুঝা যায়। কবীরোপনিষদ্‌ নামক যে একখানি উপনিষদ আছে, 
তাহা তিনি কেরোলিতে সেই কবীরপন্থীর নিকটেই অবগত হয়েন। তাহার 





শী 


* ভ্রান্তিবশতঃ এই ব্যক্তির নাম অবতরণিকাক্প অনুত্তমাচার্্য লিখিত হইয়াছে। 
ইহার প্রকৃত নাম অনুমতাচীধ্য। 


৯৪ দয়ানন্দ-চরিত। 


পর তিনি তথা হইতে জয়পুরে আগমন করিলেন। জয়পুরে যাইয়া ঠাকুর -' 
রপ্ধিত সিংহের আলয়ে রহিলেন। তথায় হরিশ্ন্ত্র নামক এক পণ্ডিত 
ব্যক্তি ছিলেন। হরিশ্চন্দ্র সম্ভবতঃ বৈষ্বমতাবলম্বী। দয়ানন্দ হরিশ্চন্দ্রের 
সহিত বৈষ্ণবমত সম্বন্ধে বিচার উপস্থিত করিলেন। তাহাদিগের বিচার 
ফল অবগত হইবার নিথিত্ত জয়পুরের অধিবাসিগ্রণ উৎসুক হইয়া! রহিল। 
অবশেষে দয়ানন্দ হরিশ্ন্দ্রকে পরাভূত করিয়া শৈবমত প্রতিষ্ঠিত করি- 
লেন। হরিশ্চন্দ্রের পরাজয়ে দয়ানন্দ যেমন একজন অনম্ঠসাধারণ প্ডতত 
বলিয়া জয়পুরবাসীদিগের নিকট প্রখ্যাত হইলেন, সেইরূপ সেই সঙ্গে 
জয়পুরের মহাঁরাঁজও শৈব মতের পরিপোষক হইয়া উঠিলেন। * অধিক 
কি, তিনি স্বয়ং শৈবমত পরিগ্রহ করিলেন। প্রজাবর্গ প্রায় সর্বত্রই রাঁজপন্থা- 
নুসাঁরী। সুতরাং তথাকার অধিকাংশ ব্যক্তিই মহারাজের পন্থান্থদরণ করিতে 
লাগিল। ফলতঃ উপস্থিত ঘটনায় জরপুরের অধিবামিবৃন্দ এতদূর উত্তেখ্তিত 
হইয়। পড়িল,_বলিতে কি স্বয়ং মহারাজ নবাবলম্বিত মতের এতদূর পৃষ্ঠ- 
পোঁষক হইয়া উঠিলেন যে, শিবনামে ও শিব-মাহাত্ম্য-কীর্ভনে জয়পুর নগর 
প্রতিধ্বনিত হইতে লাগিল। প্রায় মকলেই আপন আপন কণ্ঠে কুদ্রাক্ষমাল! বিল- 
স্বিতকরিল। এমন কি, রাজকীয় পশুশালায় যৃত অশ্ব ও হস্তী ছিল, তাহার 
সকলেই রুদ্রাক্ষমালায় বিভূষিত হইয়া! এক অভিনব ও অদৃষ্ট-পুর্ব বেশে নগর 
মধ্যে বিচরণ করিতে লাগিল । এই ঘটনায় দয়ানন্দ নিজে এতদূর উৎসাহিত 
হুইয়া উঠিলেন যে, তিনি স্বহন্তে সহস্র সহজ রুদ্রাক্ষমাল! স্বেচ্ছামত বিতরণ 
করিতে লাগিলেন। তৎপরে তিনি জয়পুর হ্ইতে পুফরক্ষেতর গমন করি- 


ক জয়পুরে শৈবমতের মহত ভিডি সংঘর্ষণ সম্বন্ধে একবার প্রবল আন্দোলন 
উপস্থিত হইয়াছিল, এই কথা অনেকের নিকট শুন! যায়। এই বিষয়ে কোন কোন 
অভিজ্ঞ ব্যক্তির নিকট অনুপন্ধান করায় সরথুরার শেঠদিগের প্রসিদ্ধ কাধ্যাধ্যক্ষ শ্রীযুক্ত 
শীতলচন্ত্র মুখোপাধ্যায় মহাশয় গ্রন্থক।রকে লিখিয়। পাঠান যে, ১৯২ হইতে ১৯২৪ সম্বতের 
ভিতর কোন না কোন সময়ে জয়পুরপতি মহারাজ রামসিংহ বৈষ্ণবর্দগকে নানা প্রকারে 
নিগৃহীত করেন। এই কারণ অনেক বৈষ্ণব জয়পুর ছাড়িয়া বিকানীর প্রভৃতি স্থানে 
চলিয়া ঝান। কিন্তু উপরি-উলিখিত ঘটনার সহিত ইহার কোন সাদৃশ্ঠ দেখা যাইতেছে ন!। 
কারণ এই ঘটনায় মহারাজ রাঁমসিংহ লক্ষণগিরি লামক জনৈক সন্ন্যাসীর পরামর্শ-চালিত 
হইয়।ছিলেন। 





সংশয় নিরাকরণ। ৯৫ 


লেন। পুঙ্করক্ষেত্র হইতে আজমীরে আপিয়! শৈবমতেরও প্রতিবাদ করিতে 
লাগিলেন। সেই সদয় জয়পুরপতি গবর্ণর-জেনেরেল কতৃক আহৃত হইয়! 
তাহার সহিত সাক্ষাৎ করিবার অভিপ্রায়ে আগ্রা যাইতেছিলেন। 
আগ্রা যাইবার পথে তাহার বৃন্দাবন দর্শন করিবার সঙ্কল্প ছিল। পৃৰ্বোল্লিখিত 
রঙ্গাচারী যেবুন্দাবনে বাস করিতেন, তাহা আমরা পুর্েই বলিয়া আসিয়াছি। 
রঙ্গাচারী বৈষণব-পক্ষ প্রতিষ্ঠার্থ উদ্যত হইলে দয়ানন্দ তাহাকে পরাজিত 
করিয়৷ শৈবপক্ষ সমর্থিত করিবেন, এই উদ্দেশে জয়পুরাধিপতি দয়ানন্দকে সম- 
ভিব্যাহারে লইবার অভিপ্রায় প্রকাশিত করিলেন। মহারাজের এইরূপ 
অভিপ্রায় বুঝিতে পারির়া দয়ানন্দ অসম্কৃচিত চিত্তে তাহাকে বলিলেন যে, 
আমি শৈবপক্ষও সত্য বা ঘুক্তিসঙ্গত বলিয়া বিবেচনা করি না। জয়পুরাধিপতি 
তাহার নিকট এই প্রকার অপ্রত্যাশিত কথা কর্ণগোচর করিয়া বে কথঞ্চিৎ 
বিশ্মরান্বিত হইবেন, তাহাতে আর আশ্চর্য্য কি? যাহা হউক ইহার কিছুদিন 
পরে স্বীয় হৃদয়োখিত সর্ব প্রকার সন্দেহান্ধকার বিদুরিত করিবার মানসে 
তিনি মথুরাধামে আগমন করিলেন ।* 

এইরূপ হইতে পারে যে, দয়ানন্দ বৈষ্ণব মতের ন্যায় শৈব মতেরও সম্পূর্ণ 
বিরুদ্ধ ছিলেন। তবে তুলনা-প্রসঙ্গে বৈষ্ণব পক্ষ অপেক্ষা শৈব পক্ষ অধিকতর 
উন্নত বা বিশুদ্ধ বলিক্জা বিবেচনা করিতেন মাত্র । নচেৎ একবার উহার 
সমর্থন করিয়! পুনর্ধার খণ্ডন করা, তাহার পক্ষে কি প্রকারে সম্তাবিত হইতে 
পারে। কিন্তু এই বিষয়ে আমাদিগের ধারণা অন্তরপ। দয়ানন্দ জয়পুরের 

* কেহ কেহ বলেন যে, দেশীয় রাঁজা(দিগকে স্বমতে দীক্ষিত করিতে পারিলে ভারতে 
বৈদ্বিক ধরন সহজেই প্রতিষ্ঠিত হইবে। এই মনে করিয়া দয়ানন্দ সর্বাগ্রে গোয়ালিয়র প্রভৃতি 
দেশীয় রাঁজাদিগের রাজধানীতে গমন করেন। আবার কেহ কেহ বলেন যে, গুরুদক্ষিণার 
নিমিত্ত অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশে তিনি দেশীয় রাজাদিগের নিকট গমন করিয়াছিলেন। বল 
বাহুল্য যে, শাস্ত্রীয় বিচারে জয়লাভ করিতে পারিলে রাঁজাদ্দিগের নিকট অর্থ সংগৃহীত 
হইতে পারিবে, দয়াননা তাহা জানিতেন, এবং তাহ! জানিয়াই জয়পুর ও কেরোলি প্রভৃতি 
স্থ/নে গিয়াছিলেন । আমরা এই ছুই প্রকার উক্তিকেই অমূলক বলিয়া বিবেচনা করি। কারণ 
স্বমতে দীক্ষিত করিবার অভিগ্রায়ে দয়ানন্দ কোন রাঁজার নিকট যান নাই। তিনি কোন 


কোন রাজধানীতে গিয়াছিলেন মাত্র, আর তাহার গুরুও দক্ষিণাগ্রহণ-প্রথার একান্ত 
বিরোধী ছিলেন। 


৯৬ দয়ানন্দ-চরিত। 


প্রসিদ্ধ পঙ্িত হরিশ্চন্দ্রের নিকট তুলনা প্রসঙ্গে শৈব মতের উৎকর্ষ প্রতিপাদিত ৃ 
কগিলেন, কিংবা উভয় মতের গুণদোষ বিশ্লেষণ পূর্বক শেষোল্লিখিত মতকেই 
অধিকতর নির্দোষ ব| নিষ্ষলঙ্ক বলিয়৷ প্রতিষ্ঠিত করিবার প্রয়াস পাইলেন, 
আমরা এইরূপ মনে করি না। পক্ষান্তরে তিনি যে তখন শৈব মতে স্বভাবতই 
আস্থাবান্‌ ছিলেন, তদ্বিষয়ে আমাদিগের কিছুমাত্রও সংশয় নাই। কিন্তু তাহার 
সেই আস্থা! পরিপন্ধ বা সুদৃঢ় ভিত্তির উপর স্থাপিত নহে। কারণ ভিনি সেই 
সময়ে বে আপনাকে কোনরূপ সিদ্ধান্ত-ভূমির উপর প্রতিষ্ঠিত করিতে পারিয়া- 
ছিলেন, আমাদিগের এই প্রকার বোধ হয় না। বলিতে কি, তাহার চিত্ত 
তখন ঘোর সন্দেহ-তরঙ্গেই আন্দোলিত হইতেছিল। নেই সন্দেহ সাময়িক বা 
তাৎকালিক নহে। সেই সন্দেহের রেখাপাত তীহার বাল্যচরিত্রেই দেখা 
গিয়াছে। ফলতঃ তাহ! যে দয়ানন্দের তরুণকালোখিত সন্দেহের পরিণতি বা 
প্রসারত। মাত্র, তাহা! আর বলিতে হইবে ন|। ইতঃপূর্কে পাবাণাদি পদার্থ নির্মিত 
ুণ্তির প্রতি তাহার যে সংশয় সঞ্চারিত হইয়াছিল, তাহা তখনও নিরাক্কত হয় 
নাই। জড়পুজ। বা জড়দেবতার প্রতি তাহার ঘোর অবিশ্বাস উৎপাদিত হইয়াছিল 
বটে, কিন্তু তৎপরিবর্তে জড়াতীত জীবন্ত পুরুষের প্রতি তাহার জীবস্ত 
বিশ্বাস তখনও বদ্ধমূল হইতে পারে নাই। বলিতে কি, তিনি এতদিন অবিশ্বাস 
রূপ গাঢ় অবসাদে যেরূপ অবসন্ন হইতেছিলেন, বিশ্বাসের জলন্ত অগ্নিতে সেরূপ 
সগ্ীবিত হইতে সমর্থ হয়েন নাই। তিনি এত কাল অভাবপক্ষে যতটা অগ্রসর 
হইয়াছিলেন, ভাঁবপক্ষে ততটা অগ্রসর হইতে পারেন নাই। এইরূপ স্থলে 
তাহার জীবন যে সংশয়-গ্রবাহে অধিকতর পরিচালিত হইবে, তাহাতে আর 
আশ্চর্য্য কি? আর এক কথা,_-বিরজানন্দের শিক্ষা ও সংসর্গহেতু দয়াননের 
সন্দেহান্ধকার পৃর্বাপেক্ষ৷ গাঢ়তর হইয়! উঠিয়াছিল। যেহেতু তিনি তৎসমক্ষে 
চিন্তার অনেক অভিনব রাজ্য উদঘাটিত করিয়াছিলেন। অনেক অচিস্তিত- 
পুর্ব বিষয়ে তাহার দৃষ্টি আকৃষ্ট করিয়া তুলিয়াছিলেন। তন্নিমিত্ত দয়ানন্দের 
অন্তঃকরণে যেরূপ নৃতনতর জিজ্ঞাসার সঞ্চার হইয়াছিল, সেইরূপ সেই সঙ্গে 
তাহার সংশয়-তমিআ্রাও ঘনতর ভাব ধারণ করিয়াছিল। অতএব খন তিনি 
আগ্রার যমুনা-তটবর্তী উদ্যানে অবস্থিতি করিতেছিলেন, যখন গোয়ালিয়রে 
বৈষ্ঃব্মত-খণ্ডনে প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন, যখন কেরোলিতে কবীরপন্থীর সহিত 


মংশয় নিরাকরণ ৯৭ 


শান্ত্রালাগ করিতেছিলেন, যখন জয়পুরের প্রায় যাবতীয় লোককে শৈব-পক্ষে 
উত্তেজিত করিয়। তুলিতেছিলেন, অথব! আবার যখন আজমীর নগরে শৈব-পক্ষের 
প্রতিকূলে অন্ত্রধারণ করিয়াছিলেন, তখন তাহার চিত্ত যে সংশয়-তমিআায় সমাবৃত 
থাকিবে, তাহাতে আর বিচিত্রতা কি? সংশয়-তমিত্রার ভিতর মনুষ্য যেরূপ 
কোন বস্তই সত্য বা অত্রান্ত বলিয়া! ধরিতে পারে না, সেইরূপ বিষয়- 
বিশেষের উপর আপনাকে প্রতিষ্ঠিত করিতেও সমর্থ হয় না। উষাকালীন কুহে- 
লিক! মধ্যে পথিক যেকপ দিপ্িনির্ণয়ে অসমর্থ হইয়! এক পথ হইতে অন্ত পথে 
আবার অন্ত পথ হইতে পথান্তরে পরিচালিত হয়েন, সন্দিগ্ধ-চিত্ত ব্যক্তিও 
সেইরূপ কোন প্রকার সিদ্ধান্ত-ভূমির সন্ধান করিতে ন! পারিয়া৷ এক বিষয় 
হইতে বিষয়াস্তরে বিভ্রাম্যমাণ হইয়া থাকেন। বলা বাহুত্য যে, দয়াননের 
তাহাই ঘটয়াছিল। তজ্জন্ত তিনি জয়পুরে যাহার সমথন করিলেন, আজ- 
মীরে যাইয়া তাহার খণ্ডন করিতে লাগিলেন। যাহা হউক, তিনি সংশয়ান্দোলিত 
হইলেও যার পর নাই সরল। সেই হেতু যখন যাহা সত্য বলিয়া বুঝিলেন, তৎ- 
ক্ষণাৎ তাহা অপস্কোচে গ্রহণ করিতে লাগিলেন। তাহার মত-পরিবর্তন সম্বন্ধে 
কোন্‌ ব্যক্তি কি বলিবেন, সম্প্রদায়বিশেষে তিনি যশোভাজন হইবেন কি ন! 
হইবেন, ভন্নিমিত্ত কিছুমাত্র চিন্তা নাই। জনসাধারণের নিন্দা-নিগ্রহের প্রতিও 
তাহার জ্রক্ষেপ নাই। জয়পুরাধিপতি বখন রঙ্গাচারীর সহিত বিচারার্থ তাহাকে 
বৃন্দাবনে লইয়া যাইতে চাহিলেন, তখন তিনি যে শৈব-পক্ষেরও পোঘক নহেন, 
এই কৃথ! বলিয়া আপনার অকৃত্রিম সরলতার সহিত অকুতোভয়তারও পরিচন্ন 
প্রদীন করিলেন। এইবপ সারল্য-মিশ্রিত সংশয় নিন্দার বস্ত নহে, গ্রত্যুত 
ইহা সর্বতোভাবেই প্রশংসার্থ। কারণ মনুষ্যের জ্ঞানাঞজ্জন বা আধ্যাত্মিক 
উৎকর্ষের পক্ষে এবিধ সংশয় প্রক্কৃত বান্ধবতার পরিচয় দিয়া থাকে । যাহা! 
হউক, এই স্থলে আর একটি কথার আলোচন। আবশ্তক। সে কথাটি বড় 
প্রয়োজনীয়। জন্মদাতা পিতা যদি পুন্র-গ্রকৃতিতে সর্ধপ্রকীরেই সংক্রামিত 
হয়েন, আর তন্লিমিত্ত দয়ানন্ন যদি পিতৃ-চরিত্রের অন্থুপম ধর্মনিষ্ঠা ও দৃঢ়চিত্ততা 
লাভ করিয়। থাকেন, তবে তিনি তাহার পিতৃদেবের প্রগাঢ় শিবতক্তিই বা 
লাভ করিবেন না কেন? বৈজিক- শক্তির সুদুরগাঁমিতা ত সাঁধারণ নহে। 
এমন কি, বৈজিক বা. কৌলিক প্রভাব একরূপ অনতিক্রমণীয়। ন্ুতরাং 
১৩ 


৭৮ দয়ানন-চরিত। 


দয়ানন্দের শৈধ-প্গণ সমর্থন একদিকে যেমন সন্দেহ-জনিত, অপরদিকে তাহ! 
সেইরূপ কৌলিক প্রভাব-সম্ভৃত বলিয়াই স্বীকার করিতে হইবে। 

দয়ানন্দ মথুরায় উপনীত হইয়া আচাধ্য-পদে প্রণত হইলেন। বিরজানন্দও 
প্রির শিষ্য-সমাগমে আনন্দীন্ভব করিলেন । তদনস্তর তিনি আপনার মন্দেহের 
কথা সকল খুলনা বলিতে লাগিলেন। এক দিনে বা এক সময়ে সমস্ত কথ৷ 
ব্যক্ত কর! সম্ভবপর নহে। এই নিমিত্ত দয়ানন্দ স্বীয় বক্তব্য বিষয় সকল 
ধীরতা সহকারে বিরত করিলেন। ব্যাধিগ্রস্ত ব্যক্তি স্থুনিপুণ চিকিৎসকের 
নিকট আপনার ব্যাধি-বৃত্তান্ত বর্ণন করিয়া যেরূপ আশাদ্িত হয়,দানন্দও সেইরূপ 
আচাধ্য-সমীপে আপনার সংশয়-ব্যাধির বৃত্তান্ত বিজ্ঞাপিত করিয়৷ আশান্বিত 
ভইলেন। বিরজানন্দ প্রোজ্জল প্রজ্ঞা-দৃষ্টির প্রভাবে শিষ্য-চিন্তের সম্যক 
অবস্থা সুচারুবূপে বুঝিতে পাঁরিলেন, এবং বুঝিতে পারিয়া তাহার 
প্রতিকারে প্রবৃত্ত হইলেন। স্বামিজীর শিক্ষা বা সুচিকিতৎসায় দরানন্দের 
সংশয়-ব্যাধি ঘে অনতিকা'ল মধ্যেই বিদুরিত হইল, তাহা! আর বিশেষ করিয়া 
বলিতে হইবে না। ব্যাধিত ব্যক্তি ব্যাধির অবসানে বেমন আনন্দিত হইয়া 
থাকে, অথব! বালারুণের কিরণসম্পাতে যেমন বিহঙ্গকুল পুলকাতিশয্যে 
প্রফুল্ল হইয়া উঠে, দয়ানন্দও সেইরূপ ব্যাধি-বিযুক্ত বা বিগত-সংশয় হইয়া 
অপার হর্ষরসে অভিষিক্ত হইয়া উঠিলেন। তাহার পর বিরজানন্দ তীহাকে 
তদবলম্বিত ব্রতের কথা,_অথাৎ ভারতে বৈদিক ধর্ম-স্থাপনার কথা 
পুনর্বার বুঝাইয়া দিলেন। অধিকন্ত সেই ব্রতোদযাপনের নিমিত্ত শিষ্য- 
হৃদয়ে অধিকতর উৎসাহাগ্রি সঞ্চারিত করিলেন। আচার্যের নিকট এইরূপে 
উদ্ুক্র-সংশয় ও উৎসাহিত হইয়! দয়ানন্দ মথুরা৷ হইতে হরিদ্বারাভিমুখে গমন 
করিণেন। ইহার পর তাহার সহিত বিরজানন্দের আর সাক্ষাৎ ঘটিয়া উঠে 
নাই। 

হরিদ্বারে তখন কুস্তমেল উপস্থিত। সহস্র সহস্র লৌক ধর্ধার্থী হইয়া 
তথায় উপনীত হইয়াছে। নানা শ্রেণীস্থ ও নানা সম্প্রদায়স্থ সাধু-সন্ন্যাসী, 
দণ্তি-পরমহংস, বৈরাশী-্রহ্মচারী নানাস্থান হইতে সমাগত হইয়৷ সেই পুণ্য- 
ভূমিকে অধিকতর পবিত্র কি তুলিতেছেন। তীহাদিগের বিচিত্র পবিচ্ছদে, 
ধিখ্ধি ভাবে ও ভজন-সাধনাগ বিভিন্ন প্রকার প্রণালীতে সেই লোকারণ্য এক 


প্লাক -উদ্চোলন 1 ৯ 


"অপুর্ব শোভায় পরিশোভিত ইইতেছে। কি সাধু-সন্লাসী, কি গৃহস্কউদাসীন, 
মূকলেই সেই শুভ মুহূর্তের নিমিত্ত সতৃষ্ণ হইয়া রহিয়াছে, এব* সেই শুভ মুডে 
হিমাচলতল-ঝহিনী জাহ্নবীর পবিত্র সলিলে ন্নাত বা নিমজ্জিত হইয়া অক্ষয় 
ফল প্রাপ্তির উদ্দেশে অপেক্ষা করিতেছে । ভারতক্ষেত্রে ঘত প্রকার মেল! 
আছে, তাহার ভিতর কুস্তের মত কোন মেলাই বিশাল বা ব্যাপক নহে! 
কুস্ত যথার্থ পক্ষেই মহামেলা'। একমাত্র কুম্ত ভিন্ন অপর কোন ঘটনা উপলক্ষে, 
এত গৃহস্থ-সন্ন্যাসীর সমাবেশ কখনই ঘটিকা উঠে না। দযানন্দ জানিতেন যে, 
শান্ত্ালোচনার পক্ষে এইবূপ উপযুক্ত ক্ষেত্র সহজে পাওয়! যাইবে না। দয়ানন 
ইহাঁও জানিতেন যে, ভারতবর্ষায় সব্ধ প্রকার সাম্প্রদায়িক পম্মোপরি বৈদিক 
ধর্ম প্রতিষ্ঠার এইরূপ সময় ও সুবিধাও সহাজে মং্ঘটিত ভইনে না। এই সকল 
জানি! বা বুিয়াই তিনি হরিদ্বারে উপস্থিত হইলেন । সেই মেলাভূমির মণ্ে 
একখানি পর্ণকুটারে দয়ানন্দ অবস্থিতি করিতে লাগিলেন। মেই কুটাঝোগি 
পতাকা উত্তোলন করিলেন। পতাকা “গাধগ-মদ্দন” নামে অভিহিত ইল । 
“পাষাগ্ড-মর্দন” পতাকা তাহার কুটারোপরি উজ্ভীয়মান থাকিয়। বহুকাল পৰে 
বৈদিক ধর্মের জয়-ঘোষণা করিতে লাগিল। এই প্রকারে উনবিংশতি 
শতাব্দীর মধ্যভাগে হরিদ্বারের পবিত্র ভূমিতে ও কুস্তের পবিত্র সময়ে পতাক। 
উত্তোলন পূর্বক মহাত্মা দয়ানন্দ সরন্বত্তী বেদ-প্রতিপাঁদিত ধান্মের পুনরুদ্দোধন 
করিলেন। 

দ্রয়ানন্দের পতাকা-পরিচিহ্রিত কুটারের প্রতি মেলাক্ষেত্রের নানা লোক 
নানা ভাবে দৃষ্টিপাত করিতে লাগিল। তদর্শনে কেহ ঈঘৎ বিশ্মিত হইল, 
কেহ বিরক্ত হইল, আবার কেহ বা কৌতুহলাক্রাস্ত হইয়া পভাকার নিকট 
আগমন করিতে লাগিল। তদর্শনে সাধুনন্ন্যাসীদিগের হৃদয়ে নানা! প্রশ্ন 
উাপিত হইতে লাগিল। তীহাদিগের অনেকের অস্ত্ররেই কৌতুহল- 
শিখা! জলিয়া উঠিল। এমন কি সেই পতাকা-উত্তোলনকাঁরীকে দেখিবার 
অভিপ্রায়ে তাহাদিগের অনেকেই দয়ানন্দের কুটার-পার্থে সমবেত হইতে 
লাগিলেন। সমাগত ব্যক্তিগণ কুটারের ভিতর দৃষ্টিনিক্ষেপ করিয়া দেখিলেন 
যে, একজন তেজঃগ্রভাব-সমন্বিত, সন্স্যাপী গর্জনোন্বথ সিংহের ন্যায় বসিয়। 
রহিয়াছেন। সন্াসীর সহিত সন্যাসীদিশের আলাপ হইল, আলাপে অগ্সি 


বর দয়ানন্দ-চরিত | 


উদিগরিত হইল, এবং সেই উদিগরিত অগ্রিরাশি উভগ্ব-পক্ষকে উত্তেজিত 
করিয়া ঘোর বিচারের অবতারণা করিল। দয়ানন্দ সেই বিচারাগ্রিতে . 
ভারতের মিথ্যা শীল্্ সকলকে দগ্ধ করিলেন, মনুষ্য-প্রচারিত মতসমূহকে 
ডক্মীভূত করিবার প্রয়াম পাইলেন, এবং পরিশেষে শ্রতি-প্রতিপাদিত ধর্শৃই 
যে সত্য ও সনাতন ধর্ম, তাহ! প্রতিপন্ন করিবার চেষ্টা করিলেন। 
কিন্ত তিনি বিচার-প্রসঙ্গে ইহা উত্তমরূপ বুঝিতে পারিলেন যে, কি সন্গ্যাসী, 
কি সংসারী প্রায় সকলেই তদবলপ্ষিত পথের বিরোধী। তিনি যে কোন 
সাধুর সহিত পরিচিত হইলেন, যে কোন সন্ন্যাসীর সহিত আলাপ করিলেন, 
অথবা যে কোন ধর্মাজিজ্তান্তু গৃহীর সঙ্গে ধর্মালোচন! উত্থাপিত করিলেন,সকলেই 
প্রচলিত মতের অনুরাগী ও অনার্ষ গ্রন্থের পক্ষপাতী ৷ যেমন দিগন্তবিস্তৃত 
অন্ধকারে চতুদ্দিক আচ্ছাদিত হয়, যেমন মহাপ্লাবনে গৃহ, প্রাঙ্গণ, প্রান্তর 
পতঙ্গ, পশু, কীট, কীটাণু প্রভৃতি সমস্তই প্লীবিত হইয়া যায়, দয়ানন্দ দেখিলেন 
যে, সেইরূপ অজ্ঞানতারূপ মহাপ্লাবনে ভারতভূমিনন প্রায় সকল শ্রেণী ও সকল 
সম্প্রদায় বিকৃত বা বিপর্ধ্যস্ত-ুদ্ধি হইয়া গিয়াছে। সত্যনিষ্ঠা ও সরলতার 
অভাবে এতদ্দেশের আদ্যোপান্তই অসাড় হইয়া পড়িয়াছে। এই কারণ তিনি 
স্থির করিলেন যে, এই শ্মশানভূমিতে প্রাণ-প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা, কিংবা এই 
স্থপ্রতিষ্ঠিত ও সর্ধত্র-প্রসারিত অসাঁড়তাঁর ভিতরে সজীবতার উদ্বোধন করিতে 
যাওয়া একরূপ অনর্থক প্রয়াসমাত্র। অধিকন্ত এই প্রকার ব্রতাঁবলম্বন 
জীবনের পক্ষে বড়ই অশাস্তিগ্রদ। এইরপ চিন্তার পর স্থিরীক্কত হইল যে, 
কোনরূপ বাদ-প্রতিবাদে প্রবৃত্ত না হইয়া, অথবা বিচার-বিদ্রোহ-পরিপূরিত 
সংস্কারক্ষেত্রে অবতরণ না করিয়া, শাস্ত ও সমাহিত চিত্তে জীবন-যাঁপন করাই 
তাহার পক্ষে বিহিত ও যুক্তিসঙ্গঘত। তদন্ুসাঁরে দয়ানন্দ আপনার গ্রন্থরাশি ও 
অপরাপর সামগ্রী বিতরণ করিলেন, এবং ভম্মান্থলেপিত দেহে সেই কুটার 
মধ্যে মৌনী হইয়া যোগচর্য্যায় প্রবৃত্ত রহিলেন। কিন্তু যে শক্তি সংসারের 
হিতসাধন উদ্দেশে অবতারিত হইয়াছে, তাহ! রুদ্ধগতি হইয়া থাকিবে কেন? 
ঘষে জ্যোতি জগতের অজ্ঞান-তমিত্রা হরণ করিবার নিমিত্ত স্থজিত হইয়াছে, 
তাহা! প্রচ্ছন্ন হইয়া রহিবে কেন? শক্তির বিকাশ হইবেই হইবে,_যাহা! 
জ্যোতি তাহা অবশ্ঠই প্রতিভাত হইবে। স্থুকঠিন শৈলাঁৰরণেও যেমন 


শেষ সিদ্ধান্ত। ১০১ 


* উৎঘের তেজস্বিনী জলধারা রুদ্ধ হইয়া রহে না, কিংবা চন্দ্রমীর উদ্ভিন্ন কিরণ- 
মাল! যেমন মেঘচ্ছায়ায় চিরদিন সমাচ্ছন্ন হইয়! থাকিতে পারে না, দয়াননের 
অন্তর্ণিহিত শক্তিও সেইরূপ অধিক দিন সংরুদ্ধ হইয়া থাকিতে পারিল ন|। 
একদা কোন ব্যক্তি তাহার কুটারে প্রবিষ্ট হইয়া “নিগমকল্পতরোরলিতং ফলম্‌” 
ইত্যাদি আবৃত্তি পূর্বক ভাগবতের সর্কোপরি প্রাধান্য সংস্থাপনার্থ চেষ্টা 
করিবামাত্র তাহার হৃদয়-নিহিত শক্তিনিচয় বহিম্পষ্ট বারুদের মত উৎক্ষিপ্ত 
হইয়া উঠিল। অধিকস্ত আগন্তক লোকাঁট ঘখন বলিলেন যে, ভাগবতের 
অপেক্ষা! বেদ নিক্ুষ্ট বা নিম়-পদবীস্থ, তখন তিনি আর মৌনব্রত রক্ষা করিতে 
পারিলেন না। তিনি তখন স্ুপ্তোখিত সিংহের মত তেজস্থিতার সহিত সেই 
অযথা ও সর্বথা অসঙ্গত কথার প্রতিবাদ আরম্ত করিলেন। যাহা হউক তৎকালে 
তিনি আপনার পূর্বকৃত সিদ্ধান্ত স্রাস্ত বলিয়াই বুঝিতে পারিলেন। কারণ ভাবিয়া 
দেখিলেন যে, প্রচার-পথ কণ্টকাকীর্ণ হইলেও, অথবা নরলোকের শুভসাধন 
পক্ষে প্রতি পদে বিদ্র-বিপত্তি বিদ্যমান থাকিলেও, তদ্বিষয়ে পশ্চাদ্ূপদ হওয়া 
কর্তব্য নহে। প্রত্যুত ধর্ঘ্লাত বা আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধনের পথে ইহাকে . 
একটি অপরিহার্য অঙ্গরূপে অবলম্বন করাই বিধেয়। ফলতঃ এইরূপ 
চিন্তা ও আলোচনান্তে দয়ানন্দ মনুষ্যজাতির মঙ্গলের উদ্দেশে জ্ঞানালোক 
বিকিরণ করাই স্বীয় জীবনের একটি অবশ্ঠ অনুষ্টেয় ব্রত বলিয়া নিদ্ধীরিত 
করিলেন। 


সী আস উপ 


চতুর্থ পরিচ্ছেদ । 





প্রচার খাত্রা,-কাম্পিল নগর প্রভৃতি গঙ্গাতীরবর্তা স্থান ভ্রমণ,-_ফরাদ্ধাবাদ আগমন,-- 
তথায় মূর্তিপুজা খণ্রন,_-উৎপীড়ন ও আক্রমণের চেষ্টা,_বৈদিক পাঠশীল! 
স্থাপন,__রামগড়ে আগমন ও শত্রহত্তে প্রাণবিনাশের সম্ভাবনা, 
প্রয়াগে আগমন ও ব্যক্তিবিশেষকে খ্রীষ্টধন্ব-পরিগ্রহ 
বিষয়ে নিরস্ত করণ-প্রাণ-বিনাশের 
পুনব্বার চেষ্ট।। 


ব্রত-নিরূপণের পর দয়ানন্দ একাত্তভাবে চিন্তানিবিষ্ট হইলেন । ব্রত-উদ্‌- 
যাপন বিষয়ে কি কি বিদ্ব আছে, এবং কিরূপ প্রণালী বা পদ্ধতি অবলম্বন 
করিলে ব্রত উদযাপিত হইতে পারিবে, তদ্বিষয়ে তাহ।র মনে নান প্রকার 
চিন্তার উদয় হইতে লাঁগিল। ভারতে বৈদিক ধর্ম প্রতিষ্ঠার পক্ষে বিভিন্ন 
শ্রেণী বা বিভিন্ন সম্প্রদায় কর্তৃক ঘত প্রকার আপত্তি উত্থাপিত হইতে পারে, 
তাহা তিনি আগনাপনি উতাপিত করিয়া আগনাপনিই থণ্ডিত করিলেন ।* 





* এহবপ তির পাঁওয়। যায় যে, ম্বামিজী প্রচার-যাত্র।য় বাহির হইখার পূর্বের স্বীয় 
কুটারের সন্দথবন্তী বৃক্ষবিশেষকে পূর্ববপক্ষ এবং আপনাকে উত্তরপক্ষ রূপে কল্পনা করির! 
লইয়া বৈদিক ধন্ম প্রতিপাদন দশ্বদ্ধে যাবতীয় আপত্তি ঝ। সংশয় নিরাকৃত করিয়াছিলেন। 
অর্থাৎ সেই বৃক্ষটি যেন পূর্ববপক্ষর্ূপে এক একটি আপত্তি ঝ প্রশ্ন উত্থাপিত করিতেছে, 
আর তিনি উত্তরপক্ষরূপে তৎমুহের খণ্ডন করিতেছেন । এই প্রকারে সেই বিষয়ের সমন 
আপত্তি মীমাংসিত করিয়া ও আপনার ভিত্তিভুমিকে সর্বাংশে সুদৃঢ় করিয়া লইক্স। তরে 
তিনি প্রচারক্ষেত্রে অবতরণ করিয়াছিলেন। আমরা এই কথা আদি ব্রাহ্গ-সমাজের অন্যা- 
তম উপাচার্য শ্রীযুক্ত হেমচন্ত্র চক্রবর্তী মহ।শয়ের নিকট শুনিয়াছি। তিনি যখন কানপুরের 
গঙ্গাতীরে স্বামিজীর সহিত অবস্থিতি করিতেছিলেন,তখন স্বামিজী তাহাকে এক দিন প্রাতে 
সুখপ্রক্ষালন মময়ে ক।য় কথায় এই কথ।টি বলিয়াছিলেন। 


গঙ্গাতীরব্তী স্থান ভ্রমণ। ১০৩ 


শমরনীতি-নিপুণ সেনাপতি যেরূপ যুদ্ধনংক্রান্ত যাবতীয় বিষষ এন্ন তন্ন কূপে 
আলোচনা করিয়া বৃতান্ত্র হয়েন, দরানন্দও সেইবূপ অবলব্ষিত পরতের বিগ, বাবা, 

প্রকৃতি, পারখাব প্রড়তি সমস্ত বিষন্ন বিশিষ্টরূপে চিন্তা করিয়া ধ্ান্ম হইাগেন। 
তিনি সম্ভবতঃ কৃষ্ঠের অবসানে হিদার হইতে যাত্রা করিলেন। মেহ সমন 
্াষ্টাকের ১৮৬৭ কিংবা ১৮৬৮ হইবে। কেননা সম্ধতের ১৯২৯ অধোই 
পৃব্ব-কথিত কুস্তের অধিবেশন হইয়াছিল। তাহ! হইলে দয়ানন্দের বয়ঃক্রম তখন 
তেতাল্লিশ বা অনধিক চোয়াল্লিশ বৎসর ধরিতে হইবে। 

হরিদ্বার যেরূপ পুণ্যতোয়৷ ভাগীরথীর উৎপত্তি-স্থল বলিয়া! প্রথিত, মেইরূপ 
উহা! উনবিংশতি শতাদ্দীতে বৈদিক ধর্মের উৎস-ভূমি বলিয়া ভারতীয় ইতি- 
হাসে স্থান পাইবারও উপযুক্ত । হরিদ্ধার হইতে ভাগীরথীর উদ্দাম তরঙ্ষমাণা 
যেমন ভারতভূমির শতবিধ কল্যাণের নিষিত্ত প্রবাহিত হইতেছে, সেইরূপ 
আধ্যাবর্তের অশেষ প্রকার মঙ্গলের জন্য বৈদিক ধন্মের পবিত্র ঝারিধারাও 
তথা হইতে প্রবাহিত হইল। বৈদিক ধন্মমোত গঙ্গালোতের মহিত সমভাবে 
না হইলেও সমভূমিতে চালিত হইতে লাগিল। কারণ দয়ানন্দ অন্থগাঙ্গ প্রদেশ 
সমূহের ভিতর দিয়াই বৈদিক ধর্মের আলোক বিকিরণ পুররঃসর অগ্রদর হইতে 
লাগিলেন। এই প্রকারে নান। স্থান অতিক্রম করিয়া তিনি কাম্পিল 
নগরে উপস্থিত হইলেন। কাম্পিল নগর মহাঁভারত-বর্ণিত ভ্রপদরাজার রাজ- 
ধাঁনী বলিয়া বিখ্যাত, এবং উহা ফরাক্কাবাদ নগরের প্রায় পনর ক্রোশ পশ্চিমে 
ভাগীরধী-তীরে প্রতিষ্ঠিত। তথায় কমলাপতি নামক এক ব্যক্তির গঙ্গাতীর-স্থিত 
উদ্যানে তিনি অবস্থিতি করিতে লাগিলেন। পপ্তিন্তবর জোয়ালা দত্ত * 
প্রথমতঃ কাম্পিল নগরেই স্বামিজীকে দর্শন করেন। জোয়ালা দত্ত বলেন যে, 
__পস্বামিজীর পরিধানে তখন একমাত্র নেঙ্গুটি ভিন্ন অন্ত কিছুই ছিল না। 
বিশেষতঃ তাহার দেহ হইতে তখন এক প্রকার অপুর দীপ্তি বিনির্গত হইতে- 





* ইহীর কথ ইহার পূর্বে একবার উল্লিখিত হইয়াছে। ইনি এখন আজমার নগরে 
দয়ানন্ন-প্রতিষ্ঠিত বৈদিক যন্তরালয়ের গ্রন্থ-সম্পাদক কাধ্যে নিযুক্ত আছেন। ফরীক্াবদে 
দরানন্দের বৈদ্দিক পাঠশ।লা সংস্থাপিত হইলে ইনি অপর ছুইজন বিদ্যার্ধার সহিত সেই 
পাঠশালায় প্রথমতঃ প্রবি্ হয়েন। বিংশষতঃ ইনি স্বামীর সংস্কৃত-হিন্দী পত্র-লেখক ও 
বেদ-ত[ষোর অনুবাদ-ক।ধ্যে নিয়োজিত থাকিয়। অনেক স্থান পরিভ্রমণ কারয়াছেন। 


১০৪ দয়ানন্দ-চরিত। 


ছিল। তিনি কাম্পিণ নগরে ব্রাহ্মণের হস্তে আহার করিতেন, আর শীত খত 
হইলেও রাত্রিকালে উনুক্ত প্রান্তরে তৃণাবৃত হইয়া ও ক হইতে মস্তক পর্য্যন্ত 
কেবল মুখভাগ বাহির করিয়া রাখিয় শুইয়া থাকিতেন।” জোয়ালা দত্ত 
তথায় স্বামিজীর নিকট সঙ্ধ্যা-তর্পণ শিক্ষা করিলেন । তখাঁকার অনেক ব্রান্গণ- 
পঙ্ডিত তাহার প্রভাব বা উপদেশ অনুসারে প্রতিদিন সহস্র বার গায়ত্রী জপ 
করিব বলিয়৷ প্রতিশ্রুত হইলেন। তাহাদিগের অনেকে দেই প্রতিঞ্রতি পালন 
করিতেও লাগিলেন । কিন্তু তার উপদেশ শুনিয়া তথাকার কোন ব্রাঙ্গণ 
বা কোন পঙ্ডিত মূর্তিপূজা পরিত্যাগ করিয়াছিলেন, কিংবা তৎপ্রতি বীতশ্রদ্ধ 
হইয়াছিলেন, এইরূপ কিছুই শুনা যায় না। যাহা হউক এইরূপে কিয়দ্দিন 
অতিবাহিত করিয়! তিনি কাম্পিল নগর হইতে ফরাক্কাবাদের অদুরস্থিত কা়েম- 
গঞধ নামক স্থানে উপস্থিত হইলেন। দয়ানন্দ-দিগ্বিজয়ার্ক-প্রণেতা পণ্ডিত 
গোপাল রাও হরির সহিত কায়েমগঞ্জেই স্বামিজীর সাক্ষাৎ ঘটে। এই বিষয়ে 
গোপাল রাও বলেন যে”“আমি তথায় এক দিন শীত খতুর সন্ধ্যাকালে 
গঙ্গাতীরস্থ একটি উদ্যানে গিয়। দেখিলাম ধে, একজন সন্ন্যাসী কতকগুলি 
খড় জড়াইয়া বসিয়া রহিয়াছেন।” তিনি মন্ধ্যাসীর সহিত অনেক বিষয়ে 
আলাপ করিলেন, বিশেষতঃ মূর্তিপূজ! সম্বন্ধে আলোচনা করিয়া বুঝিতে 
পাঁরিলেন যে, ইনিই সেই আত্মানন্দ-কথিত দিগ্থিজয়ী সন্ন্যাসী। * যাহা হউক 
দয়ানন্দ তাহার পর কায়েমগঞ্জ হইতে ফরাকাবাদে আসিলেন। ও 
ফরাক্কাবাদে আসিয়। গঙ্গাতটের সন্নিকট একটি স্থানে দয়ানন্দ অবস্থিতি 
করিলেন। তীহার আগমন-সংবাদ নগরের প্রায় সর্বত্রই প্রচারিত হইল। 
সেই হেতু তাঁহাকে দর্শন ও তাহার সহিত আলাপ করিবার অভিপ্রায়ে প্রতি- 
দিন শত শত লোক সমাগত হইতে লাগিল। লালা পান্নালাল নামক জনৈক 
মনত্রন্ত ব্যক্তি তাঁহার নিকট প্রত্যহ আগমন করিতে লাঁগিলেন। পান্নালাল 


* প্িত গেপ!ল রাও হরি গ্রস্থকারকে বলিয়াছেন যে, কায়েমগঞ্জে দয়ানন্দের সহিত 
সাক্ষাৎ হইব।র পূর্বে আত্ম।নন্দ ম্বামী নামক একজন হরিদ্বার-প্রত্যাগত সন্যানীর সঙ্গে 
এমরেতপুরে তাহার দেখা ও যুর্তিপুঙ্জাবিষয়ে আলাপ হয়। তাহাতে আজক্ম।নন্দ গোপাল 
রাঁওকে বলেন যে,_-“আম|র পশ্চাতে এমত একজন দিখ্বিজয়ী সন্ধ্যানী আমিতেছেন, 
মুত্তপুজ। খগডনই বাহার জগতে প্রধান কাধা হইবে ।” 


উত্পীড়ন। ১০৫ 


*করাকাঁবাদের প্রসিদ্ধ রইস্‌ লাল ছু্গাপ্রসাদের খুল্লতাত ছিলেন। দয়ানন্দ দিবা 
ভাগে বহুলোক-পরিবৃত হইয়া থাকিতেন বলিক্।। মনের নান! সংশয় বা হৃদয়ে 
নিগুড় কথা তাঁহার নিকট প্রকাশিত কর! পান্নালালের পক্ষে স্থবিধা'ভনক 
হইত না। এই কারণ পান্নালাল প্রতিদিন রাত্রি ছই প্রহরের সময় স্বামিজীর 
নিকট গমন পূর্বক মুক্ত হৃদয়ে কথাবার্তা! বলিতেন। দয়ানন্দ তখন সংস্কত 
ভাষায় কথা কহিতেন। যদিও তৎকথিত মংস্কত অতিশয় মরল ও জুথবোধ, 
তথাপি তাহা প্রমুক্তভাবে প্রাণ খুলিয়া কথাবার্ত। বলিবার পক্ষে পান্নালালকে 
বাধা প্রদান করিত। পান্নালাল ঘে প্ররুতপক্ষে ধর্দান্বেধী এবং তদনুরোদে 
তাঁহার সহিত একান্ত আলাপ-প্রার্থী, তাহ! বুঝিতে পারিয়া দরানন্দ তাহার 
সহিত হিন্দি ভাষায় কথাবার্তা বলিবার চেষ্টা করিতে লাঁগিলেন। ফলত; 
দয়ানন্দের সঙ্জে আলাপ করিয়া! ও তাহার নিকট উপদিষ্ট হইয়। পান্নালাল 
পরিত্ৃপ্ত হইলেন, এবং কিছুদিন পরে তাহার একজন অন্ধুরক্ত ব্যক্তি মধ্যে 
পরিগণিত হইয়া উঠিলেন। 

এদিকে মুর্তিপূজার প্রতি তীত্র আক্রমণ নিমিত্ত ফর!কাবাদের বহুলোক 
দয়ানন্দের ঘোর বিরোধী হইয়া উঠিল। এমন কি তাহাকে প্রহার করিয়া 
স্থানান্তরিত করিবার জন্ত স্থানে স্থানে মন্ত্র চলিতে লাগিল। জনৈক ছু্ট- 
স্বভাব বৈরাগী গঙ্গাপুত্রদিগের * নিকট ঘোষণা করিল যে, দয়ানন্দ গার 
মাহাস্ম বিনষ্ট করিতেছেন, আর হিন্দুদিগের নিকট প্রচার করিতে লাগিল 
যে, দয়ানন্দ দেবমৃত্তি সমূহের দেবত্ব বা মহিম। বিলুপ্ত করির়! ফেলিতেছেন। 
এই হেতু আপনাদিগের জীবিকাহানির আশঙ্কা করিয়া একদিকে গম্গী পুত্রগণ, 
এবং অপরদিকে হিন্দুসম্প্রদায়ের অশিক্ষিত ব্যক্তিগণ উত্তেজিত বা উষ্ণ-শোণিত 
হুইয়া দয়ানন্দকে অবমানিত করিবার নিমিত্ত অগ্রসর হইল। কিন্ত অবমানিত 
বা প্রহারিত করা দূরে থাকুক, তাহারা তাহার দেহস্পর্ণ করিতেও না 
পারিয়া ভগ্যোদ্যম হইয়া! ফিরিয়া আসিল। কথিত আছে বে, দয়ানন্দ 
ফরাক্কাবাদ নগরে মুষ্তিপূজার প্রতিকূলে এরূপ প্রবল আন্দোলন উত্থাপিত 
করিয়াছিলেন, এবং সেই উত্থাপিত আন্দোলন এরূপ আশু-ফলগ্রদ হইয়াছিল 


টা ইহার। গঙ্গাতীরে থাকিয়া! গক্সান্মান!থাঁ ব্/ক্তিদিগকে শ্রাদ্ধ-তর্পণাদি কাধ্যে সাহায্য 
করে, এবং তদ্দারা জীবিঝ্4 উপার্জন করিয়া থাকে । এই কারণ হহাদিগের নাম গলা পুতর। 


১৪ 


১০৬ দয়ানন্দ-চরিত। 


যে, কতকগুলি সরল-প্রকৃতি ও সত্যান্ুরাগী ব্রাহ্মণ তীহাঁর উপদেশ শুনিবামাত্ 
আপনাদিগের মন্দির হইতে মৃর্তিসমূহ ফেলিয়! দিয়াই নিশ্চিন্ত হইয়াছিলেন।* 
এই প্রকার ঘটনা একবারে অমূলক বলিয়া আমাদিগের মনে হয় না। কারণ 
স্বামিজীর বিচারশক্তি এতদৃর হৃদয়স্পর্শিনী ছিল, এমন কি তাঁহার ব্যাখ্যা ও 
বক্তৃতা দময়ে সময়ে শ্রোতৃবৃন্দের এতদূর হৃদযোন্সাদিনী হইয়া উঠিত যে,অনেকে 
তাহার বক্ত তা শুনিয়াই তৎ-প্রদর্ণিত পন্থার অনুসরণ করিতেন, অথবা করিবার 
নিমিত্ত উৎস্থৃক হইয়া উঠিতেন। তবে এইরূপ ঘটনা প্রথমবারে না! ঘটিলেও 
বারান্তরে ঘটিয়। থাকিতে পারে। যেহেতু তিনি ফরাক্কাবাদে একাধিকবার আগ- 
মন ও সময়ে সময়ে মাসাঁধিক কাল ধরিয়া অবস্থান করিয়াছিলেন । ফল কথা, 
ফরাক্কাবাদের অধিবাসিগণ যে দয়ানন্দের প্রতি বারম্বার অত্যাচার করিবার 
প্রয়াস পাইয়াছিল, তাহা! বিলক্ষণরূপ বুঝিতে পারা যায়। একবার তথাঁকার এক 
সমৃদ্ধিসম্পন্ন বণিক মূর্তিপূজার বৈধতা৷ প্রতিপন্ন করিবার অভিপ্রায়ে বহু অর্থব্যয় 
পূর্বক কাণীস্থ পণ্তিতদিগের নিকট হইতে একখানি ব্যবস্থাপত্র আনয়ন করিয়া- 
ছিলেন। সেই ব্যবস্থাপত্রথানি যে প্রতিমাপুজার প্রতিপাদক, তাহা আর 
বলিতে হইবে না। তাহার পর বাদ্যভাঁও সহকারে ও তিন চারি সহজ লোক 
সমভিব্যাহারে মহা! সমারোহ পূর্বক সেই বণিক দয়ানন্দরূপ দুর্দান্ত অরি 
দ্লন করিবার নিমিত্ত তীঁহাঁর নিকট উপস্থিত হুইয়াছিলেন। আর একবার 
ডাকবিভাগের একজন কর্মচারী স্থুরাপানে উন্মত্ত ও শিবিকায় আরূঢ় হইয়! 
বহুসংখ্যক লাঠিয়াল সঙ্গে দয়ানন্দ-দমনার্থ যাত্রা করিয়াছিলেন। কিন্তু 
আশ্চর্যের বিষয়, বিপক্ষীয়্ লোকদিগের কোন বারের কোন চেষ্টাই সার্থক 
হইতে পারে নাই। যাহা হউক ফরাকাঁবাদের অধিকাংশ লোঁক দয়ানন্দের 
গ্রতি এইরূপে বিরক্ত ও বিরুদ্ধাচরণে প্রবৃত্ত হইয়া উঠিলেও, পূর্বোন্লিখিত 
০ 000? 0 31. আর্ধাসিদ্ধান্ত সম্পাদক পণ্ডিত ভীম সেন শর্মা বলেন যে, ফর।কাঁবাদে 
যখন স্বামিজীকে উৎপীড়িত করিবার জন্য লোঁকে নানাপ্রকার চেষ্টা করে, তখন কতকগুলি 
ুষ্প্রকৃতি ব্যক্তি একটি শিবমূর্তি আপনার।ই উৎপাটিত করিয়া গঞ্াঁজলে নিক্ষেপ পুর্ব্বক 


সাধারণের নিকট প্রচারিত করিয়া দেয় যে, দয়ানন্দই সেই কাধ্য করিয়াছেন। তত্র! 
উতৎপীড়নকারীদিগের আঞ্রোশ আরও বাড়িয়া উঠে। 


বৈদিক পাঠশালা স্থাপন । ১০৭ 


পাননালাল প্রভৃতি কতিপদ্ন বাক্তির শ্রদ্ধা ও ভক্তি কিছুমাত্র তিরোহিত না 
হইয়া দিন দিনই বদ্ধিত হইতে লাঁগিল। 

দয়ানন্দ ফরাকীবাঁদে একটি বৈদিক পাঠশালা স্থাপনের প্রস্তাব করিলেন। 
তিনি বৈদিক পাঠশালা স্থাপনের আবশ্তকত। ইহার পূর্বেই উত্তমরূপে বুঝিতে 
পারিয়াছিলেন। তিনি বুবিয়াঁছিলেন যে, আধ্যজাতির শান্ত্ভাগ্ারে যে সকল 
মহামূল্য রত্ব বিদ্যমান রহিয়াছে, তাহার নির্বাচন হওয়া আবশ্ঠক। কারণ সেই 
সকল সঞ্চিত রতনের সহিত রত্বের নামে অনেক কাচখণ্ডও মিশ্রিত হইয়া 
গরিয়াছে। সুতরাং কাঁচখণ্ডের সহিত রত্বথণ্ডের স্বতন্ততা-সাধন,_-আর্ষ 
গ্রন্থের সহিত অনার গ্রন্থের পার্থক্য-প্রতিপাঁদন, তিনি একান্ত কর্তবা 
বলির! বিবেচনা করিয়াছিলেন। এই শীস্র-নির্বাচন কার্যে প্রকৃত শাস্্ীর 
প্রয়োজন। ভারতভূমির নানা স্থলে নানা শাস্ত্রের অধ্যয়ন-অধ্যাপন! 
থাঁকিলেও, কিংবা সভাক্ষেত্রে বা সামাজিক অনুষ্ঠান-বিশেষে নান! দ্বেপীপ্ণ 
শান্্রীসমূহের মমাবেশ হইলেও এতদেশ যথার্থপক্ষেই শান্িশুন্ত হইয়া 
পড়িয়াছে। বস্তৃতঃ ভারতে শাস্ত্রনির্বাচক শান্জ্ীর নিতান্তই অভাঁব। এই 
অভাব নিবারণার্থই দয়ানন্দের বৈদিক পাঠশালার সঙ্কন্প । আর একটি কথা, 
ইদদানীত্তন পণ্ডিতগণ কেবল শান্তর-নির্বাচনেই অপটু নহেন। অধিকত্ত সত্য- 
নিষ্ঠা সম্পর্কেও তাঁহারা এখন বহুদুরে সরিয়! পড়িয়াছেন। বলিতে কি, 
গণ্তিতগণ শাস্ত্রীয় প্রসঙ্গে পরাঁজিত হইলেও সত্যের অন্ুরোধে 
তাহা স্বীকার করিতে সম্মত হয়েন না। এই সকল কারণে,-এক কথায় 
এক দল সত্যনিষ্ঠ শাস্্রী-স্থষ্টির অভিগ্রায়ে দয়ানন্দ বেদ-বিদ্যালয় প্রতিষ্টার্থ 
উৎসুক হইয়! উঠিলেন। প্রস্তাবিত বিদ্যালয়ের উদ্দেস্ত ও আবশ্তকতার 
বিষয় দয়ানন্দ পান্নালাল প্রভৃতি ব্যক্তিদিগকে উত্তমরূপে বুঝাইয়! দিলেন। 
তাহার! সকলেই একবাক্যে এই হিতকর প্রস্তাবের অনুমোদন করিলেন। 
সুতরাং অবিলম্বেই স্বামিজীর প্রস্তাবে এবং পান্নালাল প্রভৃতির উদ্যোগ 
ও উৎসাহে ফরাক্কাবাদে একটি বৈদিক পাঠশালা সংস্থাপিত হইল। 
প্রথমতঃ পান্নালালের উদ্যান-বাটিকাতে বৈদিক পাঠশালার কার্য্য চলিতে 
লাগিল। পূর্বোল্লিখিত পণ্ডিত জোয়ালা দত্ত ও অপর ছুই ব্যক্তি সেই পাঠ 
শালায় প্রথম বিষ্তার্থীরূপে প্রবিষ্ট হইলেন। তথায় পাণিনিই প্রথম পাঠ্য-পুন্তক 


১৮৮ দয়ানন্দ-চরিত। 


রূপে অবলপ্বিত ও অধ্যাপিত হইতে লাগিল। ইহার পর দয়ানন্দ কাশগঞ্জত 
ছনেশ্বর ও মুজাপুর গ্রভৃতি স্থানেও এক একটি বৈদিক পাঠশালা প্রতিষ্ঠিত 
করিয়াছিলেন। যাহা হউক ফরাক্কাবাদে বৈদিক পাঠশাল! প্রতিষ্ঠার পর 
তিনি কিছু দিনের জন্ত স্থানান্তরে চলিয়৷ গেলেন । 
দয়ানন্দ ফরাক্কাবাদ হইতে সম্ভবতঃ রামগড়ে আদিলেন। তছুল্লিখিত 
আত্ম্রিত পাঠ করিয়া বুঝা বায় যে, তিনি ইহার পূর্বেও রামগড়ে আপিয়া- 
ছিলেন। রামগড়ে মৃহ্তিপূজার প্রতিবাদ করিলেন, তত্সঙ্গে বৈদিক ধর্দের 
যৌন্তিকত৷ প্রতিপাদনেও প্রবৃত্ত হইলেন। তন্দর্শনে তথাকার কতকগুলি 
পঙ্ডিত বিচারার্থ হইয়া তাহার নিকট আগমন করিলেন সমাগত পণ্ডিতদিগের 
সহিত দয়নিন্দ বিচারে প্রবৃত্ত হইলেন। পণ্ডিতগণ বিচারপদ্ধতি বিষয়ে 
অনভিজ্ঞ বলিয়া অথবা অসদিচ্ছা-পরিচালিত হইয়া সকলে এক সঙ্গে ঝ 
এক সময়ে আপন আপন ইচ্ছামত প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিতে লাঁগিলেন। স্থৃতরাং 
তীহাদিগের বিচারকার্ধ্য ক্রমশঃ বিশৃঙ্খলাময় হইয়া উঠিল। দয়ানন্দ এইরূপ 
অনিয়মিত বা অযথা-পরিচালিত বিচার-ব্যাপাঁরকে কোলাহল বলিয়া অভিহিত 
করিলেন। বস্তুতঃ এবদ্িধ বিচার কোলাহল শব্ষে অভিহিত হইবার সম্পূর্ণই 
উপযুক্ত। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, সেই কোলাহল-প্রবৃত্ত পণ্ডিতগণ আপনা- 
দিগের অসঙ্গত বা অপপ্তিতৌচিত আচরণের নিমিত্ত কিছুমাত্র দুঃখিত হইলেন 
না, প্রত্যুত তাহারা স্বামিজীকেই “কোলাহলস্বামী” নামে অভিহিত করিয়া 
উপহাস সহকারে আস্ফালন করিতে লাঁগিলেন। অধিকন্ত রামগড়ে দয়ানন্দের 
প্রাণবধার্থ উদ্যোগ হইল। চিত্রণগড় হইতে দানব-প্রক্কৃতি দশ জন লোক আসিয়া 
তাহার প্রাণহননের নিমিত্ত চেষ্টা করিতে লাগিল। সেই দাঁনবদিগের 
সহিত কোলাহলপ্রিয় পণ্ডিতবর্ণের কোন প্রকার সম্বন্ধ বা ষড়যন্ত্র ছিল কি 
না বলাষায় না। তবে তাহা থাকাও অসন্তাবিত নহে। কিন্তু সেই ছুর্কত্- 
দিগের দুষ্টাভিপ্রায় কাধ্যে পরিণত হইতে পারিল না। কারণ দয়ানন্দ তাহা 
দিগের হুষ্টাভিসন্ধির বিষয় পূর্ব্ব হইতেই জানিতে পারিয়া্ছিলেন, এবং জানিতে 
পারিয়াছিলেন বলিয়াই বিশিষ্টরূপ কৌশলাবলম্বন পুর্ঘ্ক তাহাদিগের আক্রমণ 
হইতে আক্মপ্রাণ রক্ষা করিয়! ফরাব্কাবাদে চলিয়া আসিলেন। 
এই ঘাত্রায় তিনি ব্যাখ্যা বা বিচাঁরাদি বিষয়ে কিছুই করেন নাই। যে কএক 


প্রয়াগ-গমন । ১০৯ 


দিবস ফরাৰাবাদে ছিলেন, সেই কএক দিবস বৈদিক পাঠশালর পর্যবেক্ষণ ও 
তত্বাবধান কার্ষ্যেই অতিবাহিত করিলেন। এই স্থলে বলিয়া রাখা আবশ্তক যে, 
তাহার অবিদ্যম'নে বৈদিক পাঠশালায় বিশৃঙ্খল! উপস্থিত হইয়াছিল । বিশৃ- 
ঙলার মূল কি তাহা! বুঝা! যার না। তবে পাঠশালার জনৈক ছাত্রের সহিত 
এক জন উদ্যানরক্ষকের বিবাদ-বশতই যে বিশৃঙ্খলা উপস্থিত ভ্ইয়াছিল, এই 
কথ! অনেকের নিকট শুনিতে পাওয়া যায়। এইক্ূপে বিশৃঙ্খল! সংঘটিত 
হওয়ায়,_-বিশেষতঃ উদ্যানপতি পান্নালাল সেই বিবাঁদ-সন্তৃত বিশৃঙ্খল নিঝা- 
রণের কোন প্রকার প্রতিবিধান করিতে না চাওয়ায়, দয়ানন্দ পাঠশালা স্থানা- 
স্তরিত করাই যুক্তিযুক্ত বিবেচন| করিলেন। অবশেষে গঙ্গাতীরবর্ভী থে 
স্থানে তিনি অবস্থিতি করিতেন, পাঠশালা সেই স্থানে লইয়া! গেলেন। পাঁঠ- 
শালার স্থান পরিবর্তনের সহিত তাহার পোষণ বা রক্ষণ-বিষয়ক ব্যবস্থাও 
কিয়দংশে পরিবর্তিত হইল,। নির্ভযরাঁম নামক একজন সদাঁশয় বণিক বিদ্যার্থী- 
দিগের আহার-ভাঁর গ্রহণ করিলেন, এবং লালা জগন্নাথ গ্রসাদ নামক জনৈক 
উদারচিত্ত ব্যক্তি অধ্যাপকদিগের বেতন-ব্যক্স নির্বাহ করিতে লাগিলেন * 
এই প্রকারে বৈদিক পাঠশালা! স্থপ্রতিষ্ঠিত ও সুচাঁরুরূপে ব্যবস্থিত করিয়া 
দয়ানন্দ ফরাকীবাদ হইতে কানপুরাভিমুখে যাত্রা করিলেন। তদনস্তর 
কানপুর হইতে প্রয়াগধামে উপস্থিত হইলেন। 

প্রয়াগে মহাদেবপ্রসাদ নামক একজন সরলচিত্ত ব্যক্তি আধ্যধর্ম্ের 
শ্রেত্ব প্রতিপাঁদন করিবার নিমিত্ত একখানি বিজ্ঞাপন-পত্র প্রচারিত করেন। 
বিজ্ঞাপন-পত্রে গ্রতিপাদন-কাল তিন মাস মাত্র নির্দিষ্ট করিয়া দেন। অধি- 
কন্ত উহা প্রতিপাদিত করিতে না পারিলে তিনি বে খৃষ্টধন্্ম পরিগ্রহ করিবেন, 
এই কথাও তাহাতে বিবৃত করেন। প্রয়াগবাসী পণ্ডিতগণ নির্দিষ্ট 
কালের ভিতর নির্দিষ্ট বিষয় গ্রতিপাদন করিতে পারিক্াছিলেন, এইরূপ 





* প্রথমতঃ পণ্ডিত ব্রজকিশোর, তাহার পর মথুরাবাসী পূর্বোক্ত পও্ডিত যুগলক্িশোর 
প্রভৃতি ব্যক্তি এই পাঠশালার অধ্যাপক-পদ্দে নিযুক্ত হয়েন। বল! বাহুল্য যে, দয়ানন্দ 
নিজেও কিছুদিন এই পাঠশালার অধ্যাপন! কার্ধ্যে প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন। পণডিতবর জোয়াল। 
দত্তের যায়, পঙিতবর ভীমসেনও কিছুদ্দিন পরে এই পাঠশালায় বিদ্যার্থীরূপে প্রবেশ করেন। 
ফল কথা, বিদ্যার্থী-নংখ্যায় ফরক।বাদের পাঠশালা এক সময় উন্নত হইয়া উঠিয়াছিল। 


১১০ দয়ানন্দ-চরিত । 


বোধ হর না। ভবে পপ্ডিতগণ বে তদ্বিষয়ে বথোচিত চেষ্টা! করিয়াছিলেন, 

তাহা বলাই বাহুল্যমাত্র। কিন্তু তাহা করিলেও তঁহাদিগের চেষ্টা বা মীমাংসার 
মহাদের গ্রসাদ পরিভুষ্ট হইতে পারেন নাই। এমত স্ময়ে আধ্যবর্মের অদ্বিতীয় 
প্রবস্তা দরানন্দ সরস্বতীর সহিত প্রয়াগে মহাদেব প্রসাদের সাক্ষাৎ ঘটিল। 
দরানন্দ তীহাকে অন্ুনন্ধিতস্থ দেখিয়া এবং তাহার মনোভাব বুঝিতে পারিয়া 
আধ্যধর্্ই যে প্রকৃত ও সর্মতোভাবে যুক্তিসঙ্গত ধর্ম, তাহ! তাহার 
নিকট অনারাসে প্রতিপাদিত করিলেন। সুতরাং তখন তাঁহাকে খৃষ্টধর্মাবলন্বন 
বিষয়ে প্রতিনিবৃত্ত হইতে হইল। মহাঁদেবকে বিধন্মীবলম্বন বিষয়ে নিরস্ত 
করার দক্ধাননের নাম ও মহিম৷ প্রয়াগের সর্ধত্রই প্রচারিত হইয়া উঠিল। 
কিন্তু প্রয়াগেও তাহার প্রাণহরণের নিমিত্ত কতিপয় দুর্বৃত্ত বক্তি প্রেরিত 
হুইয়াছিল। দে বারে মহাদেব প্রসাদের চেষ্টাতেই তিনি প্রীণরক্ষা 
পাইলেন। যাহা হউক তাহার প্রাণবিনাশার্থ এইরূপ বারম্বার উদ্যোগের 
পশ্চাতে একটা কিছু নির্দিষ্ট পরিচালনা ছিল বলিয়৷ আমাদিগের অনুমান 
হয়। ইহা হইতে পারে যে, কতকগুলি দুর্কদ্ধিপরিচালিত নীচমন! 
লোৌক দয়ানন্দকে নিহত করিবার অভিপ্রায়ে মন্ত্রণাবদ্ধ হইয়াছিল। সম্ভবতঃ 
অতি গোপনে তাহার! একদল ঘাতকও নিযুক্ত করিয়াছিল। ঘাতকগণ 
অতিশয় অলক্ষিতভাবে থাকিয়া দয়ানন্দের অনুসরণ করিত, এবং তীহার প্রাণ 
বধার্থ সর্বদাই সুযোগ প্রতীক্ষা করিয়া থাঁকিত। তাহা না হইলে তাহার প্রাণ- 
হননের নিমিত্ত একাধিক স্থানে একাধিকবার উদ্যোগ দেখা যাইবে কেন? 


পঞ্চম পরিচ্ছেদ ! 


সিটি িিশািশীশাহা 


কাণী আগসন,আমন-জনিত আন্দেলন,_ক্ভশা-নিরপণ বিষয়ে কানানর়েশের 
দহিত পিতদিগের পরামর্শকাশীর মহাবিচান,-পরতিনা ও পুরাণ 
শব্দের অর্থনির্ণয়,বিশ্রদ্ধানন্দ খারা ও পওত বাজশাস্া 
প্রভৃতির প্রশ্ন,বিঢার-বিশু্খলা,বিচার বিষয়ে 
ভিন্ন ভিন্ন মতঃ-কাণীতে বেৰ- 
বিদ্যালয় স্থাপনের 
প্রস্তাব । 





দরানন্দ প্রয়াগ হইতে কাশীধাঁমে আগমন করিলেন। ভারতীয় ধন্ষের 
ইতিবৃত্তে কাণীর নাম চিরকীন্তিত হইয়া রহিয়াছে। ভারতীয় ধর্ম-প্রবস্তাদিগের 
পদার্পণে কাশীভূমি পবিত্র ভূমি বলিয়া প্রসিদ্ধ হইয়াছে। আর ভারতবর্ষীয় 
ভিন্ন ভিন্ন সাল্প্রদারিক ধর্মের আবির্ভীব ও আন্দোলন হেতু কাশীক্ষেত্র একরূপ 
ধর্মক্ষেত্র বলিয়াই খ্যাঁতিলাভ করিরাছে। আর্ধড্াাতির সনাতন ত্রচ্গবাদের 
সহিত কাশীর দন্বন্ধও বড় সামান্ত নহে। অধিক কি, উহা বিকাঁশ ও বিস্তৃতির 
পক্ষে ত্রন্ষাবর্তের পরেই বারাণসীর নাম উল্লিখিত হইবার উপযুক্ত । 
বেদব্যাস যে স্থলে ব্রন্গস্ত্র ব্যাখ্যাত করিরাছিলেন, শঙ্কর স্বামী থে স্থলে 
শারীরক ভাব্য-প্রণয়নে প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন, এবং যে স্থলে এই উনবিংশতি 
শতাঁীতে একজন দ্রিগন্থর সন্ন্যাসী বৈদিক ধর্টের বিজয় নিশান স্বন্ধে লইয়া 
উপনীত হইলেন, সে স্থণ পবিত্র ব্রন্মবাদের পবিত্র ইতিহাসে প্রসিদ্ধি 
লাভ করিবে না কেন? বলিতে কি যে স্থান শাস্ত্রবৈভবে বা শাস্ত্র 
গৌরবে ভারতভূমির ভিতর অদ্দিতীয় বলিয়াই প্রসিদ্ধ, দয়ানন্দ দেই স্থানে 
সত্য শাস্ত্র বিচারের নিমিত্ত সমাগত হুইলেন। যেস্থানে শত শত দেবমনদির 
মন্তকোতোলন করিয়৷ মৃত্তিপূজার মহিমা বিঘোষিত করিতেছে, ঘেখানে বহ- 
দেবোপাসনার বহু প্রকার আড়ূম্বর ও আয়োজনের নিমিত্ত লোক সকল 
অস্থির হইয়া ফিরিতেছে, এবং যে স্থানের পথে ঘাটে মাঁঠে ও ময়দানে 


১১২ দয়ানন্দ-ঢরিত। 


শত শত দেবধৃর্তি বিক্ষিপ্ত থাকিরা সর্বতোভাবে মূর্তি-মাহাস্ন্ই প্রচারিত 
করিতেছে, দয়ানন্দ মেই স্থানে মুষ্তিপূজা মিথ্যা বলিয়া প্রতিপাদন করিবার 
নিনিত্ত অকুতোভয়ে প্রবিষ্ট হইলেন। যে ছুর্গ এতকাল অভেদ্য বা অনধিক 
ছিল, দগ্ানন্দ তাহা অধিকার করিবার উদ্দেশে অদীনসত্ব বীরের স্তায় অবতীর্ণ 
হইলেন। কাশীতে ছুর্গীকুণ্ডের সমীপে আনন্দবাগ নামক ঘে উদ্যান আছে, 
দয়ানন্দ তথায় উপস্থিত হৃইয়। সেই উদ্যানে অবস্থিতি করিতে লাঁগিলেন। 

দয়ানন্দের আগমনে কাশীধামে আন্দোলন উপস্থিত হইল। একজন 
কৌগীনধারী সন্ধ্যাসী খগ্ধেদাদি গ্রন্থ আলোচন! পূর্বক মৃন্তিপূজার মিথ্যাত্ব” 
প্রতিপন্ন করিতেছেন, শাক্ত-শৈবাদি সাশ্প্রদাপ্রিক মতের অসারতা প্রদর্শন 
করিতেছেন, মালাগ্রহণ ও ত্রিপুগ্ু,-ধারণাদি বাহ্‌ অনুষ্ঠান সমূহকে বেদবিরুদ্ধ 
বলিয়। প্রতিপাদন করিবার নিমিত্ত বদ্ধপরিকর হইয়াছেন, এবং এই প্রকারে ও 
এই ভাবে আপনার মত প্রচার করিতে করিতে গঙ্গাতটবর্তী স্থান সকল বিচরণ 
পূর্বক সম্প্রতি বাঁরাণসী নগরে উপনীত হইয়া বৈদিক ধর্মের বিজয় পতাকা 
উত্তোলিত করিয়াছেন, এই কথা! কাশীধামের সর্বত্রই সত্বর প্রচারিত হইয়া! পড়িল। 
এই সংবাদ শুনিয়া কাণীর অধিবাসীদিগের ভিতর কেহ বিশ্ব প্রকাশ করিলেন, 
কেহ বিচলিত হইলেন, শান্ত্িগণ চিন্তিত হইয়া উঠিলেন, ধর্মব্যবসারী পা্া- 
পুরোহিতগণ নানীপ্রকার অশান্তি ও আশঙ্কাকর কথ! উত্থাপিত করিলেন, 
এবং কোন কোন ব্যক্তি উপেক্ষা সহকারে উপহাস করিয়া! কথাটা! উড়াইয়। 
দিবাঁর চেষ্টা করিতে লাগিলেন । ফলতঃ এই কথ! লইয়া কাশীর মঠে মন্দিরে 
সত্রে ও সাধুনিবাস সমূহে আনোলন চলিল, পদস্থ লোকদিগের বৈঠকে ঝা 
বিশ্রামক্ষেত্রে এই সম্বন্ধে নানাপ্রকার আলোচনা হইতে লাগিল, এবং বলিতে 
কি উপস্থিত বিষ লইয়া থাকার প্রায় মকল লোকের হৃদয়েই একটা কৌভূহল- 
শিখা উদ্দীপিত হইয়! উঠিল । মুর্তিউপাসনা সত্য সত্যই বেদান্গমোদিত কি না, 
সৌর-শাক্ত প্রভৃতি সাশ্প্রদায়িক মত প্রকৃত পক্ষে বেদবিরোধী কি না, তাহা 
জানিবার নিমিত্ত অনেকে ইচ্ছুক হইলেন, এমন কি কোন কোন অন্ুসন্ধিৎস্থ 
পণ্ডিত বেদের গ্রন্থ লইয়া আলোচনা! করিতে বসিলেন। পরিশেষে এই সংবাদ 
কাশীনরেশও কর্ণগোচর করিলেন। 

দয়ানন্দ বৈদিক ধর্ম প্রতিষ্ঠর্থ বিজ্ঞাপন প্রচারিত করিয়াছেন, -মুত্তিপূজা- 


কর্তব্য নিরূপণ । ১১৩ 


বশ্ুনার্থ কাণীদ্থ পণ্ডিতমগুলীর সহিত বিচারার্থী হইরাছেন,_অধিক কি 
তিনি নিজেই তাহাদিগকে বিচাব্রার্থ আহ্বান করিয়াছেন, এইরূপ স্থলে কিছু 
না বলিয়া নার হইয়। থাকা কাশীবাসীর পক্ষে কোন অংশেই বিপেয় নহে। 
বিশেষতঃ কাশীবাম একটি পধিত্রধাম বলিয়াই প্রথিত। কাশীধামের পবি- 
অরত। অথবা কাশীধামের মান-মহিমা সমন্তই বিশ্বনাথাদি দেবমৃদ্তির উপর নিভর 
করিতেছে। যদি দয়ানন্দ সরস্বতী বারাণসীর বক্ষে বসিয়া দেবমৃষ্টিসমূহ 
মিথ্য৷ বলিয়াই প্রমাণিত করেন, তাহা হইলে একদিকে যেমন দেবগণ অস- 
ম্মানিত হইবেন, ঘেইরূপ অন্তর্দিকে কাশীধামও মাহাত্মা-হীন হইয়। পড়িবেন। 
এবন্বিব ক্ষেত্রে কিছু না করিয়া নিন্েষ্টতা অবলম্বন কোন প্রকারেই কর্তব্য 
নহে। আর এক কথা, কাশীর সম্মানে কাণীনরেশ স্ন্থানিত, কাশার 
অসম্মানে কাশীনরেশ অসম্মানিত। সুতরাং কাশীর সন্মান রক্ষা কাশানরেশের 
পক্ষেও আবশ্তক হইয়া উঠিন। এই সকল বিবয় ধারভাবে চিন্তা পুর্ব 
কাণীরাজ পণ্ডিতমগুলীর পরামর্শ-্রার্থী হইলেন, এবং তদগ্ারে কাাস্থ 
পঞ্ডিতবর্ঁকে আমন্ত্রিত করিঘ্। উপস্থিত বিষয়ে কর্তব্য-নিদ্ধীরণের নিগিন্ত 
তাহাদিগের সহিত আলোচন! করিতে লাগিলেন। পরিশেষে দয়ানন্দ সরস্বভার 
সহিত শান্ত্রবিচারে প্রবৃত্ত হওয়াই সকলের বিবেচনায় বিহিত বলিয়া বিবেচিত 
হইল। কাণীর পণ্ডিত-পুঙ্গবগণ দয়ানন্দের সহিত শাস্ত্র-সংগ্রামে প্রবৃত্ত হই- 
বেন, তাহার পরাভূতি বাধন পূর্বক হিন্দুর প্রচলিত মন্ত-বিশ্বাস সকল প্রতি- 
ঠিত রাখিবেন, আর সেই সঙ্গে সুধীশাস্ত্রজন-গরিসেবিত বারাণমীর গৌরব 
রক্ষার্থও যত্রপর হইবেন, এই সমাচার অতি শীঘ্রই সকলের কর্ণগোচর হইল! 
ইহাতে সকলেই আনন্দিত হইলেন এবং অধিকতর কৌতুহলাক্রাস্ত চিত্তে 
বিচারদিন প্রতীক্ষা করিয়া রহিলেন। 

অবশেষে বিচারদিন নির্ধীরিত হইল। ১৮৬৯ খুষ্টান্দের ১৭ই নবেম্বর 
দিবসে,_কিংবাঁ ১৯২৬ সব্বতান্দের কান্তিক মাসে শুরু দ্বাদশীর মঙ্গলবার 
অপরাহ্ন তিন ঘটিকার সময়ে,-ইতিহাস-কীন্িত বাঁরাণনী নগরে,__ভাগী- 
রথীর পুণ্যদলিল-প্রক্ষালিত পবিত্রক্ষেত্রে,_হিন্দুর সর্ধপ্রধান তীর্থস্থলে,__ 
পুরাণকর্পিত তেত্রিশকোটি দেবতার সন্মিলন-ভূমিতে, এবং মহাদেবের ত্রিশূল- 
মংরক্ষিত কাণীধামে মুর্তিপূজা সমর্থনের নিমিত্ত মভাসভার নসধিবেশন হইল। 

১৫ 


১১৪ দ্রয়ানন্দ-চরিত। 


মহাঁসভায় মহারাজ কাঁশীনরেশ সভাপতির পদ পরিগ্রহ করিলেন। তিনি 
স্বীয় সভাপপ্ডিত তারাচরণ তর্করত্ব এবং পণ্তিতবর বিশুদ্ধানন স্বামী ও 
বালশাস্্রী প্রভৃতি অতিরথ মহারথ সমভিব্যাহারে মহাসমারোহ পূর্বক 
নির্দিষ্ট সময়ে আনন্দবাঁগ নামক উদ্যানে উপস্থিত হইলেন। কাশীর নানা 
শ্রেণীস্থ শত শত লোক তীহাদিগের অন্ুগমন করিল,-_-আনন্দবাঁগের অভিমুখে 
জনস্রোত প্রবাহিত হইতে লাগিল। দেখিতে দেখিতে আনন্দবাগ লোক- 
কল্পোলে কল্পোলিত হইয়! উঠিল! সেই মহতী সভার ভিতর দয়ানন্দের 
পক্ষ-সমর্থকব্ধপে দ্বিতীয় ব্যক্তি কেহই ছিলেন না। স্ৃতরাং তিনি সভা- 
মগ্ডল মধ্যে করিযুখ-পরিবেষ্টিত কেশরীর স্তাঁয় একাকী অবস্থান করিতে 
লাগিলেন। বিচারকাল সমাগত হইলে দয়ানন্দ কাণীনরেশকে জিজ্ঞাসা 
করিলেন--“পপ্ডিতগণ বেদের গ্রন্থ আনিয়াছেন ?” কাশীনরেশ বলিলেন__ 
“বেদের গ্রন্থ আনিবার প্রয়োজন নাই, কারণ সমগ্র বেদ পণ্তিতদিগের 
কণ্ঠস্থ।” তাহা শুনিয়া দয়ানন্দ বলিলেন_-গ্রস্থ ন! হইলে পূর্বাপর মিল 
রাখিয়া বিচার করা যাইতে পারে না। যাহা হউক এখন বিচার্ধ্য বিষয়টা 
কি?” তদুত্তরে উপস্থিত পণ্ডিতগণ বলিলেন,__-“আপনি মু্তিপূজার 
খণ্ডন করিবেন, আর আমরা উহার সমর্থন করিব।” তাহা শুনিয়! 
দয়ানন্দ বলিলেন,_-“তবে আপনাদিগের ভিতর ধিনি গণ্ডিত-শ্রেষ্ট, তিনিই 
অগ্রবর্তী হউন।” তাহাতে রঘুনাথ প্রসাদ কোতোয়াল নামক এক ব্যক্তি 
বলিল যে,_-“পণ্ডিতশ্রেষ্ঠ ঘিনিই হউন না কেন, আপনার সহিত এক সময়ে 
একজন বই ছুইজন পণ্ডিত বিচার করিবেন না।” তখন পূর্বোক্ত পণ্ডিত 
তারাচরণ অগ্রবর্তী হইলে দয়ানন্দ তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন,-"আপনি 
বেদের প্রমাণ মানেন কি না?” 

তারা। বর্ণাশ্রমী ব্যক্তিমাত্রেই বেদের প্রমাণ গ্রান্থ করিয়া থাকেন । 

দয়া। তবে পাষাণাদি মূর্তি-পূজার পক্ষে যদি কোন বৈদিক প্রমাণ থাকে 
ত বলুন? 

তারা। যেব্যক্তি বেদ ভিন্ন অন্ত প্রমাণ মানিতে চাঁন না, তাহাকে কি 
বলিব? 

দ্মা। বেদ ভিন্ন অন্ত পুস্তকের কথা পরে বিচার করা যাইবে। কিন্ত 


কাশীর মহাবিচার। ১১৫ 


বৈদের বিচারই মুখ্য,--বেদোক্ত বন্ধ শ্রেষ্ঠ ধর্মা। এই কারণ বেদের আলো 

চনা প্রথমেই করা উচিত। মনুস্থৃতি প্রভৃতি বেদমূলক গ্রন্থ প্রামাণিক 
বলিয়। গ্রহণ ক্যা যাইতে পারে। তাহা বলিয়া! বেদ-বিরুদ্ধ বা বেদ-অপ্রসিদ্ধ 
কোন গ্রন্থই গণ্য হইতে পারে না। 

তারা। মন্ুস্থতি কি প্রকারে বেদমূলক ? 

দয়া। সামবেদীয় ব্রাহ্মণে কথিত হইয়াছে যে, মন্তু যাহা যাহা কহিয়াছেন, 
তাহা তাহা ওষধের ওঁ ।+ 

ইহার কোন উত্তর প্রদান করিতে না পারিয়া পণ্ডিত তারাচরণ নীরব 
হইয়! রহিলেন। তখন বিশুদ্ধানন্দ স্বামী একটি ব্যাস-সথত্র আবৃত্তি পূর্বক 
জিজ্ঞাসা করিলেন যে, বেদে তাহার কোন মূল আছে কি না? 

দয়া। ইহা ভিন্ন প্রকরণের কথা, সুতরাং এখন ইহার বিচার অনাবশ্তক। 

বিশু। আপনি যদি ইহা জানেন ত অবস্ত বলুন। 

দয়া । যদি কোন বিষয় কাহারও কণ্স্থ না থাকে, তাহা হইলে তাহা 
পুস্তক দেখিয়। লইলেই চলিতে পারে। 

বিশু। যদি কণ্স্থই না! থাকে, তাহ। হইলে কাশীধামে আপনার শাস্তাথ 
করিতে আসিবার প্রয়োজন কি? 

দয়া। সমস্ত বিষয় কি আপনারই কথস্থ আছে? 

বিশু। হা আছে। 

দয়া। তবে ধর্মের স্বরূপ কি বলুন দেখি? 

বিশু। বেদ-প্রতিপাদ্য ফলের সহিত যে অর্থ, তাহারই নাম ধর্ম । 

দয়। এটি ত আপনার স্বরচিত মংস্কত। সুতরাং ইহা প্রমাণের যোগ্য 
ন্য়। এই বিষয়ে যদি শ্রুতি ঝা স্থৃতির কোন প্রমাণ জানেন ত বলুন? 

বিশু। যাহা “চোদনা”-লক্ষণযুক্ত তাহাই ধর্ম। ইহা জৈমিনির সুত্র 

দয়া। আপনাকে শ্রতিস্থৃতির প্রমাণ দেখাইতে বলিলাম। তাহা না 
দেখাইয়া! সুত্রের প্রমাণ দেখাইতেছেন কেন? ইহাকেই কি কঠস্থ বিদ্যা 
বলে? আর “চোদনা” শব্দের অর্থ ত প্রেরণা,__ইহারও ইতি প্রমাণ 
দেখাইতে হইবে। 


* যদ্বৈ কিঞ্চনসনুরবদততদত্েষজং ভেষজতা | | 





১১৬ দয়ানন্দ-চরিত। 


ইহার উত্তরে বিশুদ্ধানন্দ কোন কথা না বলাক্স, দয়ানন্দ জিজ্ঞাসা! করিলেন, 
--"আচ্ছা, আপনি ত ধর্মের স্বরূপ বলিতে পারিলেন না, এখন ধর্মের লক্ষণ 
কি, তাহাই বলুন দেখি ?” 

বিশু। ধাশ্মের একটিমাত্র লক্ষণ । 

দয়া। সেটিকি? 

তচভরে বিশুদ্ধানন্দ কিছুই বলিলেন না। তখন দয়ানন্দ মনুম্মতি অনু- 
সারে ধর্মের দশবিধ* লক্ষণ উল্লেখ পূর্বক বলিলেন ঘে,-ধর্ষের এই ত দশটি 
লক্ষণ তবে আপনি কিরূপে ধন্মের একটিমাত্র লক্ষণ বলিতেছিলেন ?” 

এমত সময়ে পণ্ডিত বালশাস্ত্রী অগ্রসর হইয়া বলিলেন,_“সমস্ত ধর্মশাস্ত 
আমার কণ্ঠস্থ,_যাহা ইচ্ছ। জিজ্ঞাসা করিতে পারেন ?” 

দয়া। আপনি অধর্ের লক্ষণ কি তাহাই বলুন? 

ইহার উত্তরে বাঁলশাস্ত্রী কিছুই বলিতে পারিলেন না। তখন এক 
এক জন করিয়৷ প্রশ্ন করা সুবিধাজনক নয় দেখিরা পণ্ডিতগণ কোলাহল পূর্বক 
জিজ্ঞাসা করিলেন__“বেদে প্রতিমা! শব আছে কি না?” 

দয়া। আছে। 

পণ্তিতগণ। বেদের কোন্‌ স্থলে আছে? 

দয়া। সামবেদীয় ব্রাঙ্গণের এক স্থলে আছে। 

পঙ্ডিতগণ। যদি বেদেই প্রতিম! শব্ধ থাকে, তবে আপনি তাহার খণ্ডন 
করিতেছেন কেন? 

দয়া। সেই প্রতিমা! শব্দের অর্থ পাষাণাঁদি ষ্া নহে। 

এই বলিয়া তিনি সামবেদীয় ্রান্মণাস্তর্গত অদ্ভুত-শাস্তিগ্রকরণের যে অংশে 
প্রতিমা শব আছে, সেই অংশের অর্থ পরিস্কতরূপে বুঝাইয়া দিয়া প্রতিপন্ন 
করিলেন যে, বেদোক্ত প্রতিমা! শব্দ মূর্তিপূজা-প্রতিপাদক নহে। তখন পপ্তিত- 
গণ নিরুত্তর হইয়া রহিলেন। তাহার পর বিশুদ্ধানন্দ স্বামী জিজ্ঞাসা করিলেন, 
“বেদ কি হইতে উৎপন্ন হইয়াছে ?” 


*% ধৃতিঃ ক্ষমাদমোহস্তেয়ং শৌচমিস্ড্রিয় নিগ্রহঃ। 
ধীবিদ| সতামক্রো ধো দশকং ধর্দধ লক্ষণং। 
মনু ৬৯5 


পুরাণাদি শব্দের অর্থনিণয়। ১১৭ 


দয়া। বেদ ঈশ্বর হইতে উৎপন্ন হইয়াছে। 

বিশু। কোন্‌ ঈশ্বর হইতে? হ্াযশান্-গ্রপিদ্ধ ঈশ্বর,কি যোগশান্গ 
প্রসিদ্ধ ঈশ্বর--অথবা কি বেদাপ্ত-গরদিদ্ধ ঈশর হইতে খেধ উতপর হইরাছে 

দয়া। ঈশ্বর কি তবে বতসংখ্যক বলিতে চান ? 

বিশু। না, ঈশ্বর ত একই। তবে কোন্‌ লক্ষণাক্রান্ত ঈশ্বর হইতে 
উৎপন্ন হইয়াছে; তাহাই জানিতে চাহি। 

দ্য়া। সচ্চিদানন্দ লক্ষণাক্রান্ত ঈশ্বর হইতে বেদ উৎপন্ন হইয়াছে । 

বিশু। ঈশ্বরের সহিত বেদের সথন্ধ কি গ্রাকার ? তাহা কি গ্রতিপাদা- 
প্রতিপাদক, জঞ্ট-জনক, স্বস্বামি-ভাব, ভাদাম্মাভাব (কিংব। সমবাষ সন্বন্ধের 
সহিত সমান? 

দয়।। ঈশ্বরের সহিত বেদের কাধ্যকারণ সম্বন্ধ 

বিশু। যেমন স্থ্ষ্যে বা মনে ত্রন্ধবুদ্ধি পূর্বক উপাসনার বাবস্থ। আছে, 
সেইরূপ শালগ্রামে ব্রহ্মবুদ্ধি করিয়া উপাধনা করাঁও ত উচিত? 

দয়া। সুর্য্যে বা মনে ব্রন্ষবুদ্ধি করিরা উপাসনা! বিষয়ে বেদে প্রমাণ » 
দেখা যায়। যথা“মনো বরঙ্গেভ্যুপামীত আদিত্যং ব্রঙ্গেতুাপামীত।” কিন্তু 
পাযাণাদি বিষয়ে বেদে কোন শ্রমাণ নাই। সুতরাং তাহী করথী্ হইতে 
পারে না। 

এমত সময়ে মাঁধবাচার্য নামক জনৈক পণ্ডিত সহসা একটি মন্ত্র আবৃত্তি 
করিয়া তন্মধ্যস্থ পৃত্ভ শব্দের অর্থ জিজ্ঞাসা করিলেন। 

দয়া। পূর্ত শব্দের অথ বাপী, কূপ, তড়াগ ও আরাম-গ্রহণ বুঝায়। 

মাধ। পূর্ত শব্দে পাষাণাদি মুক্তিপূজ। বুঝাইবে না কেন? 

'দয়া। পূর্ত শব্দ পুন্ঠিবাচক, সুতরাং এতদ্বার! পাধাণাদি মৃর্তিপূজা বুঝাইবে 
না। যদি সংশরু হয়, তাহ! হইলে এ মন্ত্রের নিরুক্ত ও ব্রাহ্মণ দেখিয়৷ লউন। 

মাথ। বেদে পুরাঁণ শব্দ আছে কি না? 

দয়া। বেদের বহুস্থলে পুরাণ শব্দ আছে। কিন্তু তাহা ব্রদ্মবৈবর্তীদি 





* দয়াননা বেদের ব্রপ্গণভাগকে প্রকৃত পক্ষে বেদ বলিয়া বিশ্বা করিতেন ন।। তাহার 
মতে সংহিতাভাগই যথার্থ বেদ। সুতরাং শু বা মনে ব্রঙ্গবুদ্ধির কথ! বেদের কথ! 
নহে, ত্রাঙ্গণের কথা মাত্র । 


১১৮ দয়ানন্দ-চরিত। 


পুরাণ-বাচক নহে। কেননা তাহা ভূতকাল-বাটী, সুতরাং বিশেষণ রূপে 
ব্যবহ্ৃত হইয়াছে। 

তখন বিশুদ্ধানন্দ মাধবাচার্য্যের পক্ষাবলম্বন পূর্বক বৃহ্দারণ্যক উপনিষদ 
হইতে “এতন্ত মহতে! ভূতন্ত নিঃশ্বসিতমেতদৃ্থেদো যজুর্কেদঃ সামবেদোহ্থ্বাঙ্গি- 
রস ইতিহাঁসঃ পুরাণং শ্লোক ব্যাখ্যানান্তন্থব্যাখ্যানানীতি।” এই মন্ত্র উদ্ধৃত 
করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন যে, ইহার অন্তর্গত পুরাণ শব্দ কাহার বিশেষণ? 

দয়া। এই বিষয়ের গ্রন্থ আনিলে বিচার করিয়' বলিতে পারি। 

তখন পূর্বোপ্লিখিত . মাধবাচাধ্য বেদের দুইটি পত্র বাহির করিয়া! বলি- 
লেন,--“এই স্থলের পুরাণ শব্দ কাহার বিশেষণ?” 

দয়া। শর স্থলের বচনটি কি পড়ুন? 

মাধ। বচনটি এই,_“ত্রাঙ্গণানীতিহাসান্‌ গুরণানীতি।” 

দয়া। এ স্থুলের পুরাণ শব্দ ত্রাক্ষণের বিশেষণ,-অর্থাৎ পুরাণ নামক 
ব্রাহ্মণ । 

তদত্তরে বালশাস্ত্রী অগ্রসর হইয়। বলিলেন,-_“তবে কি কেন নবীন ত্রাঙ্গণ 
আছে?” 

দয়া। কোন নবীন ত্রাহ্ষণ নাই। তবে কোন ব্রাঙ্গণ নবীন বলিয়! 
কাহারও কখন সন্দেহ হয়, তন্নিমিতু এ স্থলে পুরাণ শব্দ বিশেষণরূপে 
ব্যবহৃত হইয়াছে। 

এই কথার উত্তরে বিশুদ্ধানন্দ স্বামী বলিলেন,_“যদি তাহাই হয়, তাহা 
হইলে ইতিহাস শবের পরবর্তী হইয়াও পুরাণ শব্দ কি প্রকারে বিশেষণ 
হইল ?” 

দয়া। এরূপও হইতে পারে। বথা,_“অজো! নিত্যঃ শাশতোয়ং পুরাণে! 
ন হন্ঠতে হন্তমানে শরীরে ।» এই স্থলে পুরাণ শব দূরস্থ হইলেও দেহীর 
বিশেষণ হইয়াছে। আর দুরস্থ হইলেই যে কোন শব্ব বিশেষণ হইতে পাঁরে না, 
এ প্রকার কোন নিয়ম ব্যাকরণে দৃষ্ট হয় না। 

বিশু। এই স্থলে পুরাণ শব্দ খন ইতিহাসের বিশেষণ না হইঞস ্রাহ্মণেরই 
বিশেষণ হইল, তখন ইতিহাসকে নবীন বলিয়াই গ্রহণ করিতে হইবে? 

দয়া। না, তাহা নহে। কারণ স্থলাস্তরে পুরাণ শব্দ ইতিহামেরও 


বিচার বিশৃঙ্খলা । ১১৯ 


বিশেষণরূপে দৃষ্ট হয়। যথ/৮-ইতিহাস পুরাণ; পঞ্চমো বেদানাংবেদ” 
ইত্যাদি । 

অতঃপর খাধবাঁচার্য পুনর্বার বেদের ছুইখানি পত্রঃসর্বসমক্ষে রাখিয়া দিয়! 
বলিলেন,_“ইহাতে লিখিত হইতেছে যে, যজমান ক্ঞ-সমাপ্ডরির পর দশম দিবসে 
পুরাণ পাঠ শ্রবণ করিবেন। এখন জিজ্ঞাসা করি যে, এই স্থলের পুরাণ শব্ব 
কাহার বিশেষণরূপে ব্যবহৃত হইয়াছে ?” 

দয়া। আপনি পত্রের এ অংশটি পাঠ করুন, তাহার পর দেখা যাইবে 
উহা! বিশেষ্য কি বিশেষণ? 

তখন বিশ্ুদ্ধানন্দ উহা পাঠ করিবার জন্ত স্বামিপীকেই অনুরোধ করি- 
লেন। তছুত্তরে স্বামিজী বিশুদ্ধানন্দকে পড়িতে বলিলেন। তখন বিশুদ্ধী- 
নন্দ “আমি চসম! ভিন্ন পড়িতে পারি না,” এই কথ! খলিয়। বেদপত্র ছুইখানি 
দয়ানন্দের হস্তে সমর্পণ পূর্বক পাঠার্থ অন্থরোধ করিতে লাগিলেন। এইরূপে 
বারশ্বার অনুরুদ্ধ হইয়! উহ পাঠ করিবার অভিপ্রায় হস্তস্থিত বেদপত্র-দযনের 
প্রতি দয়ানন্দ দৃষ্টিপাত করিতেছেন, এমত সময়ে,_অর্থাৎ পাঁচ পল সময়ও 
অতিবাহিত না হইতেই বিশুদ্ধানন্ন দণ্ডায়মান হইয়া বলিলেন”_-“আমার আর 
অপেক্ষা করিবার সময় নাই,_-আ'মি চলিলাম।” এই কথা বলিবামান্র অপরাপর 
পণ্ডিতবর্সও বিশুদ্ধানন্দের দৃষটান্তান্ুসরণ করিয়া দণ্ডায়মান হইয়। উঠিলেন, এবং 
কোলাহল পুর্র্বক বলিতে লাগিলেন,_দয়ানন্দ পরাজিত হইয়াছেন, দয়ানন্দ 
পরাজিত হইরাঁছেন।” * 

_. এই সম্বন্ধে বিচার-ক্ষেত্রে উপস্থিত এবং দয়ানন্দের সহিত স্থপরিচিত এক 
ব্যক্তি গ্রীটীয়ান ইন্টেলিজেন্দার নামক সংবাদ পত্রে যাহা লিখিয়া গিয়াছেন, 
আমরা এই স্থলে তাহা উদ্ধৃত করিলাম। তিনি নিখিয়াছেন ₹- 

* সেহ বিচায্য পুরাণ শব্দ বিষয়ে দয়ানন্দ পরে উত্তর প্রদান করিয়াছলেন। উপরিি-উত্ত 
পত্রোপ্লিখিত অংশটি এই ;--প্দশমে দিবসে যজ্ঞান্তে পুরাণবিদ্যাবেদ; ইত্যম্ত শ্রবণং 
যজমান: কুষ্যদ্িতি। দয়ানন্দ ইহার অর্থ এইরূপ করিয়াছেন,.“পুরাণবিপা| কি ৭) 
পুরাতন বিদ্য।,-_ অর্থাৎ ব্রহ্মবিদ্য। | বেদ পুরাণবদ্দিযা, কেনন| বেদ ব্রহ্মবিদ্য। অর্থাৎ উপনিষদ্‌- 
সমন্বিত । আর এই মন্ত্রের পৃৰ্ব প্রকরণে ৰণ্বেদাদি বেদচতুষ্টয় শ্রবণের কখা আছে। কিন্ত 

" ডপনিষদ্‌-আবণের কথা নাই। এই কারণ এই স্থলে 'পুরাণবিদ্যাবেদ" বাক্য দ্বার উপনিষদহ 


প্রতিপাদ্য হইতেছে। হথতরাং এই পুরাণ শব্দ ব্রহ্মবৈবর্তীদি নবীন গ্রন্থবেধক না হইয়। 
বিশেষণ রূপেই ব্যবহৃত হইয়াছে ।” 


১২০ দয়নন্দ-চরিত। 


“1100 08400011715 2711%20] 2139702155] 09 006 1570,]6 
07058017750 09917 27) 005 109010106 06 000990৮ [ মিএ5 00) 
1১501 1 দিত 57৩ 10110 2001 059 1৪017 0) 19501700681 
৮০11৮ 0০ ১০০ 1110 171 00101981707 101) 07010000006 10307815109915 
9110 0100. 0৮ (০0138110165, 00770 50160102176 অন (0008 80 15 
10151600776 91701001076 টি1)10010 20 60008001901)018- 
0901) 01130108105 59010)04 1০0090 60 [ঘা 10076 ৮0101071 01 
৭ 509811 11905৩ 2000 0000 912১ 12126 070017 10871770180 17001110955 
(101, 10 আ85 10101170771 10508, 000 08115100005 0001780)6 
চ]1 10517) 0105৬৩1)106, 000 80010100085 3070817701199010 
710 07100, 28001 10 50০. 8130 11591) 10. 01:0151১000 স111) 11) 
10050] 16911001710 0০90১ 1706 81907, 10950৬01096 07 10845 
060)0 01090019910 0 072 79700150109 21571050190015 
0৬৫]: 51511611111) 01010450170% 010 16 5০0160]7010006 10001)910 
০1100. 6016০107016 6 14501007050 070 19106 1301160705 11 
00110019111 1715 ০9010 097110165 2100 90611001701 11100৩750 09 
(60২0 8017) 170010001 010 17600172021) 2070. 09 817120106 » 96910116 
0151১100019] 05100170711] 2770 07500010000 098705 11) 0106 09 
৪18) 00 ০২০11010)0100 135 2 05052006 চো 69080] 0061] তিন 
(11070 ৪৪ 7: 001071001072007 0010 0)0199800077005 0750 096) 
০৮৭ আঃ 06 08৯ 0৮ 217 70091)5 120) 001 0৮ হিট 206 
01519110000 60017 01502 011 0)6770 06 বি 95500019002) 07৪ 
[1555 17610 07976090068 এ লো এ10715 10995 ১10 1450৫ 
10 20003 07090100% ক চি 006 তি] 0016 অিকিও টি 
5016 81101 01951060..51010 0150৪5৪100017010001)050 129 108৮২ 
10007 55107010817016 07025 0৩ লা ০০৭ 081001 
/119 1020 1)201) 7191১011815 09059910000 08050 0 0111)0003:%, 
৮1001060106 801010160 07৩ ড০৫০5 ১ 07 2861)07105- ৯৮101) 
61511700617 80759010, 170 100065000. 081701781818, 00 0/9006 
[07558505 0010) 05 ০0৮৭ 30170001017510018015) £25/%272402- 
774727/% (৮0151000091 319165) 80০ 051107510680 06991116005 2848- 
০1818116007 901010 611016 (7150 10 ১9050108106 01995 [010 0105 
10120125-2501596 1085407200051751505101775 09585 0026 09 
0101৮ 80101660009. 17105107110) 51781118]500155১ 855 ৪ 
2001)0110810156, 10207950 001017000 02) 1170 ৬০৭৭৪, ৬1510101010, 
(079 ৫10৭ ৬০৫৪1)05ট 17091019971 05096109 % ৬০৭৪1) ১০০ 
0000 076 91)4101218-50055 8555৫ 10558087025 00 510৬ 05 
16 ৮/2500117000 07 0100 ০৫৭9. 461 901378 1759109.001) 1952 
10200479116 086 179. ০০10 0০9 11715 01017 8061 16091710500 
0০. ৬625, 99 1১8 010 006 1:5000770)061 0106 %/1)০16 ০1 05210, 
৬1518001800 টায় ও000000209 8210 10050০10006 00086 
16 91১0010 000 35610078616 90 855 8 668:0161 17 03529155- 1072- 
172008. 1501150) 03561000501 075 79179105118. 005 1০91 01 016 
৬৩০৪৪ 10. 1019 1056009, 00005160007: ড191)590909008 809. 


বিচার বিষয়ে বিভিন্ন মত। ১২১ 


+5990181007815 85507600. 06 0765 1570৮ 0)0 11016 0110)6 
৬৩৫83 107 10521 [15001001194 5০৮০1] 003610175..50010 105 
[02520810900 510 040 105 0190010075 1)50 25581090101)1ও 
00817 059৮ ০9৪10 1850, 11795০09010 2155/61 170170 5) 118 
70950190105. 4 1550 59190879105 0০900 90 000 07098৭01010 
01500951012 20211 05 8510176 10558172708 10004700007) 
1/70/77706 (11560555) 81794 1/%/2 (0010658) ০০০০1115 1 ঢোত ভিওএন5 
11৫ 100 58100001) 110180%, 0০ 277815003 010, 01011011007 
[১1০09, 0069 010 700 00 50. 4 170100011715 01)1)01731715 1121৩01071 
(91015 17510150500 165 01507 00800 0950107017156760155৭ 
6৩ ০9016067655 0610 9: 1৩ 09০9 11605 500081৮015 10016 
6095100 ৮0110016 00 ০0707010 1 [107 01700070002) 8 
72001691180 1219806, 0)1900000 ত০ 168595 018. ৬০৫10 7] ১., 8710, 
1০801110 ৪ 0855800 00110810111 010 ০910 41১01810855 28৮0৫ 09 
120 0715 10715091760. 108791024005,1501160 2 6 ৯5 (10010 
31001919 81 831600150, 10080110595001600 200 10060701070175৮ 
1021009,  ড151)001)875005) 01781101121110 0015 10050101505 007)) 50106 
01501055107 00119508300 109 5781800901081001716007655 7 020 
৮1850 81] 5501000 00 80001050011] 1. 70171) [015011755002155 
80817 01908000 6০ 00701198505 ০08. ৬০০1০ 113. 91) 1680 
ও. 10555859108 015 00170010, 0086 91990 006 00170100108 
7/27%৫ (58011500) 00721580175 01 072 1১0181)5 59110010190 17040 
90 06 [0৮৮ 085, ৪10 851050 170৬ 006 00 0১012178509 019 06 
00010 20 201506150. 10758108102 6০০৮ 079 015. 10 1715 বায 
00 106গু8) 00107601050 1780 27551 1)6 91010100150, [1৯ 
01900121705 7160 096 050 10711010005) 2110. 95 501]1 100 208৬01 
৮/৪5. (01070017100, 069 1095, 10011176800 08111020906 0090 179 
॥23 10810810100 20501 710 ৮৮55 00081:00, 8170 01 9018, 
1106 8055/01, 1)6 2,0061%8105 [901151050 10115 08120171065 


ইহার ভাবার্থ এই,_“দয়ানন্দ কোন্‌ সময়ে কাশীতে আমিরাছিলেন বলিতে 
পারি না। তবে অক্টোবর মাসের আরস্তেই আপসিয়াছিলেন বলিয়া বোধ হয়। 
আমি কাশীতে প্রত্যাগত হইয়া নবেম্বর মাসে তাহার সহিত সাক্ষাৎ করি। 
ভরতপুরের মহারাজ সমভিব্যাহারে আমি তীহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে যাই। 
আমাদিগের সঙ্গে ছুই এক জন পণ্ডিতও গিয়াছিলেন। তখন দয়ানন্দকে 
লইয়া! কাশীধামে তুমুল আন্দোলন উপস্থিত হইতেছিল। কাণীস্থ ব্রাহ্মণ ও 
শিক্ষিত ব্যক্তিগণ দলে দলে তাহার নিকট গমন করিতেছিলেন। দয়ানন্দ 
*একটি অনতি-বিস্তৃত_ গৃহের বারান্দাতে বসিয়া সমাগত লোকদিগের সহিত 


৯1060005087) [7001018010091 97160001870 10900 0 075 7000208 
0 01] 3, 37-23, 





১ 


১২২ দয়ানন্দ-চরিত। 


আলাপ করিতেন। সেই গৃহটি হন্মান-কুগ্ডের নিকটস্থ একটি বিস্তৃত উদ্যানের - 
প্রান্তভাগে অবস্থিত। প্রাতঃকাল হইতে সন্ধ্যাকাল পর্যন্ত নানা শ্রেণীর 
লোক অ্রোতের স্যার অবিশ্রান্ত ভাবে সেই গৃহ-বারান্দায় উপস্থিত হইত। 
তাহাদিগের ভিতর কেহ দয়াঁনন্দকে কেবল দেখিবার জন্য, এবং কেহ কেহ 
তাহার সহিত আলাপ ঝ৷ শাস্ত্রীলোচন। করিবার নিমিত্ত তথায় গমন করিত। 
কাশীর কোন সমাজপতি কিংদা কোন গ্রসিদ্ধি-সম্পন্ন পঞ্ডিতকে দয়ানন্দের 
নিকট গমন করিতে দেখা যাইত না। তবে হইতে পারে যে, তাহারা গুপ্ত 
_ ভাবে গতায়াত করিতেন। ক্রমশঃ দয়ানন্দকে লইয়া আন্দোলন এতদূর 
প্রবল হইয়া উঠিল যে, কাশীরাজ সভাস্থ পণ্ডিত ও অপরাপর সন্্ান্ত ব্যক্তি- 
দিগের পরামর্শ অনুসারে তাহার সহিত প্রকাশ্তভাবে বিচার করাই যুক্তিসঙ্গত 
বিবেচনা করিলেন। কারণ তাহার! বুঝিতে পারিয়াছিলেন যে, বিচার-ক্ষেত্রে 
দয়ানন্ূকে পরাভূত করিতে না পারিলে সেই উচ্ছমিত আঁন্দোলন-আোত 
কিছুতেই নিবারিত হইবে না। এতদ্বারা বোঁধ হয় যে, কোঁন না কোন 
প্রকারে দয়ানন্দকে পরার্খিত করাই তীহাদিগের প্রথমাবধি সংকল্প ছিল। 
যাহা হউক ১৭ই নবেম্বর তীহার সহিত বিচারের দিন নিরূপিত হইল। 
সেই দিন অপরাহ্ন সময়ে পৃর্বোল্লিখিত উদ্যানে কাণীরাজ উপস্থিত হইয়া 
বিচারসভার সভাপতির আসন গ্রহণ করিলেন। বেলা তিন ঘটিকার 
সমক্প বিচারারস্ত করিয়! সন্ধ্যা সাত ঘটিকার সময় সমাপ্ত করা হইল। প্রথমতঃ 
দয়ানন্দ রাজপপ্তিত তারাচরণকে জিজ্ঞাসা! করিলেন যে, বেদের প্রামাণিকতা৷ 
তিনি স্বীকার করেন কি না? তহুত্তরে তারাঁচরণ উহা! স্বীকার করায় বেদের 
কোন স্থলে পাষাণাদি মৃ্তিপূজার বিধি আছে কি না, এই বিষয়ে দয়ানন্দ তাঁহাকে 
প্রশ্ন করিলেন। তাহার উত্তরে তারাচরণ পুরাণের প্রমাণ উপস্থিত করিবার 
চেষ্টা করিতে লাগিলেন । তাহ! দেখিয়া দয়ানন্দ বলিলেন যে, তিনি মনুস্থৃতি 
ও শারীরক-সথত্র প্রভৃতি বেদমূলক গ্রন্থ ভিন্ন অপর কোন গ্রন্থের প্রামাণিকতা 
স্বীকার করেন না। এই কথার উত্তরে প্রসিদ্ধ বৈদাস্তিক বিশুদ্ধানন্দ স্বামী 
একটি বেদান্তস্বত্র আবৃত্তি পূর্বক দয়ানন্দকে জিজ্ঞানী করিলেন যে, বেদে 
তাহার কোন মূল আছে কি না? তাহাতে দয়ানন্দ কিছুক্ষণ ইতস্ততঃ করিয়া 
বলিলেন বে, বেদের গ্রন্থ না দেখিয়া তিনি এই কথার উত্তর দিতে পারেন 


বিচার বিষয়ে বিভিন্ন মত। ১২৩ 


না। তছুত্তরে বিশুদ্ধানন্দ কিঞ্চিৎ অবজ্ঞা সহকারে বলিলেন যে, বদি গ্রন্থ ন। 
দেখিয়া বলিতে ন| পারেন, ভাহা হইলে কাশীতে বিচার করিতে আস! 
তাহার পক্ষে উটিত হয় নাই। তাহাতে দয়ানন্দ বলিলেন,--সমগ্র বেদ স্থৃতি 
পটে অঙ্কিত করিয়া রাখা কোন পণ্ডিতের পক্ষেই সম্ভব নহে। তাহা শুনিয়া 
বিশুদ্ধানন্দ প্রভৃতি প্ডিতগণ বলিলেন যে, সমগ্র বেদ ভাহাঁদের সকলেরই 
কণ্ঠস্থ রহিয়াছে। তখন দয়ানন্দ তাহাদিগকে কতকগুলি প্রশ্ন উপধু্পরি 
জিজ্ঞাসা করিতে লাগিলেন। কিন্তু তাহারা দয়ানন্দের একটি প্রশ্নেরও 
উত্তর দিতে পারিলেন না। তদ্বার! সমগ্র বেদ যে, তাহাদিগের কাহারও কষ্ঠস্থ 
নহে, তাহাই প্রতিপন্ন হইল। তাহার পর ধেদে প্রতিমা ও পুণ্তি শব্দ আছে 
কি না, এই কথা পঞ্ডিতগণ দরানন্মকে জিজ্ঞাসা করিলেন। তদুত্তরে তিনি 
বলিলেন যে, বেদে এই ছুই শব আছে বটে, কিন্তু এই ছুই শব্দ মুক্তি পূজা অথে 
ব্যবহৃত হ্য় নাই। তৎপরে যে যে অর্থে এই দুই শব ব্যবহৃত হইয়াছে, 
দয়ানন্দ তাহার ব্যাখ্যা করিয়! বুঝাইয়৷ দিলেন। তাহার ব্যাখ্যা বিষয়ে 
পণ্তিতদিগের কেহই কোন আপত্তি করিলেন না। এতদ্বারা বুঝা গেল 
যে, হয় পপ্তিতগণ এই ছুই শবের যথার্থ অর্থ জানিতেন না, না হয় 
তাহারা বেদের সহিত উত্তমরূপে পরিচিত ছিলেন না। ঘাঁহা হউক কিছু 
ক্ষণ পরে মাধবাঁচা্য নামক একজন অখ্যাতনামা পণ্ডিত বেদের ছুইখানি 
পত্র বাহির করিলেন, এবং তন্মধ্যস্থিত পুরাণ শৰের অর্থ কি জিজ্ঞাসা করায় 
দয়ানন্দ তাহ! বিশেষণ বলিয়া ব্যাখ্যা করিয়া দিলেন। কিন্তু বিশুদ্ধানন্দ সেই 
ব্যাখ্যা ত্রাস্ত বলিয়া স্পর্ধা সহকারে প্রতিপন্ন করিবার চেষ্টা করিতে লাগিলেন । 
তখন সেই পুরাণ শবের ব্যাকরণান্ধমোদিত অর্থ লইয়! কিছুক্ষণ বিচার চলিতে 
লাঁগিল। কিন্ত অবশেষে আপত্তিকারীদিগকে নীরব হইয়া থাকিতে হইল। 
তদনস্তপ্ন পূর্বোদ্ত মাধবাঁচারয্য পুনর্ধার ছুইখানি বেদপত্র বাহির করিয়া পাঠ 
করিলেন। তাহাতে লিখিত ছিল যে, যজমাঁন যজ্ঞের পর দশম দিবসে পুরাণ 
শ্রবণ করিবেন। সেই পুরাণ শব কাহার বিশেষণ, মাঁধবাচার্ধ্য এই কথা দয়া- 
নন্দকে জিজ্ঞাসা করিলেন। দয়ানন্দ সেই উল্লিখিত অংশ মনোযোগ পূর্ব্বক 
দেখিবার অভিপ্রায়ে বেদপত্র  ছুইখানি হস্তে লইলেন। তিনি হস্তস্থিত বেদ- 
পত্রের প্রতি ছুই মিনিট কালও দৃষ্টিপাত করেন নাই, এমন সময়ে পণ্ডিতগণ 


উহ দয়ানন্দ-চরিত। 


দণ্ডারমান হইয়া, দয়ানন্দ উত্তর দিতে পারিলেন না__দয়াননদ পরাজিত হইলেন, 
এই কথ! উপহাস সহকারে ও উচ্চৈঃস্বরে বলিতে বলিতে চলিয়া গেলেন। 
ঝলা বাহুল্য থে, দয়ানন্দ তাহার উত্তর কাশীর বিচার-পুস্তকে পরে প্রকাশিত 
করিয়াছিলেন |” 
এই সম্পকে নিয্নলিখিত বুস্বান্তটি স্প্রসিদ্ধ পায়োনিয়র পত্রিকা হইতে 
তহইল। খদিও বৃত্তান্তটি বহুদিন পরে লিখিত, তথাপি পাঠকদিগের 
বি উপস্থিত বিষয়ে একটি উজ্জল ও যথাযথ চিত্র অস্কিত করিবার অভি- 
প্রায়েই আমরা ইহা! প্রকাশিত করিলাম । বৃত্তাত্তটি এইরূপ )_ 


নিচ ৮05 2029000050 56215 280 0720 1)28772020 921255701 9৮212110206 
1015 ঠিডেত 4207 96130187655 0776৮ 007 », 00791107026 19 10 1১000115 
01190702755 09 17661 1)11]7100 01505550702. 00050101) 1১167 1001210% 25 
50000101760 1১ 00 5250764 ৬77107785 01 006 170050005- 00770 000116789 
25 90:00 00১ 09 170 1১01)0105 ১0১00007106 [98007086200 19191900077 
91006 1100)002] 01150001655 89561019190 চা. 0: 287001)-1)0056 13620 006 
16]01910 ০ 1901৮ 111)০ 1120001%)700005610 07951060000 006 706510 
11070760501 )০91776010710905 5010. 17500527905 0 16. 00105001211 
চ১700800 07675 00 10155 008 81980 00000015%- 40186 50056301010 66 
01701613219, 510851175 1206 & 07005550710 010১7091070 091156) 136772799, 
200. 1১00 গান, আরা 12100018002) 1016 5120102020705 090 1200070 
39597), 01119710701 501১9600167] 1011)6. 172 1716. 01500955100. , 206 
99059017085 07 00617066070 ৮৮676. (21597300৭77) 0 থ. 11901001917) 01১6 
79615020101) 16210100 601101 06065477722 (00011500010) 006. 13110110- 
07০০০ 170102)) 20 ৮/)10]) 7016 0001191)60. 11) 1015 10011171) 92109]00 
100170)0)5000]706 72174 4777274 107777722১5] 10050 50101060165 
006 0065010) 2:15506 ৮129 /11011)671001205 2352000090৩ 1)5 09৩ 520760 
11010850706 130050095, 1076 1১817015 01£60 6151 0106 56025 010 1800 
119 0106 0£ 1179 16300111020 001761005 0) 076 75৬5, 01911750019 7501)1010 1001 
/01510119 1110 10 19018756510500) 67000176010 1076 ১2) 0520150 
11১6 2001)90680750 017815066)0100627/5255 8:556/00)£) 80000080080) 00567 
071005 0720 009 আটো 277 চা25 10052112101) ১৪৫ »5 00) 201600%) 000 
9009৫ 25 ৪, 002119100 /0101১61076 279 ৬0100 00800050205 0150105100 (9 
21701001016 00750105000 0079] 02010) 1000100017069 000৮ 05৩ ৮০070 
47477 95 &107090611002067 2000 09515700150 00019 00101520160 11025 
1000106 000 870000-0]0 01 07006৮771100001507, 2000 5৮201 00021197706 
076 7030105 00 51)0%/ 18111) 10) 210) 1১001015 90016 ০010 %/7101005১ 00৪ 059৫ 0? 
006 ৮010 %5 চে 1001), 601109700002591 02 015 02059507601 0006 1707)0155 

10200960060 096 0076500৮101 5017 16269 062. ৮৫] 5801:60 ৯৮০1৩ ৮/1)036 
5007000003৩ 9৮201009010. 006 0555, 00120771062 ৮5%ে ০৫. 0560 
25 2: 5050502058- ও 6107 00. 06 0210 01075 15217760 32001) 00 00207 
116 09: 0017500000012 01 00058010009) 00810 1726 16 00167158, 2076 
3৬910117070 00110151060) 2110 015 1১7730165 0198101050 16171020005 018 
0007000, £) 21060000055 00806 0৮ 50171 (0100]017 91)05 00 10901 016 
১৮7০0100009 10010 2 0675000 00708015610906 00 টা টিত 005 0005010 ) 
90650102172 006 10101021015 0 01761080075] 00006 ০0 ৮৮015107১০৮ 076 
01556170601 076 11710272121) 09670019000) 90011101901 01817501010 205 
১৬০0) 16001106000 13622165001 50176 0255, 00৮ 16120 1051 115 07590175, 
00 016 76001001116 ৮010৮৮96016 [01001556700 201950,00 81500617 0) 


বিচার বিষয়ে বিভিন্ন মত। ১২৫ 


16215 01170 10005 11173085,0075 15 7 01050700151760 66900 01স টিনা 
০079001২100) 0016 13721000005 01191081010 060 91016919844] 000). 
(:0৮015-৮ ৯ 
ইহীর মন্দ এই ;-প্রায় দশ বৎসর পুৰে স্বামী দরানন্দ সরস্বতীর সহিত 
কাণীস্থ পণ্ডিতদিগের প্রথম শান্ত্রবিচার হয়। সেই বিচারস্ষে্রে মুদতিপূজা 
বেদাি শান্রসম্মত কি না, তাহাই প্রমাণিত করিবার জগ্ত দয়ানন্দ কাশার 
পণ্ডিতবর্গকে স্পদ্ধীর সহিত আহ্বান করেন। পণ্তিতগণ দয়ানন্দ কক 
আহত এবং কাশীরাজের পরিচালনায় পরিচালিত হইয়া খিচারা্খ উপস্থিত 
হয়েন। ছুর্গামন্দিরের নিকটস্থ একটি উদ্যান-বাটিকাতে মহাবিচারের 
আয়োজন হয়। স্বয়ং কাশীরাজ বিচার-সভার সভাপতি ছিলেন। শত 
শত সুশিক্ষিত পণ্ডিত-পুরোহিত এবং সহস্র সহ অশিক্ষিত ব্যক্তি মহাবিচার 
দেখিবার অভিপ্রায়ে তথায় উপস্থিত হ্ইয়াছিলেন। কার রাজপণ্ডিত 
তারাচরণ তর্করত্ব ও সংস্কৃত কলেজের ভূতপূর্বব অধ্যাপক পণ্ডিত বাল শান্ত্ী 
সমাগত পঙ্ডিতমগুলীর প্রতিনিধিরূপে দয়ানন্দের সহিত শান্ত্রবিচারে প্রবৃত্ত 
হয়েন। পরে অপরাপর পণ্ডিতগণও তাহাদিগের .সঙ্কে যোগদান করেন। 
প্রত্নকত্র-নন্দিনী নামক সংস্কৃত মাসিক পত্রিকার সম্পাদক বিচার-বিবরণ 
লিপিবদ্ধ করিয়াছিলেন । প্রত্বকম্র-নন্দিনীতে সেই ব্চার-বিবরণ পরে প্রকা- 
শিতও হইয্াছিল। যাহা হউক জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন সম্বন্ধে পণ্ডিতগণ দৃঢ়তার 
সহিত বলেন ধে, ঘিদিদিগের নিষেধ-স্ুচক দশাদেশের মত মৃত্তিপূজা বেদে 
বিশিষ্টভাবে নিষিদ্ধ হর নাই। তত্তিন্ন পুরাণে ত ম্পষ্টাক্ষরেই উহার বিধি রহি-' 
য়াছে। কিন্তু দয়ানন্দ পুরাণের প্রামাণিকতা স্বীকার করেন নাই ;--বিশেষতঃ 
পুরাণ শব্দটি যে প্রাচীনতর গ্রন্থে বিশেষণরূপেই ব্যবহৃত হইয়াছে, তাহা তিনি 
সপ্রমাণ করিবার চেষ্টা করেন। পক্ষান্তরে পঙ্ডিতগণ উহা! বিশেষ্য বলিয়! 
প্রতিপাদনার্থ তর্ক করিয়াছিলেন । তাহার পর দয়ানন্দ বেদের কোন স্থলে 
পুরাণ শব্দ বিশেষ্যূপে ব্যবহৃত হইয়াছে কি না, তাহা! প্রদর্শনার্থ পণ্তিতদিগকে 
অনুরোধ করেন। এমত সময়ে জনৈক পণ্ডিত একখানি প্রামাণ্য গ্রন্থের 
*কএকটি. পত্র উপস্থিত করিয়। তাহা হইন্ডে পুরাণ শব্দ বিশেষ্য-বাচক বলিয়া 


ঈ 5 17100667 1889 0500915 8, 


১২৬ দয়ানন্দ-চরিত। 


ব্লিতে না পারিয়া নতশির হইয়া বুহিলেন। এইরূপে কারীর পণ্ডিতগণ 
বিচারে জয়লাভ করিয়া করতালি প্রদান করিতে থাকেন। কতকগুলি 
উগ্র-প্রক্কতি অশিক্ষিত ব্যক্তি দয়ানন্দের দেহস্পর্শ করিতে উদ্যত হইলেও 
কানীরাজের সমক্ষে তাহা করিয়া উঠিতে পারে নাই। বিচারের পর দয়ানন্দ 
যে কএক দিন কাঁশীতে ছিলেন, সে কএক দিন তাহাকে হুতমান বা হৃত- 
গৌরব হইয়া! থাকিতে হইয়াছিল । এদিকে পণ্ডিতগণের বিজয়-মংবাদ চারিদিকে 
বিঘোধিত হওয়ায় হিন্দুদিগের হৃদয় আনন্দে উৎফুল্ল হইতে লাগিল। ফলতঃ 
বারাণদীর পণ্ডিতদিগের সহিত দয়ানন্দের প্রথমবারের শান্ত্রবিচার সম্বন্ধে 
এই বৃত্ান্তটি যে অনতিরপ্রিত ও যথাযথ, তদ্বিষয়ে অগুমাত্রও সন্দেহ হইতে 
পারে না”? 


কিন্তু উল্লিখিত বৃত্তাত্তটি অযথা বলিয়া এক ব্যক্তি এইরূপে উহার প্রতি- 
বাদ করিয়াছেন 


€] 76217) ঠি0ে) 81510 075 902115০৫076. 01508351027) 007 10765 ০৪1৭ 
1091015 09 1701610161015 09 006 10210700150 1550675- 10055 দ1)0 0906. 
2 9139012] 11766765110 1006. 00100%2155 00205 1501 00 ও. 50211 020070150 
€70050 0)6 570250507 17100) 02706 02001 1165975, 1317] 131190539 
10955, 0? 76)32755. 30006 1 00 92% ছুঃআ 018 00650007) 2 15506 29 
16000340120 15 527000060. 79 ৮৩ ০95 %10105 20001017)8 000) 
9:07000%: 17108) 276 101%1776 1২6518000.. 1115 3৮20001,00910051060 020 
0১5 ৮6095 00 00177001096 1001200) 200 0036 15010105 010. 7)0600:00006,21 
05৪ 0706, 1007 07856 0190 01000080 510067 &. 5081৩ 0855856 ঠি01 005 6085 
(012 00814 01510059 055 52101 00700 015 চ091001, 10079 20500 0006 
[80015 ৮76. 6য17677017 65091৮6, 2105 1)01৩ ০০077019257 25 201901167 
12) 2. 188910712:45/2507 035 13121000105 070 0০06 ০০00506 01001 21501016005 
10076 00131 2115585) এ: 8760. 07. 81510800507) ৮810095 700705 ০ 
চঢা7000517507090700) 19810) 200. 921591016 190000217 0107 00200006005 
16850697710 0005 07910. 0085010100৭ 02) ৯: 100 005 005. 01 005 
29056 2005১1১০101 2555: 026 09৩ 5৮801 5800 07৪ ০156 0600 চা! 
162৮6 00৮ 9007" 1011270211650875 (0 189£6,? % 


ইহার মর্ম এই £__“কাশীর বিচার-বৃতবীস্ত পুঙ্থান্ুপুঙ্খ ভাবে প্রকাশিত 
করা এই স্থলের পক্ষে উপযোগী নহে। তবে ধাঁহারা এই বিষয়ের তথ্য 
জানিতে ইচ্ছা করেন, তাহারা তথাকার ব্রিজভূষণ দাঁসের নিকট হইতে 
কাণী-শাস্তার্থ নামক পুক্তিকা ক্রয় করিয়া পাঠ করিতে পারেন। মুদ্তিপূজা 
বেদান্ুমোদিত কি না, এই প্রশ্নই কাশীর বিচারের মূল প্রশ্ন ছিল। কিন্তু 
পণ্ডিতগণ মূল প্রশ্নের কোন প্রকার উত্তর প্রদান করিতে ন! পারিয়া নানা 


*:1007607070661188০ 1810047% 15, 








বিচার বিষয়ে বিভিন্ন মত। ১২৭ 


অপ্রাসঙ্গিক কথার আলোচনা করিয়াছিলেন। বলিতে কি, মুল বিষয়টি 
ছাড়িয়া দিয়া এবং অপরাপর নান! বিষয়ে নানা অপ্রাসঙ্গিক কথ! উখ্বাপিত 
করিয়া ক।শীব শণ্ডিতগণ সেই বিচার-ব্যাপারকে প্রকৃত পক্ষেই একটা তামাস! 
করিয়া তুলিয়াছিলেন। এইবপ স্থলে * * কি প্রকারে বলেন বে, স্বামিজী 
কাশীর পণ্তিতদিগের নিকট পরাজিত হইয়াছেন !” 


উপস্থিত বিষয়ে অপর এক ব্যক্তির মত উদ্ধৃত হইল । তিনি লিখিয়াছেন,__ 


পুত 50000001001 01000100170 20,1)18905 17100) 20000100009 
171708 00900001098 91705 02 00004517001 91৮25 270 চি 076760976 201 
11910150005 10802150006 62710500275) 0003 1006151১900 51021500009 105 
19815021005 0৮ 086 21010670050 01 8 5286. [00 (70126101010 02076 06 
(015 £7500 06759010850 15 10952127009. 827055200176 005 00106 100) 07 
859/60. 09160. 906 &1%17 20620177010 00176 [916501)0 5550911) 06 1117704 
/01:91)1], 176 00510751106 ৬০25 101১6 0170 01815 101117005 1900015 ০01075 
01 26£810 200 50155 000 10025 25 00001511)810-155156৭ 80016577006 00 
10107) 01 50100 31016%0 1121)10720)5 010 12667 00000] (1১0 501১567৬1১0 
01 8617 50155) £800৮65, 1006 ৬505) 5255 170) 8170116191170076 100] 01 
51010) 215 006 007000167855 00 2705 200 (7680 1000) 0013600055 10 1070601 
1012 7) 2700101620 5007050706 2০ 076 81207202080) 06 00200487070 
11789111261 ৮1101007179 17251050076 87620 720710105 20007601106 06 13077571255 
£ ত্রা005 20019000064 1989/2%2 0901: 11500100156] 1)250101)07 
52125595101 200. 006 12700155006 05 1206570001005100176 0701৮ 7085106 
15271701716 2070, 166] 15187001000 05655505709. 10) 2 51৮01 0150010- 
70010, 7100106 1010)09551916 00 05100000600). 01000 0000 05 চে 16019 
015011551010) 06 621)0115 0650)7160 10 1116 200191101) 069. 517)15168 0100 10 501)- 
5675 00017 0000)056, 1076) 7১:05 06170 00)6 57£0. 200 60706 00700 076 
[01900510021 5250760. 01001209 270 13511060060] (0 0176 99.105576 
52317105016 5 2 66 00006 56095. 1076181107 ম25 [99046111)% 0৮61: 
7 7100 009 15050 011১2750115 1769060197 000 110))2121917101005616 0207064 
00107787005 91870151006 076 05096 06 076 81601 72910016170 10)6 11181905 
সঞাটত,100700818100010560 21080052015 10207 0900806 2000 8970 
06580706106 06006 11213979151) 1)7)0120002, 9৮৮10011085 001 1051 000186. 116 
15 501] 21 075 15118190500201650 10) 00010 69117050795 11200 0০ 
00021721009) 0006 5190005 000800006010 00600105001 2.1050 01000976705, চ9 
125 00 51610 06 0807 00 70100506 10170) 200 00050200161: 06৮10090115 ৮2 
10001005217 1005 1১270100095 18905 10901197760 21১80000015 55100 28108 
[01)2000, 100)901) 50200৮0005 09100912506 0)0161181005 00100652190 
2110060 60) 220 11251595060. 2 01700]9) 59117)601. 0016 1১2310105০৫ 136719165 
69 970৬ 1310) 081৮ 06 076 ড5025 52170100105 1001-%/0151)10- 0 0706 1085 
৬০010160 (0,2)9156 1015 210106812))06- 

“6৪006 075 2586 9006 0৫075 58262670900 00 00710170500 102) 10 
2, 51550 2700. 80001010815 60019 40015080627 10076213200 136116185, 
10 11010) 10700200000 88100706095 (060 009 015 061000121% 165106706- 05 
[15101-116 201092190501 0১6 ৬6126127015 ১2100115005 00661] 0081)05021)05 
200. 01710-1116 51050110105 05809. 00. 00 771005 0. 10007555100 17601 10706 
59050. ৬1167 116 ০6৪7. 60 5[99510 72772 01001090 00102 1715 11009) ৪00 
1115 7159 17500006025 16 886 05:00:06 83৩ 00 076. 007১9100100 0020 016 
20106) 228 01 [19019 1795 1706 81698501567 0158707968190, 0016 £1০৪ [81011 
20৮ 08 96215 06 16552101) 1010 00. 6095 185 001) 10 16. 09. 
61451000080 0365 00 706 50০৮0100186 2 2 250. 0৮ 005 ৮16৬ 901 


১২৮ দয়ানন্দ-চরিত। 


1657150117017)2 076 ৮০010 76117197701 006 97001010052780506 [78019) 006 0005 
060160৮1097 1015 1101551010 ৮ 1011810081700011770017- 1775 1005 10010 20160 10 
211 ২71101560105211605) 176 185 85501706006 80516171665 0৫ ৪0 0000000 
27051005৮70 100 075 0001)৩06758570120108 10170001577 2000.5600717)8 » 
17511780017 07005 00070912061 0) 006 ৮16৮ 06 1[)101700110201)800/7601 
(116015016 190001005 2৮70. 01519611110 0)010150110675100108 01 07601550776 
১7777452527) 1707501105 ৯70 17019 0800010150 0005 006 08) 0০00000৩ 01 
06 ৬675, 706 1500৬ 20997018800 01590070160 &10. 81)1181)06160 1)160)1011 
(9 95121১1151) % ৬9010 5000901১ 1176 167.0156751)00 01 আ010 075 স1]] 77095818015 
80090.) * 

উপরি উদ্ধত ইংরাজি অংশের তাৎপর্য এই £-কাশীক্ষেত্র মূত্িপুজার 
দুর্মস্বর্ূপ,__অধিকন্ত মহাদেবের ব্লিশুলোপরি প্রতিষ্ঠিত বলিয়া কাশীধাম 
ভূমিকম্পনেও কখন কম্পিত হয় না। কিন্তু সম্প্রতি, গুজরাটদেশীয় 
একজন সন্যাসীর আবির্ভাব বা প্রভাবে কাশীধাম কম্পিত হইয়া উঠিয়াছে। 
সন্র্যাপীর নাম দয়ানন্দ সরম্বতী। হিন্দুদিগের মৃত্তিপূজা উচ্ছেদ করিবার 
মানসেই সরম্বতী মহাশয় কাশীতে উপস্থিত হুইয়়াছেন। তিনি বেদকে 
হিন্দুর একমাত্র ধর্মশান্ত্ব বলিয়া! সম্মান করেন, এবং পুরাণাদি গ্রন্থকে কল্পনা- 
কল্পিত,--বিশেষতঃ স্বার্থপরায়ণ আধুনিক পণ্ডিতদিগের বুদ্ধি-প্রহুত বলিয়াই 
অগ্রাহ্য করিয়া থাকেন। দয়ানন্দ বলেন ঘে, বেদে আদৌ মৃত্তিপূজার প্রসঙ্গ 
নাই। এমন কি যর্দি বেদের কোন স্থুলে মূদ্তিপূজার কোন প্রসঙ্গ থাকে, 
তবে তাহা দেখাইবার নিমিত্ত তিনি কাণীস্থ পণ্ডিতমগ্ডলীকে বিচারক্ষেত্রে 
আহ্বান করিয়াছেন। তদনগুসারে রামনগরের 1 মহারাজা কাণীস্থ পণ্ডিত ও 
অপরাপর শিক্ষিত ব্যক্তিদিগকে লইয়৷ কিছুদিন পুর্ববে এক মহাসভার অধি- 
বেশন করিয়াছিলেন । সভাতে দয়ানন্দের সহিত পণ্ডিতগণের বহুক্ষণব্যাপী 
বাকৃ-ুদ্ধ হইয়াছিল। শাস্ত্র সম্বন্ধে পণ্ডতদিগের তীক্ষদৃষ্টি থাকিলেও তীহারা 
নিঃসংশয়িতরূপে দয়ানন্দের নিকট পরাজিত হুইয়াছিলেন। বলিতে কি, 
তাহাকে স্তায়াহুমোদিত বিচারে পরাজিত করা৷ অসম্ভব বুবিতে পারিয়া প্ডিত- 
গণ অন্তায়ান্থমৌদিত বিচারের আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছিলেন। তাহারা মুস্ত 


পূজা বেদ-প্রতিপাদিত বলিয়া প্রমাণিত করিবার অভিপ্রায়ে কএকটি পৌরা- 





*00617100000 12501061870 12170815 57, 
1 রাঁমনগরে থাকেন বলিয়! কাশীর মহারাজাকে রামনগরের মহারাঁজাও বলিয়৷ থাকে। 
রামনগর কাশীতলবাহিনী গঙ্গার অপর পারেই প্রতিষ্ঠিত । 


বিচার বিষয়ে বিভিন্ন মত। ১২৯ 


'ণিক মন্ত্র * বৈদিক মঙ্রপে উল্লেখ পুর্বক দয়ানন্দের হস্তে অ্পণ করিয়া- 
ছিলেন। দয়াননদ অর্পিত ও পত্রলিখিত মন্ত্র কএকটি দেখিতেছেন মাত্র, এমত 
সময়ে পণ্ডিতগণ করতালি প্রদান করিয়া বূলিয়া উঠিলেন বে, দয়ানন্দ পরাজিত 
হইয়াছেন। দয়ানন্দ পণ্ডিতদিগের এইরূপ অন্তায় ব্যবহারে ছুঃথিত হইলেও 
নিরুৎসাহ হইম্া! পড়েন নাই। অধিক কি, তিনি এখনও অধিকতর উৎ- 
সাহের মহিত তথাকার পণ্ডিতদিগকে শান্ত্রসংগ্রামে আহ্বান করিতেছেন। 
তিনি একাকী হইলেও বিপক্ষদলের ভিতর বীরের ন্আায় অবিচলিত হইয়া 
রহিয়াছেন। কারণ দয়ানন্দ সত্যরূপ দুর্ভেদ্য বন্ম দ্বারা আপনাকে আবৃত 
করিয়াছেন। সুতরাং তাহার বিজয়-পতাকাও বাযুভরে মন্দ মন্দ আন্দোলিত 
হইতেছে। তিনি সত্যধন্মবিচার নামক একখানি পুস্তকে উল্লিখিত 
বিচার-বৃত্তান্ত লিপিবদ্ধ করিয়াছেন, এবং বেদের কোন স্থলে মুগ্তি-পুজার 
পরিপোষক কোন কথা.আছে কি না, তাহ! প্রদর্শন করিধার নিমিত্ত 
বারাণসীর পণ্ডিতবর্গকে আহ্বান করিতেছেন। কিন্তু বারাণসীর কোন 
পঙ্ডিতই তীয় আহ্বানের উত্তর প্রদানার্থ উপস্থিত হইতে পারেন নাই । 
আমর! একদিন তাহার সহিত সাক্ষাতের নিমিত্ত ছুর্গা-বাড়ীর সন্নিকট আননা- 
বাগে গমন করিয়াছিলাম। আমরা গিয়। দেখিলাম যে, দয়ানন্দের মুক্তি খষির 
স্যার, তাহার মুখ সর্বদাই প্রফুল্ল ও প্রকৃতি যার পর নাই সরল। আরমাঁ- 
দিগের সহিত কথ! বলিবার সময় বোধ হইল যে, তাহার মুখ হইতে যেন 
সুধা-বরিষণ হইতেছে। অষ্টাদশ বৎসর কাল বেদালোচনার পর দয়ানন্দ এই 
সিদ্ধান্তে উপনীত হইয়াছেন যে, মূর্তিপূজা কোন অংশেই বেদান্গকুল নহে। 
তিনি সাংসারিক সুখ সর্ব প্রকারেই পরিহার করিয়া কঠোর ভাবে কালাতি- 
পাত করিতেছেন, এবং হিন্দু ধর্মের সংস্কার পূর্বক স্বদেশের যথার্থ কল্যাণ 
সাধন করিবার অভিগ্রায়েই আশান্বিত হইয়া রহিয়াছেন। তিনি বেদ- 





* কাশী-শাস্্রার্থ নামক হিন্দি পুস্তকে যেরূপ দৃষ্ট হয়, তাহাতে পঞ্তিতগণ দয়ানন্দের হস্তে 
কোন পৌরাণিক মন্ত্র বেদমন্ত্র বলিয়! প্রদান করিয়াছিলেন, এরূপ মনে হয় না। পণ্ডিতগণ 
*ভাহার নিকট যে সামবেদীয় ত্রাঙ্মণবিশেষের মন্ত্র উপস্থিত করিয়াছিলেন, এই কথা কাণী- 
শাস্বার্ধে উজিখিত আছে। তবে উল্লিখিত নাই বলিয়াই পৌরাণিক দস্ত্র উপস্থিতির কথা 
অমস্তবও না হইতে পারে। 

১৭ 


১৩০ দয়ানন্দ-চরিত । 


গ্রতিপাদিত বিশুদ্ধ ব্রক্মবাঁদ প্রতিষ্ঠিত করিবার উদ্দেশে একটি বেদ-বিদ্যাপয় 
স্থাপনে কৃতসংকল্প হইয়াছেন» 

কাশীর পণ্ডিতগণ দয়ানন্দের সহিত বিচারে বিচাঁর-নীতি অসম্মানিত করি, 
যাই নিরস্ত রহিলেন না। তীহারা দয়ানন্দ পরাজিত * হইয়াছেন বলিয়া! 
বিজ্ঞাপন প্রচারিত করিলেন। দয়ানন্দ প্রতি-বিজ্ঞাপন প্রচার পূর্বক তাহা, 
দিগের উক্তি অমূলক বলিয়া ঘোষণা করিতে লাঁগিলেন। অধিক কি, তিনি, 
শ্াস্ত্ার্থের পর কাশীতে ষে কএক দিবস অবস্থিতি করিলেন, তাহার ভিতর 
এক দিবসের জন্যও তথাকার পণ্ডিতবর্গকে বিচারার্থ আহ্বান করিতে কুষ্ঠিত 
হইলেন না। কেবল ইহাই নহে, তিনি এই ঘটনার পর যত বাঁর বারাণসীতে 
উপস্থিত হইয়াছিলেন, মুন্তিপূজা বেদান্থুমোদিত কি না তাহা প্রতিপাদন করি- 
বার নিমিত্ত তগাকার পশ্ডিত-পুঙ্গবদিগকে তত বারই আহ্বান করিয়াছিলেন । 
আশ্চর্যের বিষর, দয়ানন্দের আহ্বানে পণ্ডিতদিগের ভিতর কেহই অগ্রসর 
হইলেন না। অথচ অপর দিকে তাহার পরাভুতি-বূপ অসত্য সংবাদ প্রচার 
করিতেও ইডি? লজ্জা বোধ করিলেন ন!। যাহা হউক ইতোমধ্যে কত হি 





কারী যে দয়ানন্ পরাজিত হয়েন নাই, এই বিষয়ে আমাদিগের হস্তে আরও 
অমাণ রহিয়াছে। ফরাক্কাবাদের পূর্ব্বোলিখিত রইস্‌ পান্নীলাল এই বিষয়ের তথ্য জাঁনিব।র 
জন্য কাঁশীতে যাইয়া অনুসন্ধান পুব্বক অবগত হইয়াছিলেন যে, দয়ানন্দ পরাজিত হয়েন 
নাই। পূর্যোক্ত আত্মান্ন্দ স্বামী কাশী-শান্্ার্থের সময় উপস্থিত ছিলেন। তিনিও 
পৃর্বোন্লিখিত পণ্ডিত গোপাল রাও হরির নিকট আসিয়। বলিয়াছিলেন যে, দয়ানন্দ পরাস্ত 
হয়েন নাই,--কাশীর পঙ্ডিতগণই পরাস্ত হইয়াছেন। এতস্তিন্ন আমাদিগের শ্রদ্ধাতাজন 
সহৃদ্‌ বারিষ্টার শ্রীযুক্ত চল্রশেখর সেন মহাশয় বিচারের সময় কাশীতে ছিলেন, এবং তিনি 
দয়ানন্দের সহিত কতকট। আত্মীয়তা হুত্রেও আবদ্ধ হইয়াছিলেন। তাহার মুখেও শুনিয়।ছি 
যে, কাশীর বিচারে স্বামিজী পরাজিত হয়েন নাই। বিচারের পর দিন শ্বামিজী সেল- 
মহাশয়কে বলিয়াছিলেন,--“আমি পরাজিভ হই নাই,--আমি পরাজিত হইয়াছি বলিয়। 
পপ্ডিতগণ একট! কোলাহল তুলিয়াছিলেন মাত্র।”» বিচারের পর দয়ানন্নকে যে প্রহার 
করিবার উদ্যোগ হইয়াছিল, এবং পুলিসের সাহায্যে যে সে উদ্যোগ বার্থ হইয়। গিয়া- 
ছিল, এই কথাও দেন-মহাশয়ের মুখে শুন! যায়। কাঁশীর পও্ডতগণ উপরি-উত্ত বিজ্ঞাপন-« 
গত্র ভিন্ন দয়াননা-পরাভূতি নামক সংস্কতে এবং ছুজ্জন-মত-মর্দন-শামক হির্পিতে এক এক 
খানি পুস্তক প্রকাশিত করিয়াছিলেন । 


বেদ-বিদ্যালয়ের প্রস্তাব । ১৩১ 


কেলওয়ে কর্মচারীর অন্রোধ-গরতন্ত্র হইয়। দয়ানন্দ এক দিন মোগলমরায়ে 
গমন করিলেন। তাহার সহিত অবাঁধে ধন্মালোচনা করাই তাহাদিগের 
অভিপ্রায় ছিল। হালিসহর-বাসী শ্রীযুক্ত দীননাথ গঙ্গোপাধায় মহাশয় স্বামি 
জীকে এই প্রকারে আহ্বান করিবার পক্ষে অগ্রণী ছিলেন। স্বামিজী তাহা, 
দিগের সহিত মোগলসরায়ের মাঠে উপস্থিত হইলেন, এবং ভূণারৃত ভূমির 
উপর উপবিষ্ট হইয়! নানারূপ হিতকর কথার প্রমঙ্গে ভাহাদিগের পরিততপ্রি 
সাধন পৃর্ধক কাশীতে চলিয়৷ আসিলেন। 

কাশীধামে একটি বেদবিগ্যালয় প্রতিষ্ঠাথ দয়ানন্দ অভিলাধী হইয়াছিলেন। 
কেবল কাশীধামে নহে,_-ভারত সামাজ্যের বাজধানী কলিকাত। নগরে বৈদিক 
ধঙ্মোর আলোক বিকিরণার্থ একটি বৈদিক পাঠশাল! স্কাপনেও তিনি 
কৃতসংকল্প হইলেন। উপস্থিত বিষয়ে পেটিয়ট পত্রিকায় পুর্োলিখিত 
সদ্বাশয় লেখক এইরূপ লিখিয়া গিয়াছেন £- 


গা) 00770051015, 6 90101702000 2 50790 207১671,09 100 06505 01016 
01100১008 01855 01117005 10 25515: 13580000106 01550 00)08101)191708 
6৫10 350030০1.:247055 01] 006 60000160 17911565 006 0763815 06186010, 
2000 0)0081) ১০০১৪ 0878 19010019015097 085 01 079)70010705 700 
70601650161000103) মাম 10৮6 ৮০6৫19 090019060 1)14077000)510, 11005070167 
(911005৩0001 076 ৬6৭10 701121925000010130170৩1500.10175 096 ০ 
8১108765 01701 130. 01১517010000 2070 1070 007015)1)915 01 0080 4500/108 
1000]াথ2 ঝা] 520010 ত1]] 000-5000980 55908 80১ 0700076520 
55310)0) 01 17815090150), 0065 আ]1 54000120761050000 87700659501 06 
11170085 16 008) 09100 7১00ঠি 11770001006 00700170005 1021 0৮6 
01500100070 20095620979] 09০ ৮5৫7০ 7608107 চে 55628118705 91 006 
90110210078 


উল্লিখিত কথাগুলির তাৎপর্যয এই যে» প্দশ্নানন্দ সরশ্বতীর প্রস্তাবিত 
বৈদিক বিদ্যালয় স্থাপন পক্ষে আমরা হিন্দুসমাঁজের নেতৃবর্গকে আগ্রহ সহকারে 
আহ্বান করিতেছি। কারণ এখনকার শিক্ষিত ব্যক্তিদিগের গ্রার সকলেই 
অন্তরে একেশ্বর-বাদী। কেহ কেহ পিতা মাতা বাঁ আল্মী়-শ্বজনদিগের 
অনুরোধে মুক্তিপৃজার পোষকতা করিলেও অনেকেই এখন প্রকাণ্তভাবে 
্রাঙ্মমত পরিগ্রহ করিয়াছেন । এই উন্নতি-প্রবাহ্‌ কিছুতেই রুদ্ধ হইবার নহে। 
স্থৃতরাং বৈদিক ধর্দের পুনরুদ্দীপন পুর্ধক প্রচলিত হিন্দু মতের সংস্কার 
বিধান করিতে চেষ্টা করা সকলেরই কর্তব্য। এই কাধ্যে সহায়ত করিলে 
ষনাতন ধর্ম-রক্ষিণী-সভ! নিশ্চই হিন্দু-সাধারণের কৃতজ্ঞতার পাত্র হইবেন” 





স্* 00766217090 75019171870 15750975 17. 


১৩২ দয়ানন্দ-চরিত। 


পেটি পত্রিকার ভূয়োদর্শী সম্পাদক এই উৎদাহ-পরিপূরিত ও স্ুযুক্তি- 
যুক্ত কথাগুলি অন্তরের সহিত অন্ুমৌদিত করিয়াছিলেন। প্রস্তাবিত বৈদিক 
বিদ্যালয় প্রতিষিত হইলে যে এতদ্দেশের প্রভূত মঙ্গল সাধিত হইবে, তাহা 
তিনি বিলক্ষণরূপেই বুঝিতে পারিগ্নাছিলেন। এই কারণ তিনি কেবল 
পূর্কোন্লিথিত কথাগুলির অন্ুমৌদন ব৷ সগর্থন করিয়াই নিশ্চিন্ত হইতে পারেন 
নাই। পক্ষান্তরে কি উপায় অবলম্বন করিলে এই শুভসাধক সংকন্পটি কার্যে 
পরিণত হইতে পারে, এবং কাধ্যে পরিণত হইলে ইহার পরিচালন পক্ষে কি 
পরিমাঁণ ব্যয় পড়িতে পারে, ইত্যাদি অত্যাবশ্তক বিষয্গুলিও তিনি উপরি- 
উল্লিখিত পত্রলেখককে অন্থুরোধ সহকারে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন । * 
পত্রলেখক মহাশয় এই প্রকারে অনুরুদ্ধ বা জিজ্ঞাসিত হইয়া প্রস্তাবিত বেদ- 
বিদ্যালয়ের ব্যয়াদি সম্বন্ধে পেটিয়ট-সম্পাদককে পুনর্ধার এইরূপ লিখিয়া- 


ছিলেন $-- 


৭]2য001062000 1705 900 0105 01 0070001210716171 56161021760 60 £0200- 
1308 10136102765) 2100. 69001217060 0০ 078 ৮677012710 1১071016 008 50139121706 
965০৮ 60160112] 2970105, 090০05 9606 52০ 0706 270 10009; 2000. 
91100) 21010013171 099700900709 176 01১21190. 500. 10051 11621015, 176 006৮ 
01000070060 075 01101020200 20007091006 101) 11101710006 11011078 
01070 010199960 610 ১০০01 151707060 101১6 ০7160 00৮ 4৯9 27751 
56517 00956151065 018 80০06 [070010 5110810 106. 50010. 101 12010 
5৮051000126 285 32198552159 0025 0 00005000100012 000617000৮0, 
(07 02, 5951670 01 08101060756 ৮0101062000 2 01920 000675(970106 91 
1000 695, 1)6 10009005 961600110৮ 8. ৮9701670200 2107৮00606৮ 19951 
501101215 1১9 15 বাদ ২101, 1000081) 2 0206 01 (0521210 1)0 ৮125 
10081) 01910 2 ৮9010 59১00] 2: 01 0007000067 002 00100707075 8192 
509, 006 1209 18110672060 9012 10258. 10106762168. 09% 501)01215 01 01019 








* [121915 ঠা] 0101307001010 001 058 101321008, 52002 00 07055155911 05601, 
9/1)100) ৮6 10105 0010 10196 ৮011] 7706 76 0000৮ চে, 1006 92107215 &7 
27001070015 0900 105 6305121706 [0858 (01619060 179% 6101111)621700 1901110 
91111017516 16002055105 09)605560 19৮156. ৮০910 16210010820. ৬০০1০ 
1611701১816 121001015 116811255০1. 0. 07000 200951015, ০ 15]. 001 
0017091017067)0 1000. 01500 20 6507916 01076 0050 01 0100 [01'0109560 610 
5০001) ৮৮110 00810 06 0০0156 10 1)9 1)0061209) 200. ৮6 0810110170811258 
(10016 009. 071905 0£ 079 17919)60160 11850180017 57876 [9701360 61)1211)60 
200. 01001216ণ 0676 40910 7১6 120 ০01 ছি05. 4 5177816 901৮6010706 
11012108155 006: 00006975001060. 16 0010 06:051015 1500070. 10 076 
06016 06 076 10171005201 16165000810 00086100210 0170572115 2000. 
59০0770 1106 120021)16 929705 01 061১6 16100771617 00106757159 ৮76 9001. 
19001710061) 076 71372001710 99072172509 07191 11790007676 01 079 1551521 
9? ৬1০ ৮0191] 01306 0076 £01021706 01 0176 1266 1২2101) 1২91720770]মজ 
চ২2৮০) 09010097550 15616107015 52050 050159৭2000 1217015 501)1১010 20৫. 
39100105 60 005 76 06007086029 00100999 08019 1879 190020517. 


বেদ-বিদ্যালয়ের প্রস্তাব । ১৩৩ 


হা621107780 সা] 212৭150০069 00 10000751010) 0107৩ 00017056৭ 5001, 
11 1007200017100 07) 001010010199121 স0০-0076 50109 51790101১0 0997 
[57500 [৬109 17386 00007800, 29100 00000117115 102256 199 007010011))]9 
10102150155 নিম 1106700006 আ1)0] সা] (8০ (চটে চাচাত 0070070112 
1070 98751005০01 90011067 1707111 $1১0010 19 5৫000766 0152 1২5. 10০ 1০7 
ঢ0000) 9৮06201000৮ 00 ৬০155. 5 11097%1 600৩8000 10070 07)1200050 05 
16215 0£ 10001)9 29001] ৮110) 016 ঠি6 01791100115 260] 0৮060 5000011 
0610 5017500 09115£0 00190170105 0111৩ ৮617700107 501)9915 17181)01)6 
7000060. 10. 01)067 1106 45070015৮10 2. চাতাত। 00 00020) 20) 10181010010 
০ ৬০101076117 0720 05505 &10170 5079919780700072 018201566 7 
000. 00:1219977050171), চ৭ আআ] 07001)6 7560060. 1301 25 17076 1১ ০৮০) 
[01001১10109 06 19101156011 1000০0) 0000767 901700165 191178 076 
১০)7০০0]) 077760076015 81101010196 70506 1 501191১1708 001] 1016171000055001055 
770100171907000556,001)901585 তন কি 00 0010500) 7৮700000715 51105011090078 
510010 96 120500 50001017010 [95 1২5. 100 1১01 10000101100 2. 1১070011) 2700 
10 00005 000 700008925 83:0১01)505 16201077810 1১01)115, 17090100709 
076 170010715 50105000600077 07016900000 01 09001561302 1050৮6 থান 109 
10001 00171715010 00307565- 1 00. 700 905 21051007755 201)765001010001 
50001731101) 77১0 0902700701000505 17000501501 11110015 00050171001 002 
৫2109 09071051008 0115060)617000060 10 91927070001 1018015013৫ 
00002 09011017065 07015001016 00707056- 285 3000) 25 07727000700715 
1125 06010 70206 007 01)81010 (0)6 19101১095০9 9013091১007 ৮0100120310 1১07001 
20০৮2001000 52250196 ৯111 5210100৮ 0810010 17 00100900102 880750011 
15201001200 ৮11) 5120 01016 85 10100 25 1715 03515021700 ৮1]1 190 00751001৫00 
10800552100 01200, 006,7475/422 07 & ছি) 0900] ৯ সক স]005 
(10170110101) 01071901001 100 17210 130110165) 10100 1025 2া 009001710 
10000 00. 26060102107 1110 00100501015 20800110771 50176776110] 
3070015 51767 21] 001: 11107): 210161117১0] 1017100 61) 09106 
00৮৫0000191 006 09311 06015 01020 00200) 0000) 11] 259016019০০] 
2 (60 00০0 02 177019-7108 00187008501 010 0০. 0 ০07010170৮0 
0৮015770060 070 1১019 01 101012) 01001019179 1701)16 10101)10101) 10 21)1)15, 
1016 26011701007 09070 ৮615 ৮০০01 010১0 060) ৮710) 1025 8০1091001১6: 2৮ 
73017109007) 015051)676- %55161085) 1100 [07010 160 00015517010 0 
£১11000020 1)019 10791006005 51950100001 £ 001010000০7 * 


উপরি-উদ্ধৃত ইংরাজি অংশটি আলোচন। করিয়া বুঝা যায় দে, স্বামিজী 
প্রস্তাবিত বৈদিক পাঠশালায় প্রথমতঃ মাদিক পচাত্বর হইতে এক শত টাক! 
বেতনে একজন অধ্যাপক নিয়োজিত করিতে ইচ্ছুক ছিলেন। তদীয় 
আচার্য্যের কোন উপযুক্ত শিষ্যকেই অধ্যাপক-পদে নির্বাচিত করা তাহার 
অভিপ্রায় ছিল। তিনি স্বীয় নির্ধারিত পদ্ধতির উপর বেদবিদ্যালয়ের সমগ্র 
শিক্ষা-কার্ধ্য প্রতিঠিত করিতে কৃতসংকল্প হইয়াছিলেন। বিদ্যার্থিগণ প্রথম- 
নিয়োজিত অধ্যাপকের নিকট ছুই বৎসর কাল সাহিত্য-শিক্ষা করিবেন, এবং 

, তাহার পর অপর অধ্যাঁপক-সমীপে বেদাধ্যয়নে প্রবৃত্ত হইবেন, এইরূপ নিয়মান্ু- 
মারে তিনি বেদবিদ্যালয়ের শিক্ষসম্পাদন করিতে ইচ্ছা করিয়াছিলেন । দয়া- 


* 11191110900 ৮4001061879 ৮6701501914 





১৩৪ দয়ানন্দ-চরিত। 


ননের বিশ্বাস ছিল যে, পাঠশানার পণ্ডিত অথবা সংস্কৃত কলেজের অপেক্ষাকৃত 
উন্নত শ্রেণীর ছাত্রদিগের ভিতর অনেকেই বেদালোচনার নিমিত্ত তত-প্রতিষ্টিত 
বিগ্ভালয়ে আগমন করিবেন। যাহা হউক তিনি সংকল্পিত বিদ্যালয় সংস্থাপনের 
নিমিত্ত কলিকাতা আমিতে জন্মত ছিলেন, এবং বিদ্যালয়কে দৃঢ়তর ভিত্তির উপর 
প্রতিষ্ঠার উদ্দেশে তথায় কিছুকাল, অবস্থান করিতেও ইচ্ছুক হইয়াছিলেন। 
অধিক কি, বেদবিদ্যা বিস্তারের পক্ষে তিনি কাশীধামকে কেন্ত্রন্বপে পরিগণিত 
করিবার ইচ্ছ! করিয়াছিলেন। কাশী-প্রতিষ্ঠিত বেদবিদ্যালয়েব্র শীখা-প্রশাখা- 
রূপে ভারতের প্রধান প্রধান স্থান সমূহে বিদ্যালয় সকল স্থাপিত হয়, ইহা 
তাহার একটি আন্তরিক বাসন৷ ছিল। কিন্তু তাহার এই বাসনা সিদ্ধ হয় নাই। 
পুর্বোল্লিখিত সদাশয়, ব্যক্তি যদিও এই বিষয়ে আধ্য-সাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ 
করিতে কিছুমাত্রও ক্রুটি করেন নাই,_এমন কি বেদ-সর্বস্ব সরস্বতী মহাশয়ের 
এই পরম হিতকর সংকল্পকে কাধ্যক্ষেত্রের বিষয়ীভূত করিবার মানসে যদিও 
তিনি আপনার উদ্ভম-উৎসাহ প্রদশনে পরিশ্রান্ত হইয়া, পড়েন নাঁই, * তথাপি 
এই সম্পর্কে কার্যত: কিছু ঘটিয়া উঠা স্বামিজীর পক্ষে সম্ভাবিত হয়, নাই। 
যাহা হউক দয়ানন্দ এই প্রকারে কাশীস্থ স্ধী-সমাজে স্বীয় দ্বিদ্ধান্ত অখ- 
ত্ডিত রাখিয়! এবং আপনার বিজয়-পতাক। অনবনত করিয়! জান্ুয়ারি মাসের 
২৬শে তারিখে এলাহাবাদ গমন করিলেন । কেননা বেদবিদ্যালয়ের ব্যয়াি- 

ক্রান্ত পুর্ব উদ্ধত ইংরাজি পত্রখানি মোগলঘরাই হইতে ২৭শে তারিখে 
লিখিত হইরাছিল। আর সেই পত্রের শেষাংশে প্রকাশিত রহিয়াছে যে 
*ম্বামিজী গত কল্য কাশী পরিত্যাগ করিয়৷ এলাহাঁবাদে গিয়াছেন।” এতদ্বারা 
বুঝ৷ যায় থে দয়াননন সে বারে কাশধামে প্রায় চারি মাস কাঁল অবস্থিত্তি 
করিয়াছিলেন। 





» 11617109099-12701000 1850 81710) 28 800 ১0] এ 


ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ । 


ও আজ ৪ 








কলিকাতা আগমন, প্রমোদকাননে অবস্থান ও নানা লোকের লহিত আলাগ,-" 
কেশবচন্ত্র সেনের গুহে গমন ও শাপ্র-বা।খা১ ত্রাজোৎসবে দেবেন্্রনাথ 
ঠাকুরের গৃহে আগমন,-কএক স্থানে বন্ত ত1--হুগলি 
গমন ও পগ্ডিত তারাচরণ প্রভৃতির 
সহিত বিচার । 





১৮৭২ খুষ্টান্দের ৩০শে ডিসেম্বরের প্রকাশিত ইওডয়ান মিবার পত্রিকায় 
দয়ানন্দ সরস্বতীর কলিকাতা আগমন-সংবাঁদ এইবপে বিধোষিত হয় ১ 

পা 150000)912171001010018001551,7১01010 1)2570001)02 9025৮09, 
70, 160670115 01+00715060 070 1070800. 1১01770105 010 1)12001775 107 271 0101 
17901051001 50010607210 1705 0011570519৩ 00005 1710075911 21000115 11779001- 
9৪৮ ট970500, 1100109 17050070909) 10 021001৮7010 15 0105 51751) 
01 006. 901961১2£2106)5-000156, 06 7 10৮, 01701010160 
[57787175025 15506017060055 10. 505000110005 16787012010 1500115 


175511078100007615 270 0006)50009009 07800150055 0070 11760101070 5019- 
7605 কাঠ) 10010 


ইহার অর্থ এই ঘে,-মুষ্টিপূজার মহাবৈরী পণ্ডিত দয়ানন্দ সরন্বতী-- 
যিনি অল্প দিন পুর্বে কাঁশীস্থ পণ্ডিতবুন্দকে শান্-বুদ্ধে পরাজিত করিয়া 
ভারতের উত্তরাঞ্চলে খ্যাতি লাভ করিরাছেন, তিনি সন্্রতি কলিকাতায় 
আসিয়! রাজা যতীন্ত্রম্টহছন ঠাকুরের নগরোঁপকগস্থিত নৈনানের উদ্যানে 
অবস্থিতি করিতেছেন ; এবং জিজ্ঞান্থু ও অপরাপর ব্যক্তিদিগের সহিত 
ধর্মালোচনা করিবার অভিপ্রায়ে তিনি সংস্কৃত, হিন্দি, ইংরাজি ও বাঙ্গালা 
ভাষায় বিজ্ঞাপন-পত্রও প্রচারিত করিয়াছেন।” রাজ বতীন্ত্রমোহনের 
নৈনানের উদ্যান প্রমোদ-কানন বণিয়াই বিখ্যাত । উহা! কলিকাতার উত্তরে 
ও অদূরেই অবস্থিত। নগর-বাসের প্রতি দয়ানন্দের বিভৃষ ছিল। এই 
কারণ তিনি যখন যে নগরে উপস্থিত হইতেন, তখন দেই-নগরের প্রান্তবর্ত 


* 1076 [78014000110 1872 10056003030. 








১৩৬. দয়ানন্দ-চরিত। 


কোন উদ্যানে অথবা প্রান্তবাহিনী কোন নদীতটে আপনার অবস্থিতির 
নিমিত্ত ব্যবস্থা করিতেন । এতদ্বারা নগরের অধিবাসিবর্গের সহিত আলো- 
চনাদির পক্ষে কোন অসুবিধা ঘটিত না, অথচ নাগরিক অশান্তি বা কোলাহল- 
কষ্টও তাহাকে সহ করিতে হইত না। এই হেতু তাহার অবস্থিতির নিমিত্ত 
গ্রমোদ-কানন নির্দিষ্ট হইয়াছিল ।* 

মিরার পত্রিকার উল্লিখিত সংবাদ অন্গসারে দয়ানন্দ ডিসেম্বরের শেষেই 
কলিকাতায় আসিয়াছিলেন বলিয়া বোধ হয়। বঙ্গা্ধ ধরিয়া! হিসাব করিলে 
৯২৭৯ সালের অগ্রহারণের শেবে কিংবা পৌষের প্রারস্ত সময়ে এখানে 
উপস্থিত হইয়াছিলেন বলিয়। বুঝা যায় । যাহা হউক সেই সময়ে দয়ানন্দের 
সঙ্গে গজানন নামে এক ব্যক্তি ছিলেন। গজানন মৃজাপুরের অধিবাসী । 
তিনি স্বামিজীর নিকট মন্ুসংহিতা পাঠ করিতেন, এবং তাহার সেবা! কিংবা 
সহায়তার নিমিত্ত অপরাপর কাধ্যেও নিয়োজিত রহিতেন। গজানন যে 
মনুংহিতাখানি পাঠ করিতেন, তাহা স্বামিজীর স্বহস্ত-লিখিত। এদিকে 
পুর্বোল্লিখিত বিজ্ঞাপন পত্রান্গসারে দয়াননোর সহিত সাক্ষাতার্থ এখানকার 
অনেক লোক প্রমোদ কাননে গমন করিতে লাগিলেন। দয়ানন্দ প্রাতঃকাঁল 
হইতে ছুই প্রহর পর্য্যস্ত অভ্যাগতদিগের সহিত আলাপ করিতেন না। 
তগ্নিমিত্ত শী সময়ের ভিতর তথায় লোক-সমাগমও দেখ! যাইত না। 
অপরান্ে ছুই তিন ঘটিকার সময় হইতে সেই উদ্যানাভিমুখে লোক-আোত 
প্রবাহিত হইতে থাকিত। অনেক লোক তাহাকে কেবল দেখিবার জন্তই 
যাইতেন, অনেক লোক তাহার সহিত শাস্ত্রালাপ করিতে আসিতেন, আবার 


* পৃর্বো শ্রীযুক্ত চশ্রশেখর সেন ব্যাৰিষ্টার-মহাশয় দয়ানন্দকে কলিকাতায় আনিব।র 
পক্ষে বিশেষ উদ্যোগী হইয়াছিলেন । তিনি প্রথমতঃ দয়ানন্দের আগমন-পংবাদ লইয়। 
শ্রীযুক্ত দিজেন্দ্রনাথ ঠাঞুরের নিকট যান । কিন্ততিনি ম্বমিজীর অবস্থান বিষয়ে কোনরাপ 
ব্যবস্থ। করিতে অসামথ্য প্রকাশ করায়, সেন-মহ!শয় রাজা শৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুরের সমীপে 
গ্রমন করেন । প্রথমে রাজ! শৌরীন্দ্রমোহনও তাহার প্র্তাবে তাদৃশ অনুরাগ প্রকাশ করেন 
নাই। কিন্ত পরদিন প্রাতঃকালে যখন চন্্রশেখর বাবু দয়ানন্দকে হাবড়। স্টেশন হইতে লয় 
শোসীগুমোহনের গৃহে আমিলেন, তখন শৌরীত্রমোহন একাত্ত বিনয় ও আগ্রহ সহকারে 
প্রামাদ-কাননে ম্বাশিত্ীর আহার ও অবস্থ।নের বাবস্থা খনিয়া দিলেন! 


€ 


নানা লোকের সহিত আলাপ । ১৩৭ 


কোন ছিদ্রান্বেধী লোক কোন না কোন ছল ধরিবার অভিলাষে তথায় 
উপস্থিত হইর! তাক্ষদৃষ্টি নহকারে তাহার কাধ্যকলাপার্দি পর্যাবেক্ষণ 
করিতেন। ধয়ানন্ন কখন উদ্যান মধ্যে, কখন উদ্যান-ম ধ্যস্থিত অট্রালিকার 
ভিতরে এবং কখন বা উদণানান্ত্ত পুষ্করিণীর ঘাটে বসিয়া আগন্তক ব্যক্তি- 
পিগের সহিত কথাবান্তা খলিতেন। আগন্ককদিগের ভিতর প্রায় সকল 
শ্রেণীস্থ নোকই দৃষ্ট হইত। পণ্তিত মহেশচন্্র হায়রত্ব ও গপ্ডিতবর তারনাথ 
তর্কবাচস্পতি গ্রন্ৃতি শীস্ত্রিগণ সরস্বভী-মহাশয়ের নিকট গমন করিতেন। 
শরীবুক্ত ফেশবচন্্র সেন, শ্রীযুক্ত রাজনারায়ণ বস্তু ও শ্রীনূক্ত দ্বিজেন্ত্রনাথ ঠাকুর 
প্রভৃতি সুশিক্ষিত ও দেশপ্রনিদ্ধ ব্যক্তিগণ দয়ানন্দের পাশ্ববন্তী হইতেন। 
আর রাজ। শৌরীন্দ্রগোহন ঠাকুর প্রস্থতির মত ধশ্বধ্যপতি ও উচ্চপদারূঢ় 
ব্যক্তিগণও তথার মধ্যে মধ্যে উপস্থিত থাকিতেন। এতগ্রিনন অপরাপর 
আগন্তকিগের ত কথাই" নাই। ইহাদিগের ভিতর বাঁচস্পতি ও বাগ্মিবর 
কেশবচন্দ্রকে দয়াননের নিকট প্রায়ই দেখা যাইত। স্বামিজীর সহিত কেশব- 
চন্দ্রের জন্মাস্তরবাদ লইরা আলোচনা হ্ইয়াছিল। তন্তিন্ন অদ্বৈতবাদ বেদ- 
প্রতিপাদিত কি না, এই বিবয়েও সেন-মহাশয় তাহার সহিত আলাপ করিয়া- 
ছিলেন। বন্থজ-মহাশয়ের সঙ্গে হোমের কথা উত্থাপিত হন্ন। তিনি হোঁমকে 
মৃণ্তিপূজার অন্ততম অক্গ বলিয়া উল্লেখ করায় দয়ানন্দ বলিয়াছিলেন যে, 
থে কার্ধ্য বর্গন্মরণ পূর্বক অনুষ্ঠিত হয়, বিশেষতঃ যাহা লোক-দাধারণের 
শুভোদ্দেশেই সম্পাদিত হইন্া। থাকে, তাহা কখন মৃষ্ডিপুর্জার অন্ধ মধ্যে 
পরিগণিত হইতে পারে না। ইহা শুনিয়া রাজনারায়ণ বাবু তৎসম্বন্ধে 
আর কোন্‌ কথাই বলেন নাই। হিন্দুধন্্ের শ্রেষ্ঠতা নামক বনুজ-মহাশয়ের 
বক্ততাপুস্তকও দয়ানন্দের নিকট পঠিত হ্ইয়াছিল। পাঠাস্তে দর়ানন্দ 
-সাহাকে বলিক্সাছিলেন যে, হিন্দুধর্মের শ্রেষ্ঠতা গ্রতিপাদন পঙ্গে পুত্লাণ-তন্ত্ের 
প্রমাণ গ্রহণ কর! যুক্তি-সঙ্গত হয় নাই। শান্তার প্রমাণের স্থলে অন্ততঃ 
মহাভারত পধ্যস্তই পরিগৃহীত হইতে পাৰে । 

একদিন বৈকালে পুক্ষরিণীর ঘাটে বসিয়া স্বামিজী সমাগত লোকদিগের 
সহিত আলাপ করিতেছিলেন, এমত সময়ে রাজা শৌরীন্ত্রমোহন শকটারোহণ 
পূর্বক প্রমোদ-কাঁননে উপস্থিত হইলেন। উপস্থিতির অন্পক্ষণ পরেই এক 

১৮ 





১৩৮ দয়ানন্দ-চরিত। 


ব্যক্তি আসিয়া দয়ানন্দকে বলিলেন-_পরাজা৷ বাহাদুর আপনাকে ডাঁকিতে- 
ছেন।” তছ্ত্তরে দয়ানন্দ বলিলেন,_“আমি অভ্যাগত লোকদিগের সহিত 
আঁলাঁপ করিতেছি, সুতরাং এখন উঠিয়া যাওয়া আমার পক্ষে মন্তাবিত নহে” 
শৌরীন্রমোহন সংবাদ-বাহকের মুখে সেই কথা অবগত হইয়া অবশেষে নিজেই 
তথায় উপস্থিত হইলেন, এবং কিছুক্ষণ পরে স্বরের উৎপত্তিস্থান বিষয়ে 
দয়ানন্দকে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিলেন । জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের উত্তরে তিনি যাহা! 
বলিলেন, তাহা বুঝিতে না পারায় এবং তন্নিমিত্ত দয়ানন্দ কিঞ্চিৎ বিরক্তি 
গ্রকাশ করায় শৌরীন্দ্রমোহন কিক্পুৎপরিমাণে জুদ্ধ হইয়া তথা হইতে চলিয়া 
গেলেন। এই ঘটনার পর কলিকাতার কোন কোন স্থলে”_এমন কি সংবাদ- 
পত্র-বিশেষে দয়াননের সম্বন্ধে কতকগুলি অযথা বা অমূলক কথা আলোচিত 
হইতে লাঁগিল। * এতদ্বারা অনেকে অনুমান করিয়া থাকেন যে, শৌরীন্র- 
মোহনের সংস্থষ্ট বা আশ্রিত ব্যক্তিদিগের মধ্যেই হয়ত কেহ সেই সকল 





*. “কত্তচিৎ বরাহনগর বামিন?, এই নামে এক ব্যক্তি দয়ানন্দ সম্বন্ধে কতকগুলি 
অযথ। ও বিদ্বেষমূলক কথ। সোমপ্রকাশ নামক প্রসিদ্ধ সংবাদপত্রে প্রকাশিত করিয়া- 
ছিজেন। সেই ব্যক্তিটি যে রাজ! শৌনীজ্রমোহনের ইঙ্গিত-পরিচাঁলিত হইয়াহই এইবূপ 
কাধ্যে রত হইয়াছিলেন, তাহা তাহার প্রকাশিত পত্রথানি পাঠ করিলে বুঝা যায়। 
সোমপ্রকাশের শান্তা সম্পাদকও এই বিষয়ে পক্ষপাতিতার পরিচয় দিয়াছিলেন। 
কারণ দয়ানন্দের কতিপয় অনুরাশী ও সত্যনিষ্ট ব্যক্তি পূর্বোক্ত অযথ! ও বিদ্বেষ 
মূলক পত্রের প্রতিবাদ পুব্বক সোমপ্রক।শে একখানি পত্র পাঠাইয়ছিলেন, কিন্তু 
সম্পাদক-মহ।শয় সেই প্রতিবাদ-পত্র পত্রিকান্থ না করায় তাহার! চাকার হিন্দুহিতৈষিণী 
পত্রিকায় তাহ। প্রোরত ও গ্রকাশিত করিয়! দয়াননফে অযথ। আক্রমণ হইতে রক্ষ 
করিয়।ছিলেন । অধিক কি সৌমপ্রকাশ-সম্পদক নিজেও ন্বামিজীর প্রতি বিদ্বেষ-বিমিশ্রিত 
ভাবের পরিচয় প্রদান করিতে ক্রটি করেন নাই। কেনন। তিনি স্বামিজীর সম্বন্ধে 
লিখিয়াছিলেন,-“ইনি দিপ্থিজয় প্রসঙ্গে প্রবৃত্ত হই সম্প্রতি কলিকাতায় আপিয়াছেন। 
শঙ্করাচাধ্য দিগ্বিজয়ে প্রবৃত্ত হইয়া অদ্বৈতবাঁদ্দ সংস্থাপন করিয়। যেমন জগতের উপকার 
করিয়া গিয়াছেন, ইহীর তেমন কোন মহাঁন্‌ উদ্দেশ্ত আছে কি ন। আমরা বলিতে পার 
না। কিন্ত আমর। ইহার বিচার প্রণালীর যেরূপ প্রবাদ শুনিতে পাইতেছি, তাহাতে ত 
স্পষ্ট বোধ হয়, আত্ম-পাঙিছা প্রকাশ করিয়া! খাতিল!ভত করাই ইহার একমাত্র উদ্দেশ্ত।” 
নমগ্রকাশ ১২৭৯ সপ ১ শে ফান । 


ক্ষেশবচন্দ্র সেনের গুঁছে গমন । 


অমূলক কথার বিনা করিয়া প্রচারিত করিনা 
আমাদিগের বিবের্সায় অসঙ্গত নহে ] 
সমাগত লোকদের সহিত সাধাচনা বাীত দয়ানন্দ এক 
হইয়া ভক্তিতাঁজন কেশবচন্ত্র সেনের গৃহে গমন করিলেন। যে দি. 
কেশবচন্দ্রের আলরে উপস্থিত হইলেন, তিনি সেই দিবস মধ্যাঙ্তে 
বর্ধীয় কৌতুকাগারে গমন করিয়াছিলেন । এই যন্ন্ধে ১৮৭৩ খুষ্টা 
জানুয়ারির ইতডয়ান নিরারে নিক্নলিখিত বৃতধান্তটি পরিদৃষ্ট হয়। সেই বৃ 


এইরূপ £- 


“5 1620060 1১0070)05151066 056 89710 0 0৪0৪যা। 00 শা 1011750051250 
সহ ৮16৮ 00167 19 1007000250 0017165 011]16 ৮6095 271 1116 013771518905, 
170 0061) 10060 & 12100120106) 01131210005 00006150050 01 1321)09 1697171 
0179)0 5০752000700 20055071008 00 ৮1078 00651010105 [91610 70121 106 
0192217 ০301217160 1015 09007710] 00001005, সং ক ক 6 10006 5007001010066 
স1]1 130 070৬0 60 00006110159 10)6 1301)11070107) 2010. 631611310 070018110 0 
1১15 160000750 10075 10 00761072091 5000]1 00005, 


এতত্ারা বুঝা যায় যে, ৯ই জানুয়ারি বৃহস্পতিবার মধ্যাহ্ কালে স্বামিজী 
ভারতীয় কৌতুকাগারে গমন করিয়াছিলেন, এবং তাহার পরেই কেশবচন্দ্রে 
ভবনে সমাগত হইরাছিলেন। প্রধানতঃ বেদ ও উপনিধদের গ্র্থ ক্রয় করাই 
তাহার কৌতুকাগার গমনের উদদেশ্ত ছিল । কেশবটন্দ্রের আলযে দয়ানন্দের 
সহিত সদালাপার্থ বহুতর ব্রাঙ্ম সম্মিলিত হইয়াছিলেন। সন্মিলিত ত্রাহ্মদিগের 
অনেকেই তাহাকে আধ্যজাতির শাস্ত্র ও ধর্ম বিষয়ে অনেক প্রকার প্রশ্ন 
ভিজ্ঞাসা করিলেন। তিনি জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন সমূহের সদুত্তর প্রদান পূর্বক 
জিজ্ঞান্থদিগকে বিমোহিত করিয়া তুলিলেন। বিশেষতঃ দয়ানন্দের বক্তৃতা 
বা শাঙ্ব্যাখ্যা শুনিয়া! সমাগত ব্যক্তি মাত্রেই বিস্মিত হইয়া উঠিলেন। কারণ 
একজন কৌপীন-কমগ্ডলুধারী সন্ন্যাসী ইউরোপীয় বিদ্যায় সর্ধমতোভাধে 
অনভিজ্ঞ হইয়া সমাজ, শাস্ত্র বা ধর্ সম্বন্ধে এগ্রকার মার্জিত উচ্চ ও উদার 
মত পোষণ করিতে পারেন, এমন কি একমাত্র বেদরূপ ব্রঙ্ধান্ত্েরে সহায়তা 
অবলম্বন পূর্বক সমাজ ও ধর্ম সম্পর্কীয় যাবতীয় ত্রান্তি নিরাকরণে উদ্যত 
 হইক্স। থাকেন, ইহা দেখিয়া কে না বিশ্ময়াবিষ্ট হইবেন? উপস্থিত বিষয়ে 
শ্রদ্ধাভাজন শ্রীযুক্ত নগেন্্রনাথ. চট্টোপাধ্যায় লিখিয়াছেন,_-“কেশব বাবুর 


0) 1700180 811019] 1823 ]00থোাচ 12, 








ধর্ম কি সমাজ সম্বন্ধে এমন উদার মত সকল ্ কখনও 
ছি” * যাহা হউক পরিশেষে দয়ানন্দের মতামত সকল পুস্তিকাকারে 
্ঃ করিয়। দেশের সর্ধত্র স্থুপ্রচারিত করিবার নিমিত্ত অনেকেই 
"ইচ্ছা প্রকাশ করিলেন, এবং কেহ কেহ বা সেই ইচ্ছাকে কাধ্যে পরিণত 
করিবার উদ্দেশে একটি সমিতি-স্থাপনে উদ্যত হইলেন। কিন্তু ভবিষ্যতে 
কি সমিতিস্থাপন, কি স্বামিজীর মতামত সঙ্কলন কিছুই কার্য্যে পরিণত হইয়া! 
উঠে নাই। কিন্তু তাহা না হইলেও এবন্িধ প্রস্তাব কেশবচন্দ্রের পক্ষে 
মাধারণ উদারতার পরিচায়ক নহে। 

দয়ানন্দ খন কলিকাতা নগরে এই প্রকারে বৈদিক ধর্ম বিস্তারে ব্যাপৃত 
ছিলেন, তখন ব্রাহ্মসমাজে মাঘোৎসব উপস্থিত। মাঘোৎ্দব উপলক্ষে উপস্থিত 
হইবার নিমিত্ত নিমন্ত্রণ করিবার অভিপ্রায়ে শ্রীযুক্ত দ্বিজেন্ত্রনাথ ঠাকুর মহাশয় 
একদিন নিশাকালে স্বামিজীর নিকট গমন করিয়াছিলেন। ছিজেন্ত্রনাথের 
গৃহিত দয়ানন্দের নানা বিষয়ে আলাপ হইল। দ্বিজেন্ত্রনাথ দর্শনশাস্্ান্থরাগী, 
তন্নিমিত্ত বোধ হয় তিনি স্বামিজীরূ নিকট প্রধানতঃ দাঁশনিক প্রসঙ্গই উথবাপিত 
করিয়াছিলেন। কেননা কপিলের সাখ্যদর্শন থে নিৰীশ্বর গ্রন্থ নহে, এই 
[খা সেই সময়ে স্বামিজী তীহাকে বুঝাইবার চেষ্টা করিয়াছিলেন বলিরা শুন! 
ব'ন।  এইন্সপ কথাবার্তার পর দ্বিজেন্দ্রনাথ স্বীস্গ আগমন-সংকল্পের কথা 
অঁকাশিত করিলেন। দয়ানন্দ তাহার অভিপ্রার অবগত হইয়া প্রথমতঃ 
কউ কটা অসম্মত হইলেন বটে, কিন্ত অবশেষে আমন্ত্রণ খক্ষা বিষয়ে সম্মভিদান 
বাএলেন। 1 দয়ানন্দ এইরূপে আমন্ত্রিত হইয়া ত্রিচস্থারিংশৎ ব্রাঙ্মোৎসবের 


জীযুক্ত নগেন্্রনাথ চট্টোপাধ্যার প্রণীত মহাত্মা দয়ানন্দ সরশ্বতীর সর্থক্ষপ্ত জীবনী: 
০০২ পৃষ্ঠ । 


পৃব্বোজিখিত শ্রীযুক্ত হেমচন্দ্র চক্রবর্তী যুক্ত দ্বিজেন্্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে স্বামিজীর 











. ব্রাক্ষোৎপবে আগমন। ক 


১১ই মাথ ম্যাহকাঁলে রা দেবেন্্রনাথ ক ুহোদয়ের আলগ্ে পা, 

হইলেন। দেবেজুনাথের শিষ্টাচার-পরারণ পু্গণ স্বামিজীর অভ্যর্থনা গঙ্গে 
কিছুমাত্র ক্রট করেন নাই।. দয়ানন্দ ভীহাদিগের গৃহে অনেকের, সঙ্গেই 
অমস্কৃচিত ভাবে ধর্মালাগ -করিলেন। বিশেবতঃ দেবেন্রনাথের অন্ততম ও. 
বর্গারঢ় পুত্র হেমেন্তরনাথের সহিত আত্মার স্বাধীন ইচ্ছা বিষয়ে আলোচনা 
হইয়াছিল। দয়ানন্দ স্বাধীন ইচ্ছার পক্ষপাতী ছিলেন। এমন কি, 
তিনি স্বাধীন ইচ্ছার অনুকূলে বৈদিক প্রমাণ প্রদর্শন পূর্ব হেমেন্্র". 
নাথকে বিশ্মিত করিয়া তুলিলেন। * অতঃপর দয়ানন্দ এখানকার কএকটি 
স্থানে কএকটি বক্তৃতা করিয়াছিলেন। ফেব্রুয়ারি মাসের ২৩শে তারিখ 
অপরাহ্কে স্বর্গীয় গোরাচাদ দত্তের গৃহ-প্রাঙ্গণে “ঈশ্বর ও ধনু” বিষয়ে তাহার 
এক বক্তৃতা হয়।1 সেই বন্তৃত স্থলে কলিকাভার শত শভ লোক উপস্থিত 





নিকট নিমন্ত্রণার্থ মিন তিনি বলেন যে, ১১ই মাধ টানার বাড়ীতে 
উপস্থিত হওয়ার কথা উল্লেখ করার দয়ানদা বলিলেন যে, আমি এই জন্য কেশব বাবু 
কর্তকও আমঞ্ত্রিত হইয়াছিলম। কিন্ত আমি ভাহার আমন্ত্রণ রক্ষা কার নাই। এরূপ 
স্থলে আপনাদিগের আমন্ত্রণ রক্ষ! পূন্বক ১১ই মাঘ দিবসে কিরূপে যাইতে পারি। এই 
কথার উত্তরে আদি-ব্রান্মসমাজের উদ্দেষ্ঠ--বিশেষতঃ বেদাদি গ্রন্থের প্রতি আঁদি-সমাজাস্ত- 
গত লোকদিগের প্রগাঢ শ্রদ্ধার বিষয় খুলিয়। বলাতে তবে তিনি নিমন্ত্রণ গ্রহণ করিয়া- 
ছিলেন । 

* শ্রীযুক্ত ছ্বিজেন্ত্রনাথ ঠাকুর প্রত্ৃতি আপনাদের ত্রিতলের উপরিস্থিত নর কিছুদিন 
থাকিবার নিমিত অন্ুযরাধ করায় দয়ানন্দ বলিয়াছিলেন যে, সন্নযার্সীর পক্ষে গৃহস্থাশ্রষে 
বাম বিধেয় নহে। তাহাদিগের গৃহ-প্র।ঙগণে যে মগুপ আছে, দর়ানন্দ সেই মণ্ডগের মধ্যস্থিত 
বেদি দোখয়া বিশেষতঃ বেদির চতুদ্দিকাঙ্কিত সংস্কৃত শ্লোক সকল পাঠ করিয়া অতান্ত আন- 
দ্দিঠ হইয়াছলেন। এই সকল কারণে আদি-বর্সমাজ এবং ইহার প্রাণঙ্বরূপ পুজ্যপাদ 
শ্রধুক্ত দেবেজা নাণ' ঠাকুর মহাশয়ের প্রতি তিনি আস্থাবান্‌ হইয়াছিলেন। এমন কি, 
প্রমোদ্-কাননের দাল!নের ভিতর শ্রীযুক্ত দেবেন্দ্রনাথ ঠ।কুর ও শ্রীধুন্ত কেশবচন্ত্র সেনের এক 
একখানি প্রতিকৃতি বিলম্বিত ছিল। দয়ানন্দ সেই প্রশ্রিকৃশ্ডিদ্বয় দর্শন করিয়া প্রথমে/্তি 
খানির সম্বন্ধে বলিয়াছিলেন যে,_“লোকট|কে দেখিলে খষিতাবের প্রতি স্বভাব ভঃ 
অনুরাগী বলিয়৷ বোঁধ হয়।” | 

শ 06 17)0171) 1110107 18237637019 22 


৭ রস্াননদচারজ। 





2007555 ০, ২5172 রা রাত রাযি 4108, 
৩ 2130 025990)910716 00017000107 00016 102 070000005, 06 
17950 10511011310 71201006101 টিটো 006 ৬6005 000 21516100001 116. 0011 0 
4300)0109 10)10010 06 04519-11501)00107)55 8000, 11)6 1070019 001)6 105 ৩211 
10081010257 015 08101 15 17050 %10000700], 1715 11871088615 511070916১০ 
170105010, 1710 1015 90105 ৮6 0) 01956755 0196 176 15 7801 0219 2, আটো 01 
6১6105155 167117108 000 2150 2. 0000060601১ 15150110120 ৬50 0056৮৮20100, 
চ]15 28010061005 2750100101৩ 200 509127 200. 155 ভাট, 15:0620559 2500. 037০ 
11500900109 010০8190 01600 01 ০2108112৮11] 0 10 2002010050৭ 
115 চি 09105101055- ৪ 

উপরি-উক্ত কথাগুলির মন্ত্ব এই যে,_প্পপ্ডিত দয়ানন্দ সরস্বতী ৯ মার্চ 
রবিবার অপরাহ্ন সাড়ে তিন ঘটিকার সময় বৈদিক মত সম্বন্ধে এক বক্তৃতা 
করিয়াছেন। বক্ততাস্থলে বহুসংখ্যক শিক্ষিত ও সন্রান্ত বাক্তি উপস্থিত হইয়া- 
ছিলেন। বস্তা-মহাশয় বেদির উপর গম্ভীর ভাবে উপবিষ্ট হইয়া একটি প্রার্থনা 
পূর্বক কার্য আরম্ভ করিয়াছিলেন। বক্তৃতা সমাপ্ত হইতে তিন ঘণ্টারও 
অধিক অতিবাহিত হইয়াছিল। বক্তুতা ধদিও সংস্কৃত ভাষায় হইয়াছিল, 
তাহা হইলেও সরস্বতী-মহাশয়ের সংস্কৃত যাব পর নাঁই সরল সুমিষ্ট ও আবেগ- 
ময়। তিনি বৈদিক প্রমাণ অবলম্বন করিয়া ঈশ্বরের একত্ব এবং জাতিভেদ ও 
বাল্য-বিবাহের অপকারিতা অতি সহজেই বুঝাইয়৷ দিয়াছিলেন। দয়ানন্দের 
বাগ্মিতা অতি অসাধারণ। তাহার বক্তৃতা গুনিলে কেবল তাহাকে একজন 
ম্বশাস্-দর্শী বলিয়৷ বোধ হয় না। বলিতে কি, তিনি থে এন্সজন বিলক্ষণ ভাবুক 
ও ভূরোদর্শী ব্যক্তি তাহাও তাহার কথা শুনিয়া বুঝিতে পারা বীয়। দয়াননের 
যুক্তি সকল একান্ত তীব্র ও প্রবল, এবং তীহার হ্বদয় সর্তোভাবেই 
ভীতিশৃন্ত । আমরা ভরসা! করি, কলিকাতার শি্সিত, ব্যক্তিগণ ভবিষ্যতে 


তাহার বক্তৃতা শুনিতে যত্রপর রহিবেন |” 2 রে ীত্ কলিকাতায় 











ক] 1012) 10701 182)3 সতত )5-